Tuesday, June 23, 2020

মা দুর্গার দুই সখী রামদুলাল'দে-র পুজোরঃ উত্তর কলকাতা


বনেদীবাড়ির কাঠামোপুজোঃ
 রথযাত্রার এই পুণ্যতিথিতে কলকাতা সহ বঙ্গের বহু বনেদিবাড়িতে হয় কাঠামোপুজো বনেদিবাড়ির ঠাকুরদালান ভরে ওঠে উমা আসার গন্ধে  কলকাতায় বহু বাড়িতে আজ রথের দিন কাঠামোপুজো হয়, তারপর শুরু হয় মৃন্ময়ী প্রতিমা গড়ার কাজ উত্তর কলকাতার এক পরিচিত বনেদিবাড়ির ইতিহাস নিয়েই আজ এই পর্ব প্রকাশ হল, লিখলেন শুভদীপ চলুন দেখা যাক সেই বাড়ির পুজোর ইতিহাস
মা দুর্গার দুই সখী রামদুলাল'দে- পুজোরঃ উত্তর কলকাতা
 প্রতিবেদনেই একদম শুরুতেই যদি রামদুলাল দে-এর বাড়ির দুর্গাপুজো বলে উল্লেখ করি, তাহলে বহু পাঠকই চিনে উঠতে পারবেন না কারণ এই বাড়ির পুজো আরও বেশি পরিচিত ছাতুবাবু লাটুবাবু নামে কি এবার চিনতে পারলেন তো? হ্যাঁ, আমি উত্তর কলকাতার বিডন স্ট্রিটের টুকটুকে লাল রঙের বাড়ির পুজোর ইতিহাস আলোচনা করছি গেটের সামনে যে মূল থাম রয়েছে সেখানে শ্বেতপাথরের ফলকে লেখা রামদুলাল দে এছাড়াও আরও দুইটি নাম লেখা ছাতুবাবু লাটুবাবু
 বাংলা তথা কলকাতার বাবু কালচার বা বলা যেতে পারে নববাবু হিসাবে পরিচিত ছিলেন এই দুইজন সদস্য ছাতুবাবু এবং লাটুবাবু তবে পরিবারের প্রাণপুরুষ ছিলেন তাঁদের পিতা রামদুলাল দে, যিনি শুরু করেছিলেন পরিবারের দুর্গাপুজো যা আজ বহু বছরের প্রাচীন বাবু কালচার যেহেতু এই বাড়ির দুই সদস্যের মধ্যে খুব বেশি করে পাওয়া গিয়েছিল তাই এদের বাড়ির পুজোয় যাত্রা, কবিগান, বাঈ নাচ সহ সমস্ত কিছুই হত বিরাট ঠাকুরদালান, তারসাথে ঝাড়বাতির আলো যেন ঐতিহ্য বনেদিয়ানায় মোড়া এই বাড়ির প্রতিটি স্থান এই বাড়ির পুজো শুরু হয় রথের দিন কাঠামোপুজোর মাধ্যমে রামদুলাল দে পরিবারে দুর্গাপুজো শুরু হয় প্রতিপদ তিথি থেকে, প্রতিপদতিথি থেকে ষষ্ঠী পর্যন্ত গৃহদেবতা শালগ্রামশিলাকে পুজো করা হয় তৃতীয়াতে দেবীকে আসনে বসানো হয় এই বাড়ির পুজোতে লক্ষ্মী সরস্বতী থাকেন না মায়ের পাশে, মায়ের পাশে থাকেন তাঁর দুই সখী জয়া আর বিজয়া আগে পুজোর সময় পাঁঠাবলি হত কিন্তু একবার পাঁঠাকে বলি দেওয়ার সময় সেই পাঁঠাটি রামদুলাল দে মহাশয়ের কাছে ছুটে চলে আসায় বলিদান বন্ধ করা হয়
 ছাতুবাবু-লাটুবাবুদের পুজোতে অন্নভোগ হয় না, নৈবেদ্য সহযোগে পুজো হয় এই বাড়িতে কুমারিপুজোর প্রচলনও রয়েছে, বাড়ির বয়সে বড় মহিলারা পুরোহিতের সাহায্যে কুমারিপুজো করেন আগে এই বাড়িতে বিসর্জনের সময় নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর প্রথা ছিল কিন্তু এই প্রথা নিষিদ্ধ হওয়ায় এখন তা হয় না বোঝাই যাচ্ছে যে বহু বছরের প্রাচীন এই পুজোর ইতিহাস ঐতিহ্য আজও অটুট রয়েছে, তা বাড়ির ঠাকুরদালানে দাঁড়ালেই বোঝা যায়
তথ্যসূত্র লিপিবদ্ধেঃ শুভদীপ রায় চৌধুরী
চিত্রঃ সংগৃহীত
#রামদুলালনিবাস #ছাতুবাবুলাটুবাবু #কলকাতা #উত্তরকলকাতা #দুর্গাপুজো২০২০ #বনেদীবাড়ি #তিলোত্তমা #বনেদীয়ানা #বিডনস্ট্রীট #RamdulalNibas #ChatuBabuLatuBabu #NorthKolkata #Kolkata #Tilattama #DurgaPuja2020 #TraditionalFamily #Bonediyana


Monday, June 22, 2020

শিবপুরের তিনশো বছরের মা অভয়াঃ হাওড়া পাল বাড়ি


বনেদীবাড়ির কাঠামোপুজোঃ
 আজ পুণ্যতিথি রথযাত্রা, পুরী সহ বঙ্গের বহু প্রাচীন জগন্নাথ মন্দিরে আজ মহাপ্রভু শ্রীশ্রীজগন্নাথদেব রথে উঠবেন আর প্রভুর রথযাত্রা পালন করবেন সকলে ভক্তিভরে এবছর করোনা ভাইরাসের কারণে ভক্তসমাগম কম হলেও রথের নিয়ম আচার সমস্ত কিছুই পালন করা হবে প্রাচীন রীতিতেই এই রথযাত্রা উল্টোরথের দুটি দিনে বহু বনেদীবাড়িতে কাঠামোপুজো অনুষ্ঠিত হয় , অর্থাৎ আজকের দিন থেকেই শুরু দুর্গাপুজোর প্রস্তুতিপর্ব আজ এমন এক বনেদীবাড়ির ঠাকুরদালানে আমরা উপস্থিত যাদের পুজোর বয়স ৩০০বছরেরও প্রাচীন আজ আমরা হাওড়ার শিবপুর অঞ্চলের পালবাড়ির ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য রাখবো, লিখলেন শুভদীপ চলুন দেখা যাক সেই ঠাকুরদালানের এবং পুজোর ইতিহাস

শিবপুরের তিনশো বছরের মা অভয়াঃ হাওড়া পাল বাড়ি
 শিবপুরের পাল বাড়ির 'মা অভয়া' হাওড়া অঞ্চলের বনেদীবাড়ির পুজোর মধ্যে অন্যতম এক পুজো, যা শুরু করেছিলেন এই বাড়ির পূর্বপুরুষ স্বর্গীয় সর্বস্য পাল মহাশয় তবে তিনি কবে এই পুজো শুরু করেছিলেন তার সঠিক সাল না পাওয়া গেলেও অনুমান করা যায় এই বাড়ির পুজো বহু বছরের প্রাচীন তিনি লোকান্তরিত হওয়ার পর এই পুজোর দায়িত্ব নেন জগৎবিখ্যাত ঔষধ প্রস্তুতকারক এবং বিক্রেতা বটকৃষ্ণ পাল মহাশয়

 বটকৃষ্ণ পাল জন্মগ্রহণ করেছিলেন হাওড়ার এই মুখোপাধ্যায় লেনের বাড়িতেই প্রথম জীবনে তিনি জীবিকার প্রয়োজনে কলকাতার শোভাবাজারের কাছে বেনিয়াটোলা স্ট্রিটের বাড়িতে চলে আসেন প্রতিবছর রথের দিন এই বাড়ির কাঠামোপুজো হলেও পরিবার সূত্রে জানা গেল এই বছর কাঠামোপুজো উল্টোরথের দিন অনুষ্ঠিত হবে মায়ের সেই দিন থেকে মৃন্ময়ীপ্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয়ে যায়, অর্থাৎ বলা যেতে পারে এই পুজোকে কেন্দ্র করে পাল বাড়ির ঠাকুরদালানে সাজসাজ রব ওঠে মায়ের মূল কাঠামোতে নিষ্ঠার সাথে পুজো হয় এই দিন আর সঙ্গে নৈবেদ্য সহযোগে এই বাড়ির দেবী "মা অভয়া" নামে পরিচিত, কারণ মা এখানে দশভুজা নন তিনি এই বাড়িতে দ্বিভুজা, অর্থাৎ একহাতে সকলকে অভয়দান করছেন এবং অার এক হাতে ফোটা পদ্মফুল একটি ফল যেন মা সকলকে ফলদান করছেন, অপূর্ব মৃন্ময়ীরূপ যা শিবপুর সহ গোটা হাওড়ার ঐতিহ্যকে বহন করে রেখেছে দেবী এখানে সিংহবাহিনী হলেও মহিষাসুর নেই সপরিবারে মা এখানে অভয়া রূপেই বিরাজমানা মায়ের শান্ত সৌম্য মূর্তি ডাকের সাজে সজ্জিত করা হয় এবং কৃষ্ণানবমীতিথিতেই বোধন বসে এই পাল বাড়িতে, শুরু হয় চণ্ডীপাঠও দুর্গাপুজোর সপ্তমীর দিন বাড়িতেই নবপত্রিকার স্নান হয় সপ্তমীর দিন ছাগবলি হয় কিন্তু এই বাড়িতে অন্নভোগ হয় না মহাষ্টমীর দিন মায়ের সামনে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় "ধুনো পোড়ানো" অর্থাৎ সেই দিন পল্লীবাসী পালবাড়ির মহিলাগণ ধুনো পোড়ানোতে অংশগ্রহণ করেন

 মহাষ্টমী মহানবমীর সন্ধিক্ষণে তান্ত্রিক মতে সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হয় জনশ্রুতি অনুযায়ী অতীতে সন্ধিপূজার আগে আন্দুল রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোর অনতিদূরে কামান দাগানো হত সেই কামানের শব্দ শুনে পালবাড়িতে সন্ধিপুজো শুরু হত এই সন্ধিক্ষণের পুজোতে পালবাড়িতে সম্পূর্ণ কালো রঙ-এর একটি পাঁঠা বলিদান করা হয় বলিদানের পর এই মাংস বাড়ির লোকেরা প্রসাদ হিসাবে দান করেন মহানবমীর দিন ১টি পাঁঠা, ৫টি ফল এবং একটি ছোটো মহিষ বলিদান করা হয় নবমীপুজো শেষ হয় হোম এবং যজ্ঞের মাধ্যমে এই ভাবে প্রায় তিনশো বছরেরও প্রাচীন মা অভয়ার পুজো হয়ে আসছে শিবপুরের পালবাড়িতে

কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ শ্রী অভিরূপ পাল মহাশয়
তথ্য লিপিবদ্ধেঃ শুভদীপ রায় চৌধুরী
#পালবাড়িশিবপুর #হাওড়া #বনেদিপুজো #মাঅভয়া #দুর্গাপুজো২০২০ #PaulBari #Shibpur #BKPaul #বটকৃষ্ণপাল #Howrah #MaAvaya #DurgaPuja2020
#Bonediyana