বনেদীবাড়ির কাঠামোপুজোঃ
আজ পুণ্যতিথি রথযাত্রা, পুরী সহ বঙ্গের বহু প্রাচীন জগন্নাথ মন্দিরে আজ মহাপ্রভু শ্রীশ্রীজগন্নাথদেব রথে উঠবেন আর প্রভুর রথযাত্রা পালন করবেন সকলে ভক্তিভরে। এবছর করোনা ভাইরাসের কারণে ভক্তসমাগম কম হলেও রথের নিয়ম আচার সমস্ত কিছুই পালন করা হবে প্রাচীন রীতিতেই। এই রথযাত্রা ও উল্টোরথের দুটি দিনে বহু বনেদীবাড়িতে কাঠামোপুজো অনুষ্ঠিত হয় , অর্থাৎ আজকের দিন থেকেই শুরু দুর্গাপুজোর প্রস্তুতিপর্ব। আজ এমন এক বনেদীবাড়ির ঠাকুরদালানে আমরা উপস্থিত যাদের পুজোর বয়স ৩০০বছরেরও প্রাচীন। আজ আমরা হাওড়ার শিবপুর অঞ্চলের পালবাড়ির ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য রাখবো, লিখলেন শুভদীপ। চলুন দেখা যাক সেই ঠাকুরদালানের এবং পুজোর ইতিহাস।
শিবপুরের তিনশো বছরের মা অভয়াঃ হাওড়া পাল বাড়ি
শিবপুরের পাল বাড়ির 'মা অভয়া' হাওড়া অঞ্চলের বনেদীবাড়ির পুজোর মধ্যে অন্যতম এক পুজো, যা শুরু করেছিলেন এই বাড়ির পূর্বপুরুষ স্বর্গীয় সর্বস্য পাল মহাশয়। তবে তিনি কবে এই পুজো শুরু করেছিলেন তার সঠিক সাল না পাওয়া গেলেও অনুমান করা যায় এই বাড়ির পুজো বহু বছরের প্রাচীন। তিনি লোকান্তরিত হওয়ার পর এই পুজোর দায়িত্ব নেন জগৎবিখ্যাত ঔষধ প্রস্তুতকারক এবং বিক্রেতা বটকৃষ্ণ পাল মহাশয়।
বটকৃষ্ণ পাল জন্মগ্রহণ করেছিলেন হাওড়ার এই মুখোপাধ্যায় লেনের বাড়িতেই। প্রথম জীবনে তিনি জীবিকার প্রয়োজনে কলকাতার শোভাবাজারের কাছে বেনিয়াটোলা স্ট্রিটের বাড়িতে চলে আসেন। প্রতিবছর রথের দিন এই বাড়ির কাঠামোপুজো হলেও পরিবার সূত্রে জানা গেল এই বছর কাঠামোপুজো উল্টোরথের দিন অনুষ্ঠিত হবে। মায়ের সেই দিন থেকে মৃন্ময়ীপ্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয়ে যায়, অর্থাৎ বলা যেতে পারে এই পুজোকে কেন্দ্র করে পাল বাড়ির ঠাকুরদালানে সাজসাজ রব ওঠে। মায়ের মূল কাঠামোতে নিষ্ঠার সাথে পুজো হয় এই দিন আর সঙ্গে নৈবেদ্য সহযোগে। এই বাড়ির দেবী "মা অভয়া" নামে পরিচিত, কারণ মা এখানে দশভুজা নন। তিনি এই বাড়িতে দ্বিভুজা, অর্থাৎ একহাতে সকলকে অভয়দান করছেন এবং অার এক হাতে ফোটা পদ্মফুল ও একটি ফল। যেন মা সকলকে ফলদান করছেন, অপূর্ব মৃন্ময়ীরূপ যা শিবপুর সহ গোটা হাওড়ার ঐতিহ্যকে বহন করে রেখেছে। দেবী এখানে সিংহবাহিনী হলেও মহিষাসুর নেই। সপরিবারে মা এখানে অভয়া রূপেই বিরাজমানা। মায়ের শান্ত সৌম্য মূর্তি ডাকের সাজে সজ্জিত করা হয় এবং কৃষ্ণানবমীতিথিতেই বোধন বসে এই পাল বাড়িতে, শুরু হয় চণ্ডীপাঠও। দুর্গাপুজোর সপ্তমীর দিন বাড়িতেই নবপত্রিকার স্নান হয়। সপ্তমীর দিন ছাগবলি হয় কিন্তু এই বাড়িতে অন্নভোগ হয় না। মহাষ্টমীর দিন মায়ের সামনে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় "ধুনো পোড়ানো" অর্থাৎ সেই দিন পল্লীবাসী পালবাড়ির মহিলাগণ ধুনো পোড়ানোতে অংশগ্রহণ করেন।
মহাষ্টমী ও মহানবমীর সন্ধিক্ষণে তান্ত্রিক মতে সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হয়। জনশ্রুতি অনুযায়ী অতীতে সন্ধিপূজার আগে আন্দুল রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোর অনতিদূরে কামান দাগানো হত। সেই কামানের শব্দ শুনে পালবাড়িতে সন্ধিপুজো শুরু হত। এই সন্ধিক্ষণের পুজোতে পালবাড়িতে সম্পূর্ণ কালো রঙ-এর একটি পাঁঠা বলিদান করা হয়। বলিদানের পর এই মাংস বাড়ির লোকেরা প্রসাদ হিসাবে দান করেন। মহানবমীর দিন ১টি পাঁঠা, ৫টি ফল এবং একটি ছোটো মহিষ বলিদান করা হয়। নবমীপুজো শেষ হয় হোম এবং যজ্ঞের মাধ্যমে এই ভাবে প্রায় তিনশো বছরেরও প্রাচীন মা অভয়ার পুজো হয়ে আসছে শিবপুরের পালবাড়িতে।
কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ শ্রী অভিরূপ পাল মহাশয়
তথ্য লিপিবদ্ধেঃ শুভদীপ রায় চৌধুরী
#পালবাড়িশিবপুর #হাওড়া #বনেদিপুজো #মাঅভয়া #দুর্গাপুজো২০২০ #PaulBari #Shibpur #BKPaul #বটকৃষ্ণপাল #Howrah #MaAvaya #DurgaPuja2020
#Bonediyana
No comments:
Post a Comment