বনেদীবাড়ির কাঠামোপুজোঃ
রথযাত্রার এই পুণ্যতিথিতে কলকাতা সহ বঙ্গের বহু বনেদিবাড়িতে হয় কাঠামোপুজো। বনেদিবাড়ির ঠাকুরদালান ভরে ওঠে উমা আসার গন্ধে।
কলকাতায় বহু বাড়িতে আজ রথের দিন কাঠামোপুজো হয়, তারপর শুরু হয় মৃন্ময়ী প্রতিমা গড়ার কাজ। উত্তর কলকাতার এক পরিচিত বনেদিবাড়ির ইতিহাস নিয়েই আজ এই পর্ব প্রকাশ হল, লিখলেন শুভদীপ। চলুন দেখা যাক সেই বাড়ির পুজোর ইতিহাস।
মা
দুর্গার দুই সখী রামদুলাল'দে-র পুজোরঃ উত্তর কলকাতা
প্রতিবেদনেই একদম শুরুতেই যদি রামদুলাল দে-এর বাড়ির দুর্গাপুজো বলে উল্লেখ করি, তাহলে বহু পাঠকই চিনে উঠতে পারবেন না কারণ এই বাড়ির পুজো আরও বেশি পরিচিত ছাতুবাবু ও লাটুবাবু নামে। কি এবার চিনতে পারলেন তো? হ্যাঁ, আমি উত্তর কলকাতার বিডন স্ট্রিটের টুকটুকে লাল রঙের বাড়ির পুজোর ইতিহাস আলোচনা করছি। গেটের সামনে যে মূল থাম রয়েছে সেখানে শ্বেতপাথরের ফলকে লেখা রামদুলাল দে এছাড়াও আরও দুইটি নাম লেখা ছাতুবাবু ও লাটুবাবু।
বাংলা তথা কলকাতার বাবু কালচার বা বলা যেতে পারে নববাবু হিসাবে পরিচিত ছিলেন এই দুইজন সদস্য ছাতুবাবু এবং লাটুবাবু। তবে পরিবারের প্রাণপুরুষ ছিলেন তাঁদের পিতা রামদুলাল দে, যিনি শুরু করেছিলেন পরিবারের দুর্গাপুজো যা আজ বহু বছরের প্রাচীন। বাবু কালচার যেহেতু এই বাড়ির দুই সদস্যের মধ্যে খুব বেশি করে পাওয়া গিয়েছিল তাই এদের বাড়ির পুজোয় যাত্রা, কবিগান, বাঈ নাচ সহ সমস্ত কিছুই হত। বিরাট ঠাকুরদালান, তারসাথে ঝাড়বাতির আলো যেন ঐতিহ্য ও বনেদিয়ানায় মোড়া এই বাড়ির প্রতিটি স্থান। এই বাড়ির পুজো শুরু হয় রথের দিন কাঠামোপুজোর মাধ্যমে। রামদুলাল দে পরিবারে দুর্গাপুজো শুরু হয় প্রতিপদ তিথি থেকে, প্রতিপদতিথি থেকে ষষ্ঠী পর্যন্ত গৃহদেবতা শালগ্রামশিলাকে পুজো করা হয়। তৃতীয়াতে দেবীকে আসনে বসানো হয়। এই বাড়ির পুজোতে লক্ষ্মী সরস্বতী থাকেন না মায়ের পাশে, মায়ের পাশে থাকেন তাঁর দুই সখী জয়া আর বিজয়া। আগে পুজোর সময় পাঁঠাবলি হত কিন্তু একবার পাঁঠাকে বলি দেওয়ার সময় সেই পাঁঠাটি রামদুলাল দে মহাশয়ের কাছে ছুটে চলে আসায় বলিদান বন্ধ করা হয়।
ছাতুবাবু-লাটুবাবুদের পুজোতে অন্নভোগ হয় না, নৈবেদ্য সহযোগে পুজো হয় এই বাড়িতে। কুমারিপুজোর প্রচলনও রয়েছে, বাড়ির বয়সে বড় মহিলারা পুরোহিতের সাহায্যে কুমারিপুজো করেন। আগে এই বাড়িতে বিসর্জনের সময় নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর প্রথা ছিল কিন্তু এই প্রথা নিষিদ্ধ হওয়ায় এখন তা হয় না। বোঝাই যাচ্ছে যে বহু বছরের প্রাচীন এই পুজোর ইতিহাস ও ঐতিহ্য আজও অটুট রয়েছে, তা বাড়ির ঠাকুরদালানে দাঁড়ালেই বোঝা যায়।
তথ্যসূত্র লিপিবদ্ধেঃ শুভদীপ রায় চৌধুরী
চিত্রঃ সংগৃহীত
#রামদুলালনিবাস #ছাতুবাবুলাটুবাবু #কলকাতা #উত্তরকলকাতা #দুর্গাপুজো২০২০ #বনেদীবাড়ি #তিলোত্তমা #বনেদীয়ানা #বিডনস্ট্রীট #RamdulalNibas #ChatuBabuLatuBabu
#NorthKolkata #Kolkata #Tilattama #DurgaPuja2020 #TraditionalFamily #Bonediyana