Wednesday, May 6, 2020

অজ বুদ্ধ পূর্ণিমা- পুণ্যভূমি সারনাথ

বুদ্ধ পূর্ণিমাতিথি
 আজ ২৪ বৈশাখ,১৪২৭ বুদ্ধ পূর্ণিমা। ভগবান বুদ্ধের আবির্ভাবতিথি, বুদ্ধাব্দ ২৫৬৪বর্ষ আরম্ভ, আজ আমরা বারাণসী থেকে ১৩কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকের বৌদ্ধ তীর্থস্থান সারনাথের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য প্রদান করছি, লিখলেন শুভদীপ। মূলত এই সারনাথের উদ্যানেই প্রথম ভগবান বুদ্ধের ধর্ম সম্পর্কিত বানীসমূহের উন্মেষ ঘটে। আজ সেই পুণ্যভূমির সংক্ষিপ্ত ইতিহাসই তুলে ধরবো, দেখা যাক সেই ইতিহাস।

 আজ বুদ্ধ পূর্ণিমাঃ- পুণ্যভূমি সারনাথ
মূলত বুদ্ধ ছিলেন বাস্তবধর্মী সংস্কারক। মানবজাতির জাগতিক দুঃখকষ্ট থেকে মুক্তিদান করাই ছিল গৌতম বুদ্ধের একমাত্র উদ্দেশ্য। কর্মফল ও তার পরিণাম 'দুঃখ' সম্পর্কে গৌতম বুদ্ধের চারটি আর্যসত্য রয়েছে- ১. সংসারে দুঃখ কষ্ট রয়েছে। ২. এই দুঃখকষ্টের কারণও রয়েছে। ৩. মানুষের দুঃখকষ্ট লাঘবের উপায় হল তৃতীয় সত্য। ৪. দুঃখকষ্ট অবসান করার সত্যপথ জানতে হবে।
আমরা সকলেই ছাত্রাবস্থায় ইতিহাস বিভাগের একটা অন্যতম বিষয় অধ্যায়ন করে থাকি তা হল গৌতম বুদ্ধের বাণী সমূহ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল অষ্টাঙ্গিক মার্গ, কেন এই আটটি নির্দেশ দিয়েছিলেন গৌতম বুদ্ধ? কারনন তিনি মনে করেন কামনা, বাসনা, তৃষ্ণা, আসক্তি ইত্যাদি থেকেই দুঃখকষ্ট সৃষ্টি হয় তাই সেই দুঃখকষ্ট থেকে বাঁচার জন্য তিনি এই নির্দেশ দিয়েছিলেন। ১. সৎবাক্য,২. সৎকার্য,৩. সৎজীবন,৪. সৎচেষ্টা,৫. সৎচেতনা,৬. সৎচিন্তা,৭. সৎসংকল্প এবং ৮. সৎদর্শন, এই হল বুদ্ধের আটটি নির্দেশ। তিনি হিংসা, ব্যভিচার, মদ্যপা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকার নির্দেশও দিয়েছিলেন।

 গৌতম বুদ্ধ খ্রিষ্টপূর্ব ৬২৩অব্দে নেপালের কপিলাবস্তুর লুম্বিনী কাননে জন্মগ্রহণ করেন। গৌতম বুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত তীর্থস্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল লুম্বিনী, বুদ্ধগয়া, সারনাথ, কুশিনগর, রাজগৃহ, কপিলাবস্তু, শ্রাবস্তী, নালন্দা, বৈশালী ইত্যাদি। গৌতম বুদ্ধ তাঁর বুদ্ধত্ব লাভ করবার পর নবলব্ধ ধর্ম প্রথম প্রচার করেছিলেন সারনাথে। বুদ্ধের সময়কালে সারনাথ কাশী রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। মূলত বারাণসী শহরের অনতিদূরে বরুণা নদীর তীরে অবস্থিত। প্রাচীনকালে স্থানটি 'ইসিপতন মৃগদাব' নামে পরিচিত। এই স্থানেই গৌতম বুদ্ধ তাঁর পঞ্চবর্গীয় শিষ্যদের কাছে প্রথম ধর্মপ্রচার করেছিলেন। তাঁরা হলেন কৌন্ডিন্য, বপ্প, ভদ্দীয়, মহানাম ও অশ্বজিৎ। বুদ্ধের প্রথম ধর্মপ্রচারের স্থান হিসাবে সারনাথ মহাতীর্থের স্থান লাভ করেছে।
 ধর্মদর্শন ছাড়াও সারনাথ গুরুত্বপূর্ণ। পঞ্চবর্গীয় শিষ্যদের ধর্ম দেশনা করার পর বারাণসীর শ্রেষ্ঠীপুত্র যশ ও তাঁর চুয়ান্নজন বুদ্ধকে এ স্থানে প্রব্রজ্যা দিয়েছিলেন। এই মোট ষাটজন ভিক্ষু নিয়ে প্রথম ভিক্ষুসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। সারনাথ বৌদ্ধ ধর্মের প্রাণকেন্দ্র, এখানে শতশত ভিক্ষু-ভিক্ষুণী এসে বসবাস করতেন। ধর্মচক্র প্রবর্তনের স্মারক হিসাবে সম্রাট অশোক এখানে স্তূপ নির্মাণ করেছিলেন। স্তূপটি পাথরের তৈরি। এর উচ্চতা ১৪৫ফুট ও প্রস্থ ৯৪ফুট। চিনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এই স্তূপটি দেখেছিলেন। সারনাথে ৭১ফুট উঁচু ও ৩ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট বেলে পাথরের একটি স্তম্ভ আছে। স্তম্ভটির মাথায় চারমুখ বিশিষ্ট সিংহমূর্তি আছে। তার ওপর ধর্মচক্র আছে। চক্রটি সাম্য, মৈত্রী, শান্তি ও প্রগতীর প্রতীকরূপে ভারতীয় জাতীয় পতাকায় স্থান পেয়েছে। স্তম্ভটি ভেঙে যাওয়ায় সিংহমূর্তিটি সারনাথের সংগ্রহশালায় আছে।
 প্রসঙ্গত সারনাথে প্রাচীন বৌদ্ধ সভ্যতার অনন্য নিদর্শন বহু বিহার, স্তূপ ও স্তম্ভের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। ভারতীয় ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য স্থান হিসাবে পরিচিত এই সারনাথ।

তথ্য সংগ্রহেঃ শুভদীপ রায় চৌধুরী
চিত্রঋণঃ লেখক ও অন্যান্য
#বুদ্ধপূর্ণিমা #সারনাথ #বারাণসী
#বনেদীয়ানা #ভারতীয়ইতিহাস
#BuddhaPurnima #Sarnath #Baranashi #Bonediyana #IndianHistory

No comments:

Post a Comment