Tuesday, February 25, 2020

ঐতিহ্যের চন্দ্র বাটীর অন্নপূর্ণাপুজোঃ- হুগলী


ঐতিহ্যের অন্নপূর্ণাপর্বঃ
 বিগত বেশকিছু দিন ধরে বনেদীয়ানা পরিবার অন্নপূর্ণাপুজো নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে চলেছে এবার এই পর্বালোচনার অষ্টমদিন, আজ প্রকাশিত হল হুগলী জেলার চন্দ্রবাড়ির অন্নপূর্ণা পুজোর ইতিহাস, লিখলেন শুভদীপ চলুন দেখা যাক সেই বাড়ির পুজোর রীতিনীতি
ঐতিহ্যের চন্দ্র বাটীর অন্নপূর্ণাপুজোঃ- হুগলী

হুগলির তারকেশ্বরের চন্দ্র বাড়ির অন্নপূর্ণা পুজো এই পুজোর প্রথম প্রচলিত হয় ১৯৬৬ সালে,তারপর থেকেই এই পুজো সাড়ম্বরে পালিত হয়ে আসছেএই পুজোর প্রতিষ্ঠাতা শঁরৎ চন্দ্রচন্দ্রদের আদি বাড়ি উত্তর কলিকাতার আহিরিটোলায়ওখানেও আনুমানিক ২০০ বছর ধরে অন্নপূর্ণা পুজো পালিত হয়ে আসছে১৯৫০ সাল থেকে শরৎ চন্দ্রের পরিবার তারকেশ্বরে বসবাস শুরু করেন কিন্তু অন্নপূর্ণা পুজো কলিকাতার বাড়িতেই হতোশঁরৎ চন্দ্রের স্ত্রী সঁখী সোনা চন্দ্র মাঝে মাঝে তারকেশ্বরের বাড়িতেই নূপুরের ধ্বনি শুনতে পেতেন তখন তিনিই তাঁর স্বামীকে কথাটি জানান আর সেই বছর থেকেই শরৎ চন্দ্র তাঁর বসতগৃহে অন্নপূর্ণা পুজোর প্রচলন করেনঅতীতে কলিকাতার কুমারটুলি থেকেই প্রতিমা আসতো একবার প্রতিমা আনতে গিয়ে দুর্যোগের মুখে পরলে প্রতিমা ভেঙে যায় তারপর থেকে স্থানীয় মৃৎশিল্পী কে.পি,কুন্ডুই এই প্রতিমার রূপদান করেনআগে নিজ বসতগৃহেই প্রতিমা নির্মান করা হলেও এখন শিল্পীর নিজস্ব  মৃৎশিল্পকেন্দ্রতেই প্রতিমা নির্মান করা হয়


  শাক্ত মতেই এই পুজো হয়অষ্টমী তিথিতেই মায়ের মূল পুজো হয়অন্নপূর্ণার বিগ্রহের ডান পাশে বাড়ির কুলদেবতা লক্ষীকেও বসানো হয়আগে বাড়ির উঠোনে পুজো হতো এখন মায়ের নিদিষ্ট মন্দিরেই পুজো হয়এখানে দেবীকে অন্নভোগ দেওয়ার রীতি নেই তবে শুকনো মিষ্টি, দই,রাবড়ি প্রভৃতি মা'কে নিবেদন করা করা হয়প্রাচীনে শঁরৎ চন্দ্রের আমলে বাড়িতেই হালুইকর এসে মিষ্টি বানাতো, কালের নিয়মে সেগুলি বন্ধ হয়ে গেছেপুজোর আগের দিন বাড়ির মেয়েরা মাকে সোনা,রূপার অলঙ্কারে সুসজ্জিত করেন১০৮টি দীপশিখা প্রজ্জ্বলন,বাড়ির এয়োস্ত্রীদের ধুনো পোড়ানোর রীতিও রয়েছেরামনবমীর দিন কনকাঞ্জলি প্রথা আর বরণের মধ্য দিয়ে মা'কে বিদায় দেওয়ার রীতি রয়েছে

কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ-শ্রীমতী সাবিত্রী দে এবং শ্যামল চন্দ্র ( শরৎ চন্দ্রের কনিষ্ঠা কন্যা এবং পঞ্চম পুত্র)
তথ্যসংগ্রহেঃ- দীপমাল্য চন্দ্র
তথ্যসূত্র লিপিবদ্ধেঃ- শুভদীপ রায় চৌধুরী



Monday, February 17, 2020

কদমতলার চট্টোপাধ্যায় বাড়িঃ- হাওড়া


অন্নপূর্ণাপর্বঃ
 বিগত সাতটি পর্বে আমরা মা অন্নপূর্ণার পুজো উপলক্ষে বিশেষ বিশেষ বাড়ির রীতিনীতির কথা উল্লেখ করেছি, আজ অন্নপূর্ণার অষ্টমপর্ব কেমন লাগছে আমাদের পর্বালোচনা?? আর কোন কোন বাড়ির অন্নপূর্ণা পুজোর কথা জানতে চান আপনারা??? জানান আমাদের এখুনি আজ আলোচনায় হাওড়ার কদমতলার চট্টোপাধ্যায় পরিবারের অন্নপূর্ণাপুজো চলুন দেখা যাক সেই বাড়ির পুজোর রীতিনীতির কথা
কদমতলার চট্টোপাধ্যায় বাড়িঃ- হাওড়া

১৯৮০ সালে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পুত্রবধু শ্রীমতী সরশী চট্টোপাধ্যায় তিনি দেবী পূজার প্রবর্তন করেন, আজ এই পুজোর বয়স প্রায় ৪০বছর অতিক্রান্ত  দেবী তাঁকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন সেই স্বপ্নাদেশে দেবীর নির্দেশেই পুজোর শুরু এই পরিবারে একদিন সরশীদেবী স্বপ্নে দেখছেন তিনি মা অন্নপূর্ণার ভোগ রান্না করছেন, এবং মা তাঁকে নির্দেশ দিচ্ছেন তিনিও যেন তাঁর পরিবারে দেবীর পুজোর সূত্রপাত ঘটান তখন তিনি তার বাড়িতে অন্নপূর্ণাপূজা শুরু করেন
কথায় কথায় সাহেব বাবু বললেন মায়ের আগমনের আগে তারা বুঝতে পারেন এবং দেবীও ইঙ্গিত দেন যে তিনি আবারও প্রতিবছরের মতন এবারও তাদের বাড়িতে আসছেন সাহেব বাবুর ঠাকুমা শ্রীমতী দীপা চট্টোপাধ্যায়ের থেকে তিনি শোনেন যে পুজোর আগে নূপুরের শব্দ, ধূপের গন্ধ ইত্যাদি পাওয়া যেত, যা ইঙ্গিত করে যে মা আসছেন তখন পরিবারের সদস্য(সাহেব বাবুর দাদু) মায়ের জন্য নূপুর নিয়ে আসেনএমন নানান ঘটনা রয়েছে এবং মৌখিক ইতিহাস রয়েছে এই চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পুজোয়



সম্পূর্ণ শাক্তমতে পুজো হয় এই পরিবারে একদিনেই অষ্টমীর পুজো নবমীর পুজো হয় এই পরিবারে সমস্ত নিয়ম মেনে নিষ্ঠার সাথে পুজো হয় এই পরিবারে পুজোর আগের দিন অধিবাসপর্ব হয় পরিবারে কুমারিপুজোরও রীতি রয়েছে নবমীর দিন সন্ধিক্ষণে সন্ধিপূজারও প্রচলিত ধারা রয়েছে এই পরিবারে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের প্রতিমা আসেন কলকাতার কুমোরটুলি থেকে, প্রতিমাশিল্পীঃ শ্রীমতী চায়না পাল মহাশয়া
চট্টোপাধ্যায় পরিবারে দেবীকে সমস্ত ধরনের গয়না পড়ানো হয় সোনার মুকুট, মানতাসা, সোনার বালা, সোনার চুর, সীতাহার, নূপুর, কানে সোনার দুল ইত্যাদি নানান অলংকারে সাজানো হয় পরিবারে দেবীকে অন্নভোগই প্রদান করা হয় ভোগে থাকে- সাদাভাত, পোলাও, পাঁচ রকমের ভাজা, তরকারি, চাটনি, পায়েস, নানান রকমের মিষ্টান্ন ইত্যাদি এছাড়া হোম, ১০৮দীপদান ইত্যাদি নানান রীতি রয়েছে এই অন্নপূর্ণা পূজায়এই পরিবারে কুমারিপুজোও হয়


চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পুজো করেন কুলপুরোহিত শ্রী পিন্টু চট্টোপাধ্যায় দশমীর দিন কনকাঞ্জলি প্রথাও রয়েছে এই পরিবারে দশমীর দিন দেবীকে পান্তাভাত, কচুরশাক ইত্যাদি ভোগ নিবেদন করা হয় এই ভাবে নিয়ম পালন করে নিষ্ঠার সাথে পূজিতা হন হাওড়ার কদমতলার চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দেবী অন্নপূর্ণা

কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ শ্রীমান্ সাহেব চট্টোপাধ্যায়

তথ্যসংগ্রহেঃ শ্রীমান্ শুভদীপ রায় চৌধুরী