Saturday, May 11, 2019

দেবী যোগাদ্যা


ঐতিহ্যের ইতিহাসপর্বঃ 
আজ প্রকাশিত হল শ্রীমান্ শঙ্খের লেখা দেবী যোগাদ্যা, পূর্ব বর্ধমানের অনন্য ইতিহাসের খোঁজ নিয়ে এলেন বনেদীয়ানা পরিবারের গুরুত্বপূর্ন সদস্য
দেবী যোগাদ্যা ক্ষীরগ্রাম, পূর্ব বর্ধমান


একদিকে দিগন্তবিস্তৃত ধানক্ষেত, কাকচক্ষু জলে ভরা দীঘি-পুকুর, আম-কাঁঠালের বাগান, মেঠো আলের পথ; কোথাও আবার লাল মোরামের ধূলোয় ঢাকা রাস্তা, প্রাণ জুড়ানো প্রকৃতির নির্মল বাতাস আবার একদিকে দামোদর অন্যদিকে অজয়-ময়ূরাক্ষীর বন্যা, এইসব মিলিয়ে বড় বৈচিত্র্যভরা আমাদের রাঢ়বঙ্গের প্রকৃতি ভারতভূমির মাতৃআরাধনার প্রশস্ত ক্ষেত্রগুলির মধ্যে এই রাঢ়বঙ্গেই রয়েছে সর্বাধিক সতীপীঠের দাপট আবার রাঢ় অঞ্চলের বর্ধমান বীরভূম জেলার মধ্যেই ছড়িয়ে আছে নয়()টি সতীপীঠ
আজ আমাদের আলোচনার বিষয়ে রয়েছে, পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ার অনতিদূরে মঙ্গলকোটের "সতীপীঠ ক্ষীরগ্রাম"
পীঠনির্ণয় তন্ত্র মতে, অষ্টাদশ মহাপীঠ 'লো ক্ষীরগ্রাম সেখানে উল্লেখ আছে,
"ক্ষীরগ্রামে ভৈরবঃ ক্ষীরখণ্ডকঃ
যুগাদ্যা সা মহামায়া দক্ষাঙ্গুষ্ঠ পদো মম।।"

অন্নদামঙ্গল রচয়িতা কবি রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র বলেছেন,
"ক্ষীরগ্রামে ডানি পা' অঙ্গুষ্ঠ বৈভব
যুগাদ্যা দেবী সেথা ক্ষীরখণ্ডক ভৈরব।।"

আবার তন্ত্রচূড়ামণি মতে বিংশতি(২০)-তম পীঠ রূপে ক্ষীরগ্রামের নাম পাওয়া যায় সেখানে, পীঠাধিষ্ঠাত্রী'কে ভূতধাত্রী এবং ভৈরব'কে ক্ষীরকণ্ঠ রূপে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে 'শিবচরিত'-মতে সাতচল্লিশ(৪৭)-তম সতীপীঠ হিসাবে ক্ষীরগ্রামের বর্ণনা পাওয়া যায়
মোটকথা, বর্ধমানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী রূপে যেমন দেবী সর্বমঙ্গলা বিরাজ করছেন, ঠিক তেমনই ক্ষীরগ্রামে দেবী যোগাদ্যা/যুগাদ্যা

সমৃদ্ধির শিরোমণি ক্ষীরগ্রাম একসময়ে ধনেজনে শ্রীমণ্ডিত এক বর্ধিষ্ণু জনবসতি হিসাবেই পরিগণিত হতো বিরাট বিরাট বাঁধানো ঘাট সহ দীঘি, সারি সারি আম-কাঁঠালের বাগান, ইঁটের থেকেও মজবুত মাটির একতলা, দোতলা বা তিনতলা পর্যন্ত বাড়ী, ছড়ানো ছিটানো মন্দির দেউল নিয়ে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র জগৎ!
ক্ষীরগ্রামের পশ্চিমদিকে অবস্থিত লিগন(বর্তমান নিগন) গ্রামে রয়েছেন স্বয়ম্ভু লিঙ্গ শ্রী শ্রী লিগ্ণেশ্বর বা লিঙ্গেশ্বর পূর্বদিকে গীধ গ্রামে রয়েছেন শ্রী শ্রী গীধেশ্বর উত্তরে সিল্বল গ্রামে রয়েছেন শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বর এবং দক্ষিণে পুইনিপলাসী গ্রামে রয়েছেন শ্রী শ্রী পাতিলেশ্বর
স্থানীয় লোকবিশ্বাস মতে ক্ষীরগ্রামকে কেন্দ্র করে চারদিকের চারটি গ্রামে কোনো এক ইতিহাসবিস্মৃত কাল থেকেই চারটি স্বয়ম্ভু শিবলিঙ্গ নাকি পীঠকে রক্ষা করে চলেছেন
ক্ষীরগ্রামের স্থানীয় পীঠ নির্ণয়ক প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসাবে 'যোগাদ্যা বন্দনা' নামক প্রায় চল্লিশটি অধ্যায় বিশিষ্ট এক পুঁথি পাওয়া যায় পুঁথি রচয়িতা স্বর্গীয় পণ্ডিতপ্রবর বাঞ্ছারাম বিদ্যারত্ন ভট্টাচার্য্য সেখানে বলে গেছেন,
"বন্দিব যোগাদ্যা যুগ-আদ্যাশক্তি মাতা
ধর্ম অর্থ কাম মোক্ষ চতুর্বর্গ দাতা।।
ভয়ঙ্কর ঘোর মূর্তি তীক্ষ্ণ খড়্গ হাতে
উগ্রচণ্ডা নামে দেবী আছিলা লঙ্কাতে।।"

বাঙলার পলিমাটির কবি স্বর্গীয় কৃত্তিবাস ওঝা রচিত রামায়ণের উপাখ্যান অনুযায়ী ত্রেতাযুগে এই দেবী যোগাদ্যা' সতীঅঙ্গটি নাকি লঙ্কার অধিষ্ঠাত্রী দেবী উগ্রচণ্ডা রূপে পূজিতা হতেন! শ্রী রামচন্দ্রের বনবাসকালে লঙ্কারাজ রাবণ সীতাহরণ করলে, বহুচেষ্টায় সীতা অন্বেষণে মর্যাদা পুরুষোত্তম অনুগত দাসানুদাস মহাবীর হনুমান লঙ্কায় যান সীতার সন্ধানে তারপরের বর্ণনা অনুযায়ী, 'যোগাদ্যা বন্দনা' রচয়িতা লিখেছেন,
"সীতাহারা হয়ে শ্রীরাম বনে পেয়ে শঙ্কা
অন্বেষণে হনুমানে পাঠাইলো লঙ্কা।।
হনুমানে স্বর্ণলঙ্কা সমর্পণ করি
পাতালে মহির ঘরে গেলেন শঙ্করী।।
রাবণ-তনয় সেই মহিরাবণ নাম
পাতালে হরিয়া নিলো লক্ষ্মণ শ্রীরাম।।
হনুমানে গেল তথা রামের উদ্দেশ্যে
রামেরে উদ্ধার কৈল বধিয়া রাক্ষসে।।
সঙ্গে করি নিয়া হরি আনিল দশভূজা
ক্ষীরগ্রামে আসি কৈল দেবীর পূজা।।
বিশ্বকর্মা রামাজ্ঞায় হয়ে আগুয়ান
বিচিত্র এক দেউল কৈল নির্মাণ।।
মহাপীঠে মহামায়া করিয়া স্থাপনা
যুগাদ্যা নাম তাহার করিল ঘোষণা।।
হরিদত্ত নামে রাজা আছিল শুইয়া
স্বপ্নেতে কহিল মাতা শিয়রে বসিয়া।।
কত নিদ্রা যাও রাজা হইয়া অচেতন
কৈলাশ ছাড়িয়া আইনু তোমার ভবন।।
তোমার সদয় আমি দেবী ভদ্রকালী
মোর পূজা কর নিত্য দিয়া নরবলি।।
বহু স্তুতি করে রাজা কৃতাঞ্জলি হয়ে
করিব তোমার পূজা নরমুণ্ড দিয়ে।।"


কিংবদন্তী অনুযায়ী জনৈক রাজা হরিদত্তের নাকি সাত পুত্র ছিলেন তিনি দেবীর আদেশ অনুযায়ী সাত পুত্রের বলি দিয়ে দেবীবিগ্রহের আরাধনা শুরু করেন তখন থেকেই প্রথা অনুসারে দেবীর তৃপ্তিসাধনের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন একটি করে নরবলি দেওয়া শুরু হয় রাক্ষসকুল অধ্যুষিত লঙ্কারাজের ইষ্টদেবী উগ্রচণ্ডা রাক্ষস দ্বারা নিত্যসেবিতা হওয়ার দরুণ বড় বেশীই নররক্তবিলাসী হয়ে ওঠেন তাই রাক্ষসকুল ত্যাগ করার পরেও, তাঁর রসনাতৃপ্তির উৎকণ্ঠা একই থেকে যায়! যাইহোক, মোটকথা রাজা হরিদত্তের আমল থেকেই দেবীর নিত্য সেবাপূজার বিশেষ অঙ্গ হিসাবে নরবলিদানের প্রথা চালু হয়
এইভাবেই একদিন দেবীর নিত্যপূজারির পালা আসে পূজারি ব্রাহ্মণের নাকি একটিই মাত্র পুত্র সন্তান ছিলেন ব্রাহ্মণ তাঁর একমাত্র সন্তানকে কোনোমতেই দেবীর সমক্ষে বলি দিতে রাজি ' কীভাবেই বা নিজের হাতে নিজের বংশধরকে উৎসর্গ করেন! তাই বহু ভেবেচিন্তে উপায়ান্তর না পেয়ে স্ত্রীপুত্র সমেত গ্রাম ছেড়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নে' পালাদারের আগের রাত্রে অতি গোপনে তিনি সপরিবারে পালাচ্ছেন এমন সময়ে অযাচিতভাবে রাস্তায় দেখা হয়, এক অশীতিপর বৃদ্ধার সঙ্গে তারপর বৃদ্ধা পূজারিকে জিজ্ঞেস করছেন,
"দ্বিজের নন্দন 'য়ে কেন এই সময়
এতরাতে কোথা যাও প্রাণে পেয়ে ভয়।।
কিবা রাজপীড়া হইল তোমার শরীরে
কি হেতু পালাইয়া যাও সত্য কহ মোরে।।
ব্রাহ্মণ বলেন মাতা কহিতে ভয়বাসি
যোগাদ্যা নামেতে এক এসেছে রাক্ষসি।।
প্রাণরক্ষা নাহি পাই ক্ষীরগ্রামী হয়ে
স্ত্রীপুত্র লয়ে তাই যাই পলাইয়ে।।
এত শুনি হাসিয়া কহেন কাত্যায়নী
যার ভয় পাইয়াছো সেই দেবী আমি।।
শুনিয়া ব্রাহ্মণ তবে অতি ভয় পেয়ে
বহু স্তুতি করে তাকে কৃতাঞ্জলি হয়ে।।
তুমি ভগবতী মাতা প্রত্যয় না হয়
ছলনা করিয়া কেন ভণ্ডাহ আমায়।।
আশ্বিনে অম্বিকামূর্তি যদি দেখিতে পাই
তবে সে প্রত্যয় হয়ে ঘরে ফিরে যাই।।
ভকতবৎসলা মাতা দেবী কাত্যায়নী
হইলেন বিপ্র অগ্রে মহিষমর্দিনী।।
সিংহপৃষ্ঠে শোভা পায় দক্ষিণচরণ
বামাঙ্গুষ্ঠে করিয়াছে মহিষ মর্দন।।
বিগলিত কুন্তল শোভিছে পৃষ্ঠোপরে
কণককিরীট শোভে মস্তক উপরে।।
ভালে শোভে চারুচন্দ্র চন্দ্রচূড় ধারা
দানবদলনী মাতা বিশ্ব-মনোহরা।।
কোটিচন্দ্র জিনি রূপ শ্রীমুখমণ্ডল
সীমন্তে সিন্দূরবিন্দু করে ঝলমল।।"


দেবী ব্রাহ্মণকে অভয়দান করে ঘরে ফিরে যাওয়ার আদেশ দিলেন এবং নিজে রাজা হরিদত্তের স্বপ্নে প্রকট হয়ে নরবলি বন্ধের আদেশ দিলেন সেই থেকেই নাকি নরবলি প্রথা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং পরিবর্তে ছাগ-মহিষাদি বলির প্রথা শুরু হয় দেবী যোগাদ্যা নাকি সেই পূজারি ব্রাহ্মণকে কথা দিয়েছিলেন যে, শুরুর থেকে যতজন বলির শিকার হয়েছে সবার প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রচলিত লোকবিশ্বাস বলে যে, তা নাকি সত্যিই হয়েছিলো! এবং সেই পুনরুজ্জীবিতদের বর্তমান বংশধরেরা আজও নাকি দেবীর বিশেষ বিশেষ পূজায় এখানে আসেন বংশরক্ষার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে যান দেবীর কাছে
ইংরেজ আমলে কয়েকবার নাকি ক্ষীরগ্রামে নরবলি নিয়ে একাধিকবার গুজব ছড়ালেও নির্দিষ্ট প্রমাণের অভাবে কোনো স্থির সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়নি ব্যাপার সেখানেই চাপা পড়ে গেছে
দেবী যোগাদ্যার নিত্য উপস্থিতি ভক্তদের অযাচিতভাবে দর্শনদান ইত্যাদি বহু দৈবিক এবং অতিলৌকিক ঘটনার উল্লেখ প্রতিটি ক্ষীরগ্রামবাসীর মুখে মুখে ফেরে বিশেষত ভানুদত্ত নামক এক শাঁখারীর থেকে শাঁখা পড়ার ঘটনা আজও লোকমুখে যথেষ্ট প্রচলিত

পীঠনির্ণয়তন্ত্রের বর্ণনা অনুযায়ী, বর্তমান ক্ষীরগ্রামের ক্ষীরদীঘি অঞ্চলেই দেবীর ছিন্নঅঙ্গ পতিত হয়েছিলো সেই স্থান কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে দেবীর আজকের মন্দিরটি বর্ধমান মহারাজাধিরাজ কীর্তিচন্দ্র মোহতাব বাহাদুর নির্মাণ করিয়ে দেন তাঁর আগেও এই মন্দিরের সত্ব পর্যায়ক্রমে কৃষ্ণনগর, পাটুলী উত্তরপাড়া রাজপরিবারের হাতে ছিলো সেই সময়েও মন্দির মন্দিরাধিষ্ঠাত্রীর বেশ কিছু সংস্করণ হয়েছে দেবোত্তর ভূসম্পত্তিও কমবেশী দান করা হয়েছে
শোনা যায়, কালাপাহাড়ের দুর্দন্ত হাত থেকে দেবীবিগ্রহকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে তৎকালীন পুরোহিতরা দেবীর বিগ্রহ পার্শ্ববর্তী ক্ষীরদীঘিতে ফেলে দেন কালাপাহাড়ের তাণ্ডবে দেবীমন্দির ভৈরবমন্দির ইত্যাদি ধ্বংস হওয়ার পরে তন্নতন্ন করে খুঁজেও কালাপাহাড় বিগ্রহের সন্ধান পায়নি দেবী মন্দিরের ভৈরব ক্ষীরখণ্ডকের সয়ম্ভু লিঙ্গের মাথায় আস্ত্রাঘাতের চিহ্ন আজও স্পষ্ট এবং মন্দিরের ভিতরে বর্তমানে যে কয়টি প্রাচীন অলঙ্করণ দেখা যায়(যদিও সংখ্যায় তা খুবই নগন্য), তা দেখে স্পষ্টত বোঝা যায় যে মুসলমান আমলে বিধর্মীদের অত্যাচার এবং ধ্বংসলীলায় দেবীর দেউল বারংবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে
যাইহোক, কালাপাহাড়ের দাপট কমে গেলে পুরোহিতদের তরফে এবং তৎকালীন শাসককুলের তরফেও বহুবার দীঘিতে খোঁজাখুঁজি করেও দেবীর বিগ্রহ পাওয়া যায়নি তাই অগত্যা, স্থানীয় দাঁইহাট নিবাসী বিখ্যাত প্রস্তরশিল্পী স্বর্গীয় নবীনচন্দ্র ভাস্কর বর্ধমানরাজের আদেশে দেবীর নতুন বিগ্রহ তৈরী করে দেন বর্ধমানরাজ দেবীর ভৈরবের মন্দিরও নতুন তৈরী করিয়ে দেন সেও প্রায় দু' বছর আগের কথা তখন থেকেই দেবীর নতুন বিগ্রহেই পূজো হয়ে আসছে ইতিমধ্যে, বেশ বছরখানেক আগে ক্ষীরদীঘি সংস্কারের সময়েই অযাচিতভাবে পাঁকের ভিতর থেকে দেবীর প্রাচীন বিগ্রহটি পাওয়া যায় স্বাভাবিকভাবেই গ্রামে সাড়া পড়ে যায়! তখন থেকে সেবায়েতরা এক নতুন নিয়মের সূচনা করেন সারাবছর দেবীর সেবাপূজা হবে নতুন বিগ্রহে এবং বার্ষিক বিশেষ বিশেষ পূজার সময়ে দেবীর প্রাচীন বিগ্রহটি জল থেকে তোলা হবে! বাকী সময়ে উনি জলেই নিমজ্জিত থাকবেন এখন প্রতিবছর বৈশাখের সংক্রান্তিতে দেবীর প্রাচীন বিগ্রহটি জল থেকে তোলা হয় আবার পূজার পরে সেইদিনই রাতে দেবী জলে নিমজ্জিত ' এছাড়াও, আষাঢ়-নবমী, ১৫ই পৌষ এবং মাঘমাসের মাকরী সপ্তমীর দিন দেবীকে জল থেকে আনা হয়
কিংবদন্তী অনুসারে, শ্রীরাম ভক্ত হনুমান নাকি দেবীর বিগ্রহটি এক সুরঙ্গপথে এনেছিলেন সেই সুরঙ্গের পথ আজ একটি পাথর দিয়ে বন্ধ করা আছে আবার অনেকে বলেন, সুরঙ্গেই নাকি বলি দেওয়া নরশরীর ফেলে দেওয়া হতো! তাই, এখন মুখটি পাথর চাপা দিয়ে বন্ধ করা আছে
এখানকার কিছু স্থানীয় লোকাচার অনুযায়ী বছরে দেবীর উদ্দেশ্যে কিছু বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যেমন বৈশাখের যে রাত্রে দেবীকে জল থেকে তোলার আগে, 'ডোমচুয়াড়ী খেলা' হয় ২৮শে বৈশাখ থেকে ৩০এ বৈশাখ অব্দি দেবীর নিত্যসেবিত বিগ্রহের উদ্দেশ্যে কোনো ভোগ নিবেদন হয়না আবার প্রাচীন বিগ্রহটি জলে নিমজ্জনের আগে চিনির মণ্ডা ছাগবলি দেওয়া হয় মাঘমাস জুড়ে দেবীর মন্দিরে আরও একটি অনুষ্ঠান হয় মন্দিরের ঢাকীরা ঐসময়ে সদর চৌকাঠের ভিতরে এক'পা বাইরে এক'পা রেখে চোখে কাপড়বাঁধা অবস্থায় ঢাক বাজান প্রচলিত মতবিশ্বাস, দেবী ঐসময়ে সখী পরিবৃত্ত হয়ে মন্দিরে আসেন ঢাকের তালে তালে নৃত্যলীলা করতে এই অনুষ্ঠান, 'নিশিঢেম্বুল' নামে পরিচিত এছাড়াও অন্যান্য নিয়মের মধ্যে, বৈশাখমাসে গ্রামের কেউ জমিতে লাঙল টানেন না, ঢেঁকিতে শস্য কাটেন না, এমনকি অযাচিত অতিথি বা ভিখারীকেও যথাসাধ্য সেবা পরিচর্যায় সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেন

দেবীর মন্দির সত্ব পর্যায়ক্রমে কোন কোন রাজন্যকুলের হাতে এসেছে, তার একটি ধারণা পাওয়া গেলেও সেবায়তেত সত্বের ধারাটি সুস্পষ্ট জানা যায়না বর্তমানে, শ্রী শ্রী যোগাদ্যা মাতা ট্রাস্ট গঠিত হয়েছে এবং স্থানীয় কয়েকটি ব্রাহ্মণ পরিবারের উপরেই দেবীর নিত্যপূজার পালা ঠিক করা আছে যদিও বিশেষ পূজোর সময়ে সকল সেবায়েতের তরফ থেকেই সমানভাবে সহযোগিতায় দেবীর আরাধনা সাঙ্গ হয়
এই পীঠে দেবী যোগাদ্যা, দুর্গামন্ত্রে পূজিতা নিত্যসেবার সঙ্গে দর্শনার্থীদের বসিয়ে ভোগ খাওয়ানোর ব্যবস্থাও আছে আবার মহোৎসবের দিন হলে তো কথাই নেই!
সারাবছর ধরে ক্ষীরগ্রামবাসী অপেক্ষা করেন বৈশাখের সংক্রান্তির জন্য মন্দিরের পাশাপাশি স্থানীয় সকলের বাড়ীর সদরে বসানো হয় মঙ্গলঘট-কলাগাছ সকলেই যেন দেবীকে নিজের গৃহে চিরকাল অভয়া রূপে বিরাজ করার আর্জি জানান এইতো সামনেই, কয়েকদিনের মাথায় আসছে দেবীর মহাপূজো পারলে আসুন না দেবী দর্শনে!
তথ্যসূত্র- শ্রীমান্ শঙ্খ


No comments:

Post a Comment