Thursday, May 9, 2019

চতুর্ভূজা দুর্গা-কাটোয়া


ঐতিহ্যের ইতিহাসপর্বঃ 
আজ বনেদীয়ানায় প্রকাশিত হল কাটোয়ার চতুর্ভুজা দুর্গার ইতিহাস লিখলেন পরিবারের সদস্যা শ্রীমতী দেবযানী বসু আলোচনায় আবারও অনন্য ইতিহাস, বনেদীর-বনেদীয়ানা'
চতুর্ভূজা দুর্গা কাটোয়া
সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই ভারত তথা বাংলাদেশের ধর্মীয় ক্ষেত্রে বারবার পালাবদল ঘটেছে বৌদ্ধ, জৈন ধর্ম একসময় বাংলায় প্রাধান্য লাভ করেছিল মুসলমান শাসকদের প্রভাবে ইসলাম ধর্মের প্রভাব বেড়েছিল কিন্তু শেষপর্যন্ত বাংলায় হিন্দুধর্মেরই জয়জয়কার হয় হিন্দুধর্মের মূলত তিনটি শাখা- শাক্ত, শৈব এবং বৈষ্ণব বাংলায় একেক শাসক ছিলেন এক এক ধারার পৃষ্ঠপোষক তাই বিভিন্ন সময়ে বাংলায় এই হিন্দুধর্মের তিনধারার জোয়ার বয়ে এসেছে সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতাব্দীতে শাক্তধর্মের প্রভাব বাড়ায় শক্তিপুজো অর্থাৎ দুর্গাপুজোর প্রধান্য লক্ষ্য করা যায় এবং সেই পুজোর সংখ্যাও বেড়ে যায় সেই সময়ে তার আগে যে বৈষ্ণব ভাবধারা সাধারণ মানুষকে আপ্লুত করেছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায় বৈষ্ণবচেতনার দুর্গাপুজোর মধ্যদিয়ে বর্ধমানের বৈষ্ণবধাম কাটোয়ার জেলেপাড়ার দাসচৌধুরী পরিবারের চতুর্ভুজা দুর্গামূর্তি, অতীতের শক্তি আরাধনার সঙ্গে বৈষ্ণব ধারার সুন্দর সমন্বয় ঘটিয়েছে
 কাটোয়া বহু প্রাচীন এক জনপদ শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু কাটোয়াতেই গুরুর কাছে বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষা নিয়েছিলেন তাই নবদ্বীপের পরই কাটোয়া এক পরম বৈষ্ণব তীর্থক্ষেত্র কাটোয়ার জেলেপাড়ার তাঁতি সম্প্রদায় দাসচৌধুরীদের আরাধ্য দুর্গা দশহাতের মূর্তি নয় বিষ্ণুর চারহাতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই দশহাতের স্থানে এসেছে চারহাত ওপরের দুটি হাতে খাঁড়া এবং চক্র নীচের দুইহাতে ত্রিশূল সাপ বাহন সিংহের থাবায় রক্তাক্ত মহিষাসুর থাকলেও মহিষ নেই সম্ভবত বৈষ্ণবধর্মে গরু মহিষের প্রাধান্য থাকায় দেবীর সঙ্গে মহিষ থাকে না মা এখানে ঘরের মেয়ে রূপেই পূজিতা তাই ডাকের সাজ নয়, একেবারে লাল বেনারসী, অলংকারে সাজানো হয় দেবীকে মায়ের চারহাতে পরানো হয় অসংখ্য শাঁখা, অপূর্ব মাতৃমূর্তি এইরূপ বৃন্দাবনের চতুর্ভূজা কাত্যায়নী দুর্গাপ্রতিমার আদলে এই মৃন্ময়ীরূপ তৈরী হয়েছে
 প্রায় চারশো বছর আগে অত্যন্ত ধার্মিক দাসচৌধুরী পরিবার ছিলেন যথেষ্ট ধনবান প্রভাবশালী পাঁচুগোপাল দাসচৌধুরী জমিদারিও পেয়েছিলেন তৎকালীন নবাবের কাছ থেকে তাঁর পিতা ভৈরব দাস এই চতুর্ভূজা দুর্গামূর্তির আরাধনা শুরু করেন আগে এই পরিবারে কালী, দুর্গা, জগদ্ধাত্রী সব পুজোই হত সাড়ম্বরে কিন্তু ক্রমশ অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় তাদের পুর্বপুরুষরা আর পুজো করতে পারবেন না বলে স্থির করেন এবং প্রতিমা ভাসিয়ে দিতে যায়, তখন দেবীর স্বপ্নাদেশ পান দেবীর আদেশেই তারা তখন চতুর্ভূজা দুর্গাপুজো শুরু করেন, কারণ দেবী বলেন যে এই মূর্তিতে পুজো করলেই সমস্ত পুজো করা হবে সেই থেকে ভৈরব দাস চতুর্ভূজা দুর্গামূর্তির পুজো শুরু করেছিলেন দুর্গাপুজোর সঙ্গেই কালী, জগদ্ধাত্রী পুজো করা হয়, আলাদাভাবে করা হয় না বৈষ্ণবমতে পুজো হয় বলে বলিপ্রথা নেই, নেই অন্নভোগও লুচিভোগই দেওয়া হয় দেবীকে পরিবারে কুমারিপুজোও হয় না বৈষ্ণবধারার সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকায় ঢাক, ঢোল, কাঁসির বাজনার সাথে চলে হরিনাম সংকীর্তন লোহার গাড়িতে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় বিসর্জনের পর নতুন কাপড় পরিয়ে কাঠামো নিয়ে আসা হয় দালানে শুরু হয় নিত্যপূজা পারিবারিক পুজো হলেও এই পুজোকে কেন্দ্র করে কাটোয়ার মানুষের একটা আলাদা আকর্ষণ রয়েছে
তথ্যসূত্রঃ শ্রীমতী দেবযানী বসু(সাংবাদিক)

No comments:

Post a Comment