Thursday, May 9, 2019

অশ্বথ্থতলা কালীমন্দির


ঐতিহ্যের ইতিহাসপর্বঃ 

 প্রকাশিত হল হাওড়ার সালকিয়া অঞ্চলের প্রাচীন কালীমন্দিরের ইতিহাস ব্যানার্জী বাগান লেনের এই প্রাচীন অশ্বথ্থতলা কালীমন্দিরের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করলেন শ্রীমান্ শুভদীপ রায় চৌধুরী বনেদীয়ানা পরিবারের উদ্দেশ্যেই হল প্রাচীন ইতিহাসের সন্ধান করা এবং তা লিপিবদ্ধ করা কিছু দিনের মধ্যেই বনেদীয়ানা আন্তর্জাতিক সম্মানে সম্মানিত হতে চলেছে আজ আলোচনায় অশ্বথ্থতলা কালীমন্দিরের ফলহারিণী কালীপুজোর ইতিহাস
সালকিয়া, হাওড়া অশ্বথ্থতলা কালীমন্দির

উত্তর হাওড়ার একটি প্রাচীন অঞ্চলের নাম সালকিয়া এই সালকিয়া অঞ্চলের জমিদারি পেয়েছিলেন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার, সেই পরিবারের অন্যতম কুলতিলক গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় এই বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের জমিদারির আমলে তেমন কোন পুজো হত না পুজো বলতে জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো বছরে ওই একবারই সাধারণ মানুষের জন্য জমিদার বাড়ির দ্বার উন্মুক্ত থাকত একসময় হঠাৎ মহামারী দেখা দেয় চতুর্দিকে বহু মানুষ এই মহামারীর প্রকোপে মারা যেতে থাকে এই মহামারীর হাত থেকে বাঁচতে বহু মানুষ অঞ্চল ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যেতে শুরু করে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের জমিদার চন্তায় পড়ে যান যে কিভাবে সেই প্রকোপ থেকে সবাইকে বাঁচাবেন সেই সময় দেবী স্বপ্নাদেশ দেন যে তাঁকে ফলহারিণী রূপে পুজো করতে সেই পুজো করলে তবেই সকল দুর্দশা দুর হবে দেবী এও বলেন যে, তাঁর পুজোর জোগাড় নিজেই করবেন
 এই কালীপুজো বর্তমানে ব্যানার্জী বাগান সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির উদ্দ্যোগে হয়ে আসছে পুজোর সঠিক বয়স জানা না গেলেও আনুমানিক ৩০০বছরেরও প্রাচীন এই পুজো মহাসাড়ম্বরে এখনও এই ফলহারিণী কালীপুজো অনুষ্ঠিত হয় এই মন্দিরে বহু ভক্তের সমাগম ঘটে এই দিনে
পুজো শুরুর প্রথম দিকে অর্থাৎ যখন এই পূজা শুরু হয়েছিল তখন পুজোর ঠিক আগের দিন মন্দির সংলগ্ন পুকুর পুজো করে একটি কাগজে যা যা গয়না বাসনপত্র লাগবে লিখে পুকুরের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হত মা ফলহারিনী তার পূজার গয়না বাসনপত্র নিজেই সেই পুকুর থেকে তুলে দিতেন আবার পূজার ঠিক পরের দিনই এলাকার বাসিন্দারা সেই গয়না বাসনপত্র পুকুর ঘাটে রেখে দিতেন, মা আবার নিজেই সেগুলি পুকুরে নামিয়ে নিতেন
এলাকার বাসিন্দারা যারা এই পুজোতে উপবাস থাকতেন, তারা নিজেরাই পুকুর থেকে কই মাছ ধরতেন মায়ের ভোগের জন্যকারন কই মাছ ভাজা না দেওয়া হলে , মায়ের ভোগ সম্পূর্ণ হত না

মায়ের ভোগের চাল, শাক-সবজি ধোয়া থেকে শুরু করে রান্না করা সবটাই গঙ্গা জলে ছাড়া হয় না পূর্বে এলাকার মা বোনেরা গঙ্গা থেকে কলসি করে জল নিয়ে আসত মায়ের ভোগের জন্য
মায়ের পুজোতে পশু বলি নিষিদ্ধ বলি দেওয়া হয় শুধুমাত্র ছাঁচিকুমড়ো
গীতিকার পুলক বন্দোপাধ্যায়ের বাড়ির নারায়ণ শিলা, মঙ্গল চন্ডীর ঘট বলির খাঁড়া বছরে একটি বারের জন্য বাড়ির বাইরে বার করে ব্যানার্জী বাগান অশথ্বতলা কালী মন্দিরে নিয়ে আসা হয় শুধুমাত্র মায়ের পূজার জন্য জমিদার বাড়ির খাঁড়া ছাড়া মায়ের পূজার বলি দেওয়া যাবে না, এটাই নিয়ম
যেহেতু মায়ের নাম ফলহারিনী কালী তাই, ফল ছাড়া পূজা দেওয়া চলে না একটি মাত্র ফল হলেও তা মায়ের কাছে নিবেদন করতে হয়
আমাদের এই কালী মন্দিরের নিয়ম অনুযায়ী নির্জলা উপবাস চলে না এই পুজোতে কোনো মানুষ যদি মানসিক পূর্ণ করার জন্য দন্ডি খাটেন তাহলে তিনি জল গ্রহন করতে পারেন
সাধারণত আমরা অনান্য কালী পুজোতে দেখে থাকি যে, পূজা শেষে ভোরবেলা বিসর্জন ক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় কিন্তু মা ফলহারিনী কালীকে ভোরবেলা বিসর্জন দেওয়া হয় না পরের দিন রাত্রি বেলা বিসর্জন দেওয়া হয়
তথ্যসূত্র চিত্রঃ শ্রীমান্ বিশাল নন্দী



No comments:

Post a Comment