Friday, May 31, 2019

অনন্ত শ্রী ঠাকুর সীতারামদাস ওঙ্কারনাথ দেব


রত্নগর্ভা ভারতভূমি পর্ব
 আজ প্রকাশিত হল অনন্ত শ্রী ঠাকুর সীতারামদাস ওঙ্কারনাথ দেব পর্ব-, লিখলেন বনেদীয়ানা পরিবারের গুরুত্বপূর্ন সদস্য শ্রীমান্ কৃষ্ণেন্দু বিশ্বাস শ্রী শ্রীমৎ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী পর্ব শেষে আজ শুরু হল ঠাকুর ওঙ্কারনাথ দেবকে নিয়ে প্রথমপর্ব
 অনন্ত শ্রী ঠাকুর সীতারামদাস ওঙ্কারনাথ দেব

 "যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত
 অভ্যুথ্থানাম্ অধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্।।"
 বর্তমান কাল থেকে প্রায় ৫০০০ বছর আগে বৃন্দাবনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অবতীর্ণ হয়েছিলেন গোলকের স্বপার্ষদ নিয়ে মর্ত্যধামে তাঁর লীলাসম্বরণ করে ফিরে যাওয়ার আগে সকল মানবের জন্য যেটি রেখে গিয়েছিলেন সেটি হল "শ্রীমদ্ভাগবদ্গীতা", যার ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ আজ সমগ্র মানবজাতি গীতার উল্লিখিত শ্লোকটির অর্থ হল, জগতে ধর্মের সংকট কালে ভগবান আবির্ভূত হন পৃথিবীতে, যুগে যুগে
কলিযুগে শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভুর পর বহু মহাপুরুষের জন্ম হয় ভারতবর্ষে, যাদের "অমৃতস্যপুত্রা" বলা হয় এই মহাপুরুষগণের মধ্যে অন্যতম বঙ্গ প্রাণপুরুষ হলেন সীতারামদাস ওঙ্কারনাথ ঠাকুর বাংলায় হুগলি জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম কেওটায় ১৮৯২ সালের ৬ই ফাল্গুন নিজ মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শ্রী ওঙ্কারনাথ ঠাকুর পিতা প্রাঁণহরি চট্টোপাধ্যায় এবং মাতা মাঁল্যবতী দেবী সদ্যোজাত শিশুর নামকরণ করা হয় প্রবোধচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাল্যকালে প্রবোধ হারিয়ে ফেলেন তার মা মাল্যবতীকে তবে তাঁর পিতা প্রাঁণহরি চট্টোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় স্ত্রী গিরিবালা দেবী, ছোট্টো প্রবোধকে চোখে হারাতেন "প্রেবো"(প্রবোধ) ছিল তাঁর চোখের মণি গিরিবালা মায়ের ভালোবাসায় প্রবোধ বড়ো হতে থাকে
 একদিন প্রবোধের হঠাৎ ঘুম ভেঙে উঠে বলেন তাঁর পিতাকে, "বাবা উনি কে বাবা, গলায় মস্ত সাপ, সর্বাঙ্গে ছাই মেখে সাদা, হাতে শূল আর মাথায় জটা কে বাবা উনি?" পিতা প্রাঁণহরি চট্টোপাধ্যায় বুঝলেন যে ছোট্টো প্রবোধ কোন সাধারণ কেউ নয়, যে ছেলে বাল্যবস্থায় শিবদর্শণ পান সে কখনই সামান্য কেউ নন, অবশ্যই কোন মহাপুরুষ বা দিব্যপুরুষ হবেন এইরকমভাবে কত ছোট্টো ছোট্টো অদ্ভূত লীলার সাক্ষী ছোট্টো প্রবোধের পিতা মাতা এবং আত্মীয়স্বজন

 ডুমুরদহের বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত আছেন "ব্রজনাথ", নিত্যসেবাও হয় তবে সেবা চলে অভাবের সংসারে খুবই কষ্টে একদিন দেখা যায় যে ভারার সম্পূর্ণ খালি, তখন গিরিবালা দেবী প্রবোধকে বলেন সেই অভাবের কথা এবং সঙ্গে সঙ্গে একথাও বলেন যে সেই দিন ব্রজনাথের সেবার মতন অন্নও নেই তখন ছোট্টো প্রবোধ মাকে বললেন, চিন্তা করো না, যার সেবার অন্ন সে নিজেই জোগাড় করে নেবেন হঠাৎই সেইদিন এক ভক্ত নিত্যসেবার জন্য দক্ষিণা দিয়ে গেলেন তখন গিরিবালা দেবী বললেন প্রবোধকে, যার সেবার অন্ন সে নিজেই জোগাড় করবেন
 এরপর প্রবোধ বাল্যাবস্থার প্রথমেই তাঁদের গ্রামের কাছেই এক বিদ্যালয়ে শিক্ষার প্রথম পর্ব শুরু করেন কিছুদিন পর তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে দাশরথীদেব যোগেশ্বরকে নিজের গুরু পদে বরণ করবেন যদিও তাঁকে পাশ্চাত্য শিক্ষার জন্য "ব্যান্ডেল চার্চ স্কুল" ভর্তি করা হয়েছিল, কিন্তু তাঁর হৃদয় জুড়ে ছিল ভারতীয় সংস্কার এবং শিক্ষা তাই কিছুদিন পরই তিনি সেই স্কুল পরিত্যাগ করেন ভারতীয় সাংস্কৃতিক শিক্ষা বা বৈদিক বিদ্যাভ্যাস করেন তাঁর গুরু দাশরথী দেবের কাছে খুব অল্পসময়েই তিনি বৈদিক শাস্ত্র সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করেছিলেন তারপর তাঁর বিদ্যালাভ সমাপ্ত হলে প্রবোধ তাঁর নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন আনুমানিক ১৯১৮ সালে একদিন রাত্রে প্রবোধ যখন ধ্যানমগ্ন তখন তিনি দর্শন করলেন দেবী দুর্গা আর তার সাথে দেবাদিদেব মহাদেবকে

 ছোটোবেলা থেকেই প্রবোধের বিবাহের প্রতি তীব্র উদাসীন মনোভাব ছিল বিবাহে তিনি নৈব নৈব কিন্তু বিধির বিধান তো খণ্ডন করা যায় না, তখন ঠাকুরের সাধনার প্রথম স্তর চলছে, তিনি তখন রয়েছেন তাঁর গুরু দাশরথী দেবের গৃহে সেই গ্রামের এক ছোট্টো মেয়ে এসে দাশরথী দেবকে বললেন, তাঁর এই শিষ্যটিকে বড়ো পছন্দ এবং বিবাহের প্রস্তাবও দিলেন দাশরথীদেব এই প্রস্তাব শুনে খুশি হয়ে প্রবোধকে বললে, প্রবোধ অত্যন্ত ব্যথিত হন এবং এই বিবাহে তিনি একদমই সম্মতি প্রদানে নাকচ করেন কিন্তু দাশরথী দেব তাঁকে বলেন যে তিনি এই বিবাহে কথা দিয়েছেন, এই বিবাহ তাঁকে করতেই হবে এটাই গুরুদেবের আদেশ এমন অবস্থায় গুরু আদেশ না শুনলে মহাপাতক হবেন তাই তিনি পালিয়ে গেলেন বিবাহ না করার জন্যে এদিকে বিবাহের দিন আগত, সমস্ত আয়োজন প্রায় শেষের পথে কিন্তু পাত্র নিখোঁজ তাই মনের দুঃখে গুরুদেব দাশরথী দেব গেলেন পাত্রীর বাড়িতে সেই দুঃসংবাদ দিতে সেই সংবাদ দিতে গিয়ে গুরুদেব অবাক কারণ ছোট্টো কমলা তাঁকে এসে বললেন, চিন্তা করো না যার বিবাহ সে ঠিক সেই সময়েই আসবে কমলা আরও বললেন, "আমি যে তাঁকে সংসারে বাঁধতে আসিনি, এসেছি তাঁর সাধনার পথ অগ্রসর করতে"
 বিবাহের দিন প্রবোধ উপস্থিত এবং তিনি বিবাহ করতেও সম্মতি জানিয়েছেন এই কথা শুনে গুরুদেব দাশরথী দেবও খুশি হলেন তিনি প্রবোধকে প্রশ্ন করলেন এই পালিয়ে যাওয়ার কারণ কী? তখন উত্তরে প্রবোধ বললেন যে, তিনি এই বিবাহের প্রস্তাব মেনে না নিতে পেরে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং সাধনায় মগ্ন হন তখন তিনি আদেশ পান বিবাহ করার তাই তিনি বিবাহের জন্য প্রত্যাবর্তন করলেন বিবাহের পর সংসার জীবনে মনোনিবেশে চরম অভাব তার মধ্যেও ব্রজনাথের সেবা চলছে সংসারে মন কিন্তু প্রবোধের বসল না, শুধু সাধনায় ডুবতে চায় সে, সে শুধু চায় সংসার থেকে চলে যেতে কিন্তু সংসারের দ্বায়িত্ব তাঁকে রাস্তায় যাওয়া থেকে বিরত করে ক্রমশ......
তথ্যসূত্রঃ শ্রীমান্ কৃষ্ণেন্দু বিশ্বাস


No comments:

Post a Comment