Tuesday, June 18, 2019

শ্রী ঠাকুর সীতারামদাস ওঙ্কারনাথ দেব পর্ব-২


রত্নগর্ভা ভারতভূমিপর্বঃ
 আজ রত্নগর্ভা ভারতভূমির পর্বে আজ অনন্ত শ্রী ঠাকুর ওঙ্কারনাথ দেব-এর দ্বিতীয়পর্ব প্রকাশিত হল, লিখলেন শ্রীমান্ কৃষ্ণেন্দু বিশ্বাস আলোচনায় আজ ঠাকুর সীতারামদাস ওঙ্কারনাথ দেব


 প্রথমপর্বের লিঙ্ক-
দিন চলে যায় আপন খেয়ালে প্রবোধের মন যে আর সংসারে বসতে চায় না শুধু সাধনার উদ্দেশ্যে প্রাণ ব্যাকুল হয়ে ওঠে এমত অবস্থায় প্রবোধ নিজ স্ত্রী কমলাকে বলেন যে আমরা দুটি জ্যোতির কণা ওলোক থেকে এলোকে নেমে এসেছি তোমার কি কিছুই মনে পরে না? সেই কথা শুনে কমলা মা বললেন, ভুলে গেলে তো মনে পড়বে, আমি তো ভুলিই নাই তোমার সাধনার পথে বাঁধা দিতে আসিনি এমত অবস্থায় প্রবোধ সাধনা করার নিমিত্ত এম বনের মধ্যে বড়ো গর্ত খুঁড়ে মাটির তলায় বসে গুরু প্রদত্ত মন্ত্র জপ করতে থাকে জপসমাপন হলে তিনি জপে কী লাভ করলেন তা নিজের গুরুদেবকে দেখানোর জন্য চলে আসেন নিজ গুরুদেবের কাছে তখন গুরুদেব দাশরথী ঠাকুর গোয়াল ঘরে গো পরিচর্যা করছিলেন, গুরুপত্নী শিষ্য প্রবোধকে নিয়ে গোয়াল ঘরে গুরুদেবের নিকট যান এবং গুরুদেবকে বলেন তাঁর কথা, তখন গুরুদেব গুরুমাকে পাশাপাশি বসিয়ে প্রবোধ নিজ শরীরে বিশ্বরূপ দর্শন করান নিজ গুরুদেবকে সেই দৃশ্য দেখে গুরু দাশরথী দেব অবাক হয়ে কিছুক্ষণ থাকেন তারপর প্রবোধকে বলেন যে তিনি তাঁকে সম্মোহিত করে এই রকম দৃশ্য দেখিয়েছেন কিন্তু কিছুক্ষণ পর গুরু দাশরথী দেব সম্বিত ফিরে পেয়ে বলেন যে, তুমি আমার গুরু না আমি তোমার গুরু যদি আমি তোমার গুরু হই তাহলে আমি আদেশ দিচ্ছি এই মুহূর্তে বলো তুমি বিদ্যা কোথায় শিখিলে? আর যদি তুমি আমার গুরু হও তবে আমি তোমার চরণে নিবেদন করছি বিদ্যা তুমি আমায় শিখাইয়া দাও নিজ গুরু মুখে কথা শ্রবণ করে প্রবোধ হাত জোড় করে বলেন যে- "গুরু কৃপাহি কেবলম্" আপনার আশীর্বাদে আপনার প্রদত্ত মন্ত্রের দ্বারাই আমি ইহা পেয়েছি পরবর্তীকালে তাঁর গুরু দাশরথী দেব তাঁর নাম দিলেন "সীতারাম দাস" এর কিছু কাল পর ডুমুরদহ গ্রামে কলেরা দেখা দিয়েছিল কমলা মায়ের শরীরও কলেরায় আক্রান্ত হল, কমলা মা খবর পাঠালেন তাঁর স্বামীকে এখানে আসার জন্য তিনি একবার দেখবেন খবর পেয়ে প্রবোধ এসে উপস্থিত হল কমলা মা নিজ স্বামী প্রবোধচন্দ্র অর্থাৎ সীতারাম দাসকে দর্শন করে শরীর ত্যাগ করলেন সীতারাম তাঁর পত্নী কমলা মায়ের মাথায় হাত দিয়ে বললেন যাও কমলা তোমার নিজলোকে ফিরে যাও, বৈকুণ্ঠের হেঁসেল যে ফাঁকা অনেক দিন সেই দিনই গৃহ ছেড়ে পুনরায় সাধনার জন্য রওয়া দিলেন প্রবোধচন্দ্র পথে একজন জিজ্ঞাসা করলেন পাড়ায় কার বাড়িতে কী হয়েছে? প্রবোধ বললেন নির্বিকার চিত্তে, "চাটুজ্যের বাড়ির ছোটো বউ মরেছে" এতটাই সংসারের প্রতি উদাসীন ছিলেন প্রবোধচন্দ্র পুনরায় মন দিলেন সাধনায় সাধনা করতে করতে প্রবোধের পূর্বের কিছু স্মৃতির কথা জানতে পারলেন যে পূর্বজন্মে তিনি একজন বিখ্যাত মাতৃসাধক ছিলেন এবং শুধু গুরুমন্ত্র জপ করে হরপার্বতীর দর্শন লাভ করেছিলেন এরপর দাক্ষিণাত্য বা দক্ষিণ ভারতে যান এবং সেখানে শ্রীসম্প্রদায়ের সাথে যোগ দিয়ে কিছু কাল থাকেন তবে সম্প্রদায়ের কিছু গোঁড়ামির জন্য যেমন শ্রীসম্প্রদায়ের ইষ্ট লক্ষ্মীনারায়ণ এবং তাঁরা শ্রীমতী রাধা ঠাকুরানীর অস্তিত্বকে স্বীকার করেন না কিন্তু এদিকে তাঁর বাড়িতে ব্রজনাথ ব্রজরাণী সেবা হয়, তাদেখেই তিনি ছোটোবেলা থেকে বড় হয়েছেন তাই শ্রীসম্প্রদায়ের এই মতবাদ তিনি মেনে নিতেই পারতেন না এছাড়াও শ্রীসম্প্রদায়ের একটি বিশেষ নিয়ম আছে তা হল লক্ষ্মীনারায়ণ ব্যতীত অন্য কোন দেবদেবীর পূজা তো দুরের কথা, অন্য কোন দেবদেবীর প্রসাদ পাওয়া বা মন্দিরে পর্যন্ত যাওয়ার অনুমতি নেই সবথেকে উল্লেখযোগ্য হল একটি অত্যন্ত কষ্টকর দীক্ষা পদ্ধতিতে ঠাকুর অত্যন্ত ব্যথিত হন যেখানে ওই সম্প্রদায়ে দীক্ষা নেওয়ার সময় হোম অগ্নির পাশে থাকবে শঙ্খ চক্র অঙ্কিত ছাপ, যেটি অগ্নির তাপে গরম করে দীক্ষার্থীর বাহুতে দুটি চিহ্ন করে দেওয়া হত, যাকে সম্প্রদায়ে শ্রীদাসত্ব বা ভগবানের দাসত্বের প্রমাণ হিসাবে গণ্য করা হত এই কিছু কারণের জন্য ঠাকুর শ্রীসম্প্রদায় থেকে বেরিয়ে আসার সংকল্প করেন ক্রমশ..... 
তথ্যসূত্রঃ শ্রীমান্ কৃষ্ণেন্দু বিশ্বাস





No comments:

Post a Comment