জগতজননী
শ্রীশ্রীমাসারদাঃ
আজ উত্তরকলকাতার বাগবাজারের বাড়িতে শ্রীশ্রীসারদাজননীর শুভ
পদার্পণতিথি... মায়ের শ্রীচরণে বনেদীয়ানা'র পরিবারের পক্ষথেকে
জানাই অনেক প্রণাম।
জয়তু শ্রীরামকৃষ্ণ।।
জয় শ্রীশ্রীমা।।
'আমি সত্যিকারের মা;
গুরুপত্নী নয়, পাতানো মা
নয়, কথার কথা মা
নয়- সত্য জননী।'-
আজ বনেদীয়ানা পরিবার আলোচনা করবে
রত্নগর্ভা ভারতভূমির দেবী সত্যজননী মা
সারদা'র জীবনের কিছু
অংশ নিয়ে। শ্রীশ্রীসারদাজননীর
এই কথা আলোচনা করবে
আজ পরিবারের সদস্য শ্রীমান্ শুভদীপ
রায় চৌধুরী। বনেদীয়ানা'য় আজ মা
সারদার জীবনের কিছু লীলাপ্রসঙ্গ।
ধর্মের ইতিহাসে সারদাদেবী
অধ্যাত্ম-শক্তির কেন্দ্রে অবস্থিতা। শ্রীরামকৃষ্ণ
যে অনন্ত সত্যের দ্রষ্টা,
স্বামী বিবেকানন্দ সেই সত্যের প্রবক্তা,
প্রচারক ও ভাষ্যকার এবং
সারদাদেবী তারই ব্যবহারাদর্শ।
মায়ের গুরুভাব দেবীভাবেরই প্রকাশ। শাস্ত্রমতে
অবশ্য মাতাকে ও গুরুকে
দেবীভাবে পূজার্চনার বিধান স্বীকৃত।
শ্রীশ্রীমা তাঁর অগণিত মন্ত্রশিষ্য
বা ভাবদীক্ষিত গৃহীসন্তানদের চোখে গুরুভাব বিমণ্ডিতা
হয়েও মাতৃরূপেই প্রকাশমানা। শ্রীশ্রীমা
তাঁর গুরুশক্তির অভয়-অঙ্কে যাঁদের
গ্রহণ করেছিলেন-মন্ত্র-দীক্ষায় কৃতার্থ
গৃহী-সন্তানরা তাঁদের মধ্যে অন্যতম। শ্রীশ্রীমায়ের
দীক্ষিত গৃহী-সন্তানদের কয়েকটি
শ্রেণীতে বিভক্ত করা যেতে
পারে। প্রথমত,
শ্রীরামকৃষ্ণের প্রত্যক্ষ গৃহী-লীলাসহচরবৃন্দের মধ্যে
অন্তত একজন তাঁর কাছে
দীক্ষালাভ করেছিলেন-তিনি শ্রীম।
শ্রীম মাকে শুধু গুরুপত্নী
হিসাবেই দেখতেন না, দেখতেন
সাক্ষাৎ শ্রীরামকৃষ্ণের অন্যরূপ হিসাবে। দ্বিতীয়ত,
যে সমস্ত গৃহী-সন্তানদের
মধ্যে স্বপ্ন-সিদ্ধি ঘটেছে-তাঁদের শ্রীশ্রীমায়ের স্মরণ
ও মননাশ্রয়ের মধ্য দিয়ে মায়ের
সম্বন্ধে তাঁদের ধ্যানধারণা।
তৃতীয়ত, কুলগুরুর কাছে দীক্ষাগ্রহণের পর
পুনরায় শ্রীশ্রীমায়ের কাছে দীক্ষাগ্রহণ এবং
তাঁদের দৃষ্টিতে মায়ের ভাবমূর্তি।
চতুর্থত, ঠাকুরের মহাপ্রয়াণের পর শ্রীশ্রীমায়ের প্রত্যক্ষ
দীক্ষাগ্রহণকারী গৃহী-সন্তানদের তাঁর
সম্বন্ধে ধারণা।
শ্রীশ্রীমা সারদাজননী যোগানন্দ স্বামীকে ১৮৮৬-৮৭ সালে
সর্বপ্রথম দীক্ষাদান করেছলেন। এককথায়
স্বামী যোগানন্দ হলেন শ্রীশ্রীসারদাজননীর প্রথম
মন্ত্রশিষ্য। শ্রীরামকৃষ্ণ
ছিলেন আনন্দময় পুরুষ। শ্রীমায়ের
কথায়ঃ "কি সদানন্দ পুরুষ
ছিলেন! হাসি, কথা, গল্প,
কীর্তন চব্বিশ ঘন্টা লেগেই
থাকত। আমার
জ্ঞানে তো আমি কখন
তাঁর অশান্তি দেখিনি।" আবার
বলেছেন, 'তাঁকে কখনও নিরানন্দ
দেখিনি। পাঁচ
বছরের ছেলের সঙ্গে বা
কি, আর বুড়োর সঙ্গেই
বা কি, সকলের সঙ্গে
মিশেই আনন্দে আছেন।
কখনও বাপু নিরানন্দ দেখিনি।' এদিক
থেকে সারদাদেবীও শ্রীরামকৃষ্ণের যোগ্যা সঙ্গিনী।
শ্রীরামকৃষ্ণের সাধনা ও আদর্শের
উত্তরাধিকার লাভ করেছেন সারদাদেবী।
শ্রীশ্রীমায়ের
উক্তি ছিল-"যদি শান্তি চাও
কারও দোষ দেখো না। দোষ
দেখবে নিজের। জগৎকে
আপনার করে নিতে শেখো। কেউ
পর নয়, জগৎ তোমার।" মায়ের আজ
শুভ পদার্পণতিথিতে বনেদীয়ানা'র ছোট্টো নিবেদন
মায়ের কিছু লীলাকাহিনী আপনাদের
সামনে তুলে ধরা।
প্রণাম শ্রীশ্রীসারদাজননী। শ্রীরামকৃষ্ণ
রহস্য করে শ্রীমা সম্পর্কে
বলতেনঃ- 'ছাইচাপা বেরাল।' বেরাল
ছাইয়ের গাদার মধ্যে শুয়ে
থাকলে তার গায়ের রং
সঠিক কেউ বুঝতে পারে
না, তেমনি সংসারে আর
পাঁচজনের মধ্যে শ্রীমা এমনভাবে
সাধারণ একজন হয়ে থাকতেন
যে, তাঁর স্বরূপ সাধারণের
অজ্ঞাত ছিল। শুধু
সাধারণের কাছে কেন, শ্রীরামকৃষ্ণের
অন্তরঙ্গ পার্ষদের কাছেও। তাই
স্বামী বিবেকানন্দ ক্ষোভের সাথে গুরুভাইদের আমেরিকা
থেকে লিখেছিলেন, 'মা-ঠাকুরন কি
বস্তু বুঝতে পারনি, এখনও
কেহই পার না, ক্রমে
পারবে।' স্বামী
প্রেমানন্দ লিখেছেন, শ্রীশ্রীমাকে কে বুঝেছে?... ঐশ্বর্যের
লেশ নাই। ঠাকুরের
বরং বিদ্যার ঐশ্বর্য ছিল;... কিন্তু মার-তাঁর
বিদ্যার ঐশ্বর্য পর্যন্ত লুপ্ত! এ কি
মহাশক্তি!' মায়ের শ্রীচরণে বনেদীয়ানা'র পরিবারের সদস্যদের
পক্ষথেকে প্রণাম জানাই...
"জয়
জয় গুরুমাতা জগৎ-জননী।
রামকৃষ্ণ ভক্তিদাত্রী চৈতন্যদায়িনী।।"
তথ্যঋণঃ
"শতরূপে সারদা"(কিছু অংশ)-স্বামী
লোকেশ্বরানন্দ, প্রকাশকঃ- স্বামী প্রভানন্দ(অধ্যক্ষ),
"রামকৃষ্ণ মিশন ইনসটিটিউট অব
কালচার-গোলপার্ক"
তথ্যসংগ্রহেঃ
শ্রীমান্ শুভদীপ রায় চৌধুরী
No comments:
Post a Comment