#প্রসঙ্গ_ঈশ্বর_ও_ব্রহ্মতত্ত্ব
"জড়টাই
সব। মনটা
কিছু নয়। বড়জোর
মনটা হলো জড় মস্তিষ্কের
একটা সাময়িক তরঙ্গমাত্র।
যেমন, ঝঙ্কারটা বেহালার তারের একটা সাময়িক
কম্পনমাত্র, তার না থাকলে
ঝঙ্কার থাকে না।
তেমনই, দেহ না থাকলে
মনও থাকে না; অর্থাৎ,
মনের কোনো স্বতন্ত্র অস্তিত্ব
নেই".... এটিকেই কিছু তথাকথিত
দার্শনিক, বিদগ্ধ পণ্ডিত "জড়বাদ"
বলে আখ্যা দিয়েছেন।
তাঁরা বোধহয় এটা একবারও
ভেবে দেখেননি যে, মন না
থাকলে 'জড়' নামক বস্তুর
অস্তিত্ব বা উপলব্ধি করার
মাধ্যম টা ঠিক কী
হবে! কারণ এ'কথা
তো অনস্বীকার্য্য যে, 'জড়'-কে
'জড়' বলে উপলব্ধি করার
জন্য একটা অন্ততঃ 'মন'-এর প্রয়োজন।
মন না থাকলে জড়ও
থাকে না। হয়তো
কোনো পণ্ডিত তর্কের খাতিরে
বলবেন, "জড় থাকে, তবে
তার উপলব্ধি আসে না"।
তাহলে, জড়ের সংজ্ঞাটা কী?
পূর্বে বলা হ'তো
বিস্তৃতি(Extension) অর্থাৎ, একটি পরমাণু যে
স্থান জুড়ে আছে, সেখানে
অন্য একটি পরমাণু আসতে
বা বসতে পারে না,
পূর্ববর্তী পরমাণু তাকে বাধা
দেয়, তার অস্তিত্ব স্বীকার
করে নিতে বাধ্য করে। বৈজ্ঞানিকগণ
এখন আবার সেই পারমাণবিক
অস্তিত্বকেও ভেঙে ফেলেছেন, তাঁদের
মতে পরমাণুই শেষ তত্ত্ব নয়। প্রতিটি
পরমাণু 'ইলেকট্রন' 'নিউট্রন' ও 'প্রোটন' দ্বারা
গঠিত। প্রত্যেক
পরমাণুর কেন্দ্রে 'নিউক্লিয়াস'-টি 'নিউট্রন' ও
'প্রোটন' দ্বারা গঠিত।
এক একটি ভিন্ন স্বভাবসম্পন্ন
পরমাণুর এক একটি নিউক্লিয়াসকে
কেন্দ্র করে তার চারদিকে
কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ইলেকট্রন
কণা নেচে বেড়াচ্ছে।
আমাদের হিন্দুধর্মের কোনো এক পুরাণগ্রন্থের
পৌরাণিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু
চরিত্রের সমাবেশ ঘটিয়ে এই
কেন্দ্রস্থিত নিউক্লিয়াস(রাধাকৃষ্ণ)-কে ঘিরে ইলেকট্রন
কণা(গোপিনী)-র নিরন্তর নেচে
বেড়ানোকে #রাসনৃত্য বলে বর্ণনা করা
হয়েছে এবং 'নিউট্রন', 'প্রোটন'
ও 'ইলেকট্রন' সমন্বিত এক একটি পরমাণুকেই
রূপকের আড়ালে #রাসমণ্ডল বলা
হয়েছে। এটিই
পরমাণুর স্বরূপ। ইলেকট্রন
বা প্রোটন বা নিউট্রনের
কোনো ঘনত্ব নেই।
তারা বিদ্যুতের মতো একটি শক্তিপ্রবাহ
মাত্র। একটি
ধনাত্মক, অপরটি ঋণাত্মক বিদ্যুৎপ্রবাহ
বা শক্তি। বস্তুর
স্বরূপ এই যে, তা
ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অর্থাৎ, কর্মেন্দ্রিয় বা ক্ষেত্রবিশেষে জ্ঞানেন্দ্রিয়
দ্বারা তাকে ধরা ছোঁয়ার
অধীনে এনে অস্তিত্ব নিরূপণ
করা যায়। কিন্তু,
শক্তি কোনো ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তু
নয়। আমরা
অগ্নিও দেখি আবার তৃণকে
অগ্নিদগ্ধ হতেও দেখি।
কিন্তু, অগ্নির দাহিকা শক্তিকে
চাক্ষুষ করতে পারি না,
তা কেবল অগ্নির প্রকটতা
দেখে অনুমান করে নিই। এই
যে অনুমান করে নেবার
ক্ষমতা, এর জন্যেও একটি
মনের প্রয়োজন। মন
না থাকলে, অনুমান কোথা
থেকে আসবে? আর অনুমান
করার ক্ষমতা না থাকলে,
শক্তির অস্তিত্ব সম্পর্কে ধারণাই বা কোথা
থেকে আসবে? বস্তুকে চূড়ান্ত
পদার্থ বলে গণ্য না
করে শক্তিকে চূড়ান্ত বলে গণ্য করলেও,
মনকে অস্বীকার করার কোনো যুক্তিগ্রাহ্য
হেতু নেই। কারণ
মনও 'চিন্তাশক্তি' মাত্র- শক্তিরই একটি
প্রকারভেদ। এমনও
বলা যেতে পারে যে,
শক্তিই একমাত্র তত্ত্ব। তার
এক কোটিতে 'জড়', অপর কোটিতে
'চৈতন্য'। 'দেহ'
এবং 'মন' এই দু'টি তত্ত্ব নিয়েই
জগৎ গঠিত। কিন্তু,
এদেরও অতিরিক্ত আরও একটি তৃতীয়
তত্ত্ব আছে, যার নাম
'শক্তিতত্ত্ব'। বেদদ্রষ্টা
ঋষির অন্তর্দৃষ্টিতে সেই তত্ত্বই প্রকট
হয়ে শক্তির স্বত্ত্বা সম্পর্কে
সম্পূর্ণ ধারণা দিয়ে গেছে।
"অহং
সুবে পিতরমস্য মূর্ধন্ মম যোনিরূপস্বন্তঃ সমুদ্রে।
ততো বিতিষ্ঠে ভুবনানু বিশ্বোতামূং দ্যাং বর্ষ্মণোপস্পৃশামি।।"
অর্থাৎ,
আমিই সর্বাধার পরমাত্মার উপরে দ্যুলোককে প্রসব
করেছি। বুদ্ধিবৃত্তীর
মধ্যস্থ যে ব্রহ্মচৈতন্য, উহাই
আমার অধিষ্ঠান(ঈড়া, পীঙ্গলা ও
সুষুম্নার মিলিত কেন্দ্রবিন্দু)।
আমিই ভূরাদি সমস্ত লোকে
সর্বভূতে ব্রহ্মসত্ত্বার বিভিন্ন প্রকাশে বিরাজিতা। আমিই
মায়াময় রূপ ধারণপূর্বক সমগ্র
ভূ এবং দ্যুলোককে পরিব্যাপ্ত
করে আছি।
"অহমেব
বাত ইব প্রবাম্যারভমাণা ভুবনানি
বিশ্বা।
পরো দিবা পর এনা
পৃথিবৈতাবতী মহিনা সংবভূব।।"
অর্থাৎ,
আমিই ভূরাদি সমস্ত লোকে
সর্বভূত সৃষ্টি করে, বায়ুর
মতো স্বচ্ছন্দ গতিতে উহাদের অন্তরাত্মা
ও বহিঃপ্রকাশের সর্বত্র যথেচ্ছ বিচরণ করে
থাকি। যদিও,
স্বরূপতঃ আমি এই আকাশের
অতীত ও পৃথ্বীব্যাদি গ্রহজগৎ
তথা সূর্য্যাদি নক্ষত্রজগতেরও অতীত অসঙ্গ-ব্রহ্মস্বরূপিণী,
তথাপি স্বীয় মহিমায় এই
জগদ্-রূপ(দ্রষ্টাঋষির শরীর
অবলম্বন পূর্বক) ধারণপূর্বক তত্বালোচনা করলাম।
(বেদঃ
ঋক্, মণ্ডলঃ ১০ম, অনুবাকঃ
১০ম, দ্রষ্টাঋষিঃ বাক্, সূক্তসংখ্যাঃ ১২৫,
পংক্তি সংখ্যাঃ ৭, ৮)
আবার আমাদের শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে
এই তত্ত্ব সম্পর্কে বলা
হয়েছে, "তস্মিন্ ত্রয়ং সুপ্রতিষ্ঠাক্ষরং চ"(১/৭)।
অর্থাৎ, এই ত্রিতত্ত্ব (দেহ,
মন ও শক্তি) যথাক্রমে
সুপ্রতিষ্ঠিত অক্ষর/অক্ষয়(যার
কোনো ক্ষয় নেই, রূপান্তর
আছে কেবল)।
কাজেই
চেষ্টা করেও শ্রুতি উল্লিখিত
শক্তিতত্ত্বকে অস্বীকার করার কোনো উপায়
নেই। তাই
তথাকথিত 'জড়বাদী' সাজা, কোনো অংশেই
যুক্তিসঙ্গত নয়।
আবার ঐ অনন্ত শক্তিকে
শুধু চিন্ময় বলে মনে
করলেও সঠিক তৃপ্তিসাধন হয়না। তাঁকে
মঙ্গলময় ও আনন্দময় বলেও
মনে হয়। এই
মঙ্গলময়তা বা আনন্দময়তার উৎস
খুঁজে বের করা তো
কারো সাধ্যের মধ্যে পড়ে না। তাই
জড়বাদী সাজাও ঠিকঠাক হয়ে
ওঠেনা। জড়চিতির
অন্তরালে সর্বদাই "ব্রহ্মতত্ত্ব"-ই উঁকি দেন।
বৃহদারণ্যক
উপনিষদের তৃতীয় অধ্যায়ের সপ্তম
ব্রাহ্মণে মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য, উদ্দালক
অরুণির প্রশ্নের উত্তরে বলেছেনঃ
যঃ পৃথ্যিব্যাং তিষ্ঠন্ পৃথ্যিব্যা অন্তরো যং পৃথিবী
শরীরং।
যঃ পৃথিবীমন্তরো যময়ত্যেষ ত আত্মাহনৃতর্যাম্যমৃতঃ।। (৩)
অর্থাৎ,
যিনি পৃথিবীতে বাস করছেন, যিনি
পৃথিবীর অভ্যন্তরে রয়েছেন, পৃথিবী যাঁর বিষয়ে
জ্ঞাত নয়, পৃথিবীই যাঁর
শরীর, যিনি পৃথিবীর অভ্যন্তর
থেকে পৃথিবীকে নিয়মিত করছেন, তিনিই
তোমার আত্মা, তিনিই অন্তর্যামী
অর্থাৎ, যিনি সকলের অন্তরে
থেকে সকলকে নিয়মিত করছেন,
তিনিই অন্তর্যামী আত্মা।
যো অপ্সু তিষ্ঠন্ অদ্ভ্যোহন্তরো
যমাপো ন বিদুর্যস্যাহপঃ শরীরং।
সোহপোন্তরো
যময়ত্যেষ ত আত্মাহন্তর্যাম্যমৃতঃ।। (৪)
অর্থাৎ,
যিনি জলে বাস করছেন,
যিনি জলের অভ্যন্তরে রয়েছেন,
জল যাঁর সম্পর্কে জ্ঞাত
নয়, জলই যাঁর শরীর,
যিনি জলের অভ্যন্তরে থেকে
জলে নিয়মিত করছেন, তিনিই
তোমার আত্মা, তিনিই অমৃত,
অন্তর্যামী।
যোহগ্নৌ
তিষ্ঠন্নগ্নেরন্তরো যমগ্নির্ন বেদ যস্যাগ্নিঃ শরীরং।
যোহাগ্নিমন্তরো
যময়ত্যেষ ত আত্মাহন্তর্যাম্যমৃতঃ।। (৫)
অর্থাৎ,
যিনি অগ্নিতে বাস করছেন, যিনি
অগ্নির অভ্যন্তরে রয়েছেন, অগ্নি যাঁর সম্পর্কে
জ্ঞাত নয়, অগ্নিই যাঁর
শরীর, যিনি অগ্নির অভ্যন্তরে
থেকে অগ্নিকে নিয়মিত করছেন, তিনিই
তোমার আত্মা, তিনিই অমৃত।
যোহন্তরিক্ষে
তিষ্ঠন্নন্তরিক্ষাদন্তরো যমন্তরিক্ষং ন বেদ যস্যান্তরিক্ষং
শরীরং।
যোহন্তরিক্ষমন্তরো
যময়ত্যেষ ত আত্মাহন্তর্যাম্যমৃতঃ।। (৬)
অর্থাৎ,
যিনি অন্তরীক্ষে বাস করছেন,যিনি
অন্তরীক্ষে লীন হয়ে রয়েছেন,
অন্তরীক্ষ যাঁর সম্পর্কে জ্ঞাত
নয়, অন্তরীক্ষই যাঁর শরীর, যিনি
অন্তরীক্ষকে অভ্যন্তর থেকে নিয়মিত করছেন,
তিনিই তোমার আত্মা, তিনিই
অমৃত।
যো বায়ৌ তিষ্ঠন্ বায়োরন্তরো
যঃ বায়ু র্ন বেদ
যস্য বায়ু শরীরং।
যো বায়োরন্তরো যং বায়ুরন্তরো যময়ত্যেষ
ত আত্মাহন্তর্যাম্যমৃতঃ।। (৭)
অর্থাৎ,
যিনি বায়ুতে বাস করছেন,
যিনি বায়ুর অভ্যন্তরে রয়েছেন,
বায়ু যাঁর সম্পর্কে জ্ঞাত
নয়, বায়ু যাঁর শরীর,
যিনি বায়ুর অভ্যন্তরে থেকে
বায়ুকে নিয়মিত করছেন, তিনিই
তোমার আত্মা, তিনিই অমৃত।
যো দিবি তিষ্ঠন্দিবোহন্তরো যং
দ্যৌর্ন বেদ যস্য দ্যৌঃ
শরীরং।
যো দিবমন্তরো যময়ত্যেষ ত আত্মাহন্তর্যাম্যমৃতঃ।। (৮)
অর্থাৎ,
যিনি স্বর্গে বাস করছেন, যিনি
স্বর্গের অভ্যন্তরে রয়েছেন, স্বর্গ যাঁর শরীর,
যিনি অভ্যন্তর থেকে স্বর্গকে নিয়মিত
করছেন, তিনিই তোমার আত্মা,
তিনিই অমৃত।
য আদিত্যে তিষ্ঠন্নাদিত্যাদন্তরো যমাদিত্যো ন বেদ যস্যহদিত্যঃ
শরীরং।
য আদিত্যমন্তরো যময়ত্যেষ ত আত্মাহন্তর্যাম্যমৃতঃ।। (৯)
অর্থাৎ,
যিনি আদিত্যে বাস করছেন, যিনি
আদিত্যের অভ্যন্তরে রয়েছেন, আদিত্য যাঁর সম্পর্কে
জ্ঞাত নয়, আদিত্য যাঁর
শরীর, যিনি আদিত্যের অভ্যন্তরে
থেকে আদিত্যকে নিয়মিত করছেন, তিনিই
তোমার আত্মা, তিনিই অমৃত।
য দিক্ষু তিষ্ঠন্দিগ্ভ্যোহন্তরো যং দিশো
ন বিদুর্যস্য দিশঃ শরীরং।
দিশোহন্তারা
যময়ত্যেষ ত আত্মাহন্তর্যাম্যমৃতঃ।। (১০)
অর্থাৎ,
যিনি দিকসমূহে বাস করছেন, যিনি
দিকসমূহের অভ্যন্তরে রয়েছেন, দিকসমূহ যাঁর সম্পর্কে জ্ঞাত
নয়, দিকসমূহই যাঁর শরীর, যিনি
অভ্যন্তরে থেকে দিকসমূহকে নিয়মিত
করছেন, তিনিই তোমার আত্মা,
তিনিই অমৃত।
যশ্চন্দ্রতারকে
তিষ্ঠাংশ্চন্দ্রতারকাদন্তরো
যং চন্দ্রতারকং ন বেদ যস্য
চন্দ্রতারকং শরীরং।
যশ্চন্দ্রতারকন্তরো
যময়ত্যেষ ত আত্মাহন্তর্যাম্যমৃতঃ।। (১১)
অর্থাৎ,
যিনি চন্দ্র ও নক্ষত্রসমূহে
বাস করছেন, যিনি চন্দ্রাদির
অভ্যন্তরে রয়েছেন, চন্দ্রাদি নক্ষত্রই যাঁর শরীর, যিনি
অভ্যন্তর থেকে চন্দ্রাদি কে
নিয়মিত করছেন, তিনিই তোমার
আত্মা, তিনিই অমৃত।
য আকাশে তিষ্ঠন্নাকাশাদন্তরো যমাকাশো ন
বেদ যস্যাকাশঃ শরীরং।
য আকাশমন্তরো যময়ত্যেষ ত আত্মাহন্তর্যাম্যমৃতঃ।। (১২)
অর্থাৎ,
যিনি আকাশে বাস করছেন,
যিনি আকাশ ব্যাপী, আকাশ
যাঁর সম্পর্কে জ্ঞাত নয়, আকাশই
যাঁর শরীর, যিনি ব্যপ্ত
আকাশকে অভ্যন্তর থেকে নিয়মিত করছেন,
তিনিই তোমার আত্মা, তিনিই
অমৃত।
যস্তমসি
তিষ্ঠাংস্তমসোহন্তারো যং তমো ন
বেদ যস্য তমঃ শরীরং।
যস্তমোহন্তরো
যময়ত্যেষ ত আত্মাহন্তর্যাম্যমৃতঃ।। (১৩)
অর্থাৎ,
যিনি অন্ধকারে বাস করছেন, অন্ধকারে
লীন হয়ে রয়েছেন, অন্ধকার
যাঁর সম্পর্কে জ্ঞাত নয়, যিনি
অভ্যন্তরে থেকে অন্ধকারকে নিয়মিত
করছেন তিনিই তোমার আত্মা,
তিনিই অমৃত।
যন্তেমসি
তিষ্ঠংস্তেজসোহন্তরো যং তেজো ন
বেূ যস্য তেজঃ শরীরং।
যন্তেজোহন্তরো
যময়ত্যেষ ত আত্মাহন্তর্যাম্যমৃতঃ ইত্যধিদৈবত যথার্বিভূতমঃ।। (১৪)
অর্থাৎ,
যিনি তেজে বাস করছেন,
তেজের অভ্যন্তরে রয়েছেন, তেজ যাঁর সম্পর্কে
জ্ঞাত নয়, তেজই যাঁর
শরীর, যিনি অভ্যন্তর থেকে
তেজকে নিয়মিত করছেন, তিনিই
তোমার আত্মা, তিনিই অমৃত।
এইগুলির
দ্বারা ব্রহ্মের আধিদৈবিক সম্বন্ধ অর্থাৎ, দেবতাদের সঙ্গে তাঁর যা
সম্বন্ধযোগ তার বর্ণনা দেওয়া
হলো।
যঃ সর্বেষু ভূতেষু তিষ্ঠন্ সর্বেভ্যো
ভূতেভ্যোহনন্তরো যং সর্বাণি ভূতানি
ন বিদুর্যস্য সর্বাণি ভূতানি শরীরং।
যঃ সর্বাণি ভূতান্যন্তরো যময়ত্যেষ ত আত্মাহন্তর্যাম্যমৃতঃ ইত্যধিভূতমথাধ্যত্মম্।। (১৫)
অর্থাৎ,
যিনি ভূতসমূহে বাস করছেন, যিনি
ভূতসমূহের অভ্যন্তরে রয়েছেন, ভূতসমূহ যাঁর সম্পর্কে জ্ঞাত
নয়, ভূতসমূহই যাঁর শরীর, যিনি
অভ্যন্তর থেকে ভূতসমূহকে নিয়মিত
করছেন, তিনিই তোমার আত্মা,
তিনিই অমৃত।
যঃ প্রাণে তিষ্ঠন্ প্রাণাদন্তরো
যং প্রাণো ন বেদ
যস্য প্রাণ শরীরং।
যঃ প্রাণমন্তরো যময়ত্যেষ ত আত্মাহন্তর্যাম্যমৃতঃ।। (১৬)
অর্থাৎ,
যিনি প্রাণে বা জীবাত্মায়
বাস করছেন,প্রাণ যাঁর
বিষয়ে জ্ঞাত নয়, প্রাণই
যাঁর শরীর, যিনি অভ্যন্তর
থেকে প্রাণকে নিয়মিত করছেন, তিনিই
তোমার আত্মা, তিনিই অমৃত।
যো বাচি তিষ্ঠান্ বাচোহন্তরো
যং বাঙ্ ন বেদ
যস্য বাক্ শরীরং।
যো বাচমন্তরো যময়ত্যেষ ত আত্মাহন্তর্যাম্যমৃতঃ।। (১৭)
অর্থাৎ,
যিনি বাক্যে বাস করছেন,
বাক্য যাঁর সম্পর্কে জ্ঞাত
নয়, বাক্যই যাঁর শরীর,
অভ্যন্তরে থেকে যিনি বাক্যকে
নিয়মিত করছেন, তিনিই তোমার
আত্মা, তিনিই অমৃত।
যশ্চক্ষুষি
তিষ্ঠশ্চক্ষুষোহন্তরো যং চক্ষুর্নবেদ যস্য
চক্ষুঃ শরীরং।
যশ্চক্ষুরন্তরো
যময়ত্যেষ ত আত্মাহন্তর্যাম্যমৃতঃ।। (১৮)
অর্থাৎ,
যিনি চক্ষুতে বাস করছেন, চক্ষু
যাঁর সম্পর্কে জ্ঞাত নয়, চক্ষু
যাঁর শরীর, অভ্যন্তর থেকে
যিনি চক্ষুকে নিয়মিত করছেন, তিনিই
তোমার আত্মা, তিনিই অমৃত।
যঃ শ্রোত্রে তিষ্ঠাং শ্রোত্রাদন্তরো যং শ্রোতং ন
বেদ যস্য শ্রোত্রং শরীরং।
যঃ শ্রোত্রমন্তরোঃ যময়ত্যেষ ত আত্মাহন্তর্যাম্যমৃতঃ।। (১৯)
অর্থাৎ,
যিনি কর্ণে বাস করছেন,
কর্ণ যাঁর সম্পর্কে জ্ঞাত
নয়, কর্ণই যাঁর শরীর,
অভ্যন্তরে থেকে যিনি কর্ণকে
নিয়মিত করছেন, তিনিই তোমার
আত্মা, তিনিই অমৃত।
যো মনসি তিষ্ঠান্ মনসোহন্তরো
যং মনো ন বেদ
যস্য মনঃ শরীরং।
যো মনোহন্তরোঃ যময়ত্যেষ ত আত্মাহন্তর্যাম্যমৃতঃ।। (২০)
অর্থাৎ,
যিনি মনে বাস করছেন,
মন যাঁর সম্পর্কে জ্ঞাত,
মন যাঁর শরীর, অভ্যন্তর
থেকে যিনি মনকে নিয়মিত
করছেন, তিনিই তোমার আত্মা,
তিনিই অমৃত।
যস্ত্বচি
তিষ্ঠাং সত্ত্বচোহন্তরো যংত্বঙ্ ন বেদ যস্য
ত্বক্ শরীরং।
যস্ত্বচমন্তরো
যময়ত্যেষ ত আত্মাহন্তর্যাম্যমৃতঃ।। (২১)
অর্থাৎ,
যিনি ত্বকে বাস করছেন,
ত্বক যাঁর সম্পর্কে জ্ঞাত
নয়, ত্বকই যাঁর শরীর,
অভ্যন্তর থেকে যিনি ত্বককে
নিয়মিত করছেন, তিনিই তোমার
আত্মা, তিনিই অমৃত।
যো বিজ্ঞানে তিষ্ঠান্ বিজ্ঞানাদন্তরো
যং বিজ্ঞানং ন বেদ যস্য
বিজ্ঞানং শরীরং।
যো বিজ্ঞানমন্তরো যময়ত্যেষ ত আত্মাহন্তর্যাম্যমৃতঃ।। (২২)
অর্থাৎ,
যিনি জ্ঞানে বাস করছেন,
জ্ঞান যাঁর সম্পর্কে জ্ঞাত
নয়, জ্ঞান যাঁর শরীর,
অভ্যন্তর থেকে যিনি জ্ঞানকে
নিয়মিত করছেন, তিনিই তোমার
আত্মা, তিনিই অমৃত।
যো রেতসি তিষ্ঠান্ রেতমোহন্তরো
যং রেতো ন বেদ
যস্য রেতঃ শরীরং।
যো রেতমন্তরো যময়ত্যেষ ত আত্মাহন্তর্যাম্যমৃতঃ।। (২৩)
অর্থাৎ,
যিনি রেতে (স্ত্রীপুরুষের রজোবীর্য্যে)
বাস করছেন, রেত যাঁর
সম্পর্কে জ্ঞাত নয়, রেত
যাঁর শরীর, অভ্যন্তর থেকে
যিনি রেতকে নিয়মিত করছেন,
তিনিই অন্তর্যামী, তিনিই অমৃত।
ততো হ উদ্দালকো আরুণিরুপররাম।।
অর্থাৎ,
যাজ্ঞবল্ক্যের এই বর্ণনা শুনে
উদ্দালক আরুণি 'উপররাম', প্রশ্ন
থেকে ক্ষান্ত হয়েছিলেন।
এককথায়,
আত্মাই অন্যের দৃষ্টি অগ্রাহ্য
করে দর্শন করেন, শ্রুতির
অগ্রাহ্য হয়ে শ্রবণ করেন,
মনের অগ্রাহ্য হয়ে মনন করেন,
জ্ঞানের অগ্রাহ্য হয়ে জ্ঞাত হ'ন। মানুষের
দৃষ্টিতে, জ্ঞানে ও মনের
গতিবিধির মধ্যে যা কিছুর
ছায়া এসে পড়ে, সে'সবই আত্মাময়।
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সকল বস্তুই আত্মা
দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, নিয়মিত। জীবাত্মা
মাত্রই তাঁর শরীর এবং
তিনি জীবাত্মা মাত্রেরই নিয়ন্তা। তাঁর
অপরিবর্তনীয় নিয়মে সমগ্র বিশ্ব
পরিচালিত হচ্ছে। তিনি
কেবল সাক্ষী ও #দ্রষ্টা
স্বরূপ হয়ে রয়েছেন।
*সমাপ্ত*
তথ্যসূত্রঃ
তপোভূমি
নর্মদাঃ স্বর্গীয় শৈলেন্দ্রনারায়ণ ঘোষাল শাস্ত্রী।
বৃহদারণ্যক
উপনিষদ্ঃ পণ্ডিতপ্রবর রামশঙ্কর চতুর্বেদী (M.S.V.U., UJJAIN).
বিজয়কৃষ্ণ
রচনাবলীঃ সদ্গুরু শ্রীমৎ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী।
***উল্লিখিত
তথ্য এবং চিত্রের সর্বস্বত্ব
সংরক্ষিত বনেদীয়ানা পরিবারের নামে। প্রকাশক
বা লেখকের অনুমতি ছাড়া
এই তথ্য বা চিত্রের
কোন রকম কোন প্রতিলিপি
করা যাবে না, কোন
ফোটোকপি বা কোন রকমের
কোন ইলেকট্রিক মাধ্যমে এই তথ্য বিনা
অনুমতিতে নেওয়া যাবে না। এই
শর্ত লঙ্ঘিত হলে বনেদীয়ানা
পরিবার উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ
করবে। ***
তথ্যসূত্র
সংগ্রহেঃ শ্রীমান্ শঙ্খ
No comments:
Post a Comment