Thursday, March 12, 2020

দুই নবীন পরিবারের অন্নপূর্ণাপুজোঃ- রীতিনীতিতে উজ্জ্বল


দুই পরিবারের অন্নপূর্ণাপুজোঃ-
 বনেদীয়ানা পরিবার অনন্য ইতিহাসের খোঁজ নিয়ে আসে, তা কোন বাড়ির ইতিহাস হোক কি কোন মন্দিরের অথবা কোন স্থাপত্যের প্রাচীনত্বের সন্ধান করাই এই পরিবারের মুখ্য উদ্দেশ্য শুধুমাত্র প্রাচীনত্বই নয় আজ প্রকাশিত হল দুই নবীন পরিবারের অন্নপূর্ণা পুজোর রীতিনীতি নিয়ে পর্বালোচনা
 কেমন লাগে আপনাদের, আমাদের উপস্থাপনা? কতটা সমৃদ্ধ হন আপনারা? গতবছরের মতন এবারও আমাদের শারদীয়া ইপত্রিকার প্রকাশিত হবে এবং আমরা আবারও সম্মানিত করবো বেশকিছু বনেদী বাড়িকে দুর্গাপুজোর সময়, অপেক্ষায় আছেন তো? তার আগে চলুন দেখা যাক নবীন দুই পরিবারের অন্নপূর্ণা পুজোর সামান্য কিছু রীতিনীতি, লিখলেন শুভদীপ

দুই নবীন পরিবারের অন্নপূর্ণাপুজোঃ- রীতিনীতিতে উজ্জ্বল
বেলঘড়িয়ার দে পরিবারঃ এই পরিবারের পুজো খুবই নবীনপুজো এবছর তাদের পুজোর বয়স ৬বছর পরিবারের সদস্য শ্রীমান্ তিয়াস দে জানালেন এই পুজো তারই সূচনায় সৃষ্টি বহুদিনের আশায় তিনি মায়ের পুজো শুরু করেন তার নিজের বাড়িতে দে পরিবারের পাশেই এক প্রাচীন অন্নপূর্ণা পূজা দেখে তার এমন ইচ্ছার প্রকাশ বলেই জানিয়েছেন শ্রীমান্ তিয়াস দে মহাশয় পরিবারের সদস্যদের কথায় জানা গেল এই পরিবারের বিশেষ রীতি বলা যায় ভিক্ষাপর্ব অর্থাৎ পূজার শেষে বহু ভক্ত মহাদেবকে ভিক্ষাদান করেন চাল, পাঁচ রকমের ফল, পৈতে ইত্যাদি নানান উপকরণ দিয়ে ভিক্ষা দেন বহু ভক্ত এছাড়া পরিবারে কুমারিপুজোও রয়েছে

অন্নপূর্ণা পূজার আগের দিন সকালে চণ্ডীপাঠ শুরু হয় এবং বিকালে হয় দেবীর অধিবাসপর্ব অন্নপূর্ণা পুজোর দিন সকালে পুজো শুরু হয় দে পরিবারে বলিপ্রথা রয়েছে এই পরিবারে চালকুমড়ো, কলা ইত্যাদি বলিদান করা হয় দে পরিবারে দেবীকে অন্নভোগে দেওয়া হয়- সাদাভাত, পোলাও, খিঁচুড়ি, ভাজা আটরকমের, ডাল তিনরকমের, কাঁচকলার কোপ্তা, শুক্তনি, আলুপোস্ত, পটলপোস্ত, ছানার কোপ্তা, ধোকার তরকারি, ফুলকপির তরকারি, চাটনি, পায়েস, নানান রকমের মিষ্টান্ন, দই, ডাব ইত্যাদি দেবীর সান্ধ্যকালীন ভোগে থাকে লুচি, ছোলার ডাল, ছানার তরকারি, মালপুয়া, লাড্ডু নানান মিষ্টান্ন ইত্যাদি পরেরদিন দেবীকে পান্তাভাত, কচুরশাক, চালতার চাটনি ইত্যাদি প্রদান করা হয় এই পরিবারে কনকাঞ্জলিপথা রয়েছে সেই প্রথার মধ্যদিয়ে দেবী কৈলাশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন গত চারবছর ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে  পুজো পেয়ে আসছেন দে পরিবারের দেবী অন্নপূর্ণা নবীন পুজো হলেও আন্তরিকতা লক্ষণীয় এই পুজোয়বনেদীয়ানা পরিবারের পক্ষথেকে বেলঘড়িয়ার দে পরিবারের সকল সদস্যবৃন্দদের জানাই আগাম শুভেচ্ছা অভিনন্দন
কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ শ্রীমান্ তিয়াস দে মহাশয়
কীভাবে যাবেনঃ- বেলঘড়িয়া রেলস্টেশনে নেমে ৪নং প্লাটফর্ম ক্রস করে বিরাটীগামী আটোতে 'মাঝেরহাটি' স্টপেজনেমে ৫মিনিট
ঠিকানাঃ- 'অন্নপূর্ণাবাড়ী', মাঝেরহাটি, শরৎপল্লী, নিমতা, কোলকাতা-৪৯


বর্ধমানের জগদ্ধাত্রীবাড়িঃ-
দত্ত পরিবারের মা অন্নপূর্ণার পুজো নবীন হলেও পরিবারের সকলে মিলে আনন্দের সাথে সাথে আন্তরিকতার মধ্যদিয়ে দেবীর পুজো করে আসছেন, যা সত্যই প্রশংসার দাবী রাখেআমাদের প্রতিমায় কেবল দেবী মহাদেব উপস্থিত থাকেন
সপ্তমীর সন্ধ্যায় দেবীর অধিবাস সম্পন্ন হয়অধিবাসের জন্য বাড়ির মেয়ে বৌ সকলে মিলে কুলো সাজায় এবং আমাদের অধিবাসে একটি বিশেষ পাত্র বা উপাচার লাগে,যেটিকে বলা হয় "আয়ো(এয়ো) চালন",যেটি পূর্ববঙ্গে ব্যবহারের চল দেখা যায়অধিবাসের উপকরণগুলি বিভিন্ন ভঙ্গিমায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেবীর মহাদেবের অঙ্গে স্পর্শ পূর্বক বরণ করে নেওয়া হয়অষ্টমীর দিন ভোরে পুষ্করিণী থেকে দেবীর মঙ্গলঘট ভরে এনে মূল পূজা শুরু হয়, পূজার বিভিন্ন বিধি সম্পন্ন পূর্বক দেবী দশবক্ত্র মহাদেবের ষোড়শোপচার পূজা সমস্ত রকম প্রসাধনী নিবেদন হয়মা'কে নৈবেদ্য ভোগে বিভিন্ন প্রকার সাময়িক ফল, মিষ্টান্ন, বিভিন্ন প্রকার নাড়ু মোয়া,মুড়কি,অন্ন-ব্যঞ্জন,পায়েস, বিবিধ প্রকার তরকারি,ভাজা,মাছ, চাটনী ইত্যাদি ভোগ দেওয়া হয়১০৮ প্রদীপ ১০৮ পদ্ম উৎসর্গ করা হয়এরপর পূজা শেষে হোম হয়আমাদের বিধিমতো সম্পূর্ণ তান্ত্রিক আচারে মায়ের আরাধনা করা হয়সন্ধ্যায় আরতির সময় দেবীকে বিভিন্ন রকম মিষ্টান্ন,খৈ,মুড়কি,নাড়ু,মোয়া,লুচি,সুজি, ভাজাভুজি নিবেদন করা হয়পরদিন সকালে বিসর্জ্জন বিহিত পূজা যাত্রামঙ্গল হয় এবং একইসঙ্গে রামনবমী ব্রত পূজা- হয়ে থাকেতবে অন্নপূর্ণা পূজা তান্ত্রিক বিধিতে হওয়ায় বিসর্জন কৃত্যে দেবীকে দধিকর্মা নিবেদন করা হয় না,তার পরিবর্তে অন্যান্য দিনের মতো সাধারণ আতপচালের নৈবেদ্য,ফল, মিষ্টান্ন,নাড়ু ইত্যাদি দেওয়া হয়বিকালে দেবীকে কন্যা বিদায়ের মত অধিবাসের সব সামগ্রী দিয়ে বিধিপূর্বক বরণ করে মুখ মিষ্টি করিয়ে বিদায় দেওয়া হয়আমাদের কনকাঞ্জলির প্রথাও আছেতবে বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পূজায় কুমারী পূজা হওয়ায় এই পূজায় পুনরায় কুমারী পূজা করা হয় না,বনেদীয়ানা পরিবারের পক্ষথেকে দত্ত পরিবারের সদস্যদের জানাই আগাম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ- শ্রী প্রতীক কুমার দত্ত মহাশয়
কীভাবে যাবেনঃ-বর্ধমান জংশনে নেমে হাঁটা পথ ১৫ মিনিটসহজেই টোটো বা রিক্সা পাওয়া যাবেঠিকানা- সুভাষপল্লী,দুর্গাতলা,রাজ কলেজের সন্নিকটেলোকেশনে এসে যে কাউকে "জগদ্ধাত্রী বাড়ি " জিজ্ঞাসা করলে সকলেই দেখিয়ে দেবেন
তথ্য লিপিবদ্ধেঃ- শুভদীপ রায় চৌধুরী




No comments:

Post a Comment