Tuesday, March 31, 2020

ঐতিহ্যের অন্নপূর্ণাপর্বঃ নারকেলডাঙার ভট্টাচার্য্য বাড়ি


অন্নপূর্ণাপর্বঃ
 আগামীকাল শ্রীশ্রীঅন্নপূর্ণা পূজা, মহামারীর বিপদে সকল ভক্তবৃন্দই যথাসাধ্য মতন মায়ের সেবা করতে চলেছেন নিষ্ঠার সাথে, সকলকে আমাদের তরফ থেকে অনেক শুভেচ্ছা অভিনন্দন রইল সকলে সুস্থ থাকুন এবং প্রার্থনা করুন যাতে আমরা এই বিপদ থেকে সহজেই মুক্তি পাই
 আজ প্রকাশিত হল কলকাতার নারকেলডাঙার ভট্টাচার্য্য পরিবারের অন্নপূর্ণা পুজোর রীতিনীতি এবং ধারাবাহিকতার কথা, লিখলেন শুভদীপ ভট্টাচার্য্য পরিবারের সকল সদস্যদের জানাই শুভেচ্ছা অভিনন্দন এবছর এই পরিবারের পুজো ১৭৮বছরে পদার্পণ করল, চলুন দেখা যাক সেই পুজোর ইতিহাস
 আপনাদের অনুরোধ আপনারা বাড়িতে থাকুন, প্রশাসনকে সবরকম সহযোগীতা করুন
ঐতিহ্যের অন্নপূর্ণাপর্বঃ নারকেলডাঙার ভট্টাচার্য্য বাড়ি


ভট্টাচার্য পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল বর্ধমানের ভান্ডারদিহি অঞ্চলে তারপরবর্তীকালে ১৮৪০-৪১সালে পরিবারের সদস্যরা ভাটপাড়ায় স্থানান্তরিত হয় এবং পরবর্তীকালে পরিবারের পূর্বপুরুষ কালিদাস ভট্টাচার্যের সময় তাঁর স্ত্রী সুলক্ষণাদেবীর সময় তাঁর পরিবার নারকেলডাঙায় বসবাস করতে শুরু করেন, সেখানেই এই পুজোর সূত্রপাত কালিদাস ভট্টাচার্যের স্ত্রী চেয়েছিলেন তাদের পরিবারের ইষ্টদেবী জগদ্ধাত্রীপুজোর জন্য কিন্তু পরিবারের কুলগুরু বলেন যে মূর্তি করে নয় ঘটে তা পূজা করতে, তাই কলকাতায় স্থানান্তরিত হওয়ার পর সুলক্ষণাদেবী গুরুদেবের কাছে ইচ্ছা প্রকাশ করেন মা অন্নপূর্ণার পূজার জন্য, কারণ বহুবার স্বপ্নে মায়ের আদেশ পেয়েছিলেন তিনি এছাড়া ভট্টাচার্য পরিবারের কুলদেবতা স্বয়ং শ্রীধর নারায়ণ, যিনি বংশপরম্পরায় বহু বছর ধরে পূজা পেয়ে আসছেন পরিবারে তাই উনবিংশ শতাব্দীতে গুরুদেবের আদেশক্রমে পরিবারে শুরু হয় মা অন্নপূর্ণার আরাধনা


এইপরিবারের আরও এক সন্তান কৃষ্ণকুমার ভট্টাচার্য তিনি ব্রিটিশ কম্পানির কর্মরত ছিলেন এবং সুলক্ষণাদেবীর তিন পুত্রসন্তান ছিল তার মধ্যে বিনীতকুমার ভট্টাচার্য ছিলেন পণ্ডিত


নারকেলডাঙার ভট্টাচার্য পরিবারে মা অন্নপূর্ণার রঙ স্বর্ণবর্ণা হয় এবং চালচিত্রে বৈষ্ণবপট অঙ্কন করা হয়ে থাকে যেহেতু পরিবারে শ্রীধর নারায়ণ রয়েছেন তাই দেবীকে নিরামিষ ভোগই প্রদান করা হয় এই পরিবারের অন্যতম বিশেষত্ব হল অন্নপূর্ণা পূজার সময় পরিবারের কুলদেবতা শ্রীধর নারায়ণ, বাড়ির গৃহলক্ষ্মী এবং গনেশ উপস্থিত হন দেবীর সামনে, তাদের ব্যতীত এই পরিবারে অন্নপূর্ণার পুজো শুরু হয়না ভট্টাচার্য পরিবারে সূত্রবেষ্টন হয় সাদাসূতায় এবং তারমাঝে সিন্দূর দিয়ে কিছুটা অংশ লাল করা হয় এই পরিবারের রীতি শুধুমাত্র দেবীর অষ্টমীপূজাই হয় গুরুবরণ দিয়ে পূজ শুরু হয় আগের দিন দেবীর অধিবাস হয়

নারকেলডাঙার ভট্টাচার্য পরিবারের বিশেষ রীতি হল দেবীর ষোড়শোপচারে দেবীকে পরিবারের প্রাচীন হীরে বসানো আংটি দেওয়া হয় এবং দেবীর হাতে প্রাচীন রূপার সিন্দূরকৌটো দেওয়া হয়


ভট্টাচার্য পরিবারে অষ্টমীর দিন সকালে ভাত, খিঁচুড়ি, পোলাও, ভাজা, ছানার কোপ্তা, আলুপটলের তরকারি, এঁচড়ের ডালনা, পায়েস ইত্যাদি প্রদান করা হয় দেবীর রাতের ভোগে থাকে লুচি, ভাজা, মালপুয়া, তরকারি ইত্যাদি পরের দিন ভোগে পান্তাভাত, ভাজা, সন্দকনুন, গন্ধরাজ লেবু, টকদই, চাটনি ইত্যাদি দশমীর দিন দেবীর কনকাঞ্জলিপ্রথাও রয়েছে সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল ভট্টাচার্য পরিবারে রীতি রয়েছে, যেহেতু মা বাড়িতে উপস্থিত রয়েছেন তাই অন্নপূর্ণাপুজোর অষ্টমীর দিন পরেরদিন সমস্ত বাড়ির বউদের আমিষ খেতেই হবে, যা পরিবারের বৈশিষ্ট্য

তথ্যসূত্র চিত্রঃ শ্রীমান্শুভদীপ ভট্টাচার্য
তথ্যসূত্র লিপিবদ্ধেঃ- শুভদীপ রায় চৌধুরী



No comments:

Post a Comment