বনেদীয়ানা'য় সিদ্ধেশ্বরীঃ
প্রতিটি উৎসবের আগেই বনেদীয়ানা পরিবার চেষ্টা করে সেই উৎসবকে কেন্দ্র করে বেশকিছু পর্বালোচনার এবং বাকী দিনগুলিতে অন্যান্য স্থাপত্যের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করবার চেষ্ট করে থাকে। কেমন লাগে প্রতিটি পর্ব?? কোন কোন পর্বের আবার পুনরাবৃত্তি চান আপনারা?? আমাদের জানান ই-মেলের মাধ্যমে, আমরা সেই ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
সামনেই চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যাতিথি, প্রতিটি কালীমন্দিরেই অন্যান্য অমাবস্যার মতন এই মাসের অমাবস্যাও পালিত হবে মহাসমারহে। আমাদের সামনে এক মহামারীর বিপদ উপস্থিত, সেই বিপদ থেকে রক্ষার একমাত্র পথ তাঁর শ্রীচরণের বন্দনা। আমরা তাই আজ প্রকাশ করলাম উত্তর কলকাতার প্রাচীন শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের সামান্য ইতিহাস ও রীতিনীতির কথা, লিখলেন সুরজিৎ। চলুন দেখা যাক সেই মন্দিরের টুকরো ইতিহাস।
ঐতিহ্যবাহী উত্তরের গিন্নীমাঃ- সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির
দেবী সিদ্ধেশ্বরী কালী আনুমানিক ৫০০বছরের পুরানো। কালীবর তপ্যসী নামক এক জন তপ্যসী স্বপ্নাদেশে দেবী কালীর এই রূপের দেখা পেয়েছিলেন,সে কথা শোনা যায়। স্বপ্নাদেশ লাভের পর তপস্যী গঙ্গা-মাটি,বাঁশ ও খড়দ্বারা দেবীর বিগ্রহ নির্মান এবং প্রতিষ্ঠা করে, দেবীর আরাধনা শুরু করেছিলেন। শোনা যায় বহু পূর্বে এই দেবীর কাছে ডাকাতেরা নরবলি দিয়ে ডাকাতি করতে যেত। লোকমুখে প্রচারিত তপ্যসী সিদ্ধিলাভ দ্বারা এই দেবীর দশন লাভ করেছিলেন তাই দেবীর নাম সিদ্ধেশ্বরী। জমিদার কেদারেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের বংশধরেরা দেবী সিদ্ধেশ্বরী সেবা করে থাকেন। ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব গিরিশ বাবুর আরোগ্য লাভের জন্য দেবী সিদ্ধেশ্বরী কাছে ডাব-চিনি মানত করেছিলেন, ঠাকুর মানত সফল হয়েছিল। ঠাকুর এই মন্দিরে বহুবার এসেছিলেন। তিনি এই দেবীকে "চিৎপুরের গিন্নী মা"বলে ডাকতেন।
দেবী সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে দ্বীপান্বিতা কালী পূজা,ফলাহারিনী কালী পূজা,রটন্তী কালী পূজা, গন্ধেশ্বরী পূজা এছাড়াও প্রতি মাসে আমাবস্যায় বিশেষ পূজা আয়োজন করা হয়ে থাকে। পূর্বে ফলাহারিনী কালী পূজার দিন মা সিদ্ধেশ্বরী কাছে ১০৮প্রকার ফল দান করা হত। বর্তমান পরিস্থিতি তা অসাধ্য হয়ে ওঠার কারণে মা সিদ্ধেশ্বরী কাছে বিভিন্ন প্রকার ফল দান করা হয়ে থাকে ফলাহারিনী কালী পূজা দিন। গন্ধেশ্বরী পূজার পূর্বে দেবী সিদ্ধেশ্বরী অঙ্গরাগ করানো হয় এবং গন্ধেশ্বরী পূজা দিন মা কে বিশেষ ফুলের সাজ সাজানো হয়। দ্বীপান্তির কালী পূজার দেবীর কাছে ছাগ,চাল কুমড়ো,আঁখ,কলা বলি হয়ে থাকে।রটন্তী অমাবস্যা তিথিতে দেবীর কাছে চাল কুমড়ো,আঁখ এবং কলা বলি হয়ে থাকে। সরকার থেকে আইন করে দেবীর কাছে ছাগ বলি বন্ধ করবার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
মা
সিদ্ধেশ্বরীর নিত্য সকাল, দুপুর, বিকেল ও রাত্রি চারবেলা ভোগ হয়।চাল, ফল ও মিষ্টি সহযোগে নৈবেদ্য বাল্য ভোগ হিসাবে সিদ্ধেশ্বরী মা কে সকালে দেওয়া হয়। শীতের সময় সকালে মা সিদ্ধেশ্বরীকে খিঁচুড়ি ও পাঁচ ভাঁজা সহযোগে বিশেষ বাল্য ভোগ দেওয়া হয়। নিত্য দুপুরে অন্ন, পাঁচ ভাঁজা,ডাল, পরমান্ন , বিভিন্ন প্রকার তরকারি সহযোগে মাছ মা সিদ্ধেশ্বরীকে ভোগে দেওয়া হয়। বিকেলে বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি এবং রাত্রে লুচি, মিষ্টি ও দুধ সহযোগে ভোগ দানের পর মা সিদ্ধেশ্বরী শয়নে যান। এছাড়াও বিভিন্ন তিথি ও উৎসবে মায়ের বিশেষ ভোগের আয়োজন থাকে।
বিশেষ কিছু তিথিতে দেবী সিদ্ধেশ্বরী কান কল্কা, হাতের চুরি,মুন্ডু ও মুন্ডুমালা, রূপোর মুকুট প্রভৃতি গয়নায় সেজে ওঠেন। এছাড়াও কুমুরটুলির মৃৎশিল্পীরা দেবীকে তারের সাজের গয়নায় সজ্জিত করে থাকে। দেবীর সিদ্ধেশ্বরীর ভৈরব রূপে দুই শিব লিঙ্গ এবং নারায়ণশীলা মায়ের সাথে নিত্য পূজা পেয়ে আসছে।বনেদীয়ানা পরিবারের পক্ষথেকে সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের সকল সেবায়েতবৃন্দকে জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ- শ্রী শক্তিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়(মন্দিরের সদস্য)
তথ্য লিপিবদ্ধেঃ- সুরজিৎ সাহা
No comments:
Post a Comment