অন্নপূর্ণাপর্বঃ
বনেদীয়ানা পরিবারের সকল সদস্যদের জানাই বাসন্তী নবরাত্রীর শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। সকলে সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। মহামারীর বিপদ থেকে সকলে ভালো থাকুন আর সকলে বিপদমুক্ত হোন এই প্রার্থনাই রইল দেবীর শ্রীচরণে। আগামীকাল শ্রীশ্রীঅন্নপূর্ণা মাতাঠাকুরাণীর উৎসব, এই মহামারীর বিপদেও দেবীর পুজো সকলে বাড়িতে থেকে ভক্তির মাধ্যমে সেবা করুন। প্রশাসনের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সহযোগীতা করুন এই অনুরোধ রইল আমাদের পক্ষথেকে। নিজেদের জন্য, দেশের জন্য, মহামারীর হাত থেকে বাঁচার জন্য আপনারা বাড়িতে থাকুন। সকলের মঙ্গল হোক।
আজ
প্রকাশিত হল পশ্চিম বর্ধমানের আসানশোলের নাথ বাড়ির অন্নপূর্ণা পুজোর ইতিহাস ও রীতিনীতি, লিখলেন দেবযানী বসু। আমাদের আবারও অনুরোধ আপনারা বাড়িতে থাকুন, সুস্থ থাকুন। চলুন দেখা যাক সেই বাড়ির ইতিহাস।
পশ্চিম বর্ধমানের নাথ বাড়ির অন্নপূর্ণাপুজোঃ- রীতিনীতিতে উজ্জ্বল
১৪২৬ সন শেষ হতে চলল। বসন্তের এই মনোরম আবহাওয়াতে আরও একবার মাতৃআরাধনায় মাতে মর্ত্যবাসী। যা মহিষাসুরমর্দিনী বাসন্তী দুর্গারূপে পূজিত হন চৈত্র মাসের শুক্লা সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিথিতে। অষ্টমীতে মায়ের অন্যরূপ অন্নপূর্ণাদেবীকে পাই অনেক স্থানে। স্বয়ং মহাদেব ক্ষুধার্ত হয়ে দেবীর কাছে অন্নভিক্ষা করেছিলেন। দেবী অন্নপূর্ণা তাঁর পাত্র থেকে অন্ন দিয়ে রক্ষা করেছিলেন জগতের সর্বময় ঈশ্বরকে, রক্ষা পেয়েছিল জীবজগত।
বাংলার অনেক গৃহস্থের বাড়িতে মা অন্নপূর্ণার পুজো হয়ে থাকে এই চৈত্র মাসে। আজ এই প্রতিবেদনে রইল এমনই এক প্রাচীন অন্নপূর্ণা পুজোর কথা। তবে এই পুজোটি চৈত্র মাসে নয়, অনুষ্ঠিত হয় অগ্রহায়ণ মাসে। নবান্নের সময় নতুন ধান ঘরে উঠলে সেই চাল দিয়ে মায়ের পুজো হয়। তাই একে নবান্ন অন্নপূর্ণা পুজোও বলা হয়। সারাবছর যাতে অন্নের অভাবে কাউকে কষ্ট পেতে না হয় তাই এই পুজোর প্রচলন। আরও একটি নামে দেবী পরিচিতা, তা হল 'অন্নদাশঙ্করী মাতা', এখানে অন্নপূর্ণার সাথে শুধু শিবের পুজো হয়ে থাকে তাই এমন নাম।
পুজোর সূচনা ১৮৮৫সালে, শ্রী উদয় নাথের হাত ধরে। পারিবারিক ধানের গোলামঘরের দেওয়ালে এই সালটি লেখা পাওয়া গিয়েছিল। তাই নাথ পরিবার এটিকে পুজোর সূত্রপাত সাল হিসাবে ধরে নিয়েছে। তারা মনে করেন যত দিনের পুরানো ধানের ঘর, ততদিনের পুরানো পুজো। তারপর থেকে বংশপরম্পরায় দেবীকে, সাড়ম্বরে পুজো করে আসছেন নাথ বাড়ির বর্তমান বংশধরগণ। আগে মাতৃমূর্তি এনে পূজা হলেও দুবছর হল দেবীর শিলামূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
দেবীর পুজোর সময় সবাই একটি পাত্রে নতুন চাল এবং একটি টাকা সহ এনে দেবীর সামনে রাখেন। পূজা শেষে সকলে সেই চাল নিয়ে যে যার বাড়ির চালের ভাণ্ডারে মিশিয়ে দেন। দেবীর আশীর্বাদে অন্ন কখনও ফুরাবে না এই বিশ্বাসে। টাকাটি রাখা হয় অর্থসঞ্চয়ের স্থানে। ভোগে দেওয়া হয় ভাত, ডাল, নানান রকমের তরকারি, পায়েস এবং মিষ্টান্ন ইত্যাদি। পূজার শেষে এই ভোগের সবকিছু একসাথে মেখে প্রসাদ হিসাবে সবাই গ্রহণ করেন, একে বলে অন্নমাখা।
নাথ বাড়িতে দেবী সারাবছর পূজিতা হন। প্রতিদিন ভোগ নিবেদন করা হয়। অগ্রহায়ন মাসে বার্ষিক পুজো হলেও চৈত্রের অন্নপূর্ণা পুজোতেও দেবীকে ভোগ নিবেদন করা হয়। এই ভাবে ঐতিহ্যের সাথে আজও নাথ বাড়িতে পুজো হয়ে আসছে মা অন্নপূর্ণার। বনেদীয়ানা পরিবারের পক্ষথেকে সকল সদস্যদের জানাই বাসন্তী নবরাত্রীর শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন, সকলে সুস্থ থাকুন।
তথ্যসূত্র লিপিবদ্ধেঃ- শ্রীমতী দেবযানী বসু
No comments:
Post a Comment