Monday, March 16, 2020

ঐতিহ্যপূর্ণ সপ্তমদোল উৎসবঃ- শ্রীশ্রীরাধা শ্যামরায় জীউ


শ্যামরায়'এর সপ্তমদোল উৎসব
 ঐতিহ্যপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান এই কুমারহট্ট হালিশহর হালিশহরে মহাসমারহে পালিত হল রায় চৌধুরী পরিবারের সপ্তমদোল উৎসব শ্যামরায় জীউ' আজ বনেদীয়ানা সেই প্রাচীন ইতিহাসেরই সন্ধান করবে, লিখলেন শুভদীপ চলুন দেখা যাক সেই প্রাচীন ইতিহাস দোল উৎসবের রীতিনীতি

ঐতিহ্যপূর্ণ সপ্তমদোল উৎসবঃ- শ্রীশ্রীরাধা শ্যামরায় জীউ
 সাবর্ণ গোত্রীয় ১৮তম পুরুষ ছিলেন পরমেশ্বর গঙ্গোপাধ্যায় তিনি স্বনামখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন এবং 'পুরারি'নামে অধিক পরিচিত পরমেশ্বর বা পুরারি গঙ্গোপাধ্যায় সুলতান আলাউদ্দিন হুসেনের আমলে সর্বপ্রথম বাংলায় মহাভারত রচনা করেন কবি পরমেশ্বর গঙ্গোপাধ্যায়ের যোগ্য পুত্র ছিলেন পঞ্চানন গঙ্গোপাধ্যায়, যিনি হুমায়ুনের সেনাপতি ছিলেন মুঘল সম্রাট তাঁর বীরত্বে খুশি হয়ে তাঁকে 'শক্তি খাঁন' উপাধি দিয়েছিলেন এই পাঁচু শক্তি খাঁন (পঞ্চানন গঙ্গোপাধ্যায়) মুঘল সম্রাট কর্তৃক ৪৫টি গ্রাম সম্বলিত হাভেলি পরগনা জায়গির পান সেনাবাহিনীর কর্ম থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি ভাগীরথীর পূর্বতীরে হাভেলি শহর পরগনায় নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠা করে হাভেলি শহর গড়ে তোলেন 'হাভেলি' কথাটির অর্থ হল অট্টালিকা বা প্রাসাদ ওই সময় এখানে বহু অট্টালিকা ছিল অবিভক্ত চব্বিশ পরগনা জেলার অন্তর্গত এই হাভেলি শহর এই হাভেলি শহর কথাটি থেকে হালিশহর কথার উৎপত্তি
পঞ্চানন গঙ্গোপাধ্যায় হাভেলি শহরে নতুন করে ব্রাহ্মণ্য সমাজ পত্তন করার বিশেষ ইচ্ছা ছিল পুর্ববঙ্গের বিক্রমপুর থেকে বৈদ্য আনলেন তাদের একটি দল ভাগীরথীর পশ্চিমতীরে হুগলি জেলায় পল্লি গঠন করলেন, ওই পল্লির নাম 'বৈদ্যবাটি' ভাগীরথীর পশ্চিমতীরের কোন্নগর থেকে কায়স্থ পরিবার এনে তাদের বসতি দান করলেন ওড়িশা এবং দক্ষিণ ভারত থেকে যজুর্বেদীয় ব্রাহ্মণ এনে তাদের চতুষ্পাঠী স্থাপন করার জন্য ভট্টপল্লিতে জমি দান করলেন বর্তমানে নাম ভাটপাড়া বঙ্গদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পারদর্শী শিল্পী এনে পঞ্চানন গঙ্গোপাধ্যায় হাভেলি শহরের এক এক গ্রামে শিল্পানুসারে বিভাজন করে বসতি স্থাপনের ব্যবস্থা করেন স্বর্ণশিল্পীদের জন্য বসতি তৈরি করেছিলেন, নাম কাঞ্চনপল্লি বর্তমানে নাম কাঁচড়াপাড়া শিল্পীদের নতুন শিল্পসামগ্রী বিক্রি করার জন্য নতুন হাটের ব্যবস্থা করেন সেই স্থানের নাম নবহট্ট, বর্তমানে নাম 'নৈহাটী' সাবর্ণ বংশধরগণ যেখানে যেখানে পদার্পণ করেছেন সেখানেই সৃষ্টি শ্রীবৃদ্ধির নিদর্শন রেখে গেছেন এছাড়া পঞ্চদশ শতাব্দীতে নিমাইও হালিশহরে টোলে পাঠ নিতে আসতেন তিনি সাবর্ণ বংশীয় মহাপণ্ডিত শ্রীপাদ ঈশ্বরপুরী (ঈশ্বরপুরী আচার্য্য) এর থেকে দীক্ষা নিয়েছিলেন এবং তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহন করেছিলেন স্বয়ং মহাপ্রভু এরপর শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর গুরুদেব ঈশ্বরপুরীর আদেশে সন্ন্যাস মন্ত্রে দীক্ষা গ্রহন করেছিলেন মাধবেন্দ্র পুরীর নিকট এই হালিশহরেই জন্ম গ্রহণ করেছিলেন শম্ভুপতির পুত্র জীয়া গঙ্গোপাধ্যায় বঙ্গদেশের ন্যায়শাস্ত্রের সুপণ্ডিত ছিলেন তিনি জীয়া গঙ্গোপাধ্যায় 'বিদ্যা বাচস্পতি' উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন


'কাম-কমল-গঙ্গেশ
 তিন নিয়ে বঙ্গদেশ'
১৬০৮ সালে দিল্লির বাদশাহ জাহাঙ্গীরের থেকে লক্ষ্মীকান্ত গঙ্গোপাধ্যায় বিশাল ভূখণ্ডের জায়গির পেয়েছিলেন সাথে পেয়েছিলেন 'রায়' এবং 'চৌধুরী' উপাধিও এই থেকে এই পরিবার সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার নামেই প্রসিদ্ধ রামেশ্বর রায় চৌধুরী লক্ষ্মীকান্তের প্রপৌত্র এবং বিদ্যাধর রায় চৌধুরীর কনিষ্ঠ ভ্রাতা ২৫তম পুরুষ বিদ্যাধর রায় চৌধুরী (১৬৪০-১৭২০) হালিশহরে শৈব, শাক্ত এবং বৈষ্ণব ধর্ম উপাসনার জন্য তিনটি দেবস্থান প্রতিষ্ঠা করেন শিবের গলির মধ্যে বুড়ো শিব, চৌধুরীপাড়ার শ্রীশ্রীরাধা শ্যামরায় জীউ এবং মা সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির বিদ্যাধর রায় চৌধুরী ছিলেন দিল্লির মুঘল সম্রাট আরঙ্গজেবের সমসাময়িক

হালিশহরে সাবর্ণ রায় চৌধুরীদের শ্রীশ্রীরাধা শ্যামরায় জীউ চৌধুরীপাড়ার দোলতলার দোলমঞ্চে প্রতিষ্ঠা করেন উহার পশ্চিমদিকে সাবর্ণ পরিবারের লক্ষ্মীকান্ত রায় চৌধুরী ১৬০০ খ্রীঃ একটি আটচালা কোঠা বাড়ি নির্মাণ করেন পরবর্তীকালে বিদ্যাধর রায় চৌধুরী আটচালায় শ্যামরায় রাধীকার বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন ১৬৬০ সালে সঠিক তত্ত্বাবধানের অভাবে আটচালার চিহ্নমাত্র নেই, বর্তমানে বিগ্রহটি সাবর্ণ পরিবারের বংশধর অরুন রায় চৌধুরীর বাড়িতে রয়েছে এই শ্যামরায়ের সপ্তমদোল উৎসব মহাসমারহে আজও পালিত হয় আগের দিন হয় চাঁচর পোড়ানো উৎসব পরের দিন সকালে দেবদোল তারপর শ্রীশ্রীরাধা শ্যামরায় জীউ দোলমঞ্চে ওঠেন, সকল ভক্তবৃন্দ তাঁদের শ্রীচরণে আবির দেন এই দোল উৎসবকে কেন্দ্র করে বিরাট মেলার আয়োজন করা হয় ৩০০বছরের প্রাচীন এই দোল উৎসব আজও নিষ্ঠার সাথে পালিত হয় দোলের দিন সন্ধ্যায় যুগল বিগ্রহের অভিষেক হয় এবং তারপর রাজবেশ হয় পঞ্চব্যঞ্জন সহযোগে ভোগ নিবেদন হোম হয়ে শেষ হয় এবছরের মতন দোল উৎসব বনেদীয়ানা পরিবারের পক্ষথেকে রায় চৌধুরী পরিবারের সদস্যদের জানাই শুভেচ্ছা অভিনন্দন
তথ্যসূত্র লিপিবদ্ধেঃ- শুভদীপ রায় চৌধুরী



No comments:

Post a Comment