Thursday, March 5, 2020

ঐতিহ্যের শান্তিপুরে শ্রীশ্রীরাধামদনগোপালের দোলযাত্রা


ঐতিহ্যের দোল উৎসব নিয়ে আজকে প্রকাশিত হল শান্তিপুরের শ্রী রাধা মদনগোপাল জীউ'এর দোলযাত্রা, লিখলেন শুভদীপ চলুন দেখা যাক সেই দোলযাত্রার ইতিহাস
ঐতিহ্যের শান্তিপুরে শ্রীশ্রীরাধামদনগোপালের দোলযাত্রা



 "মহাবিষ্ণুর্জগৎকর্ত্তা মায়য়া যঃ সৃজত্যদঃ
 তস্যাবতার এবায়মদ্বৈতাচার্য্য ঈশ্বরঃ।।
অদ্বৈতং হরিণাদ্বৈতাদাচার্য্যং ভক্তিশংসনাৎ
ভক্তাবতারমীশং তমদ্বৈতাচার্য্যমাশ্রয়ে।।..."

শ্রীশ্রী অদ্বৈতাচার্য্য এর সেবিত বিগ্রহ শান্তিপুরের শ্রীশ্রীরাধামদনগোপাল আজ থেকে প্রায় আনুমানিক ৫৭৩বছর আগে অর্থাৎ ১৪৩৪ খ্রীঃ শ্রীশ্রীঅদ্বৈতাচার্য্য জন্মগ্রহণ করেন শ্রীহট্টের লাউর গ্রামে পিতার নাম কুবের মিশ্র এবং মাতা লাভাদেবী অদ্বৈতের বাল্যকালের নাম ছিল শ্রী কমলাক্ষ বাল্যকাল থেকেই অদ্বৈতাচার্য্য লেখাপড়া এবং ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ ছিলেন খুব অল্প সময়েই তিনি স্মৃতি, ন্যায় এবং বেদ সমাপন করে বেদ পঞ্চানন উপাধি পেয়েছিলেন তিনি পরবর্তীকালে ঈশ্বরের খোঁজে গৃহত্যাগ করেনএকসময় গিয়ে পৌঁছন বৃন্দাবনে বৃন্দাবনে রাতে বটবৃক্ষের তলায় অবস্থানকালে গভীর রাতে তিনি স্বপ্নাদিষ্ট হন বলাবাহুল্য যে মদনমোহন সাক্ষাৎ এসেছিলেন অদ্বৈতপ্রভুর কাছে রাখালরূপ ধরে স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী তিনি মন্দির নির্মাণ করেন কথিত আছে মন্দিরটি তৈরী হয় প্রায় আনুমানিক ৪৩৫বছর আগে এবং অদ্বৈতাচার্য্য নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই মন্দির অদ্বৈতাচার্য্য চারভাই ছিলেন এবং তিনিই ছিলেন কনিষ্ঠ তাঁর বাকি  তিন ভাই পরিভ্রমণ করতে গিয়ে ফিরে আসেননি অদ্বৈতপ্রভু নিজের বাড়ি শান্তিপুরে ফিরে এলেন এবং চিত্রপটের সঙ্গে নিয়ে এলেন গণ্ডকী থেকে শালগ্রামশিলা শ্রী অদ্বৈতাচার্য্যের ছয়টি পুত্র-. জ্যেষ্ঠপুত্র শ্রী অচ্যুতানন্দ,. মধ্যমপুত্র শ্রী কৃষ্ণমিশ্র,. শ্রী গোপাল,. শ্রী বলরাম, . শ্রী স্বরূপ এবং . শ্রী জগদীশ জ্যেষ্ঠপুত্র শ্রী অচ্যুতানন্দ বিবাহ করেন নি অদ্বৈতপ্রভু তাঁর দ্বিতীয় পুত্র শ্রী কৃষ্ণমিশ্রকে জ্যেষ্ঠপুত্র অচ্যুতানন্দের অনুরোধে শ্রীশ্রীরাধামদনগোপালের সেবাভার দিয়েছিলেন শ্রী কৃষ্ণমিশ্রের বংশধরগণ হইতে শ্রী রাধামদনগোপাল বাড়ির সৃষ্টি হয়


 "অচ্যুতানন্দ বড় শাখা আচর্য্যনন্দন
  আজন্ম আচার্য্য সেবিল তেঁহো চৈতন্যচরণ।।
 কৃষ্ণমিশ্র নাম আর আচার্য্য তনয়
 চৈতন্য গোস্বামী বৈসেন যাহার হৃদয়।।"

শ্রীশ্রীরাধামদনগোপাল জীউ বাড়িতে শ্রী কৃষ্ণমিশ্রের বংশধরগণ প্রতিদিন অন্নভোগ দেন শ্রী অদ্বৈতাচার্য্য ১২৫বছর ধরাধামে ছিলেন, তাঁহার সেবিত বিগ্রহ(শ্রী মাধবেন্দ্র পুরী প্রতিষ্ঠিত) আজও শ্রী অদ্বৈতাচার্য্যের স্মৃতি ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন এই পরিবারে বহু মহাপণ্ডিতের জন্ম হয়েছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম শ্রী রাধিকানাথ গোস্বামী(শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতের ভাষ্য রচয়িতা), শ্রী রাধাবিনোদ গোস্বামী(শ্রীমদ্ভাগবতের ব্যাখ্যাকর্তা), পণ্ডিত মদনগোপাল গোস্বামী(ভাগবত তোষণীকার), শ্রী জিতেন্দ্রনাথ গোস্বামী(ভাগবত ভাষ্যকার), শ্রী নৃসিংহপ্রসাদ গোস্বামী(ভাগবত ভাষ্যকার), পণ্ডিত নৃসিংহপ্রসাদ গোস্বামী(ভাগবতভাষ্যকার) ইত্যাদি
 এই শ্রীশ্রীরাধামদনগোপালের দোলযাত্রা অদ্বৈতাচার্য্য নিজের হাতে শুরু করেছিলেন, যার বয়স আনুমানিক ৫২০বছরের বেশী এই পরিবারে দুইটি দোলযাত্রা পালিত হয় একটি সীতানাথের দোল(সপ্তমদোল) এবং একটি মদনগোপালের দোল(দোলপূর্ণিমার দিন) দোলযাত্রার আগের দিন ন্যাড়াপোড়া হয়, সেই দিয়েই দোলযাত্রার সূচনা হয় এই রাধামদনগোপাল জীউ এর বাড়িতে দোলের দিন সকালে ব্রহ্মমুহূর্তের পর মদনগোপালকে দোলমঞ্চে আনা হয় সেখানেই সকাল থেকে দোলখেলা হয়, পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাই বিগ্রহের পায়ে আবির দিয়ে দোলযাত্রা পালন করেন এই দিন ঠাকুরকে দুইবার ভোগ প্রদান করা হয় প্রথমে পরমান্ন প্রদান করা হয় 

দোলখেলার পর বিগ্রহের পঞ্চগব্য অভিষেক করে অন্নভোগ দেওয়া হয় দোলের দিন অন্নভোগে থাকে- পাঁচ রকমের ভাজা, শুক্তনি, পোলাও, তরকারি, পায়েস, চাটনি ইত্যাদি পরিবারের মেয়েরাই ভোগ তৈরী করেন এবং দোলের দিন সন্ধ্যায় শ্রীশ্রীরাধামদনগোপাল জীউ এর বাড়িতে ভাগবতপাঠ, নামকীর্ত্তন হয় দোলখেলার পর অভিষেকপর্বের শেষে বিগ্রহের রাজবেশ হয় এবং বিগ্রহকে রত্নবেদীতে বসানো হয়
  দোলপূর্ণিমার দিন ছাড়াও এই শ্রীকৃষ্ণমিশ্রের পরিবারে সপ্তমদোল উৎসবও পালন করা হয় সপ্তমদোলের আগের দিনও ন্যাড়াপোড়া হয় এবং দোলের দিন সীতানাথকে দোলমঞ্চে নিয়ে আসা হয় দোল খেলার পর অভিষেকপর্বের শেষে অন্নভোগ প্রদান করা হয় দোলের দিন এই পরিবারে পঞ্চব্রাহ্মণ সেবা হয় বলাবাহুল্য শ্রীশ্রীঅদ্বৈতাচার্য্যের মধ্যমপুত্র শ্রী কৃষ্ণমিশ্র সীতানাথের দোল আরম্ভ করেছিলেন ঐতিহ্য আভিজাত্যপূর্ণ দোল উৎসব আজও শান্তিপুরের শ্রীশ্রীরাধামদনগোপাল বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়, যা দোলযাত্রার গৌরবকে আরও গৌরবান্বিত করে

কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ- শ্রী স্বরূপ গোস্বামী মহাশয়
তথ্যসূত্র লিপিবদ্ধেঃ- শুভদীপ রায় চৌধুরী


No comments:

Post a Comment