আজ
সপ্তমদোল উৎসব, বঙ্গের বহু প্রাচীন মন্দিরে আজ সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে রাধাগোবিন্দের সপ্তমদোল উৎসব হালিশহর থেকে শান্তিপুর এবং সর্বত্রই। বনেদীয়ানা পরিবার আজ প্রকাশ করল এক অনন্য ইতিহাস। প্রকাশিত হল আন্দুলের দত্ত চৌধুরী পরিবারের শ্রীশ্রীরাধামাধব'এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং দত্ত চৌধুরী পরিবারের কিছু প্রাচীন কাহিনী, লিখলেন শুভদীপ। চলুন দেখা যাক সেই প্রাচীন জমিদার পরিবারের রীতিনীতি ও ঐতিহ্য।
আমাদের ফেসবুক ছাড়া আর কোথায় কোথায় পাবেন জানেন? না জানলে এই প্রকাশনার নীচেই আমরা আমাদের বিভিন্ন ব্লগ ও ওয়ার্ডপ্রেস লিঙ্ক দিয়ে দিলাম। আর কোন কোন পরিবারের অথবা মন্দিরের ইতিহাস জানতে চান আমাদের জানান ই-মেলের মাধ্যমে, আমরা চেষ্টা করবো সেই ইতিহাস তুলে ধরতে।
ঐতিহ্যের দত্ত চৌধুরী পরিবারঃ- আন্দুল, হাওড়া
হাওড়া জেলায় বহু প্রাচীন বনেদি পরিবার রয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম প্রাচীন পরিবার কনৌজ থেকে আগত দক্ষিণ-রাঢ়ীয় কায়স্থ সমাজভুক্ত দত্ত চৌধুরী পরিবার। ঐতিহ্য আভিজাত্য এবং প্রাচীনত্বে এই পরিবারের নাম উল্লেখযোগ্য ভাবে পরিচিত প্রতিটি মানুষের কাছে। ভরদ্বাজ গোত্রীয় সুদত্ত-ও-অগ্নিদত্ত কুলোদ্ভব শিবদত্তের পুত্র পুরুষোত্তম দত্ত কুলের
নারায়ণ দত্তের দ্বারা পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছিল এই পরিবারের। রাজা লক্ষণ সেনের রাজসভাতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ছিলেন এই নারায়ণ দত্ত মহাশয়। নারায়ণ দত্তের থেকে তৃতীয়তম পুরুষ ছিলেন মুরারি দত্তবিশ্বাস, বাংলার এক সুলতানের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন, তাঁর কনিষ্ঠপুত্র দেবদাস(ওরফে তেকড়ি) দত্ত পিতৃদত্ত ধন-সম্পদ নিয়ে চতুর্দশ শতাব্দীর শেষ ভাগে বজরা যোগে তৎকালীন মুজঃফরপুর পরগনায় এসে সরস্বতী নদীর পশ্চিমতীরে ২৫২বিঘা জমির ওপর প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন।
তৎকালীন বাংলার সুলতান দেবদাস দত্তের উন্নতির অবস্থা দেখে তাঁকে 'চৌধুরী' উপাধতে ভূষিত করেন, সেই থেকে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল দত্তচৌধুরী পরিবার। এইভাবেই তিনি পত্তন করেছিলেন জমিদারির। অনেকেই এই পরিবারকে 'আন্দুলের চৌধুরী'পরিবার বলেও চেনেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, দেবদাসের পুত্র রত্নাকর, তৎপুত্র কামদেব, তৎপুত্র জমিদার কৃষ্ণানন্দ দত্তচৌধুরী। সংকীর্তন আন্দোলনের সময়(আনুমানিক ১৫১৮খ্রীঃ) শ্রী শ্রীমৎ নিত্যানন্দ মহাপ্রভু এই গ্রামে পা রেখেছিলেন, অনেক আগেই সেই খবর পৌঁছে গিয়েছিল জমিদার কৃষ্ণানন্দের কাছে। কৃষ্ণানন্দ জানতেন শ্রী নিত্যানন্দ ছিলেন শ্রীবলরাম। জমিদার কৃষ্ণানন্দ ছুটে গেলেন সরস্বতী নদীর পারে, নিত্যানন্দকে সরস্বতীর জলে পদ্যঅর্ঘ্য করে তাঁর পুজো করে নিয়ে এলেন প্রাসাদে। তিনদিন ব্যাপী চলল নাম-সংকীর্তন জমিদার বাটীতে।
নিত্যানন্দ বলেছিলেন, 'স্ত্রী-পুত্র, পরিবার,অর্থ, মোহ,ক্ষমতা-সবই আপেক্ষিক, সবই মিলিয়ে যাবে শ্রীকৃষ্ণের শতনামে'। নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর সেই দৈববাণী কৃষ্ণানন্দকে গভীর ভাবে প্রভাবিত করল, তিনি জমিদার পোশাক ছেড়ে কনিষ্ঠপুত্র কন্দর্পের হাতে জমিদারির দায়-ভার দিয়ে সন্ন্যাসী হয়ে আরাধ্য শ্রীশ্রীরাধামাধবকে নিয়ে চললেন পুরীধামে। জমিদার কৃষ্ণানন্দ গ্রাম ত্যাগ করবার সময় বলেছিলেন, 'নিত্যানন্দের শ্রীচরণ স্পর্শে মথিত তাঁর চরণধূলি সুবাসিত এই গ্রামে তোমরা আনন্দের সাথে বসবাস কর। আজ থেকে এই গ্রামের নাম 'আনন্দধুলী', এই নামটি কালক্রমে হয়েছে আজকের 'আন্দুল'। দত্তচৌধুরী পরিবারে বহু প্রাচীন দুর্গাপুজো আজও অনুষ্ঠিত হয় নিষ্ঠার সাথে, রয়েছে বর্তমান কুলদেবতা শ্রীশ্রীকাশীশ্বর জীউ এবং অন্যান্য দেবতারা।
দত্তচৌধুরী পরিবারের প্রাচীন শ্রীশ্রীরাধামাধব জীউ বর্তমানে শ্রীকৃষ্ণবলরাম মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত আছেন, বৃন্দাবনে। শ্রীশ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সংকীর্তন আন্দোলনের সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মহামন্ত্রের কথা উল্লেখ করেছিলেন সর্বত্রই। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর ইচ্ছায় শ্রী শ্রীমৎ নিত্যানন্দ মহাপ্রভু সমস্ত স্থানে পরিভ্রমণ করে এই মহামন্ত্র প্রচার করেছিলেন, আন্দুলে এসে তিনি দর্শন করেছিলেন শ্রীশ্রীরাধমাধবের। এই রাধামাধবই জমিদার কৃষ্ণানন্দের সেবিত বিগ্রহ। কৃষ্ণানন্দ তাঁর গ্রাম ত্যাগ করার পর তিনি পুরীধামে এসেছিলেন। পুরীধামে এসে কৃষ্ণানন্দ খুবই সাধারণ জীবন পালন করতেন, খুব একটা করার সাথে কথা বলতেন না শুধু দিনরাত হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করতেন। সেবা করতেন তাঁর শ্রীশ্রীরাধামাধবকে। কৃষ্ণানন্দের এই ভক্তিভাব এবং আধ্যাত্মিক ভাব দেখে এক সামন্ততান্ত্রিক রাজা তাঁকে এক জমিদান করেছিলেন (পুরীধাম থেকে দুই কিলোমিটার দূরে) শ্রীশ্রীরাধামাধবের সেবার জন্য। কৃষ্ণানন্দের বংশধরগণ শ্রীশ্রীরাধামাধবের সেবা করতেন বংশপরম্পরায়। একসময় এই সেবার দায়িত্বভার চলে যায় শ্রীকেদারনাথ দত্তের কাছে (১৮৩৮-১৯১৪) যিনি পরিচিত ছিলেন গৌরীয় বৈষ্ণব সমাজে শ্রী ভক্তিবিনোদ ঠাকুর হিসাবে। শ্রী ভক্তিবিনোদ ঠাকুর লিখেছিলেন বহু ভক্তিমূলক গান বাংলা, সংস্কৃত ও ব্রজবুলি ভাষায়। তাঁর বহু গান আজও সংরক্ষিত রয়েছে গৌরীয় বৈষ্ণব দর্শনে, সেই সমস্ত গানের মধ্যে একটি গান শ্রীল প্রভুপাদ খুবই পছন্দ করতেন- 'জয় রাধা-মাধব', সমস্ত স্থানে তিনি বক্তব্য রাখার আগে এই গানটি গাইতেন। শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের মৃত্যুর পর সেই সেবাভার গিয়েছিল তাঁর পুত্র শ্রী বিমলা প্রসাদ দত্তের হাতে, যিনি পরিচিত ছিলেন শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর হিসাবে, যিনি শ্রীল প্রভুপাদের আধ্যাত্মিক শিক্ষক ছিলেন।
কিন্তু ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের মৃত্যুর পর শ্রীশ্রীরাধামাধবের সেবাভার বিপন্ন হয়ে পরে। পরবর্তীকালে ১৯৯৯ সালে এক বিশাল ঝরের কারণে ওড়িষ্যার বহু স্থান, বহু গ্রাম বিপর্যস্ত হয়ে পরে শুধুমাত্র শ্রীরাধামাধবের সেবার মন্দিরটি রক্ষিত অবস্থায় ছিল। এই অবস্থার কথা ডঃ ফকির মোহনকে জানায়। যখন ফকির মোহন এসে বিগ্রহ দর্শন করেন তখন তিনি চিনতে পারেন এই বিগ্রহ শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের। এই বিগ্রহ বর্তমানে বৃন্দাবনের শ্রীকৃষ্ণবলরাম মন্দিরে সেবা পাচ্ছেন, ইসকনের অধীনে। বহু প্রাচীন বিগ্রহ আজও সঠিক ভাবে ঐতিহ্যের সাথে সেবা পেয়ে আসছেন। বনেদীয়ানা পরিবারের পক্ষথেকে দত্তচৌধুরী পরিবারের সকল সদস্যদের জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ- শ্রীমান্ ধ্রুব দত্তচৌধুরী এবং 'The Reapperance of Sri Sri Radha & Madhava
Blog Link: https://heritagetraditional.blogspot.com/
WordPress
Link: traitionalheritage.wordpress.com
Twitter Link:
https://twitter.com/TraditionalHer5
Instagram
Link: heritagetraditional
No comments:
Post a Comment