Blog Link- https://heritagetraditional.blogspot.com/
Twitter- https://twitter.com/TraditionalHer5
Wordpress
Link-https://traitionalheritage.wordpress.com/?fbclid=IwAR2vVIDY975D-k-B8BVGY18eamCp73UQ_LyX4bp75DlIbLiczsSuamc1Nxc
চলুন দেখা যাক খড়দহের শ্রীশ্রীরাধাশ্যামসুন্দর জীউ'এর দোল উৎসবের কিছু কথা জেনে নেওয়া যাক, লিখলেন শুভদীপ। খড়দহের শ্রীশ্রীরাধাশ্যামসুন্দর জীউ সম্পর্কে বহু উৎসবে বনেদীয়ানা পরিবার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যাদের সাহায্য ছাড়া বনেদীয়ানা প্রকাশ করতে পারত না সেই ইতিহাস তাদের কাছে বনেদীয়ানা কৃতজ্ঞ- শ্রী দেবমাল্য গোস্বামী(মন্দিরের কোষাধ্যক্ষ) মহাশয় আর নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর চতুর্দশ বংশধর শ্রী সরোজেন্দ্রমোহন গোস্বামী মহাশয়।
'হরি হরয়ে নমঃ কৃষ্ণ যাদবায় নমঃ।
যাদবায় মাধবায় কেশবায় নমঃ।।
যশোদা দুলাল এবে শ্রীশচীনন্দন।
বলরাম নিত্যানন্দ পতিত পাবন।।
নিতাই গৌরাঙ্গ জয়, জয় জগত তারণ।
জয় নিতাই প্রাণ নিতাই অনাথ শরণ।।'
খড়দহের শ্রীশ্রীরাধাশ্যামসুন্দর জীউঃ- ঐতিহ্যপূর্ণ ও ঐতিহাসিক
'জগৎ যারে ত্যাগ করে নিতাই তাকে বুকে ধরে,
অদৃশ্য অস্পৃশ্য বলে জগৎ যারে ঠেলে ফেলে,
ভয় নেই তোর আছি বলে নিতাই তারে করে কোলে।।'
উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার 'খড়দহ' শুধুমাত্র বৈষ্ণবদেরই অন্যতম শ্রেষ্ঠ তীর্থস্থান নয়, বাংলার সামাজিক সাংস্কৃতিক জীবন ধারার অন্যতম কেন্দ্রস্থল। শ্রী নিত্যানন্দ খড়দহে এসে পুরন্দর পণ্ডিতের বাসগৃহে বসবাস শুরু করেন। পরম পরমহংস শ্রীনিত্যান্দের খড়দহে বসবাসের জন্যই অনেক মনিষী খড়দহে আসেন। শ্রী নিত্যানন্দ খড়দহকে বৈষ্ণবদের একটি তীর্থস্থানে উন্নীত করেন ও খড়দহকে একটি শ্রীপাটে পরিণত করেন। নিত্যানন্দপ্রভু এই বাসগৃহ প্রাঙ্গণে তুলসী, চাঁপাফুল, কদমফুল ছাড়াও নানা ধরনের করবী, কলকে, দোপাটি, কেষ্টকলি ও টগরফুলের গাছ ছিল। স্থানটির নাম পরবর্তী সময়ে 'কুঞ্জবাটি' নামে পরিচিত লাভ করে। এই কুঞ্জবাটীতেই শ্রী নিত্যানন্দের অষ্টমপুত্র মহান সাধক বীরভদ্রজীর জন্ম হয়।
বীরভদ্রজী-ই খড়দহে শ্যামসুন্দরের কষ্টিপাথরের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৫৭৫ খ্রীষ্টাব্দে রাজসাহী জেলার পদ্মানদীর তীরে খেতরীতে, মাতা জাহ্নবার নেতৃত্বে যে ধর্মমহাসন্মেলন হয়, সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, আরও কয়েকটি কৃষ্ণবিগ্রহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠা করা হবে। ধর্মমহাসন্মেলনের পর জাহ্নবাদেবী বৃন্দাবনে যান। বৃন্দাবনে গোপীনাথ মন্দিরে রাধা-গোপীনাথ দর্শনের সময় তাঁর মনে হয়েছিল যে রাধিকার উচ্চতা আরও একটু বেশী হলে ভাল হত। গৌড়ে এসে নয়ন ভাস্করকে দিয়ে রাধিকামূর্তি গড়িয়ে তিনি বৃন্দাবনে পাঠিয়ে দেন এবং ওই মূর্তি গোপীনাথের পাশে বসানো হয় (প্রেমবিলাস)। ওই সময়েই খড়দহের শ্যামসুন্দরের জন্যও একটি সুন্দর রাধিকামূর্তি নয়নভাস্করকে দিয়ে গড়ানো হয়। ওই অষ্টধাতুর রাধিকামূর্তি শ্যামসুন্দরের বামদিকে বসানো হয়। সেই থেকে রাধাশ্যামই-লক্ষ্মীবিষ্ণু বা লক্ষ্মীনারায়ণ। সেই সময় থেকেই খড়দহে ঝুলন, রাস, শরৎরাস, ফুল-দোল, দোল প্রভৃতি উৎসবগুলি আরও মর্যাদার সঙ্গে হয়ে আসছে।
জাহ্নবাদেবী বৃন্দাবনে যেদিন গোপীনাথ মন্দিরে তিনি গোপীনাথ দর্শনে যান সেদিন ছিল দোলপূর্ণিমা। জাহ্নবাদেবী গোপীনাথ 'ফাগ' দিয়ে রাঙিয়ে দেন। এরপর তিনি খড়দহে ফিরে এসে রাধাশ্যামসুন্দরের দোলযাত্রা উৎসব পালন করা হয়। দোলের আগের রাতে চাঁচর পোড়ানো হয়। গঙ্গার ধারে শ্যামের নামাঙ্কিত ঘাটে এই উৎসব হয়। রাজবেশে ধারণ করে রাধারানি, শ্যামসুন্দর ও অনন্তদেব পালকী চেপে চাঁচর করতে যান। গঙ্গার ধারে শ্যামের ঘাটে যেখানে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টায় গঙ্গারতি হয় সেইখানেই অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য নেড়া বা মেড়াকে পোড়ানো হয়। ওই রাত্রেই বিগ্রহ নিজ মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয়।
দোলের দিন মথুরা বৃন্দাবনে দোল উৎসবে নন্দগাঁয়ে বরষানা থেকে রাধার সখিরা আসেন কৃষ্ণকে রং মাখাতে, অন্যদিকে নন্দগাঁ থেকে কৃষ্ণের সখারা বরষানা যান রাধাকে রঙ মাখাতে। সঙ্গে চলে লাঠ পেটাপেটীর খেলা। খড়দহে রাধা-শ্যামের নিত্যলীলা হয়। এই নিত্যলীলার মধ্যে কয়েকটি আবার উৎসব থাকে। সেই উৎসবগুলির একটি ফাল্গুনমাসের দোল পূর্ণিমার দিনে 'দোলযাত্রা'। দোলের দিন খড়দহের রাধাশ্যামসুন্দরকে নতুন পোষাক পরিয়ে মাথায় রং খেলার সুন্দর মাথা ঢাকা দিয়ে গঙ্গার ধারে দোল মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয় ভোর ৫টায়। সেখানে সকল ভক্তবৃন্দ আসেন ভগবানের পায়ে আবির দিতে।
'আজ হোলি খেলব শ্যাম তোমারি সনে,
একলা পেয়েছি তোমায় নিধুবনে।
শুন ওহে বনমালী
আজ ভাঙবো তোমার চতুরালি।
কুম কুম মারিব তোমার রাঙা চরণে।'
সকাল থেকে কীর্তনের আসর বসে, দুপুরে ভক্তরা দোলের গান করেন। সূর্যাস্তের পর রাধাশ্যামকে পালকীতে চাপিয়ে নিজ মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। মন্দিরে নিয়ে গিয়ে প্রথমেই টানা পাখার হাওয়া। দোল মন্দির থেকে মূল মন্দির। তারপর বিগ্রহের সন্ধ্যায় স্নান করিয়ে পুরোহিতরা নতুন কাপড় পরান। পরে ফুল দোলের দিন যেমন পাঁকাল ভোগ দেওয়া হয়। এইভাবেই ঐতিহ্যের সাথে ধারাবাহিকতাকে ধরে রেখে আজও দোল উৎসব পালন করা হয় শ্যামসুন্দর মন্দিরে। বনেদীয়ানা পরিবার মন্দিরের সকল সদস্যবৃন্দদের জানাই দোলের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ- শ্রী সরোজেন্দ্রমোহন গোস্বামী মহাশয়, শ্রী দেবমাল্য গোস্বামী মহাশয় এবং শ্রী মোহিনী মোহন মুখোপাধ্যায় মহাশয়
তথ্যসূত্র লিপিবদ্ধেঃ- শুভদীপ রায় চৌধুরী
চিত্রঋণঃ- লেখক এবং Shyamsundar ফেসবুক পেজ
No comments:
Post a Comment