ঐতিহ্যের ইতিহাসপর্বঃ
আজ প্রকাশিত হল পূর্ব বর্ধমান জেলার দত্ত পরিবারের দুর্গাপুজোর ইতিহাস। লিপিবদ্ধ করলেন বনেদীয়ানা পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য শ্রীমান শুভদীপ রায় চৌধুরী। চলুন দেখা যাক সেই বাড়ির ইতিহাস।
আভিজাত্যে দত্ত বাড়িঃ- পূর্ব বর্ধমান
প্রাচীন রীতিনীতি মেনেই আজও মায়ের আরাধনা করে আসছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার দত্ত পরিবারের সদস্যরা। এখন দত্ত পরিবারের অষ্টম পুরুষ যারা আছেন, তারাই দায়িত্ব নিয়ে ধারাবাহিকতাকে অক্ষুণ্ণ রেখে পুজো করে চলেছেন। পারিবারিক তথ্যানুযায়ী এই পুজোর বয়স আনুমানিক ৩০০বছরেরও প্রাচীন। বহুকাল আগে থেকে শুরু হয়েছিল এই দত্ত পরিবারের দুর্গাপুজো। সেই আমলে অঞ্চলের জমিদার ছিলেন বড় গোপীনাথপুরের দত্ত পরিবারের কুলতিলকরা। সেই সময়েই দুর্গাপুজোর শুরু, সেই পুজো আজও একই ধারায় চলে আসছে, পুজো কোন রকম বন্ধ হয়নি। পরবর্তীকালে দত্ত জমিদারের জ্যেষ্ঠপত্রের সময় আরও এই পুজোর নিষ্ঠার সাথে আড়ম্বর বৃদ্ধি পায়। জ্যেষ্ঠপুত্রের সময় আবার তিনি আলাদা ভাবে প্রাসাদ তৈরি করে দুর্গাপুজো শুরু করেন আর প্রাচীন পুজোর দায়িত্ব নেন মেজোপুত্র। সেই পুজোই (মেজোপুত্রের) এখন মেজো দত্ত বাড়ির দুর্গাপুজো নামেই পরিচিত। পুজোর প্রাচীন রীতি এবং ঐতিহ্য এখনও অটুট।
জন্মাষ্টমীর দিন হয় দত্ত বাড়ির দেবীর কাঠামোপুজো। সেই দিন প্রথম মাটির প্রলেপ প্রদান করা হয় কাঠামোতে। তারপর পারিবারিক বংশপরম্পরায় যে শিল্পীরা মৃন্ময়ী তৈরি করে আসছেন তারাই আজও সেই প্রতিমা তৈরি করেন। দুর্গাপুজো শুরু হয় পঞ্চমীতে দেবীর অধিবাস দিয়ে। ষষ্ঠীতে চণ্ডীর ঘট বসে এবং পুজো শুরু হয়। সপ্তমীর দিন নবপত্রিকার স্নানপর্ব হয় এবং তা দেবীমন্দিরে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। মহাষ্টমীর দিন সন্ধিপূজার সময়ে ওলাচিনির ওপর নবাদ ও মুণ্ডি রেখে তা বেলগাছের ডাল দিয়ে বলি করা হয়। সপ্তমী থেকে মহানবমী পর্যন্ত হোম হয়, মহানবমীতে নবগ্রহের হোমও হয়। মহানবমীর দিন দেবীর পুজোর সাথে সাথে গ্রামের ৯টি মন্দিরে পুজো দিতে যায় দত্ত পরিবারের সদস্যরা। প্রত্যেক দিন সন্ধ্যায় দেবীকে লুচি, মিষ্টি, ক্ষীর, ছানা, দুধ ইত্যাদি ভোগ নিবেদন করা হয়। দশমীর দিন হয় অপরাজিতা পূজা। তারপর শুরু হয় মায়ের দেবীবরণ এবং সিঁদুরখেলা। এই পরিবারে কনকাঞ্জলিপ্রথাও রয়েছে। এই ভাবে ঐতিহ্যের সাথে পুজো করে আসছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার দত্ত বাড়ির সদস্যরা।
কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ- শ্রী শুভদীপ দত্ত
No comments:
Post a Comment