ঐতিহ্যের ইতিহাসপর্বঃ
আজ প্রকাশিত হল রাজারহাট বিষ্ণুপুর ঘোষপাড়ার আটচালার দুর্গাপুজোর ইতিহাস। লিপিবদ্ধ করলেন বনেদীয়ানা পরিবারের সদস্য শ্রীমান শুভদীপ রায় চৌধুরী। চলুন দেখা যাক সেই দুর্গাপুজোর ইতিহাস।
আভিজাত্যে ঘোষপাড়ার আটচালাঃ- রাজারহাট বিষ্ণুপুর
রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নায়েব ছিলেন রামরাম ঘোষ। একসময় কৃষ্ণনগরে বন্যা দেখা দিলে দুর্গাপুজোতে অনিশ্চয়তা দেখা যায় কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে, তখন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তাঁর নায়েব রামরাম ঘোষকে রাজারহাট বিষ্ণুপুর এর জমিদারি প্রদান করেন এবং নির্দশ করেন সেখানে আটচালা ও দুর্গাদালান তৈরি করে দুর্গাপূজা শুরু করতে। এই পুজো প্রায় ৪০০বছর অতিক্রম করেছে। পরবর্তী সময়ে রামরাম ঘোষের বংশে তাঁর বংশধর অম্বিকাচরণ ঘোষের পুত্র হিসাবে জন্মগ্রহণ করেন শ্রী রামকৃষ্ণদেবের পার্ষদ ঈশ্বরকোটি নিত্য নিরাঞ্জন ঘোষ। ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণদেব তাঁকে বলে গিয়েছিলেন রামচন্দ্রের অবতার।
প্রথানুযায়ী এই পরিবারের দুর্গাপুজোর পুজোর বেশ কিছু নিয়ম আছে, যেমন উল্টোরথের দিন কাঠামোপুজো হয়। তারপর বংশপরম্পরায় পাল মহাশয়রাই মৃন্ময়ী প্রতিমা তৈরি করেন। পুণ্যতিথি মহালয়ার দিন রামরাম ঘোষের প্রতিষ্ঠিত শ্রীধর জীউ ও মা লক্ষ্মী ঠাকুরঘর থেকে দেবীর ঠাকুরদালানে আসেন। ষষ্ঠীর দিন দেবীর সামনে দেবীঘট স্থাপন হয়, যেটি নারায়ণের ঘরে থাকে। অতীতে সপ্তমী, মহাষ্টমী, সন্ধিপুজো এবং মহানবমীতে একটি করে পাঁঠাবলি হত, কিন্তু ২০১৪ সালে সেই পশুবলিপ্রথাও বন্ধ হয়েছে। এই বাড়িতে মহাষ্টমীর দিন বাড়ির মহিলারা মিলে ধুনোপোড়া অনুষ্ঠান হয়। অতীতে দেবী দশমীর দিন কাঁধে করে কৈলাসে যাওয়ার জন্য রওয়া দিতেন কিন্তু এখন সেই প্রথা নেই। দশমীর দিন এখানকার দুর্গাপ্রতিমা ঘোষ, বোস, মিত্র এবং তাঁদের বংশধরগণ এবং কুলপুরোহিতের বংশধরগণ ছাড়া দেবীকে বরণ বা ছোঁয়ার অধিকার কারোর নেই। রাত্রে প্রতিমা নিরঞ্জনের পর "শ্রীশ্রী দুর্গামাতা সহায়" লেখা হয় কদলী পত্রে দুধ আলতা দিয়ে, সেটি দুর্গাদেবী যেখানে অধিষ্ঠান করেছিলেন সেই বেদীর ওপর রেখে দেওয়া হয় আটদিন তারপর শান্তির জল নিয়ে মিষ্টিমুখ করে সেই বছরের মতন শারদীয়া দুর্গাপুজোর সমাপ্তি ঘটে। এই ভাবে ঐতিহ্য ও ধারাবাহিকতায় আজও পুজো হয়ে আসছে রাজারহাট বিষ্ণুপুর ঘোষপাড়ার আটচালার দুর্গাপুজো।
কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ- শ্রী ভাস্কর নিরূপ শীল
তথ্যপ্রদানেঃ- শ্রী ভাস্কর নিরূপ শীল
No comments:
Post a Comment