Thursday, September 19, 2019

বনেদীয়ানায় মেদিনীপুরের কেশপুরঃ- দেব বাড়ির অষ্টাদশভুজা


ঐতিহ্যের ইতিহাসপর্বঃ 
আজ প্রকাশিত হল পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর অঞ্চলের দেব পরিবারের অষ্টাদশভুজা দুর্গাপুজোর ইতিহাস লিপিবদ্ধ করলেন বনেদীয়ানা পরিবারের সদস্য শ্রীমান শুভদীপ রায় চৌধুরী চলুন দেখা যাক সেই পুজোর সম্পর্কিত তথ্য


বনেদীয়ানায় মেদিনীপুরের কেশপুরঃ- দেব বাড়ির অষ্টাদশভুজা
দুর্গাশুধুমাত্র খড়গপুর বা মেদিনীপুরে নয় পশ্চিম মেদিনীপুরে বহু জায়গায় ছড়িয়ে আছে দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে নানা কাহিনী যা ইতিহাস তার কোথাও কোথাও সেই ধারা আজও প্রবহমান তারমধ্যে অন্যতম হল কেশপুরের গড় সেনাপত্তা গ্রামের দেব পরিবারের ঐতিহ্য মণ্ডিত দুর্গাপুজো আজও ইতিহাসের বহু প্রাচীনত্বের ধারাবাহিকতা বহন করে চলেছে জড়িয়ে আছে চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের রচয়িতা কবি কঙ্কন মুকুন্দ রামের স্মৃতিও কিন্তু গড় সেনাপত্তা গ্রামের দেব পরিবারের পুজো যে কতটা ইতিহাসের সাক্ষী তা বর্তমান দিনের এই পরিবারের পুজোয় না থাকলে বোঝাই যাবে না প্রায় সাড়েসাতশো বছর আগেকার কথা রাজা বাঁকুড়া দেব এখানকার দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন এখানে আজও আঠারো হাতের দেবী দুর্গা হয় বেশ কয়েক পুরুষ শেষ করে দেব পরিবারের আট কর্তা গোকুলচন্দ্র দেব, লক্ষ্মণ দেব, রামকৃষ্ণ দেব, হরি দেব, হরি সাধন দেব, নীল মাধব দেব, হরিপদ দেব, অরুণ কুমার দেব ছাড়াও পরিবারের সকল সদস্য আজও ঐতিহ্য বনেদীয়ানাকে মেনেই দুর্গাপুজো করে আসছেন চণ্ডী মতে তৈরি হয় এখানকার অষ্টাদশভুজা দেবী দুর্গার মূর্তি দেবীর আঠেরোটি হাতে থাকে লাঠি, ঘন্টা, আয়না, ধনুক, পাকানো দাড়, জমরু, ত্রিশূল, গদা, বজ্র, খড়গ, অঙ্কুশ, চুলের মুঠি এবং শূল চক্র সপ্তমী থেকে মহানবমীর মধ্য রাত্রি পর্যন্ত বলি দেওয়া হয় চালকুমড়ো, আখ এবং ছাগল বহু ভক্তবৃন্দ তাদের মানত পূরণের জন্য বলির সামগ্রী নিয়ে আসেন ষষ্ঠীতে সেনা পত্তার বাঁধে দেবীর বোধন হয় এরপর অধিবাস, আমন্ত্রণ অস্ত্র সাজানো হয় সপ্তমীতে কুবাই নদীর জলে হয় কলাবউ এর স্নান 

এই বাড়ির পুজোয় সকলেই বংশপরম্পরায় অংশগ্রহণ করে আসছেন যেমন যারা কুমোর তারা বংশপরম্পরায় মূর্তি তৈরি করে আসছেন, আবার কুলপুরোহিত বংশপরম্পরায় পুজো করে আসছেন, যারা বলির কাজ করেন তারাও বংশপরম্পরায় করে আসছেন সেই কাজ মানে ঐতিহ্য-ধারাবাহিকতা আর সঙ্গে আভিজাত্য যেন একাকার হয়ে আছে এই বাড়ির দুর্গাপুজোয় এই দেব পরিবারে রয়েছে একটি অষ্টধাতুর মূর্তি সেই মূর্তি আলাদাভাবে পুজো করা হয় একই সঙ্গে দুর্গাপুজোর মহানবমীতে অনন্ত ৫০টি পাঁঠাবলি হয় আজও দেব পরিবারের পুজোর দিন গুলিতে বাজে নহবত শুধু প্রদীপ নয় এখানে সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত জ্বলে হোমের আগুন পুরানো সংস্কৃতি ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনও এই বাড়িতে ৪দিন ধরে যাত্রা অনুষ্ঠিত হয় আদিবাসীদের দল নানা বাদ্যযন্ত্র নিয়ে আসে দেবীর সামনে, আর অনুষ্ঠান করে তারাও 

দশমীতে দেব পরিবারে অপরাজিতা পুজোও হয় সেই অপরাজিতা পুজোর পর প্রতিটি সদস্য-সদস্যা নীল অপরাজিতার মালা বেড়ি শরীরে খানিকক্ষণের জন্য ধারন করেন একসময় কবি কঙ্কন মুকুন্দ রাম ছিলেন এই জমিদার বাড়ির সভাকবি ঘোনা যায় এখানকার দেবীপূজাকে অবলম্বন করে মুকুন্দ রাম লিখেছিলেন চণ্ডীমঙ্গল কাব্য সেখানে আঠারো হাতের উল্লেখও আছে তা সম্ভবত দেবীর আঠারো হাতকেই বোঝানো হয়েছে অতীত যেন কথা বলে এই বাড়ির পুজোয় ইতিহাসকে খুঁজে পেতে গেলে আপনাকে পৌঁছে যেতেই হবে কেশপুরে

কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ- শ্রী উমাশঙ্কর রায়
তথ্য লিপিবদ্ধেঃ- শ্রীমান শুভদীপ রায় চৌধুরী



No comments:

Post a Comment