ঐতিহ্যের ইতিহাসপর্বঃ
আজ প্রকাশিত হল বসিরহাটের দণ্ডীরহাট বসুবাড়ির কলাছড়া হাত দুর্গাপুজোর ইতিহাস। লিপিবদ্ধ করলেন বনেদীয়ানা পরিবারের সদস্যা শ্রীমতী দেবযানী বসু। চলুন দেখা যাক সেই বাড়ির দুর্গাপুজোর ইতিহাস।
বনেদীয়ানায় বসুবাড়িঃ- বসিরহাট
দুর্গাদালানে দশপ্রহরণধারিণী দুর্গাপ্রতিমা নানা সজ্জায় সজ্জিত। কিন্তু প্রতিমার আদল যেন একটু অন্যরকম। দুটি হাত স্বাভাবিক হলেও বাকি আটটি হাত ছোটো ছোটো। এমন অদ্বিতীয় প্রতিমা দেখা যায় বসিরহাটের দণ্ডীরহাট বসুবাড়ির পুজোর দালানে। ডাক্তার বাড়ির পুজো নামেই সমাধিক পরিচিত এ পুজো। ডাক্তার জগবন্ধু বসু ছিলেন এ পরিবারের কৃতী সন্তান। কলকাতায় তার নামাঙ্কিত রাস্তা কৃতিত্বের সাক্ষ্য বহন করেছে আজও। তাঁর পিতা রাধামাধব বসু ছিলেন ঢাকার নবাবের দেওয়ান। তাঁর জমিদারি ছিল বাংলাদেশের মাহীনগর থেকে সন্দেশখালি মঠবাড়ি অঞ্চল পর্যন্ত। শিক্ষার প্রসারে এ পরিবারের অবদান অনস্বীকার্য। বিভিন্ন ধর্মের মেলবন্ধন এ পুজোর আরেকটি বৈশিষ্ট্য।
মঠবাড়ি এলাকা থেকে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ আজও মায়ের দর্পণ বয়ে আনেন। তবেই শুরু হয় বোধন। রথের দিন পাকড়া গাছের কাঠের কাঠামো প্রস্তুত হয়। গুপ্তপ্রেস মতে পুজোর নির্ঘণ্ট সূচিত হয়। আজও প্রাচীন তালপাতার পুঁথি দেখে হয় মন্ত্রোচ্চারণ, পালন হয় নিয়মনীতি। পুজোর গঙ্গাজল আসে বাগবাজার থেকে। ৪০০ বছর ধরে এসব রীতি চলে আসলেও এ পুজোর প্রতিমার গড়ন কিন্তু বদল গিয়েছিল এক ঘটনার অভিঘাতে। একবার ষষ্ঠীর দিন ভেঙে যায় প্রতিমার হাতের আঙুল, পুজো বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এমন সময় জগবন্ধু বসুর মা স্বপ্নাদেশ পান-ভাঙা হাত না জুড়ে এইভাবেই পুজো করতে। আর পরের বছর থেকে আটটি হাত ছোটো, দুটি হাত বড়, এমন প্রতিমা গড়তে। এই বৈশিষ্ট্য আজও অটুট। ছোটো হাতগুলি ১০-১২ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের। কলার ছড়ার মতন দেখতে বলে নাম কলাছড়া হাত প্রতিমা।
বিশেষত্ব শুধু প্রতিমায় নয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির, এক অনন্য নিদর্শন এই পুজো। জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকলে বসু বাড়ির পুজোকে নিজেদের পুজো মনে করে। তাই এই পুজোর সাথে মুসলিম পরিবারের যোগাযোগ বহু বছরের। আজও ১২জন বেহারার কাঁধে বাঁশ পাটের দোলায় চেপে বিদায়যাত্রা করেন মা। ইচ্ছামতী নদী প্রায় ৮কিমি, দীর্ঘ এই পথযাত্রায় চার জায়গায় নামানো হয় প্রতিমা। মোকসেদ মোল্লার বাড়ি-নন্দীপাড়া-কাহারপাড়া-মন্দির হাটখোলা। প্রতিটি স্থানেই সধবা রমণীরা সিঁদুর রাঙিয়ে দেন মাকে। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মেলবন্ধন এ পুজোকে আলাদা করেছে অন্যপুজো থেকে।
কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ- শ্রী সায়ন্তন বসু
তথ্যসূত্র লিপিবদ্ধে-শ্রীমতী দেবযানী বসু(সাংবাদিক)
No comments:
Post a Comment