দীপান্বিতাপর্বঃ-৬
আজ বনেদীয়ানা'য় প্রকাশিত হল হাওড়ার জগাছা মহিয়াড়ি রোডের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের তারা পূজার ইতিহাস। পুজোর বয়স প্রায় ৫৫বছর। স্বর্গীয় শ্রী দীনবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিষ্ঠিত সেই তারা মন্দিরের পুজোর রীতিনীতি নিয়ে বনেদীয়ানা প্রকাশ করলো এক সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধ। সেই তথ্যের খোঁজ করলেন বনেদীয়ানা'র শুভদীপ।
দীপান্বিতায় হাওড়ার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারঃ- তারা মন্দির
এই
মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা স্বর্গীয় শ্রী দীনবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায় | মন্দির প্রতিষ্ঠার পিছনে আছে এক রোচক গল্প | শ্রী দীনবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদি বাড়ি ছিল হাওড়ার সাঁকরাইল গ্রামীণ অঞ্চলে, সেখান থেকে স্ত্রী ও সন্তান সন্ততি নিয়ে উনি পরবর্তীতে চলে আসেন মধ্য হাওড়ার তাঁতিপাড়া অঞ্চলের গদাধর মিস্ত্রি লেনে, একটি ভাড়া করা গৃহে | দীনবন্ধু মহাশয় তারা মন্ত্রে দীক্ষিত ও নিজে পৌরহিত্য করতেন | একদিন খুব ভোরে ঠাকুরঘরে তিনি পদযুগলের ছাপ দেখতে পান, বহু চেষ্টা করেও সেই ছাপ মোছা না যেতে তিনি হতভম্ব হয়ে নিজেই নিজ গুরুগৃহে সংবাদ পাঠান বিবরণ সহ | গুরুর নির্দেশে তারা মন্দির স্থাপনের সংকল্প করেন দীনবন্ধু মহাশয় ও তাঁর স্ত্রী শ্রীমতি ইরা বন্দ্যোপাধ্যায় |
এর
মধ্যেই দীনবন্ধু মহাশয় কয়েকদিনের জন্য স্ত্রীকে নিয়ে তীর্থে গেলে, বাড়িতে ঘটে যায় অদ্ভুত কান্ড | গৃহকর্তা সারারাত ধরে প্রতিরাতে নুপুর পরা এক রমণীর পায়ের শব্দ শুনতে পেতেন, তিনি অনুভব করতেন কোনো এক মেয়ে যেন নুপুর পরে হেঁটে বেড়াচ্ছে সারাবাড়ি | দীনবন্ধু মহাশয় তীর্থ থেকে ফেরার পরেই গৃহকর্তা মন্দির প্রতিষ্ঠায় সর্বোতভাবে অনুমতি দেন ও সাহায্য করেন |
1965 সালের বাংলার জ্যৈষ্ঠ মাসের বারো তারিখে ওই গদাধর মিস্ত্রি লেনেই মহাযজ্ঞ করে মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয় | শ্ৰীমতী ইরা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন প্রায় পঞ্চাশ কিলো বেলকাঠ সহযোগে চব্বিশ জন হোতা মহাযজ্ঞ করে মায়ের মৃন্ময়ী প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করেন |
বর্তমানে পূজার দায়িত্বে আছেন পরিবারের বড়ো ছেলে শ্রী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় | 1985-1986 সাল নাগাদ মন্দির স্থানান্তরিত হয় জগাছায়, দীনবন্ধু মহাশয় নিজে গৃহনির্মাণ করে পুনরায় বারৈ জ্যৈষ্ঠ মাকে স্থানান্তরিত করেন, রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্ত শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিত স্বর্গীয় শ্রী নিত্যানন্দ মুখোপাধ্যায় (সম্পর্কে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের বেয়াই ) পুনরায় দেবীকে প্রতিষ্ঠা করেন | শ্রী শ্রী তারা মায়ের সালংকারারূপ দেখা যায় এখানে | মন্দিরে নিত্যপূজার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ পূজা হিসেবে বারৈ জ্যৈষ্ঠ প্রতিষ্ঠা দিবসের পূজা, দীপান্বিতা অমাবস্যার পূজা, কৌশিকী অমাবস্যার পূজা ও বিভিন্ন শুভদিনে গৃহদেবী তারা পূজিতা হন | প্রতিষ্ঠা দিবস ও দীপান্বিতা অমাবস্যায় পূজায় বহু মানুষ দেবীদর্শন ও ভোগগ্রহণ করতে আসেন |
ভোগে বিশেষ ভাবে থাকে অন্নভোগ তাতে ঘি ভাত ও পরমান্ন প্রধান, এছাড়া খিচুড়ি, লাবড়া, নানা সবজির তরকারি, বিবিধ মিষ্টান্ন মাকে নিবেদন করা হয় | এই পুজোয় কোনো প্রকার বলিদান করা হয়না, পূজার দায়িত্বে গৃহবধূ ও পরিবারবর্গ অংশগ্রহণ করে থাকেন |
কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ শ্ৰীমতী ইরা বন্দ্যোপাধ্যায় ,শ্রী তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়
তথ্যসূত্র প্রদানেঃ- শ্রীমতী গার্গী দাস
No comments:
Post a Comment