Thursday, October 24, 2019

দীপান্বিতায় হুগলীর শ্রীশ্রী সঁর্বমঙ্গলাঃ- আসানপুর গ্রাম


দীপান্বিতাপর্বঃ- ১৩
 বনেদীয়ানা' দীর্ঘদিন ধরে এক ঐতিহ্যপর্ব শুরু হয়েছে বঙ্গদেশের কালীপুজো নিয়ে, আজ তার ত্রয়োদশ তম পর্বালোচনা আজ প্রকাশিত হল হুগলী জেলার আসানপুর গ্রামের কালীমন্দিরের ইতিহাস, লিপিবদ্ধ করলেন বনেদীয়ানা' শুভদীপ চলুন দেখা যাক সেই ইতিহাসের রীতিনীতির বর্ণনা
 আপনাদের বনেদীয়ানা' এই পর্বগুলি কেমন লাগছে??? কতটা সমৃদ্ধ হচ্ছেন ইতিহাস ভিত্তিক আলোচনা পড়ে??? দেখতে চান তার সাথে কিছু টুকরো ভিডিও??? আমাদের জানান, আমরা চেষ্টা করবো সেই ইচ্ছা পুরণ করতে
দীপান্বিতায় হুগলীর শ্রীশ্রী সঁর্বমঙ্গলাঃ- আসানপুর গ্রাম

 হুগলী জেলার জিরাট স্টেশন থেকে পশ্চিমে দেড় কিলোমিটার দূরে আসানপুর গ্রাম এই অঞ্চলে প্রায় সাড়ে চারশো বছরের প্রাচীন এক কালীমন্দির অবস্থিত গ্রামের রায় বংশের জমিদার চন্দ্রশেখর রায় এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা মন্দিরটির সম্মুখে বৃহৎ দালানবাড়ি, বর্তমানে ভগ্নাবস্থা হলেও পূজাপার্বণ এখনও চলছে
 শ্রীশ্রী কালীমাতার বেদী প্রতিষ্ঠার সঠিক সময় নির্ধারণ করা অতি দুরূহ ব্যাপার আনুমানিক ৫০০ বৎসর পূর্বে হুগলি জেলার হাতিকান্দা পরগণায় পাঁচপাড়া গ্রামের বৈদ্য জাতীয় চৌধুরী বংশে অতি প্রবল প্রতাপশালী জমিদার ছিলেন তাঁরা মুর্শিদাবাদের নবাবের অধীন জায়গীরদার ছিলেন কয়েকটি পরগনার জমিদারি ভোগ করতেন তাঁরা তাঁরা বিশেষ চেষ্টা যত্ন করে মহাকুলজাত ব্রাহ্মণ বৈদ্য কয়েকজনকে স্বগ্রামে নিয়ে আসেন এবং জমি প্রদান করেন তাদের বসতির জন্য এঁদের মধ্যে বর্ধমানের শ্রীখণ্ড নিবাসী মহাকুলোদ্ভব দুর্জ্জয় দাশের বংশধর এক মহাসাধক সিদ্ধতান্ত্রিক ছিলেন চৌধুরী মহাশয়রা তাঁকে পছন্দ মতন বাসের স্থান নির্ণয় করতে বললে তিনি চৌধুরী বাড়ি থেকে অর্ধক্রোশ ব্যবধানে এক কংস নদীর তীরের স্থান নির্বাচন করেনযদিও এখন আর নেই মজে গেছে তাঁর সঙ্গে বরেন্দ্র শ্রেণীর একজন ব্রাহ্মণ ছিলেন উভয়ের মধ্যে অত্যন্ত সৌহার্দ্য পূর্ণ সম্পর্ক ছিল চৌধুরী মহাশয়রা প্রত্যেককে ১০বিঘা নিষ্কর ব্রহ্মোত্তর দান করেছিলেন সেই থেকে ওই স্থানে মজুমদার বংশের বাসস্থান হল সেই সাধকবর পঞ্চমূণ্ডির উপর কালীমাতার বেদী আসন প্রতিষ্ঠা করে সাধন করতে লাগল ততদিন মজুমদার বংশীয়গণ মাতার বেদী সংরক্ষণ সেবার কাজ করে আসছিলেন জগদীশ্বর মজুমদার এই মহাপুরুষের শেষ বংশধর ছিলেন তাঁর দয়া-দাক্ষিণ্য; বিশেষত অতুলনীয় মাতৃ-অনুরাগ তাঁকে দেশপুজ্য করেছিল সেই জগদীশ্বরের একমাত্র অষ্টাদশ বৎসর বয়স্ক পুত্র একদিন শ্যামাপুজোর সময় রাত্রে মারা গেলেন গৃহীরূপে সন্ন্যাসী জগদীশ্বর পুত্রশোকে কাতর না হয়েও মায়ের ভবিষ্যৎ- সেবা পুজোর কি ব্যবস্থা হবে এই ভেবেই ব্যাকুল হয়ে উঠলেন জগদীশ্বর এরপর পুজোর ভার দিয়ে যান চন্দ্রশেখর রায়কে
 চন্দ্রশেখরের ১২বছর রয়েসে জগদীশ্বর দেহত্যাগ করেন পরবর্তীকালে এই চন্দ্রশেখরই নিজ শক্তি কৃতিত্বে চন্দ্রশেখর রায় হয়েছিলেন বাংলার ডাকাতি ডেপুটি কমিশনারের পদলাভ করেছিলেন তৎকালীন ডাকাত ঠোগী দস্যুদল তিনিই নির্মূল করে যান একই সঙ্গে চন্দ্রশেখর মাতার সেবা পুজোর জন্য বিশেষ অনুরাগী ছিলেন একদা শ্যামাপূজার সময় ছুটি মঞ্জুর না হওয়ায়, তিনি চাকুরিতে ইস্তফা দিয়ে চলে এসেছিলেন ফলে তাঁর পদন্নতি হয়েছিল তিনি তাঁর নিজের বাড়ি আরও বৃহৎ আকারে তৈরি করেন সঙ্গে চণ্ডীমণ্ডপও মায়ের পুজোর জন্য তৈরি করেছিলেন
 চন্দ্রশেখর ৫৯বছর বয়েসে দুই কন্যা দুই পুত্র রেখে পরলোকগমন করেন তাঁর উইলে মাতার সেবাপূজার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করে যান কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তার ব্যতিক্রম ঘটে গেছে চন্দ্রশেখরের জ্যেষ্ঠপুত্র শশীশেখরের পরলোকগমনের পর ১৩২৪ সালের এক রাতে কয়েক স্থানে স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র ব্যক্তি মাতার ভীষণ স্বপ্নাদেশ পেয়ে ভীত হয়ে পরেন এরপর বহু আলোচনা পরামর্শের পর স্থির করেন, শঁশীশেখরের পাঁচ পুত্র একত্রে একমতে ১৩২৫ সালে শ্যামাপুজোর রাত্রে তাদের যাবতীয় পৈতৃক স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি, বাগানবাড়ি, পুকুর, জমিদারি সমস্ত কিছু শ্রীশ্রী সঁর্বমঙ্গলা কালীমাতার নামে সম্পাদন করেন কিছুদিন পর "রেজিস্টার্ড ট্রাস্টডিড" সম্পাদন করে নিজেদের সেবায়েত হিসাবে নিযুক্ত করেন সেটি শ্রীশ্রী সঁর্বমঙ্গলা কালীমাতা দেবীর দেবোত্তর ট্রাস্ট স্টেট নামে পরিচিত
কালীপুজোর দিন বিশেষ পুজো হয় এই মন্দিরে ঐতিহ্য পরম্পরাকে অক্ষুণ্ন রেখে মায়ের পুজো আজও নিষ্ঠার সাথে পালন করে থাকেন কালীপুজোর দিন পশুবলিপ্রথা হয়না এখানে কালীপুজোর দিন চালকুমড়ো, আঁখ, কলাবলি হয় আগে গুপ্তপাড়া থেকে ব্রাহ্মণ এসে ভোগ রান্না করত বর্তমানে বাড়ির লোকেরাই ভোগ রান্না করে দেন- লুচি, ভাজা, তরকারি, মিষ্টান্ন ইত্যাদি সাথে রায় পরিবারের কালীপুজোতে ৩৮রকমের নৈবেদ্য নিবেদন করা হয় বনেদীয়ানা পরিবারের পক্ষথেকে রায় পরিবারের সকল সদস্যকে আগাম দীপাবলীর শুভেচ্ছা জানাই
কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ- শ্রী বিক্রমজিৎ মুখোপাধ্যায়
তথ্যসূত্র লিপিবদ্ধেঃ- শ্রীমান শুভদীপ রায় চৌধুরী



No comments:

Post a Comment