Tuesday, August 27, 2019

আভিজাত্যে বনেদী বাড়িঃ- বর্ধমানের রায় পরিবার


ঐতিহ্যের ইতিহাসপর্বঃ
           আজ প্রকাশিত হল  বর্ধমান জেলার উখড়া রায় বাড়ির দুর্গাপুজোর ইতিহাস৷ বনেদীয়ানা পরিবার কৃতজ্ঞতাস্বীকার করে শ্রীমান অর্ক রায়, তার এই মূল্যবান তথ্য প্রদান করার জন্য। তথ্যসংগ্রহ লিপিবদ্ধ করলেন বনেদীয়ানা পরিবারের সদস্য শ্রীমান্ সুরজিৎ সাহা চলুন জানা যাক এই পুজোর ইতিহাস

আভিজাত্যে বনেদী বাড়িঃ- বর্ধমানের রায় পরিবার
বর্ধমান জেলার উখড়া গ্রামে দুর্গাপুজোর সুচনা করেন রামযাদব রায় রায় পরিবারের দুর্গাপুজো এবছর ২৭৮ বছরে পদার্পণ করবে৷ এই পরিবারের মূল পদবী চট্টোপাধ্যায় জমিদারী সূত্রে ইংরেজ সরকার "রায় বাহাদুর" উপাধি দেন রামযাদব রায় কে ,সেই সূত্রে এই পরিবার রায়  পদবী লাভ করে৷ বিগত ১০ পুরুষ ধরে রায় পরিবার এই পুজো করে আসছে৷
উখড়া রায় বাড়ির দুর্গাপুজো সম্পূর্ণ তন্ত্র মতে হয় এই বাড়িতে দেবীকে সপ্তমী , অষ্টমী , নবমী দশমী চার দিন অন্নভোগ দেওয়া হয় সপ্তমীর দিন সাত, অষ্টমীতে আট রকমের   নবমীতে নয় প্রকার ভাজা মাকে ভোগে দেওয়া হয়৷ গবিন্দ ভোগ আতপ চালের ভাত, বাড়িতে বানানো ঘি, আমের চাটনি, পরমান্ন বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি সহযোগে মায়ের ভোগ হয়ে থাকে৷ নবমীর দিন মাটির পাত্রে আদা সহযোগে মাংস রান্না করে মাকে ভোগ দেওয়া হয় দশমীর দিন মাছ পোঁড়া এবং বাড়িতে যা রান্না হয় তাই দিয়ে মায়ের ভোগদানের দ্বারা দেবীর বিজয়া দশমী পূজা সম্পন্ন হয়ে থাকে৷
 রায় বাড়িতে দেবীর কাছে বলিদান প্রথা প্রচলিত আছে সপ্তমী তিথিতে দেবীর কাছে চালকুমড়ো বলিদান হয় অষ্টমী তিথিতে একটি সাদা ছাগ নবমীতে ২০-টির বেশী ছাগ বলি হয় থাকে আশেপাশের বাড়ির গ্রামবাসীরা মায়ের কাছে মানসিক পূরণের জন্য ছাগ বলি দিয়ে থাকে৷ নবমীর দিন এই বাড়িতে প্রায় ৫০০জন মানুষ প্রসাদ পান৷ এই বাড়িতে -টি শিব লিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত আছেন৷ ষষ্ঠীর দিন শিব পূজা হয়ে থাকে এই শিব পূজার বিশেষত্ব হল দেবাদিদেব মহাদেবের কাছে গৌরীকে আনতে যাওয়ার জন্য অনুমতি নেওয়া মহাদেবের মাথা থেকে ফুল না পড়া পযন্ত সপ্তমী তিথিতে নবপত্রিকা স্নানে বের হতে পারে না

অতীতে এই পরিবারের দূগা পূজা হাতে আঁকা চিত্র পটে ঘটের দ্বারা সম্পন্ন হত৷2004সালে দেবীর স্বপ্নাদেশে পাথরের মূর্তি  স্থাপন হয় এবং এই মূর্তিতেই  প্রতিবছর পূজা হয়ে থাকে এই মূর্তি বিসর্জন হয় না,প্রতি বছর শুধু মাত্র অঙ্গরাগ করা হয় এই বাড়িতে একটি গন্ধরাজ লেবুর গাছ আছে সেই গাছে বছরে শুধু মাত্র -টি লেবু ধরে তাও আবার দূগা পূজোর ২৫দিন আগে এই লেবু শুধু মাত্র মায়ের ভোগে দেওয়া হয় পূজোর চারদিন এই বাড়িতে রাত্রে কীর্তনগান হয়। ৷
কীভাবে যাবেন- হাওড়া স্টেশন থেকে 5/6 নং প্লাটফর্ম 6.45am হল এক্সপ্রেস করে আপনারে চাইলে পঃ বধমাণ জেলার উখড়া গ্রামের এই দূগা পূজা দশন করে আসতে পারেন
কৃতজ্ঞতাস্বীকার- অর্ক রায়
তথ্যসূত্র সংগ্রহ লিপিবদ্ধকরনেঃ সুরজিৎ সাহা


Saturday, August 24, 2019

আভিজাত্যে বনেদীবাড়িঃ- পুরুলিয়ার গোস্বামী পরিবার


ঐতিহ্যের ইতিহাসপর্বঃ

 আজ প্রকাশিত হল পুরুলিয়ার ঠাকুর গোস্বামী বাড়ির দুর্গাপুজোর ইতিহাস লিপিবদ্ধ করলেন বনেদীয়ানা পরিবারের সদস্য শ্রীমান শুভদীপ রায় চৌধুরী চলুন দেখা যাক সেই পরিবারের ইতিহাস

আভিজাত্যে বনেদীবাড়িঃ- পুরুলিয়ার গোস্বামী পরিবার
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু অসংখ্য সমর্থ পার্ষদ সঙ্গে নিয়ে বাংলা,ওড়িষা,: ভারত তথা দেশ ভক্তির প্লাবনে প্লাবিত করেছেন | ২৪ বৎসর বয়সে সন্ন্যাস নিয়ে পুরী' গম্ভীরায় (রাজা প্রতাপরূদ্রের গুরদেব কাশী মিশ্রের আলয়ে) অবস্থান করেছিলেন | তখন বঙ্গদেশে ভক্তি ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন শ্রীনিত্যানন্দকে | নিত্যানন্দ তাঁর প্রধান ১২ জন সঙ্গী আরও কয়েকজনকে নিয়ে বাংলায় আসেন |এই ১২ জনকে গৌড়ীয় বৈষ্ণব জগতে 'দ্বাদশ গোপাল' বলা হয় |দ্বাদশ গোপালের তৃতীয়তম শ্রীধনঞ্জয় পন্ডিত | যিনি নিত্যানন্দের সব থেকে প্রিয় শিষ্য এবং সুহৃদ ছিলেন | নিত্যানন্দ ছিলেন ব্যতিক্রমী বৈষ্ণবাচার্য্য |তিনি মাথায় সুদীর্ঘ কেশের ভেতরে রাখতেন মহাত্রিপুর সুন্দরী যন্ত্র , গলায় ঝুলিয়ে রাখতেন নীলকণ্ঠ শিবলিঙ্গ-অনন্ত শালগ্রাম-নৃসিংহ শালগ্রাম নামব্রহ্ম শিলালিপি |নিত্যানন্দের প্রাণপ্রিয় ধনঞ্জয় পন্ডিত নিত্যানন্দের কেশাভ্যন্তরে লুক্কায়িত মহাত্রিপুর সুন্দরী শ্রীবিদ্যার প্রতি সমাকৃষ্ট হয়ে তাঁর কাছ থেকে সেই বিদ্যা গ্রহণ করেন |নিত্যানন্দ ধনঞ্জয়কে নিজের সেবিত নৃসিংহ শিলাও দেন | এবং বীরভুমের বোলপুর সন্নিকটে জলন্দি গ্রামে বসতি স্থাপন করে শ্রীরাধাবিনোদ নৃসিংহ শিলা সেবা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কৃষ্ণের চিৎশক্তি যোগমায়া স্বরূপে শারদীয়া শ্রীদুর্গা পূজার ব্যাবস্থা করেন |যা ছিল প্রধানত: উপাসনা সর্বস্ব |
      
         ধনঞ্জয় পন্ডিতের এক পুত্র - যদুচৈতন্য ঠাকুর |যদুচৈতন্যের চার পুত্র - জয়রাম , গঙ্গারাম , পরশুরাম রামকানাই |এই রামকানাই বোলপুর সংলগ্ন মুলুক গ্রামে শ্রীরাধাবল্লভ এবং গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর সেবা প্রতিষ্ঠা করেন |তাঁর কন্যা রূপে সাক্ষাৎ মা দুর্গার অংশ প্রকটিত হন |নাম - অপরাজিতা |অপরাজিতার ভুবনমোহিনী রূপ  অলৌকিক সামর্থ্যে সকলেই তাঁকে মহাশক্তি জ্ঞান করতেন |মুলুকে এই প্রভাবেই মহা অপরাজিতা আরাধনা নামে শারদীয়া দুর্গা পূজা সংকল্পাত্মক শ্রীচন্ডী পাঠের প্রবর্ত্তন হয় |


       কালান্তরে ১২০৪ বঙ্গাব্দে পুরুলিয়ার বাংলা-ঝাড়খন্ড সীমান্ত ঘেঁষা বেগুনকোদর ৮৪ মৌজার রাজা শ্রীরতন সিংহ বীরভূমের জলন্দি গিয়ে ধনঞ্জয় পন্ডিত ঠাকুরের ষষ্ঠ অধস্তন বংশধর শ্রীস্বরূপ চাঁদ ঠাকুরকে গুরুপদে বরণ করে বেগুনকোদরে নিয়ে আসেন গোস্বামী উপাধি দেন |তখনই শ্রীস্বরূপ চাঁদ ধনঞ্জয় পন্ডিত কর্ত্তৃক ব্যবস্থিত মহাত্রিপুর সুন্দরী শ্রীবিদ্যা নামব্রহ্ম শিলালিপি সঙ্গে নিয়ে আসেন বেগুনকোদরে |সেই থেকে জলন্দির দুর্গা পূজা স্থানান্তরিত হয় বেগুনকোদরে |বেগুনকোদর , গোস্বামী পাড়াস্থিত এই পূজাই "ঠাকুর গোস্বামী বাড়ীর দুর্গ পূজা" |

        স্বরূপ চাঁদের তৃতীয় অধস্তন পুরুষ রসরাজ ঠাকুর গোস্বামী এই সুগভীর তথা সুগম্ভীর সাধন-সর্বস্ব দুর্গা পূজাকে দুর্গোৎসবের রূপ দেন |দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে ঝুমুর গান , ছৌনৃত্য ,সাঁওতালী নৃত্য এবং যাত্রানুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেন |

    

           কালিকা পুরাণ অনুসারে এই বাড়ীর পুজো হয় , নিজস্ব প্রাচীন পুঁথি আছে |ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভে পুজার সূচনা |মহাষষ্ঠীর পূর্ব্বাহ্নে কল্পারম্ভ ঘটস্থাপন সঙ্কল্প |সায়ং সন্ধ্যায় বোধন-আমন্ত্রণ-অধিবাস | সপ্তমী,অষ্টমী,নবমী পূজা কালে ফল,মিষ্টি,লাড্ডু,পিঠে,লুচি,সুজি ভোগ  মধ্যাহ্নে যথাক্রমে সপ্ত ব্যঞ্জন,অষ্ট ব্যঞ্জন,নব ব্যঞ্জন সহযোগে অন্নভোগ |প্রত্যহ পরমান্ন |আরিশা পিঠে  গুড়ের লাড্ডু (মিঠাই) এখানের ভোগের প্রধান উপকরণ |দশমির দিন দধি করম্ব ভোগ |বিসর্জনান্তে অপরাজিতা পূজন হয় |বলিদান হয় না |প্রতিমা একচালা, সাবেকি ,ডাকের সাজ |প্রতিমায় বিশেষত্ব মহীষাসুরের তলায় রক্তাক্ত মহীষ থাকে না |চন্ডী পাঠের ব্যবস্থা নেই |
       শ্রীরসরাজ ঠাকুর গোস্বামীর বংশধর গণই এই পূজার সেবায়েত |এই পূজোপাসনার ধারা পাঁচ শতাব্দী পূর্ব্বের |
কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ- শ্রী রাধাবিনোদ ঠাকুর গোস্বামী
তথ্যসূত্র লিপিবদ্ধেঃ- শ্রীমান্ শুভদীপ রায় চৌধুরী