ঐতিহ্যের ইতিহাসপর্বঃ
আজ প্রকাশিত হল বর্ধমান জেলার উখড়া রায় বাড়ির দুর্গাপুজোর ইতিহাস৷ বনেদীয়ানা পরিবার কৃতজ্ঞতাস্বীকার
করে শ্রীমান অর্ক রায়, তার এই মূল্যবান তথ্য প্রদান করার জন্য। তথ্যসংগ্রহ ও লিপিবদ্ধ করলেন বনেদীয়ানা পরিবারের সদস্য শ্রীমান্ সুরজিৎ সাহা ৷ চলুন জানা যাক এই পুজোর ইতিহাস ৷
আভিজাত্যে বনেদী বাড়িঃ- বর্ধমানের রায় পরিবার
বর্ধমান জেলার উখড়া গ্রামে দুর্গাপুজোর সুচনা করেন রামযাদব রায় ৷ রায় পরিবারের দুর্গাপুজো এবছর
২৭৮ বছরে পদার্পণ করবে৷ এই পরিবারের মূল পদবী চট্টোপাধ্যায় ৷ জমিদারী সূত্রে ইংরেজ সরকার "রায় বাহাদুর" উপাধি দেন রামযাদব রায় কে ,সেই সূত্রে এই পরিবার রায়
পদবী লাভ করে৷ বিগত ১০ পুরুষ ধরে রায় পরিবার এই পুজো করে আসছে৷
উখড়া রায় বাড়ির দুর্গাপুজো সম্পূর্ণ তন্ত্র মতে হয় ৷ এই বাড়িতে দেবীকে সপ্তমী , অষ্টমী , নবমী ও দশমী চার দিন অন্নভোগ দেওয়া হয় ৷ সপ্তমীর দিন সাত, অষ্টমীতে আট রকমের ও নবমীতে নয় প্রকার ভাজা মাকে ভোগে দেওয়া হয়৷ গবিন্দ ভোগ আতপ চালের ভাত, বাড়িতে বানানো ঘি, আমের চাটনি, পরমান্ন ও বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি সহযোগে মায়ের ভোগ হয়ে থাকে৷ নবমীর দিন মাটির পাত্রে আদা সহযোগে মাংস রান্না করে মাকে ভোগ দেওয়া হয় ৷ দশমীর দিন মাছ পোঁড়া এবং বাড়িতে যা রান্না হয় তাই দিয়ে মায়ের ভোগদানের দ্বারা দেবীর বিজয়া দশমী পূজা সম্পন্ন হয়ে থাকে৷
রায় বাড়িতে দেবীর কাছে বলিদান প্রথা প্রচলিত আছে ৷ সপ্তমী তিথিতে দেবীর কাছে চালকুমড়ো বলিদান হয় ৷ অষ্টমী তিথিতে একটি সাদা ছাগ ও নবমীতে ২০-টির ও বেশী ছাগ বলি হয় থাকে ৷ আশেপাশের বাড়ির ও গ্রামবাসীরা মায়ের কাছে মানসিক পূরণের জন্য ছাগ বলি দিয়ে থাকে৷ নবমীর দিন এই বাড়িতে প্রায় ৫০০জন মানুষ প্রসাদ পান৷ এই বাড়িতে ৬-টি শিব লিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত আছেন৷ ষষ্ঠীর দিন শিব পূজা হয়ে থাকে ৷ এই শিব পূজার বিশেষত্ব হল দেবাদিদেব মহাদেবের কাছে গৌরীকে আনতে যাওয়ার জন্য অনুমতি নেওয়া ৷ মহাদেবের মাথা থেকে ফুল না পড়া পযন্ত সপ্তমী তিথিতে নবপত্রিকা স্নানে বের হতে পারে না ৷
অতীতে এই পরিবারের দূগা পূজা হাতে আঁকা চিত্র পটে ও ঘটের দ্বারা সম্পন্ন হত৷2004সালে দেবীর স্বপ্নাদেশে পাথরের মূর্তি স্থাপন হয় এবং এই মূর্তিতেই প্রতিবছর পূজা হয়ে থাকে ৷ এই মূর্তি বিসর্জন হয় না,প্রতি বছর শুধু মাত্র অঙ্গরাগ করা হয় ৷ এই বাড়িতে একটি গন্ধরাজ লেবুর গাছ আছে ৷ সেই গাছে বছরে শুধু মাত্র ৪-টি লেবু ধরে তাও আবার দূগা পূজোর ২৫দিন আগে ৷ এই লেবু শুধু মাত্র মায়ের ভোগে দেওয়া হয় ৷ পূজোর চারদিন এই বাড়িতে রাত্রে কীর্তনগান হয়। ৷
কীভাবে যাবেন- হাওড়া স্টেশন থেকে 5/6 নং প্লাটফর্ম 6.45am হল এক্সপ্রেস করে আপনারে চাইলে পঃ বধমাণ জেলার উখড়া গ্রামের এই দূগা পূজা দশন করে আসতে পারেন ৷
কৃতজ্ঞতাস্বীকার- অর্ক রায়
তথ্যসূত্র সংগ্রহ ও লিপিবদ্ধকরনেঃ সুরজিৎ সাহা