ঐতিহ্যের
ইতিহাসপর্বঃ
আজ প্রকাশিত হল
পাঁচগাঁওয়া রক্তবর্ণা দেবী দুর্গার ইতিহাস
এবং দেবী আবির্ভাব নিয়ে
বিশেষ তথ্য। বনেদীয়ানা
পরিবার কৃতজ্ঞতাস্বীকার করছে শ্রী স্বর্গীয়
হরি নারায়ণ ভট্টাচার্য্য মহাশয়ের
প্রতি। তথ্য
প্রদান করলেন শ্রী রনজয়
রায় মহাশয়। সেই
প্রাচীন অনন্য তথ্য লিপিবদ্ধ
করলেন বনেদীয়ানা'র সদস্য শ্রীমান
শুভদীপ রায় চৌধুরী।
চলুন দেখা যাক সেই
প্রাচীন ইতিহাস।
আভিজাত্যে
এবং ধারাবাহিকতায়ঃ- পাঁচগাঁওয়ে'এর রক্তবর্ণা দেবী দুর্গা
প্রায়
তিনশত বৎসর পূর্বে সর্ব্বানন্দ
দাস তৎকালীন সরকারের অধীনে মুন্সী পদবিতে
সমাসীন ছিলেন। তাহার
কর্মস্থল ছিল আসামের শিবসাগর
জেলায়। তথায়
কর্মাবস্থায় একদা শারদীয়া দূর্গাপুজার
সময় অতিন কামাখ্যা ধামে
পূজার অভিলাসে পুজা করেন।
মন্দিরের সেবায়েতের সহায়তায় তিনিই একজন পঞ্চমবর্ষীয়া
কুমারী নির্বাচন করেন। মহাষ্টমীর
দিনে কুমারীকে পূজা করার মনস্থ
করেন,,সেই সাথে তাহার
নিজ বাড়ীতে যথাবিহীত পূজা
সম্পন্ন করার জন্য তাহার
স্ত্রী এবং কর্মচারীগন কে
নির্দেশ দেন।বংশ
পরম্পরায় কথিত আছে, সর্ব্বানন্দ
দাস কামাখ্যা ধামে উপস্থিত হইয়া
কুমারীপুজ্জ আসনে যথাবিহীত উপবেসন
করাইয়া ষোড়শোপচারে স্বয়ং ভগবতীজ্ঞানে পূজা
চলিতে লাগিল।প্রায়
৬ ঘন্টা ব্যাপিয়া পূজা
অনুষ্ঠিত হইল,
কুমারী
ও প্রস্থরবৎ সুদীর্ঘ ৬ ঘন্টা আসনে
উপবিষ্ট ছিলেন। পূজা
শেষে ভগবতীকে প্রণাম করার পর
সর্ব্বানন্দ দাস এক অভূতপূর্ব
দৃশ্য দেখেন, কুমারীর গায়ের
বর্ণ পরিবর্তন হইয়া লাল বর্ণ
ধারণ করিয়াছেন। এই
দৃশ্য অবলোকন করার পর
ভাবে গদ গদ চিত্তে
মাকে জিজ্ঞাসা করেন, মা আমার
পূজা সু-প্রসন্ন হইয়াছে
কি??
উত্তরে
ভগবতী বলেন "হ্যা" তোর পূজা সিদ্ধ
হইয়াছে। এই
বর্ণে তোর গ্রামের বাড়ী
পাঁচগাঁও এর এর পূজা
মন্ডপে আবির্ভাব হইয়াছিলাম।এখন
হইতে তুই ভগবতীকে লালবর্ণে
পূজা করিবে। তখন
সর্ব্বানন্দ দাস মাকে প্রশ্ন
করেছিলেন "আপনি যে আমার
বাড়ীতে আবির্ভূতা হইয়াছিলেন তার প্রমান কি??
উত্তরে
কুমারী দেবী বলেন তোর
দূর্গা মন্ডপে বেড়ার উপরে
আমার হাতের চাপ রাখিয়া
আসিয়াছি,,এবং তোর পূজায়
আমি সন্তুষ্টি হইয়াছি। তুই
আমার কাছে বর প্রার্থনা
কর। তখন
সর্ব্বানন্দ দাস বলিলেন "হে
দেবী তোমার শ্রীপাদপদ্ম পাওয়াই
আমার একমাত্র কাম্য। তবুও
কুমারী দেবী বর চাওয়ার
জন্য সর্ব্বানন্দ দাস কে পিরাপিড়ি
শুরু করলেন।তখন
বাধ্য হয়ে সর্ব্বানন্দ দাস
ভগবতীকে বলিলেন তোমি যদি
আমাকে একান্ত বর দিতে
চাও তবে এই বর
দাও আমার স্থাপিত পাঁচগাঁওয়ের
দূর্গামন্ডপে স্থায়ীভাবে অধিষ্ঠিতা থাকিবে।
প্রতিউত্তরে
ভগবতী তথাস্থু বলিয়া উনি নিজেই
উনার মাথায় পরিহিত সোনার
সিঁথি খুলিয়া সর্ব্বানন্দের হাতে
দেন। সেই
সিঁথি দ্বারা প্রতিবৎসর মাহাস্নান
করাইবার নির্দেশ দেন।অতঃপর
সর্ব্বানন্দ প্রণাম করতঃ কামাখ্যা
ধাম ত্যাগ করে নিজের
বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করেন।
বাড়িতে
আসার পর সর্ব্বানন্দ দূর্গা
মন্ডপ অনুসন্ধান করিয়া দেখিলেন যে
সত্যি বেড়ার উপরে দেবীর
হাতের চাপ দেখা যাইতেছে।পরবর্তী
বৎসর নিজ বাড়ীতে সর্বানন্দ
দাস শারদীয় পূজার আয়জন
করেন। এবং
কামাখ্যা ধামে দেবীর আদেশ
ক্রমে মাতৃমূর্তি কে কুমারীর গায়ের
সেই লাল বর্ণের সহিত
সাদৃশ্য করাইয়া লাল বর্ণে
রঞ্জিত করাইলেন।ভগবতীর
ধ্যানে উল্লেখ আছে তধীয়া
গায়ের বর্ণ অতসী পুস্পের
ন্যায়।কিন্তু
তৎপরিবর্তে লাল বর্ণ দেওয়াতে
সর্ব্বানন্দের জ্ঞাতি বর্গ,গুরুবর্গ,,তথা গ্রামবাসী এই
দৃশ্য অবলোকন করিয়া ইহা
শাস্ত্রবিরোদ্ধ বলিয়া সকলেই এক
বাক্যে অভিমত পোষণ করলেন।এবং
সর্ব্বানন্দ দাস কে এমন
অশাস্ত্রীয় কার্য হইতে বিরত
থাকার জন্য অনুরোধ করেন। তখন
সর্ব্বানন্দ দাস তাহার কামাখ্যা
ধামের চাক্ষুস অভিজ্ঞতার কথা জানাইয়া দেন।
সেই বৎসর ষষ্ঠী দিন
রাত্র পর্যন্ত কেহ পূজা মন্ডপে
আসেন নাই।পুরোহিতের
অভাবে দেবী বোধন সম্পন্ন
হইলো না।সর্ব্বানন্দ
পাগলের ন্যায় মাকে ডাকিতে
লাগিলেন।নিশা
অবসানের সময় সমাগত প্রায়,এমন ওলৌকিক গঠনা
গঠিয়া গেল।গুরু,
পুরোহিত,জ্ঞাতি ও গ্রাম
বাসী সকল পূজা মন্ডপে
আসিয়া জানাইলেন যে ভগবতীর এই
লাল বর্ণে পূজিতা হইবেন
বলিয়া সকলেই সপ্নাদেশ পাইয়াছেন।ভোর
সমাগত ঢাক,ঢোল,শঙ্খ,ঘন্টার নিনাদ চতুর্দিক
মুখরিত।
মহাসপ্তমী
পূজা মহা সমারোহে আরম্ভ
হইল।এই
বৎসর পূজার সমারোহের সীমা
রইলনা।পরবর্তী
বৎসর হইতে সর্ব্বানন্দের অপর
জ্ঞাতি বাড়িতে ও ভগবতি
এই লীলা বর্ণে পরিহিতা
হইতে লাগিলা।বর্তমানে
একমাত্র সর্ব্বানন্দ দাসের পুজামন্ডপে ভগবতি
পুজিতা হইতেছেন।উহাই
দেবীর অভূত বিকাশের বিশেষ
দিক।সর্ব্বানন্দ
দাসের কুলগুরু স্বর্গীয় রোহিনী ভট্টাচার্য্যের পিতামহ
একজন তান্ত্রিক সাধক ছিলেন তাহার
উপদেশ অনুশারে পূজার দশ হাজার
হোম, মহাবলি(মহিষ বলি)
ইত্যাদি ব্যাবস্থা করে গিয়াছেন।এইসব ব্যায়বহুল বিধি
নিয়মের জন্য তিনি স্থানে,স্থানে ভূসম্পত্তি ক্রয়
করতঃ পরবর্তীর জন্য পূজার্চ্চনার ব্যবস্থা
করিয়া যান।
প্রবাদ
আছে একদা সর্ব্বানন্দ দাস
তার গুরুদেব কে বিনয়চিত্তে বলিয়াছিলেন
তন্ত্রে যেমন মহাবলি দেয়ার
বিধান আছে,তদ্রুপ সাধন
বলে খন্ডিত মহিষ কে
জীবিত করার বিধান রহিয়াছে।যদি
কৃপা করেন,তবে সর্ব্বানন্দ
এই সাধনা ও করিতে
চান।গুরুদেব
তার প্রস্থাবে সম্মত হন।গুরু আজ্ঞানুশারে সর্ব্বানন্দ
দাস খন্ডিত মহিষ কে
কেহ স্পর্শ না করার
ব্যবস্থা করেন।এবং
দূর্গা মন্ডপের চারিপাশে সন্ধ্যার পর হইতে জনসাধারনের
প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন।সন্ধার
পর একটি বড় মশারি
দ্বারা মহিষ কে আচ্ছাদিত
করা হয়,তৎপর খন্ডিত
মস্তক আনিয়া গলার সহিত
সংযোজিত করা হয়।সমস্থ রাত্রী গুরু
শীষ্য এই মশারীর ভিতর
উপবষ্ঠ থাকিয়া বিধিমত তান্ত্রিক
পূজা সম্পন্ন করেন।প্রভাতে
সূর্য উদয় হবার পর
সর্বানন্দ দাস কে নিয়াসেই
মহিষ দক্ষিন দিকে ডৌড়ীয়া
যাইতেছে।তাহার
গুরুদেব কমন্ডলু হইতে মন্ত্রপুত জল
মহিষ এর উপির ছিটাইয়া
দিলেন।এবং
সঙ্গে সঙ্গে মহিষ মাটিতে
পড়িয়া গেল,এবং মহিষের
মস্তক পুনরায় ভিবক্ত হয়ে
যায়।
দুই তিন বৎসর পর
সর্ব্বানন্দ দাস কামাখ্যা ধামে
পুনরায় কুমারী পুজা করেন
এবং ঐ দুই তিন
বৎসর উনার বাড়িতে পুজা
সুষ্টভাবে হইয়াছে কি না
কুমারীর নিকট জানতে চাইলে
দেবী বলেন "গত বৎসরে নবমী
তিথিতে শাড়িখানা দূর্গাকে দেয়া হয়েছিল উহা
ছিহ্ন ছিল এবং গৃহিনীর
তুলনায় নিম্ন মান সম্পন্ন
ছিল"।সাথে
সাথে সাধক দেবীর নিকট
ক্ষমা ভিক্ষা চান।এবং খবর নিয়ে
যান্তে পারলেন ঘটনা সত্য
ছিল।পূজা,১০৮ চন্ডিপাঠ,১০
হাজার হোম,ও প্রজাদের
পৃথক পৃথক ভাবে ভূমিকা
প্রদান করিয়াছেন।সর্ব্বানন্দ
দাস দেবীসেবা কার্যাদী সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্য পূর্বে
তৎপুত্র কমলচরণ দাস কে
একখানা নির্দেশনামা লিপিবদ্ধ করিয়া দেন।কমল চরন বাবুর
আমলে যথাবিহিত সম্পন্ন হইতে থাকে।
একদা মহাদশমী দিনে দেবী দূর্গা
বিসর্জনের সময় ধান ক্ষেতের
মধ্য দিয়ে যাইতে গেলে
ক্ষেতের মালিক জনৈক ব্যক্তি
পাল বাবু কর্তৃক বাধা
প্রাপ্ত হন।কমল
চরন বাবু সদলবলে মামলা
দায়ের করতে যান।তখন প্রশাসক একজন
ইংরেজ শাসক ছিলেন,এবং
তিনি নিজে সরজমিন পরিদর্শন
করতে এসে রায় প্রদান
করেন উক্ত স্থান ব্যতিত
অন্য কোন জায়গা না
থাকায় উক্ত বাধাপ্রাপ্ত স্থান
ব্যবহার করা হবে।কারন এই রক্ত
বর্ণা দেবী জার্গত।কথিত আছে দেবীর
বিসর্জন কার্জে যত ধান
ক্ষতিগ্রস্থ হত,,তার চতুর্গুণ
ধান উৎপাদন হইত সেই
জমিনে। অতপর
কমল বাবুর পুত্র কালীকিশোর
বাবুর আমলে কাঠাম ছোট
করে ধাৎ পরিবর্তন করে
ঢাকাইয়া কারিগর দ্বারা নির্মান
করা হয়েছিল। ঐ
বৎসর মহাষ্টমীর দিনে কালিপদ বাবু
হঠাৎ জ্ব্ররে আক্রান্ত হয়ে অজ্ঞান হইয়া
পড়েন।এমন
এক অবস্থার সৃষ্টি হয় কমল
বাবুর অন্তিম সময় প্রায়
সমাগত।তখন
কুলগুরু শ্রী কালি রুহিনী
ভট্টাচার্য্য মহাশয় সবে মাত্র
সম্পন্ন পুজার মহাস্নান হাতে
লইয়া দেবীর নিকট ক্ষমা
প্রার্থনা করতঃ মৃত্যু সজ্জায়
সজ্জিত কালিপদ বাবুর নিকট
আসিয়ে তাহার মুখে বিন্দু
পরিমান মহাস্নান দিলে ঘন্টার ভেতর
তিনি জ্ঞান ফিরিয়া পান
এবং সুস্থ হইয়া উঠেন।এই
ঘটনার পর সর্ব্বানন্দ দাসের
আমলের মূর্তির পরিমাপ,রঙ, ও
সনাতনী ভঙ্গি পিরিবর্তন করার
সাহস কেউ করেন নাই।প্রতি
বৎসর ভগবতি পূর্ব বৎসরের
ন্যায় দৃষ্ট হন।বিন্দু মাত্র ইহার
পরিবর্তন হয় না।
যা ইতিহাসে বিরল।কালি
পদ বাবু ৪৮ বৎসর
বয়সে অসুস্থ হইয়া গৃহ
বন্দি হইয়া পড়েন।
তখন তাহার পুত্র গন
ঘৃতের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়াতে
হোম কমাইয়া নেয়ার সিদ্ধান্ত
নিলে কালিপদ বাবু সেই
সিদ্ধান্তের বিরিধীতা করেন এবং নির্দেশনামায়
পূর্ববতঃ সিদ্ধান্ত অটুট রাখেন।
কালীপদ
বাবুর অসুস্থতার পর হইতে তাহার
তৃতীয় পুত্র শান্তীবাবু ভগবতীর
পূজার দায়িত্ব গ্রহন করেন।
১৩৬২ বাংলার ১লা বৈশাখ
জমিধারী প্রথা বিলুপ্ত হয়।তখন
পূজার আড়ম্ভর কমানোর সিদ্ধান্ত
নেয়া হয়।সর্ব্বানন্দ
দাস দূর্গা মন্ডপের সম্মুখে
একটি গর্ত করিয়া গিয়েছিলেন।প্রতিমা
নির্মানের জন্য প্রতি বৎসর
মালাকার রা উক্ত গর্তে
অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে মাঠি আনিয়া
আজ অবদি রাখিতেছেন।প্রতিমা গঠন হইতে আরম্ভ
করিয়া পূজার যাবতীয় কার্যাদি
পূর্ববৎ অসংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিগন বংশানুক্রমিক ভাবে পালন করিয়া
আসিতেছেন।এই
ব্যাপারে কোন প্রকার পারিশ্রমিক
গ্রহন করিতে তাহারা অনিচ্ছুক।এই
দিকে জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির পর
দূর্গাপুজা তাদের ভেতরের বাড়ীতে
সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া
হয়।কিন্তু
সংশ্লিষ্ট কর্মীরা সমবেত হইয়া জানান
যে, তাহারা যথারীতি পূজার
যাবতীয় কার্যাদি পূর্ববৎ চালাইয়া যাইবেন।জমিদারী
আয় কমে আসার ফলে
কালীপদ বাবুর পুত্র সুধাময়
বাবু মহিষ বলি বন্ধ
করার প্রস্থাব দেন।পূজার
২/৩ দিন পূর্বে
তাঁহার মাতা শান্তি বাবু
কে বলেন যে, গতকল্য
রাত্রে তাহার ঘুম হয়
নাই, বড় অশান্তিতে রাত্রি
যাপন করিয়াছেন।কাজেই
মহিষ বলি বাদ দেয়া
যাইবে না। এবং
কৈলাশ ঘোষ নামক জনৈক
ব্যক্তি অযাচিত ভাবে ২০০
টাকা মহিষ ক্রয়ের জন্য
আনিয়া দেন
এই দিকে স্নেহময় বাবু
সপ্নেদৃষ্ঠ হন তিনি মহিষ
বলি দিতেছেন। অতএব
মহিষ বলি আর বন্ধ
হইলো না। দিন
দিন ভক্ত দের সমাগম
বাড়তে লাগলো।কেহ
পাঠা,কেহ মহিষ, কেহ
কাপড়,কেহ স্বর্ণালংকার,ও
নানাবিদ উপাচার মায়ের পূজার
উদ্দেশ্যে দিতে লাগিল।প্রতিবৎসর কয়েকশত পাঠা,এবং
ছয়টা মহিষ বলি হয়ে
থাকে।১৩৭৭
বাংলা পর্যন্ত কয়েকশত পাঠা এবং
৬ টি মহিষ বলি
হইতে ছিল।১৩৭৭
বাংলার শেষের দিকে স্বাধীনতা
সংগ্রাম শুরু হয়।
তখন জনৈক ভক্ত প্রদত্ত
রূপার তৈরি একটি মুকুট
যাহার
ওজন ৮০ ভরি,,রূপার
চরন পদ্ম,,সোনার চুরি,,সোনার নুলক,,আংটি,,সব লুণ্ঠিত হয়। কেবল
মাত্র দৈব ভাবে প্রাপ্ত
কুমারীর সোনার সিথি টা
রক্ষা পায়। যে
লোকটি ভগবতির সেই অলংকার
নিয়েছিল সেই ব্যক্তি মস্তিষ্ক
বিকৃত হইয়া মারা যায়। কুমারী
দেবীর নির্দেশ অনুযায়ী উনার থেকে প্রাপ্ত
সেই সিথি দ্বারা আজ
অবদি দেবীর মহাস্নান করা
হয়।অদ্যাবধি
সেই সিথিঁ সর্ব্বানন্দ দাসের
পরবর্তী রা বংশানুক্রমিক ভাবে
রক্ষা করিয়া আসিতেছেন।
বিগত ১৯৭১ সনে স্বাধীনতা
সংগ্রামের সময় সেই সিথি
টি শান্তি বাবু তাহাদের
কুলগুরু স্বর্গীয় রাজিব ভট্টাচার্য্যের নিকট
রাখিয়া চলিয়া যান।
রাজিব ভট্টাচার্য্য মহাশয়ের সংগ্রামের সময় উনার সমস্থ
সম্পত্তি নষ্ট হইয়াছে।
কিন্তু তিনি ভগবতীর সিথিঁটা
প্রানের চেয়ে বড় মনে
করিয়া তাহা রক্ষা করিয়াছেন
এবং শান্তি বাবু দেশে
আসার পর সেই সিঁথিটা
তিনি তাহার নিকট সমজাইয়া
দেন।এই
বৎসর অর্থাৎ ১৩৭৮ বাংলায়
ভগবতীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়
নাই
তবে ঐ গ্রামের জৈনিক
ব্যক্তি মন্ডপ ঘরে একটি
ঘট বসাইয়া ফুল বেলপাতা
দিয়া মাকে অর্চ্চনা করিয়াছিলেন। ১৯৮৯
বাংলা হইতে মায়ের পূজা
পূর্ববৎভাবে অনুষ্ঠিত হইতে থাকে।১৩৮৭ বাংলায় পাঁচগাঁও
তথা পার্শবর্তী গ্রাম গুলোর বিশিষ্ট
ব্যক্তিবর্গ সেচ্ছা প্রনদিত ভাবে
মিলিত হন,এবং
সিদ্ধান্ত
গ্রহন করেন যে, জন
সাধারনের নিকট হইতে চাঁদা
তুলিয়া পাকা করতঃ দূর্গা
মন্ডপ স্থায়ী ভাবে নির্মান
করার জন্য। ভগবতীর
পরম প্রসাদ এবং কর্মী
দের বিশেষ চেষ্টায় জেলার
বিভিন্ন স্থান হইতে ৭২
হাজার টাকা সংগ্রহ দ্বারা
উভয় গৃহই ইষ্টকাদি দ্বারা
নির্মিত হয়। পাকের
গৃহ ও যজ্ঞকুণ্ড ও
পাকা করা হয়।তৎপরে মন্ডপ নবরূপে
সজ্জিত হইয়াছে।১৩৯৮
বাংলায় শান্তিবাবু দেহত্যাগ করিলে তৎকনিষ্ট পুত্র
সঞ্জয়দাস পুজাদির সমস্থ দায় ভার
গ্রহন করেন।
অধুনা
পূজার অনুষ্টানাদি তাহার বংশধর ও
জনসাধারন স্বতঃস্ফুর্ত সহচর্যে মায়ের অশেষ কৃপাবলে
পূর্ববৎ যথারীতি বরঞ্চ পূর্বাপেক্ষা বর্ধিত
ভাবে সারম্ভরে অধ্যাবদি সম্পন্ন হইয়া আসিতেছে।
বর্তমানে
ভগবতী কে ভক্তদের দেয়া
বস্ত্রাদির একটা অংশ মন্ডপের
আনুসাঙ্গিক উন্নয়নের কাজে ব্যয় হইতেছে। এবং
সর্ব বর্ণের কর্মিদের মধ্যে
কিছু অংশ বিতরন করা
হইতেছে।
কিছুদিন
পূর্বে পাঁচগাঁওয়ের দূর্গামন্ডপে খুবই ভয়াবহ অবস্থান
ধারন করিয়াছিল। ২০০৬
ইং সাল হইতে বর্তমান
সেবায়েত বলি বিধান উঠাইয়া
দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। উনি
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তা
প্রচার করিয়াছিলেন।এতে
করিয়া হিন্দুধর্মালম্ভীদের মধ্যে জল্পনা কল্পনা
শুরু হইয়াছিল। অধিকাংশ
সনাতন ধর্মালম্ভী এবং এলাকাবাসী এই
সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাইয়াছিলেন। হিন্দু
ধর্মালম্ভীদের সক্রিয় পদক্ষেপে যৌক্তিক
ব্যাখ্য শুনার পর বলির
সিদ্ধান্ত অটুট বলিয়া পুনরায়
সংবাদ পত্রে প্রচার করা
হয় ।
বর্তমান
সেবাইত বাবু সঞ্জয় দাস
মহোদয় উনাদের পারিবারিক বলি
বিধান উঠাইয়া দিয়েছেন।।অধুনা পাঠা ও
মহিষের পরিবর্তে লেবু,,কুমরা,,আখ,কলা,ইত্যাদি পঞ্চ
উদ্ভিদ কে বলি দিয়া
আসিতেছেন। প্রত্যেক
বছর কয়েক শতাধিক পাঠা
এবং ছয়টি মহিষ বলি
যথারীতি হয়ে থাকে।
তথ্যপ্রদানেঃ-
শ্রী রনজয় রায়
কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ-
শ্রী স্বর্গীয় হরি নারায়ণ ভট্টাচার্য্য
মহাশয়
লিপিবদ্ধেঃ-
শ্রীমান শুভদীপ রায় চৌধুরী
No comments:
Post a Comment