Wednesday, August 21, 2019

বনেদীয়ানায় শোভাবাজার রাজবাড়িঃ- কলকাতা


ঐতিহ্যের ইতিহাসপর্বঃ

 আজ প্রকাশিত হল উত্তর কলকাতার শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গোৎসবের ইতিহাস বনেদীয়ানা পরিবার কৃতজ্ঞতাস্বীকার করলেন শ্রী সুমন দে(রাজবাড়ির জামাতা) মহাশয়ের কাছে লিপিবদ্ধ করলেন বনেদীয়ানা পরিবারের সদস্য শ্রীমান্ শুভদীপ রায় চৌধুরী রাজবাড়ির পুজোর ইতিহাস, চলুন দেখা যাক সেই প্রাচীন ঐতিহ্য

বনেদীয়ানায় শোভাবাজার রাজবাড়িঃ- কলকাতা

সময়টা ১৭৫৭ সাল, পলাশির যুদ্ধে সিরাজের পতনের পরই রাজা নবকৃষ্ণ দেব শুরু করলেন তাঁর রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোর প্রচলন রাজবাড়ি পুরোটাই দেবত্তর থাকায় ওই বাড়িতে বর্তমানে কোন সদস্যই থাকেন না রাজবাড়ি দুইটি, একটি বড় রাজবাড়ি এবং আর একটি ছোটো রাজবাড়ি বড় রাজবাড়ির কুলদেবতা শ্রীশ্রী গোবিন্দ জীউ রাধারাণি এবং ছোটো রাজবাড়ির কুলদেবতা হলেন শ্রীশ্রী গোপীনাথ জীউ রাধারাণি বড় রাজবাড়ির পুজো শুরু হয় ১৭৫৭ সালে এবং ছোটো রাজবাড়ির পুজো শুরু হয় ১৭৯০ সালে শোভাবাজার রাজবাড়িতে দেবী পূজিতা হন কন্যারূপে দেবী এখানে রাজনন্দিনীরূপে বিরাজমানা একচালার ডাকের সাজের দেবী প্রতিমা যেন ইতিহাস ঐতিহ্য এবং সর্বোপরি বনেদীয়ানার কথাই মনে করিয়ে দেয় আমাদের



 শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় দেবীকে প্রতিবছর নতুন কাঠামোতেই তৈরি হন দেবী এবং প্রতিমাশিল্পী বংশপরম্পরায় মূর্তি তৈরি করে আসছেন এই পরিবারেসময়টা ১৮৬০ এর আশেপাশে শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজোতে বসেছে বাঈনাচের আসর তখন রাজা কালিকৃষ্ণের আমল মূলত এই বাঈনাচের প্রথা দুর্গাপুজোতে প্রথম নিয়ে আসেন এই রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা রাজা নবকৃষ্ণ দেব প্রথম তিনি নর্তকী নিকি বাঈকে এনেছিলেন পুজোর সময় আসরে প্রসঙ্গে একটি কথা বলে রাখি এই বাঈনাচের যে কার্ড হত সেখানে নাচের বানান লেখা থাকত- 'নচেস'(Natuches) ১৯৪০ সালের শেষ বাঈনাচ বসেছিল এই রাজবাড়িতে, এসেছিলেন গহরজান নিমন্ত্রনের কার্ড হত হাতির দাঁতের তৈরি এবং পরবর্তীকালে আইভরি কাঠের তৈরি শুধু বাঈনাচ নয় আগে এই পুজোর সময় যাত্রা, থিয়েটার, কবিরলড়াই ইত্যাদি অনুষ্ঠান হত এই রাজবাড়িতে
 যে প্রথায় পুজো শুরু হয়েছিল আজও সেই একই প্রথায় চলে আসছে দুর্গাপুজো লর্ড ক্লাইভ থেকে শুরু করে হেস্টিংস, লর্ড ক্যানিং, বেথুন, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, স্বামী বিবেকানন্দ, সিস্টার নিবেদিতা, প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজা হীরালাল শীল, মাইকেল মধুসূদন দত্তের মতন মানুষেরা এই রাজবাড়ির অতিথি হয়ে এসেছেন পুজো দেখতে এই রাজবাড়িতে কোন অন্নভোগ হয় না কারণ রাজবাড়ির সদস্যরা কায়স্থ তাই তারা নানান রকমের মিষ্ঠান্ন ভোগই নিবেদন করেন দেবীকে যেমন- মিঠে গজা, দরবেশ, লেডিকেনি, জিলিপি, খাজা, লালমিঠাই, সাদামিঠাই, লবঙ্গলতিকা, চৌকোগজা, রাধাবল্লভী, মুগের নাড়ু, পূর্ণ চন্দ্রপুলি, পেরাকী ইত্যাদি নানান ধরনের মিঠাই ভোগ হিসাবে দেওয়া হয় মাকে



উল্টোরথের দিন কাঠামোপুজো হয় এই রাজবাড়িতে আগে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো হত কিন্তু বর্তমানে আইনে বাঁধা দেওয়ায় দশমীর দিন কুমোরকে দিয়ে নীলকণ্ঠ পাখি তৈরি করে বিসর্জন করা হয় আজও দশমীর দিন এই রাজবাড়ি মা কাঁধে করে বিসর্জন হয় মাঝগঙ্গায়, আজও বিসর্জনের সেই প্রাচীন রীতি ধরে রেখেছেন রাজ বাড়ির বর্তমান সদস্যরা এই রাজবাড়িতে মহানবমীর দিন  বলি হয়- চারটি চালকুমড়ো, আখ, মাগুরমাছ ইত্যাদি মহাষ্ঠমীর দিন সন্ধিপূজার দিন এই রাজনন্দিনীকে ১০৮পদ্মের মালা পড়ানো হয় এইভাবে ঐতিহ্যের সাথে আভিজাত্যের মধ্যদিয়ে পুজো হয়ে আসছে কলকাতার শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো



কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ- শ্রী সুমন দে (রাজবাড়ির জামাতা)
তথ্যসূত্র সংগ্রহেঃ শ্রীমান্ শুভদীপ রায় চৌধুরী
চিত্রঋণঃ- শ্রী সুমন দে মহাশয়


No comments:

Post a Comment