ঐতিহ্যের
ইতিহাসপর্বঃ-
আজ প্রকাশিত হল
দক্ষিণ কলকাতার দত্ত পরিবারের দুর্গাপুজোর
ইতিহাস। লিপিবদ্ধ
করলেন বনেদীয়ানা পরিবারের সদস্য শ্রীমান শুভদীপ
রায় চৌধুরী। চলুন
দেখা যাক সেই দুর্গাপুজোর
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
বনেদীবাড়িঃ- দক্ষিণ কলকাতার দত্ত
পরিবার
এই দত্ত পরিবারের
দুর্গাপুজোর সূত্রপাত বাংলাদেশ থেকে। বাংলাদেশ
থেকে এপার বাংলায় এসে
এই পুজো কিছু বছর
বন্ধ থাকে। আবার
কিছু বছরপর এই পরিবারের
কনিষ্ঠ পুত্র শ্রী সৌহার্দ্য
দত্ত এই পরিবারের দুর্গাপুজো
আবার শুরু করেন।
রথযাত্রার পুণ্যতিথিতে এই পরিবারের কাঠামো
পুজো হয়। জন্মাষ্টমীর
দিন মৃন্ময়ী প্রতিমার গায়ে প্রথম মাটির
প্রলেপ প্রদান করা হয়। আগে
বাড়িতেই প্রতিমা নির্মাণ করা হত এবং বাড়ির ছোট
ছেলে যে পুজোর প্রধান
উদ্যোক্তা সৌহার্দ্য ও নিজে ই
প্রতিমা নির্মাণ করত , কিন্তু বর্তমানে
জায়গার অভবে ও বিভিন্ন
অসুবিধার কারণে তা বাড়িতে
করা আর সম্ভব হয়
না । আগে
দেশের বাড়িতে যা নিয়ম
মানা হত তা প্রায়
সব ই মানা হয়
কোন পরিবর্তন করা হয় নি
, শুধু আগে পশু বলি
হত এখন ফল বলি
হয় ।প্রতিপদ
থেকে কল্পারম্ভ
র পূজো শুরু হয়
এবং নিত্য অন্ন ভোগ
ও হয় । প্রতিপদ
থেকেই নিত্য ২ প্রকার
চন্ডী পাঠ হয় ।
তিথি ভিত্তি তে দেবীকে
ভোগ , ভাজা , তরকারি ও
মিষ্টি নিবেদন করা হয়
, যেমন :- সপ্তমী তে ৭
রকমের ভাজা , ৭ রকমের
তরকারি , ৭রকমের মিষ্টি ইত্যাদি
, অষ্টামী যে ৮ রকমের
নবমী তে ৯ রকমের
, দশমী তে ১০ রকমের
সব জিনিস দিয়ে এছাড়া
মহাষ্টমী ও মহানবমী র
দিন দেবী র মহা
ভোগ বা রাজ ভোগ
হয় । প্রতিদিন
দেবীর আলাদা আলাদা রকমের
ভোগ হয় এবং তিনবেলা
ই ভোগ নিবেদন করা
হয় । দেবীর
দুই পাশে লক্ষ্মী ও
সরস্বতী র মূর্তি থাকে ঠিক ই
কিন্তু তাদের জয়া ও
বিজয়া রূপে পূজো করা
হয় । দেবী
মূর্তি প্রতিবছর টানা চোখের মুখ
হয় কিন্তু প্রতিবছর সাজ
পরিবর্তন করা হয় ।
প্রতিদিন ফল বলি হয়
। সপ্তমীর রাত
তিথি অনুযায়ী মহাষ্টমীর রাত এ অর্ধরাত্র
বিহিত পূজা হয় , এটি
অনেকটা সন্ধিপূজোর মতন এই পূজো
টি করেন দক্ষিনেশ্বর রামকৃষ্ণ
সঙ্ঘ অদ্যাপীঠ এর মহারাজ ।
এটি সব জায়গায় তেমন
দেখা যায় না , খুব
অল্প জায়গায় পূজটি হয়
। বাড়ির
ছোট ছেলেই প্রতিদিন এর
পূজো করে । জাত পাত এর
কোনো ভেদাভেদ নেই সকলের সমান
অধিকার থাকে এই পুজোতে
। খওয়ার সময়
ও সকলে এক আসনে
বসে মায়ের প্রসাদ গ্রহণ
করেন , কনো জাতির ভেদাভেদ
করা হয় না ।
সন্ধিপূজোর সময় দেবীকে সহস্র
প্রদীপ ও নৈবেদ্য নিবেদন
করা হয় , যেটি অন্যান্য
জায়গায় তেমন দেখতে পাওয়া
যায় না । আরতির খুব দেখার
মতন , কথিত
আরতির সময় যদি দেবীর
চোখের দিকে তাকিয়ে নিজের
মনশকামনা জানায় তাহলে সেটি
পূরণ হয় । দশমীর দিন দেবী
মূর্তির বিসর্জন হয় না ।
দশমীর
দিন দেবীকে ভোগ এ
শীতল পান্তা , কচুর সাগ , ডালের
বড়া , ১০ রকমের ভাজা
দিয়ে ভোগ নিবেদন করা
হয় । দশমীর
দিন দেবীকে মাছ , পিঠা
ও ঘি এর প্রদীপ
দিয়ে দেবীকে যাত্রা করানো
হয় । প্রতিমা
বিসর্জন এর সময় কনকাঞ্জলি
হয় । আমাদের
দেবীকে কুমারী রূপে পূজো
করা হয় । এ
ছাড়া মহানবমী র দিন আলাদা
করে কুমারী পুজোর ব্যাবস্থা
থাকে । ৬
বছরের একটি মেয়ে কে
সাজিয়ে কমারীর আসনে বসিয়ে
কুমারিপূজা করা হয় , আগে
৯জন কন্যাকে কুমারী পূজা করা
হত কিন্তু এখন তা
আর হয় না এখন
একজন কেই পূজো করা
হয় । নিত্য
( প্রতিপদ থেকে দশমী পর্যন্ত)
দেবীকে নতুন বেনারসী কাপড়
পড়ানো হয় এবং তার
সঙ্গে থাকে গয়না ।
তবে পুজোর প্রতিদিন আগে
বাড়ির কুল দেবী (জগৎজননী
আদ্যা মা) পূজো হবে
তার পর দেবীর পূজো
শুরু হবে এবং ভোগের
ক্ষেত্রেও ঠিক একই নিয়ম
। ড দশমীর
দিন ৫টা ঢাক ও
ধুনোচি নাচের তালে দেবীকে
নিরঞ্জন করা হয় ।
আবার ৩দিন পর ওই
কাঠামো নিয়ে আসা হয়
। আবার একটি
বছরের অপেক্ষা ।।
কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ- শ্রী বিনয় ভুষণ দত্ত, শ্রী মানি দত্ত এবং সৌহার্দ্য দত্ত।
তথ্য লিপিবদ্ধেঃ- শ্রীমান শুভদীপ রায় চৌধুরী
No comments:
Post a Comment