ঐতিহ্যের
ইতিহাসপর্বঃ
আজ প্রকাশিত হল
উত্তর কলকাতার ভট্টাচার্য্য পরিবারের দুর্গাপুজোর ইতিহাস। ইতিহাস
লিপিবদ্ধ করলেন শ্রীমান শুভদীপ
রায় চৌধুরী। চলুন
দেখা যাক সেই বাড়ির
ইতিহাস।
বনেদী
বাড়ির দুর্গাপুজোঃ- ভট্টাচার্য্য পরিবার
ভট্টাচার্য্য পরিবারের আদি বসবাস বাংলাদেশের
ময়মনসিংহ অঞ্চলে। এই
মনমনসিংহের পণ্ডিত শ্রী রাঘবরাম
ভট্টাচার্য্য শুরু করেছিলেন পরিবারে
দুর্গাপুজো, ১৮০০ শতকের শেষে। এই
বংশের কুলদেবী অর্ধকালী, তাই এই পরিবার
অর্ধকালী পরিবার নামেই বিখ্যাত।
এই ভট্টাচার্য্য পরিবার
ঘোরতর শাক্ত পরিবার।
এই পরিবারে প্রথম দিকে দুর্গাপুজোতে
মাছ, মাংস অর্থাৎ দেবীকে
আমিষ ভোগই দেওয়া হত। কিন্তু
এই রীতির পরিবর্তন ঘটে। ভট্টাচার্য্য
পরিবারে বউ হয়ে আসেন
অদ্বৈত পরিবারের যোতীন্দ্রমোহন গোস্বামীর কন্যা নীলনলিনী দেবী। তিনি
আসায়, পরিবারে কিছুটা বৈষ্ণবীয় ভাবধারার
সূত্রপাত হয়। এই
নীলনলিনী দেবী সঙ্গে করে
এনেছিলেন শ্রীশ্রী শ্রীঁরাধারমনকে, তাই নিরামিষ ভোগের
প্রচলন শুরু হয় পরিবারে।
তারপরে দেশভাগ, অর্থনৈতিক
পরিকাঠামো প্রায় ভেঙে পড়ায়
বহু বছর ঘটে পুজো
হত এই পরিবারে।
বর্তমানে এই পুজো হয়
উত্তর কলকাতার কৈলাশ বোস স্ট্রিট,
চালতাবাগানের বাড়িতে। বর্তমানে
শ্রী রাধারমণ দেবের কৃপায় সাড়ম্বরে
পালিত হয় এই পরিবারে
দুর্গাপুজো, শুধু দুর্গাপুজোই নয়
নিষ্ঠার সাথে পালিত হয়
দ্বাদশযাত্রা রাস উৎসব, ঝুলন
উৎসব, রথযাত্রার মতন উৎসবও।
এই পরিবারের দুর্গাপুজোর বিশেষত্ব হল সপ্তমী থেকে
নবমীবিহিত অখণ্ড হোম হয়ে
থাকে। দশমীর
দিন হয় অস্ত্রের পূজা। তৎকালীন
সময়ে চণ্ডীপাঠ চলাকালীন রাঘবরাম ভট্টাচার্য্যের এক সন্তান ভগবতীর
সাক্ষাৎ দর্শন লাভ করেন
এবং সেখানেই স্থূলশরীর ত্যাগ করেন।
তাই পরবর্তীকালে দুর্গাপুজোর সংকল্প করে চণ্ডীপাঠ
হয় না। দেবীর
প্রীতির জন্য ষষ্ঠীর দিন
সপ্তসতী চণ্ডীপাঠ হয়ে থাকে।
ভট্টাচার্য্য পরিবারে পুজো হয় কালিকাপুরাণ
মতে।
বর্তমানে ভট্টাচার্য্য পরিবারে দেবীকে নিরামিষ ভোগই
প্রদান করা হয়।
সপ্তমীর দিন ভোগে থাকে
সাদাভাত, শুক্তনি, বিভিন্ন রকমের ভাজা, পায়েস
ইত্যাদি। মহাষ্টমীর
দিন প্রদান করা হয়
পোলাও, খিচুড়ি, বিভিন্ন প্রকার তরকারি, ভাজা,
পায়েস ইত্যাদি। দশমীতে
থাকে পান্তাভাত, কচুরশাক, ডালের বড়া ভাজা
ইত্যাদি। তারপর
দেবীকে বরণ করা হয়। দেবীবরণ
শেষে কৈলাশের
পথে যাত্রা করেন উমা। এইভাবে
ধারাবাহিকতা ও ঐতিহ্যের সাথে
আজও পুজো হয়ে আসছে
উত্তর কলকাতার চালতাবাগানের ভট্টাচার্য্য বাড়িতে।
কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ-
ইন্দ্রাশিষ ভট্টাচার্য্য
তথ্যসূত্র
সংগ্রহেঃ- শ্রীমান্ শুভদীপ রায় চৌধুরী
No comments:
Post a Comment