Saturday, August 17, 2019

ঐতিহ্যের মনসাপুজোঃ- ত্রিপুরার সাবর্ণ গোত্রীয় ভট্টাচার্য্য পরিবার


ঐতিহ্যের ইতিহাসপর্বঃ
 আজ প্রকাশিত হল ত্রিপুরায় সাবর্ণ গোত্রীয় ভট্টাচার্য্য পরিবারের মনসাপূজার ইতিহাস লিপিবদ্ধ করলেন বনেদীয়ানা পরিবারের সদস্য শ্রীমান্ শুভদীপ রায় চৌধুরী বনেদীয়ানা পরিবার ধন্যবাদ জানালো শ্রীমান্ জয়দীপকে চলুন আজ দেখা যাক সেই পুজোর ইতিহাস

ঐতিহ্যের মনসাপুজোঃ- ত্রিপুরার ভট্টাচার্য্য পরিবার
সাবর্ণ গোত্রীয় ভট্টাচার্য্য পরিবারের বর্ত্তমান ভদ্রাসন ত্রিপুরা রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্ত লাগুয়া এক মহকুমা সদর কমলপুরে বাড়িতে সারাবছর নানা ব্রত পূজা হলেও এই পরিবারের মনসা পূজা কমলপুরে এক অন্য যায়গা বজায় রেখে চলেছে বহুবছর ধরেই
ভট্টাচার্য্যদের আদি নিবাস পূর্ববঙ্গের সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার বামৈ গ্রামেবামৈ এর তালুকদার ছিলো ভট্টাচার্য্যরাদেশভাগের কিছুদিন পর ১৯৪৯ সালে পরিবারের তৎকালীন কর্ত্তা ঁনবীনচন্দ্র ভট্টাচার্য্য  স্ত্রী সরলাসুন্দরী দেবী,একমাত্র পুত্র হরিদাস এবং পুত্রবধূ মালতীপ্রভাকে নিয়ে বামৈ-এর সাতপুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে আসে পার্শ্ববর্তী ত্রিপুরা রাজ্যের কমলপুরে
বামৈ থাকাকালীনই কোন এক সময় পরিবারে মনসা পূজার প্রচলন হয়,কিন্তু ঠিক কবে থেকে এই পূজা হয়ে আসছে তার সঠিক হিসাব কারোরই জানা নেইবামৈ থাকাকালীনই সেই গ্রামের রুদ্রপাল পরিবার গড়ে দিত ভট্টাচার্য্যদের ঠাকুর,ভট্টাচার্য্যরা কমলপুরে চলে আসার সময় রুদ্রপাল পরিবারও চলে আসে কমলপুরেসেই আজানা কাল থেকে আজো রুদ্রপাল পরিবারের হাতেই ভট্টাচার্য্যদের মা পদ্মাবতী মৃন্ময়ী রূপে সাজছেন
বামৈ- থাকাকালীন সময়ে খুবই জাকজমক করে পূজা হতো,কমলপুরে আসার পর জাকজমকে ভাঁটা পরে, কিন্তু প্রচণ্ড আর্থিক অনটনের মধ্যেও পূজা চালিয়ে নিয়ে যান ঁহরিদাস ভট্টাচার্য্য ঁমালতীপ্রভা দেবী
এই পরিবারের পূজা কেবল পূজা নয়,উপরন্তু একমাসব্যাপী ব্রতআষাঢ় সংক্রান্তির সকালে বাড়িতে মা মনসার নামে ৫টি ঘট স্থাপন করে ব্রত প্রতিষ্ঠা হয়সেদিন থেকেই শুরু হয় পুরো শ্রাবণ মাসব্যাপী পঞ্চঘটে মায়ের নিত্যসেবা নিত্য পদ্মাপুরাণ পাঠ
উল্লেখ্য এই বাড়িতে দ্বিজ রাধানাথ রায়চৌধুরীর পদ্মাপুরাণ পাঠ করা হয়
শ্রাবণ মাসে যেদিন যেদিন পঞ্চমী তিথি থাকে সেদিন ঘট পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে আবার মায়ের বিশেষ পূজা করতে হয়
শ্রাবণ মাস ঢুকতেই রুদ্রপালদের বায়না দেওয়া হয় মায়ের প্রতিমার জন্য
শ্রাবণের শেষে চলে পূজার জোড় প্রস্তুতিবর্ত্তমানে ঁহরিদাস ভট্টাচার্য্যের পুত্ররা পূজা পরিচালনা করছেন,মায়ের আশীর্বাদে ভট্টাচার্য্যদের আজ দিন ফিরেছেবামৈ এর মতো এখন আবার পূজার দিন সারা পাড়ার পাত পরে ভট্টাচার্য্য বাড়িতে

পূজার আগের দিন প্রতিমা আনা হয় বাড়িতে,এই পরিবারের প্রতিমাও একটু অন্যরকমএই পরিবারে মা ঘটবিষহরী রূপে পূজিতা হনসিলেটের হাওর অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে এই রকম প্রতিমায় মনসা পূজার রীতি প্রচলিত,সেই নিয়ম মেনে আজো ঘটবিষহরী রূপেই মা পূজিতা হচ্ছেন
এঁর বিশেষত্ব হলো কলসের মতো থাকে মা মনসার প্রতিমা আর কলসের মাথায় মায়ের চেহারা,কলসে আঁকা থাকে পদ্ম পদ্মপাতাআর মায়ের মাথার উপর থাকে মায়ের দিদি নেতামায়ের পাশেই থাকে ছোট্ট একটি কাঁচা মাটির ঘট যা মহাদেবের প্রতীক
পূজার আগের দিন রাতে পদ্ম পাতার উপর প্রতিমা স্থাপন করে মায়ের প্রতিমার ভেতর দিয়ে দেওয়া হয় সোনা,রূপা, কড়ি,চাল,কাঁচাহলুদ,ধান,দুর্বা, টাকার মুদ্রাতারপর মায়ের প্রতিমার উপর নেতার প্রতিমা স্থাপন করা হয়শ্রাবণ সংক্রান্তিতে প্রধান পূজার দিন আবার পঞ্চঘট পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে শুরু হয় পূজাসন্ধ্যায় করণ্ডী ব্রত পালন করা হয় যা পরিবারের পূজার আরেক বিশেষত্ব
এই পরিবারে প্রতিমা এবং করণ্ডী দুইই পূজা হয়যেহেতু ব্রাহ্মণ পরিবার তাই মাকে অন্নভোগও নিবেদন করার হয়আগে পাঁঠা বলিও হতো,বছর ৪০ আগে তা বন্ধ করে দেওয়া হয় মায়ের স্বপ্নাদেশে
পরিবারের নিয়মানুসারে পূজায় অষ্টনাগকে নিবেদন করা দুধকলা সন্ধ্যার আগে পরিবারের সদস্যদের প্রসাদ রূপে খেয়ে নিতে হয়নৈবেদ্যের প্রধান জিনিস হলো অমৃত নাড়ু ২০ টা বিষনাড়ুঅমৃতনাড়ুর প্রসাদ নেওয়া হয়,আর বিষনাড়ু ভাসিয়ে দেওয়া হয়
পরের দিন ১লা ভাদ্রে আবার মায়ের বাসি পূজা হয় ভাগে নৈবেদ্য নিবেদন করে
তারপর পদ্মাপুরাণের স্বর্গারোহণ খণ্ড পাঠ করার পর প্রতিমার ভেতর থেকে অধিবাসের সব জিনিস বের করে পুটলি করে মায়ের আশীর্বাদ রূপে ঘরে রেখে দেওয়া হয়তারপর বাড়ির প্রধান ঘরের দরজার বসিয়ে শুরু হয় মায়ের বরণ,তবে দেবীবরণকে এই পরিবারে বলা হয় "যাত্রা করানো"বিসর্জনের আগে মায়ের কানে পরিবারের একজন সদস্য বলে দেন - "অষ্টনাগ নেতা আর মহাদেব রে লগে লইয়া আবার আইও গো মা বিষহরী"
তারপর মায়ের বিসর্জন বিসর্জন শেষে রঞ্চনা প্রসাদ নিয়ে তারপর হয় আনন্দভোজ
কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ- শ্রীমান জয়দীপ ভট্টাচার্য্য
তথ্যসূত্র সংগ্রহেঃ শ্রীমান্ শুভদীপ রায় চৌধুরী


No comments:

Post a Comment