Saturday, November 16, 2019

ঐতিহ্যের গোকুলচাঁদ জীউ ও কৃষ্ণরাই-কেশবরাইজীউঃ- শান্তিপুর


ঐতিহ্যের রাস উৎসবপর্বঃ-
 আজ রাস উৎসবের পর্বালোচনার শেষ পর্বে রয়েছি আমরা কেমন লাগল এই ছয়টি পর্ব?? কতটা সমৃদ্ধ হলেন আপনারা??? শুভদীপের গবেষণা থেকে উঠে এলো কিছু প্রাচীন কাহিনী এই ঐতিহ্যের রাস পর্বে আপনারা জানান আমাদের -মেলের মাধ্যমে আজ প্রকাশিত হল শান্তিপুরের দুই প্রাচীন রাস উৎসবের ইতিহাস, লিপিবদ্ধ করলেন শুভদীপ যারা যারা এই রাস উৎসবের কাহিনী ইতিহাস লিখতে সাহায্য করেছেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই বনেদীয়ানার তরফ থেকে

  এই বছরই ডিসেম্বরে আমরা ঐতিহ্যসভার আয়োজন করতে চলেছি নন্দন চত্বরের জীবনানন্দ সভাগৃহে, উপস্থিত থাকবেন বিশিষ্ট অতিথিরা আমরা সমৃদ্ধ হব তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে, আপনারা আসছেন তো? তার আগে চলুন দেখা যাক সেই দুই পরিবারের রাস উৎসবের কাহিনী সংক্ষেপে
ঐতিহ্যের গোকুলচাঁদ জীউ কৃষ্ণরাই-কেশবরাইজীউঃ- শান্তিপুর


শ্রীশ্রীরাধাগোকুলচাঁদ জীউঃ শান্তিপুরের রাস উৎসবের ইতিহাসের অন্যতম মধ্যমগোস্বামী বা হাটখোলা গোস্বামী বাটী বৈষ্ণবকুলচূড়ামণি শ্রীঅদ্বৈতাচার্য্যের প্রপৌত্র ঘনশ্যাম গোস্বামী থেকে এই মধ্যমগোস্বামী বা হাটখোলা গোস্বামী বাটীর সৃষ্টি এই বংশের আদি বিগ্রহযুগল শ্রীশ্রীরাধাবিনোদ জীউ ঘনশ্যাম গোস্বামীর পুত্র রঘুনন্দন গোস্বামী ছিলেন এই বংশের প্রাণপুরুষ তিনি ন্যায়, অলংকার তর্কশাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন শ্রীরঘুনন্দন একাধারে অগাধ পাণ্ডিত্য এবং অন্যদিকে অনন্ত ভক্তিমান হওয়ায় ব্রহ্মচারী দণ্ডিমহারাজ যুগল বিগ্রহের সেবার দায়িত্বভার তাঁকে অর্পণ করেন একদিন রঘুনন্দন স্বপ্নে দেখেন শ্রীশ্রীগোকুলচাঁদ জীউকে প্রায় সাড়েসাতশো বছর ধরে সেই রাধাগোকুলচাঁদ জীউ পূজিত হয়ে আসছেন গোকুলচাঁদ বাটীতে এছাড়াও রয়েছেন রামচন্দ্র জীউ এবং অদ্বৈতাচার্যের বিগ্রহ এই গোকুলচাঁদ জীউর মন্দির অদ্বৈতাচার্যের মন্দির রয়েছে এবং দশাবতার, দেবী দুর্গা সহ অসাধারণ টেরাকোটার কাজ রয়েছে মন্দিরে মন্দিরবেষ্টিত এই বাড়ির মাঝখানে রয়েছে মুক্ত নাটমন্দির
বর্তমানে এই ঠাকুরবাড়ির নাম মধ্যমগোস্বামী বাটী বলিয়া মূল ফটকের উপরিভাগে লিখিত আছে হাটখোলা গোস্বামী বাটীর নিত্য নৈমিত্তিক কর্মের মধ্যে নিত্যপূজা হয়ে থাকে বৈশাখমাসের পূর্নিমাতিথিতে শ্রীকৃষ্ণের ফুলদোল হয়ে থাকে আশ্বিন মাসের মহালয়ার পরদিন থেকে শুক্লাপ্রতিপদাদিকল্পে কালিকা পুরানোক্ত বিধিতে দুর্গাপুজো হয় এই বাটীতে শান্তিপুরের রাস উৎসব সাড়ম্বরে পালিত হয় গোকুলচাঁদ বাটীতে ভাঙারাসের শোভাযাত্রায় শ্রীবিগ্রহ নগরপরিক্রমা করেন পরদিন কুঞ্জভঙ্গ বা ঠাকুর নাচানো উৎসব বলে খ্যাত তা যথাযথ ভাবে পালন করা হয়এখনও আগামী প্রজন্মের সদস্যরা ধারাবাহিকতাকে অক্ষুণ্ণ রেখে শ্রীশ্রীরাধাগোকুলচাঁদ জীউর সেবা করে আসছেন

 শ্রীশ্রীকৃষ্ণরাই জীউ শ্রীশ্রীকেশবরাই জীউঃ

এবার আমরা উল্লেখ করবো শান্তিপুরের ঐতিহ্যবাহী পাগলা গোস্বামী ঠাকুরবাড়ির কথা শ্রীঅদ্বৈতাচার্য্যের তৃতীয়পুত্র বলরাম মিশ্রের কনিষ্ঠপুত্র কুমুদানন্দ থেকে এই বাড়ির সৃষ্টি  শান্তিপুরের প্রাচীন মন্দিরের অন্যতম এই দুই মন্দির এবং বিগ্রহ এই মন্দিরের ইতিহাসের সন্ধান দিলেন শ্রী তপন গোস্বামী(পরিবারের বংশধর-১৪তম) পাগলাগোস্বামী বাড়ির দুই বিগ্রহ কৃষ্ণ রায় কেশব রায় জীউ এই পরিবারের পুর্বপুরুষ অদ্বৈতাচার্য্যের চতুর্থপুত্র শ্রী বলরামের দশম পুত্র কুমদানন্দ গোস্বামী ছিলেন পণ্ডিত সাধক কথিত আছে কৃষ্ণনগর রাজ কর্তৃক প্রদত্ত সম্পত্তি প্রত্যাখ্যান বা নষ্ট করায়, তাঁহার "আউলিয়া"নামে খ্যাতি রটে এবং সেই জন্যই এই শাখার নাম আউলিয়া বা পাগলাগোস্বামী কুমদানন্দের দ্বারা "কৃষ্ণরাই" প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাঁচ বছর পর পুনরায় "কেবশরাই" প্রতিষ্ঠিত হন এই পরিবারে রাস উৎসব, দোলউৎসব, ঝুলনযাত্রা, জন্মাষ্টমী ইত্যাদি বলরামের কনিষ্ঠপুত্র কুমদানন্দ গোস্বামী, তাঁকে নারায়ণ শিলা দিয়েছিলেন অদ্বৈতাচার্য্য রাসের সময় রাসমঞ্চে একই সাথে দুই বিগ্রহ পূজিত হন বিগ্রহের বয়স প্রায় আনুমানিক ৪৫০বছর কথায় কথায় জানতে পারলাম রাসমঞ্চে বিগ্রহ স্বর্ণালংকারে সাজানো থাকে বিগ্রহ তৈরীর পাঁচবছর বাদে তৈরী হয় গৌরনিতাই বংশের হরিনাথ গোস্বামীর স্ত্রী অদ্বৈতমহাপ্রভু তাঁর স্ত্রী সীতাদেবীকে মূর্তি আকারে প্রতিষ্ঠা করেন পরিবারে অন্নভোগ নিবেদন করা হয় সকালে মঙ্গলারতি হয় এবং বাল্যভোগে খীর, মাখন, মিষ্টি, ছানা, নারু ইত্যাদি নিবেদন করা হয় দুপুরে শাক, শুক্তনি, ডাল, মোচার ঘন্ট, পটলের তরকারি, ফুলকপির তরকারি, পোলাও, পরমান্ন, দই, চাটনি ইত্যাদি নিবেদন করা হয় সন্ধ্যায় আরতি হয় কথায় কথায় জানতে পারলাম রাসের সময় রাসমঞ্চে বিগ্রহের সামনে রৌপপাত্রে ভোগ নিবেদন করা হয় যার আকার বিশাল ভাঙারাসের দিন নগর পরিক্রমায় যান প্রথমে বড়গোস্বামী বাড়ির বিগ্রহের পরই এই পাগলাগোস্বামী বাড়ির বিগ্রহ নগর পরিক্রমায় যান ভাঙারাসের শোভাযাত্রায় দুই বিগ্রহের হাওদা প্রদর্শন এক অনন্য নান্দনিকতার আবেশ সৃষ্টি করেন চতুর্থ দিন বিগ্রহদ্বয় কুঞ্জভঙ্গ শেষে নিজ নিজ মন্দিরে অধিষ্ঠান করেন এই ভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে পূজিত হন দুই বিগ্রহ

তথ্যসূত্র লিপিবদ্ধেঃ- শুভদীপ রায় চৌধুরী
চিত্রঋণঃ- লেখক শ্রী রিয়ম পাল



No comments:

Post a Comment