Monday, November 4, 2019

ঐতিহ্যের হৈমন্তীপর্বে ভট্টাচার্য্য(চট্টোপাধ্যায়) পরিবারঃ- হাওড়া


ঐতিহ্যের হৈমন্তীপর্বঃ-
 জগদ্ধাত্রীপুজোর শুভেচ্ছা অভিনন্দন রইল সকল বনেদীয়ানা পরিবারের পাঠক পাঠিকাদের জন্য কেমন লাগছে আমাদের প্রতিটি প্রতিবেদন?? কতটা সমৃদ্ধ হচ্ছেন আপনারা?? বনেদী ইতিহাসের ছোঁয়া কতটা উপলব্ধি করছেন?? আমাদের জানান -মেল এর মাধ্যমে এবছর শীতকালে বনেদীয়ানা আবারও এক অনন্য আলোচনাসভার আয়োজন করবে সেই বিষয়ে বিস্তারিত বলা হবে তার আগে হাওড়া অঞ্চলের প্রাচীন বনেদী বাড়ির জগদ্ধাত্রীপুজোর ইতিহাস নিয়ে বনেদীয়ানা' সপ্তমপর্ব রচিত হল সংগ্রহ করে আনলেন শুভদীপ সাহায্য করলেন শ্রী স্বয়ম চট্টোপাধ্যায় মহাশয় চলুন দেখা যাক হাওড়া উমাচরণ ভট্টাচার্য্য লেনের ভট্টাচার্য্য(চট্টোপাধ্যায়) পরিবারের প্রাচীন জগদ্ধাত্রী পূজার ইতিহাস

 ঐতিহ্যের হৈমন্তীপর্বে ভট্টাচার্য্য(চট্টোপাধ্যায়) পরিবারঃ- হাওড়া
কথিত আছে জগদ্ধাত্রী হলেন উমা হৈমবতী দুর্গা তিঁনি আদি, তিঁনি অনন্ত, আর তিঁনি মহামায়ার সাত্ত্বিক রূপ মহামায়ার রাজসিক গুণের প্রকাশ যদি হন দুর্গা তাহলে সাত্ত্বিক রূপ এই জগদ্ধাত্রী সাধকের মন যখন স্থির হয়, চঞ্চলতা কেটে গিয়ে মন আত্মভিমূখে গিয়ে দেবীর চরণে নিমগ্ন হয়, তখনই শ্রী শ্রী জগদ্ধাত্রী কৃপা করেন তিঁনি ধারণী শক্তি তিঁনি জগত ধরে আছেন, না ধরলে জগত পড়ে যাবে কালের অনন্ত কালে

প্রায় ২৫২ বছর আগে ১৭৬৫ সালের কার্ত্তিক মাসের শুক্লা নবমীতে ত্রিপুরাসুন্দরী জগদ্ধাত্রী দেবীর আরাধনা শুরু হয় আন্দুলের বিখ্যাত ভট্টাচার্য্য বংশীয় গোপীমোহন ভট্টাচার্য্যের হাত ধরে বর্ত্তমান হাওড়া শহরের মল্লিক ফটকের গৃহে গোপীমোহন সেই বছরেই তাঁর বংশের প্রাচীন কূলদেবী শ্রী শ্রী শঙ্করী দুর্গা (কালী যন্ত্রের আধারে) এবং পারিবারিক দুর্গাপূজা নিয়ে আসেন তাঁদের আন্দুলের বসত বাটী থেকে গোপীমোহনের পিতা আন্দুলের বিখ্যাত তন্ত্রসাধক ভৈরবীচরণ বিদ্যাসাগর তাঁর বসত গৃহে দুর্গাপূজা করতেন এবং তাঁর ইষ্টদেবী শঙ্করী কালীর সেবা অর্চনা করতেন

তাঁর শেষ বয়সে তিঁনি তাঁর সম্পত্তি দুই পুত্রের মধ্যে ভাগ করে দেন বড় পুত্র জগমোহন বাচস্পতিকে শঙ্করী কালীর সেবা আর ছোট পুত্র গোপীমোহনকে শঙ্করী দুর্গার সেবা গোপীমোহন দুর্গা সেবা পূজো নিয়ে হাওড়ার মল্লিকফটকের তাঁদের দ্বিতীয় গৃহে আসেন এবং ঠাকুরদালান নির্ম্মাণ করে পারিবারিক প্রাচীন দুর্গাপূজা চালিয়ে যান কিন্তু শাস্ত্রমতে যেহেতু দুর্গাপূজা শেষে আরেক শক্তিপূজা করা আবশ্যক এবং পরম সিদ্ধ কালীসাধক বংশীয় হয়ে তিঁনি কালীপূজা করলেন না কারণ তাঁদের বংশীয় প্রতিষ্ঠিত শঙ্করী কালী অবস্থান করছেন আন্দুলে তাঁর পিতার প্রতিষ্ঠিত কালী মন্দিরে (মন্দির স্থাপন কাল ১৭৭১ খ্রীষ্টাব্দ) যা আজকের আন্দুলের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সিদ্ধেশ্বরী শঙ্করী কালী মন্দির সেহেতু তিঁনি পিতৃ আদেশ হেতু শ্রী শ্রী জগত্তারিনী জগদ্ধাত্রী দুর্গা পূজা শুরু করেন যা ওনার পুত্র রামনারায়ণ হতে সাত পুরুষ ধরে এখানে হয়ে আসছে রামনারায়ণ পুত্র উমাচরণ তৎপুত্র বরদাচরণের এক মেয়ে অভয়াবালা দেবী অভয়াবালা দেবী বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হন রমেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে পিতার অকাল প্রয়াণের পর দুর্গা এবং জগদ্ধাত্রী সেবা পূজার গুরু দায়িত্ব পড়ে অভয়াবালার উপরে ওনার পর তাঁর চারি পুত্র এবং তাঁদের পরিবার সেই দায়িত্ব পালন করে আসছে অভয়াবালা দেবীর সেজ পুত্র ভুপেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের পরিবার ১৯৮৪ সাল থেকে দুর্গাপূজার অনুরূপ জগদ্ধাত্রী সেবা পূজার মূল দায়িত্ব পালন করেন

জগদ্ধাত্রী পূজার আচার শুদ্ধ তান্ত্রিক আচার এই বাড়ীতে শুক্লা নবমী তেই সপ্তমী অষ্টমী এবং নবমীর পূজা হয় মহাস্নানে ডাবের জল আবশ্যিক কারণ সেটি দক্ষিণাচারী তান্ত্রিক আচার দেবীর বাম হাতে শঙখের স্থানে খড়্গ থাকে আগে পাঁঠাবলি হলেও ১৯৮৪ থেকে প্রাচীন হাঁড়িকাঠে চালকুমড়ো, বাতাবি লেবু এবং আখ বলি হয় নবমী পূজাতে বলিদান এবং আষ্টমীতে আঠাশটি দীপ দান হয় মাকে মাছ ভোগ দেওয়া হয়ে থাকে এবং "নবান্ন" নৈবেদ্য নিবেদিত হয় "নবান্ন" তে জোড়া কড়াইশুঁটি, চাল আর নতুন নলেন গূড় হল আবশ্যিক

সময় বদলেছে তার সাথে বদলেছে আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি খালি বদলায়নি মাতৃ আবেগে ভরপুর হাওড়া তথা বাংলার এই প্রাচীন জগদ্ধাত্রী পূজো
কিভাবে পৌঁছাবেন ভট্টাচার্য্য বাটী?? চিন্তা করবেন না সেই বাড়ির ঠিকানা বনেদীয়ানা প্রদান করল আপনারাও সেই বাড়ির জগদ্ধাত্রীপুজোর প্রাচীন রীতিনীতি দেখে সমৃদ্ধ হন আর আমরা সেই ইতিহাস রচনা করে গৌরবান্বিত হই

ঠিকানা : ১০, উমাচরণ ভট্টাচার্য্য লেন, মল্লিক ফটক, হাওড়া - ৭১১০০১
কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ- শ্রী স্বয়ম চট্টোপাধ্যায়
তথ্যসূত্র সংগ্রহেঃ- শুভদীপ রায় চৌধুরী


No comments:

Post a Comment