Friday, November 8, 2019

ঐতিহ্যের হৈমন্তীপর্বে দুই জগদ্ধাত্রীপুজোঃ- কৃষ্ণনগর


ঐতিহ্যের হৈমন্তীপর্বঃ- ১০
 আজ হৈমন্তী পর্বের শেষপর্ব গত ৯টি পর্বে আমরা বেশকিছু প্রাচীন জগদ্ধাত্রীপুজোর কথা উল্লেখ করলাম, পরের বছর আবার নতুন হৈমন্তীপর্ব নিয়ে বনেদীয়ানা পরিবার উপস্থিত হবে আপনাদের কাছে এবছরের মতন এখানেই হৈমন্তী পর্বালোচনা শেষ আজ প্রকাশিত হল কৃষ্ণনগরের দুইটি জগদ্ধাত্রীপুজোর ইতিহাস লিখলেন দেবযানী বসু চলুন দেখা যাক সেই ইতিহাস
 ঐতিহ্যের হৈমন্তীপর্বে দুই জগদ্ধাত্রীপুজোঃ- কৃষ্ণনগর

এই পর্বে কৃষ্ণনগরের দুইটি জগদ্ধাত্রীপুজোর কথা বলা হল একটি বাড়ির একটি বারোয়ারীর কিন্তু দুটি পুজো অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ির পুজো প্রাচীনতম এবং তারপর শুরু হয়েছে মালোপাড়ার পুজো কিভাবে এই দুই পুজো জড়িত তাই তুলে ধরলাম রচনায়
 মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র আনুমানিক ১৭৫৪-৫৫ সালে জগদ্ধাত্রীপুজো শুরু করেন বাংলায় এই পুজোর প্রচলন নিয়ে নানান জনশ্রুতি লোকের মুখে মুখে ফেরে বাংলায় তখনও নবাবি শাসন কোন রাজনৈতিক কারণে কৃষ্ণচন্দ্রকে নবাব মুর্শিদাবাদের কারাগারে বন্দী করেন কিছুদিন পর মুক্তি পেয়ে ফিরে চলেছেন কৃষ্ণনগরে সেদিন ছিল বিজয়া দশমী বিসর্জনের বাজনা শুনে বুঝতে পারলেন একবছরের মতন উমা ফিরলেন কৈলাসে পূজা করতে না পারার কষ্টে ব্যথিত হয়ে নৌকাতেই ঘুমিয়ে পড়েন স্বপ্নে দেখেন এক রক্তবর্ণা, চতুর্ভুজা কুমারী দেবী তাঁকে আদেশ দিচ্ছেন আগামী কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে পূজা করতে এইভাবেই জগদ্ধাত্রীপুজোর সূচনা হয় বাংলায়

 কাহিনী আরও আছে ইংরেজদের মিত্র সন্দেহে মীরকাশিম কৃষ্ণচন্দ্র তাঁর পুত্র শিবচন্দ্রকে বন্দী করেন প্রাণদণ্ড দেন প্রাণরক্ষার আবেদন করে কৃষ্ণচন্দ্র তান্ত্রিক কালীশঙ্কর মৈত্রের শরণাপন্ন হন এরপরই কৃষ্ণচন্দ্র স্বপ্নে দেখেন প্রভাত সূর্যের মতন গাত্রবর্ণ, কুমারী দেবী তাঁকে পূজার আদেশ দিচ্ছেন দেবী বলেন তাঁর কৃপায় কৃষ্ণচন্দ্র মুক্তি পাবেন এই কারণে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির প্রতিমা আলাদা, কুমারী দেবীর মতন পূজা পান কিছুদিন পর কৃষ্ণচন্দ্র মুক্তিও পান কালীশঙ্করকে স্বপ্নের কথা জানান তাঁকে পৌরোহিত্যের দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেন যদিও বংশের কুলগুরু এই নতুন দেবীর পূজার বিষয়টি মানবেন কিনা সেই বিষয়ে সংশয় ছিল পরে অবশ্য সমস্যা মিটে যায় শুরু হয় রাজবাড়ির জগদ্ধাত্রীপুজো
 প্রতিমার বৈশিষ্ট্য হল বাহন সিংহটি ঘোড়ামুখো সিংহ সিংহটি প্রতিমার সঙ্গে আড়াআড়ি ভাবে স্থাপিত যা প্রচলিত মূর্তিতে দেখা যায় না
 এবার বলব মালোপাড়ার মা জলেশ্বরীর কথা জলঙ্গি নদীকে কেন্দ্র করে জীবিকানির্বাহ করতেন মালো সম্প্রদায় মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের পূজিত দুর্গাপ্রতিমা রাজরাজেশ্বরী মায়ের বিসর্জন হত মালো সম্প্রদায়ের হাতে জোড়া নৌকায় মাঝনদীতে প্রতিমা নিয়ে গিয়ে নৌকা সরিয়ে ধীরে ধীরে প্রতিমা নামিয়ে দেওয়া হত এজন্য মালো সম্প্রদায়কে মহারাজ ২৫টাকা অনুমান দিতেন পরবর্তীকালে কৃষ্ণচন্দ্র জগদ্ধাত্রীপুজো শুরু করেন আর দুর্গাপুজো বিসর্জন বাবদ প্রাপ্ত টাকায় শুরু হয় মালোপাড়ার জগদ্ধাত্রীপুজো ইনি মা জলেশ্বরী কৃষ্ণচন্দ্র নিজে জলঙ্গি নদীর নামানুসারে নামকরণ করেছিলেন

 জগজ্জননী মা সারদার জয়রামবাটীর জগদ্ধাত্রীপুজোর নিয়মানুসারে পূজা হয় জলেশ্বরীর প্রথা অনুযায়ী, দশমীর দিন পান, সুপারি, সিঁদুর, পুষ্পমাল্য, মিষ্টি দিয়ে রাজপরিবারকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আসার ঐতিহ্য আজও মেনে চলেন মালো পাড়ার বাসিন্দারা একই ভাবে জগদ্ধাত্রীপুজোর নবমীতে কৃষ্ণনগরের রাণীমা রাজপরিবারের সদস্যরা আসেন মালোপাড়া বারোয়ারীকে ১৫টাকা অনুদান সহ দশমীর দিন রাজবাড়ির প্রতিমা বিসর্জনের আমন্ত্রণ জানাতে রাজা, প্রজার মধ্যে পারস্পরিক সুন্দর সম্পর্কের এমন প্রথা আর কোথাও আছে বলে জানা নেই মালোপাড়ার পুজো কৃষ্ণনগরের দ্বিতীয় প্রাচীন প্রথম বারোয়ারী জগদ্ধাত্রীপুজো

কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ- শ্রী দীপ হালদার
তথ্যসূত্র সংগ্রহেঃ- দেবযানী বসু


No comments:

Post a Comment