আজ
"বনেদীর-বনেদীয়ানা"য় মেদিনীপুর জেলার
খেপুতের কালীপুজো। ইতিহাস
ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধন এই কালীপুজোয়।
সেই ঐতিহ্যময় গৌরবের কাহিনীই তুলে
ধরা হল আজ।
সাবর্ণ গোত্রীয় রামদুলাল
রায় চৌধুরী ১৭৭২ খ্রীঃ
মেদিনীপুর জেলার চিতুয়া গ্রামে
জমিদারি লাভ করে রূপনারায়ণ
নদের পশ্চিমতীরে খেপুত উত্তরবাড় গ্রামে
চলে যান। এই
এলাকার তখন হুজুরি জমিদার
ছিলেন বর্ধমানের মহারাজগণ। বর্ধমানের
রাজ পরিবারের সহিত বড়িশার জায়গিরদার
সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের
বরাবরই সুসম্পর্ক ছিল। বর্ধমানের
রাজপরিবার- বিশেষ করে তিলক
চন্দ্রের পর তেজশ্চন্দ্র বা
তেজচাঁদা(১৭৭০-১৮৩২) বর্ধমানের
রাজা ছলেন।
চেতুয়া পরগণা এবং
বরদা পরগনার অনিয়মিত রাজস্ব
আদায়ের জন্য বিচলিত হয়ে
যখন বর্ধমানের রাজপরিবার বিশেষ করে তেজচাঁদ
উক্ত এলাকার জন্য ছোটো
জমিদারের খোঁজ করছিলেন সেই
সময় বড়িশার রামদুলাল রায়
চৌধুরীর পূর্বের সুসম্পর্কের ফলে চেতুয়া পরগনার
আংশিক জমিদারি লাভ করা কাজে
সচেষ্ট হয়েছিলেন। এ
কাজে সম্ভবত তাঁর জ্যেঠামশাই
সন্তোষ রায় চৌধুরীর হস্তক্ষেপও
ছিল। এই
জমিদারি রামদুলাল বর্ধমানের তেজচাঁদের নিকট সম্ভবত ১৭৭২
সালে গ্রহণ করেন।
কারণ তেজচাঁদই এই বিশাল ভূখণ্ডের
মুখ্য জমিদার ছিলেন।
রামদুলাল রায় চৌধুরী চেতুয়ার
জমিদারি লাভ করার পর
রূপনারায়ণ নদের পশ্চিমতীরে খেপুত
উত্তরবাড় মৌজায় বাসস্থান তৈরী
করেন। মাটির
ঠাকুরঘর নির্মাণ করেন। সেই
সঙ্গে রঘুনাথ জিউ নামক
একটি নারায়ণশিলাও তারা খেপুতের বাড়িতে
নিয়ে যান।
বড়িশাবাড়ির দুর্গাপুজোর কথা স্মরণ করে
বিজয়া দশমীর দিন রামদুলাল
রায় চৌধুরী কালীমাতার(শ্রীশ্রী
মাতা খেপতেশ্বরী- উত্তরবাড়ের প্রাচীন মূর্তি। মূর্তিটির
প্রস্তর ফলকে খোদিত অষ্টভুজা
বরাহমূর্তি মহিষমর্দিনীরূপ। পূর্বে
দেবীর জন্য একটি মাটির
মন্দির ছিল। সম্ভবত
বর্ধমাের রআ কর্তৃক ১৭৭৯
খ্রীঃ দক্ষিনমুখী আটচালা মন্দিরটি নির্মিত
হয়। মন্দিরটির
দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে
২৪ফুট ১০ইঞ্চি এবং ২৩ফুট ৬ইঞ্চি।) আমিষ
ভোগ দিয়ে দেবীর তৃণমূর্তির
পদে মৃত্তিকা লেপন করেন।
অর্থাৎ বড়িশাবাড়ির দুর্গাপুজোর শেষে খেপুত বাড়ির
কালীপুজো শুরু করেছিলেন তিনি।
প্রথম সাবর্ণ রায়
চৌধুরী পরিবারে(মেদিনীপুর) সম্ভবত ১৭৯৮ খ্রীঃ
কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে
প্রথম কালীপুজো শুরু হল খেপুতে। প্রায়
৩০০বছরের ধারা এখনও অটুট
মেদিনীপুরের খেপুতে।
বিজয়া দশমীর দিন
বিশেষ নিয়মে পুকুর থেকে
মাটি তোলা হয়।
পরদিন থেকেই শুরু হয়
প্রতিমা তৈরীর কাজ।
নিয়ম মেনে পারিবারিক আটচালায়
তৈরী হয় প্রতিমা।
এই রায় চৌধুরী বাড়িতে
কালীপুজোয় শুধুমাত্র ভোগ রান্নার সাহায্য
করতে পারেন মহিলারা।
পরিবারের পুরুষ সদস্যরা পুজোর
যাবতীয় কাজ করে থাকেন। ঘট
তোলার আগে প্রথমে মাটির
হাঁড়িতে জল ভর্তি করা
হয়। সেই
হাঁড়ি রাখা হয় আটচালাতেই। জল-হাঁড়িতে প্রদিপ ভাসিয়ে দেওয়া
হয়। প্রদীপেও
থাকে ছোটো ছোটো ছিদ্র। ওই
ছিদ্র দিয়ে একসময় জল-ঢুকে প্রদীপ পূর্ণ
হলে তা ডুবে যায়। জল-হাঁড়িতে চন্দনের টিপ দেওয়া থাকে। এক
একটি টিপ ২৪মিনিটের সূচক। প্রদীপ
ডোবা মাত্রই পরিবারের এক
পুকুরেই ঘট ডুবিয়ে পুজো
শুরু হয়। একই
কালীপুজো উপলক্ষে বাড়ির মেয়েরা বাজি
প্রদর্শনীতে মেতে ওঠেন ও
বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
তথ্যসূত্র
এবং চিত্রঃ সাবর্ণ পরিবারের
সদস্যবৃন্দ
No comments:
Post a Comment