Monday, March 25, 2019

উল্লাসপুরের ক্ষ্যাপাকালী মাতার ঐতিহ্যবাহী পুজো




আবারও এক অনন্য ইতিহাসের খোঁজ নিয়ে এলেন "বনেদীর-বনেদীয়ানা" পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য শ্রীমান্ শঙ্খ আজ আলোচনায় উল্লাসপুরের ক্ষ্যাপাকালী মাতার ঐতিহ্যবাহী পুজো
উল্লাসপুর(উলুসপুর)-এর ব্যানার্জ্জী(পাঠক) পরিবারের ক্ষ্যাপাকালী মাতার পূজা
উলুসপুরের ব্যানার্জ্জী পরিবারে কালীপূজার প্রবর্তন কে করেন, সে নামের ইতিহাস আজ হারিয়ে গেছে তবে পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই বলেন যে, পূজোর প্রাচীনত্ব কমবেশী ৩৫০বছরের কাছাকাছি যদিও -সম্পর্কে মতানৈক্য আছে এবং পরিবারের একাংশের দাবী, এই পূজো ভবানী পাঠকের সঙ্গে এই পূজোর কোনো সম্পর্ক ছিলো..! যদিও এটির সপক্ষেও কোনো যুক্তিগ্রাহ্য প্রমাণ নেই
বধমান মহারাজদের তরফ থেকে এনারা 'পাঠক' উপাধিতে ভূষিত ' গত তিন প্রজন্ম আগেও এনারা নিজেদের নামের ক্ষেত্রে 'পাঠক' উপাধিই ব্যবহার করতেন পরে কোনো পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে সংসার আলাদা হয়ে যায় পরিবার দু'টি তরফে ভাগ হয়ে যায় তখন থেকেই, একটি তরফ 'পাঠক'(উপাধি) এবং অন্যতরফ 'ব্যানার্জ্জী'(পদবী) ব্যবহার করে আসছেন এনাদের পূজোও আজ দু'টি শরিকানায় বিভক্ত পাশাপাশি দু'টি তরফের দু'টি আলাদা পূজো অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে
সারাবছর দেবীর কাঠামো মন্দিরে থাকেন সেখানেই দেবীর নিত্যসেবা তথা প্রতি অমাবস্যায় বিশেষ পূজো হয়ে থাকে বিজয়াদশমীর দিন দেবীর কাঠামোয় মাটি পরে আস্তে আস্তে মৃন্ময়ী, চিন্ময়ী রূপে সজ্জিতা ' দেবীর গাত্রবর্ণ গাঢ়নীল বর্ণের যদিও, ঘোর তন্ত্রমতে এখানে দেবীর পূজো হয়, তবে দেবীর মাতৃমূর্তিটি অতীব প্রসন্নময়ী আগে, পূজোর সময়ে শরিকানায় পালা ভাগ থাকলেও এখন পৃথক দু'টি তরফে যৌথ উদ্যোগে দু'টি পাশাপাশি পূজো হয়ে থাকে কর্মসূত্রে বেশীরভাগ সদস্যই আজ ছড়িয়ে পরেছেন বিভিন্ন জায়গায় তবে, পূজোর সময়ে সকলেই এসে জড়ো ' 'দিন আনন্দে মেতে ওঠেন
কার্ত্তিকী অমাবস্যার গভীর নিশিতে দেবীর ঘট আনা হয় আগে পূজোয় 'কারণবারি' উৎসর্গ করা হলেও এখন সেই নিয়ম পরিবর্তিত হয়ে 'জাম্ভৃণ্য'(নারকেল জল) নিবেদন করা হয় যদিও পাঁঠাবলি দান এখনও বর্তমান পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি সারা গ্রামের লোকজন সাধ্যমতো পূজো দে' রাত্রি জাগরণে পূজো দেখেন
দীপান্বিতার নিশিপূজা শেষ 'তে প্রায় পরেরদিন সকাল হয়ে যায় অতঃ দেবীর উদ্দেশ্যে 'নব-ব্যাঞ্জন' সহকারে খিচুড়ি লুচি নিবেদন করা হয় প্রতিপদ বিহিত পূজায়, দধিকর্মাতে চিঁড়া/খই/মুড়কি সমেত দেবীর নৈবেদ্য নিবেদন হয় যেহেতু, এখানকার পূজো সম্পূর্ণ তন্ত্রমতে হয়, তাই এখানে পুষ্পাঞ্জলির কোনো ব্যাপার নেই এখানে পূজোর পরেরদিন সকালে ঘট বিসর্জ্জন রাত্রে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়
আর পাঁচটা বাড়ীর কালীপূজোর সঙ্গে এর যথেষ্ট মিল থাকলেও একটি ব্যপারে ব্যতিক্রম রয়েছে নিরঞ্জনের আগে 'ক্ষ্যাপা মা' সহ, গ্রাম বা পার্শ্ববর্তী গ্রামের যতগুলি প্রতিমা পূজো হয়, সবাইকে একসাথে স্থানীয় 'পাণ্ডুক রাজার ঢিবি'- মাঠে আনা হয় সেখানে, পরপর লাইন করে প্রতিমাগুলিকে বাহকরা কাঁধে চাপিয়ে ঘন্টাখানেক নাচানাচি করেন সেটাই দেখার বস্তু গড়ে এক একটি প্রতিমা দশ'ফিটের কাছাকাছি উচ্চতাবিশিষ্ট এরকম প্রতিমা কাঁধে চাপিয়ে এতক্ষণ নাচানাচি করার দৃশ্যটাই অবাক করার মতো..!
সব থেকে অবাক করা দৃশ্য হলো, 'পাণ্ডুক'- গ্রামের 'বামাকালী' মাতার বিগ্রহটি নিয়ে নাচ প্রতিমাটি প্রায় বাইশ'ফিট....! দেবীর এমনই মহিমা যে, হাজারখানেক দর্শক ভর্তি মাঠে শতাব্দী প্রাচীন এই প্রথায় আজ অব্দি কখনও কোনো দুর্ঘটনা বা প্রতিমার অঙ্গহানির ঘটনা ঘটেনি
নাচের পরে প্রথামাফিক যেখানকার প্রতিমা, সেখানে ফিরে যান এবং নির্দিষ্ট জলাশয়ে নিরঞ্জন হয়
তথ্যসূত্র এবং চিত্রঃ শ্রীমান্ শঙ্খ


2 comments: