Monday, March 25, 2019

সুরুল জমিদারবাড়ির পুজোর ইতিহাস






 এবার বোলপুরের একমাত্র আভিজাত্যপূর্ণ জমিদারবাড়ির দুর্গাপুজোর ইতিহাস তুলে ধরলাম "বনেদীবাড়ির-বনেদীয়ানা" পক্ষথেকে সুরুল জমিদারবাড়ির পুজোর ইতিহাস আর তাদের ঐতিহ্য আজও বিরাজমান রাঙামাটির অঞ্চল বোলপুর সেই বোলপুরের একটি গ্রাম সুরুল শান্তিনিকেতন থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সুরুল জমিদারবাড়ি আজ ঐতিহ্যের কথায় সেই জমিদারবাড়ির ইতিহাস
 বোলপুরের এই সুরুল জমিদারবাড়ির সরকার কিন্তু এদের আসল পদবি নয়, ইংরেজদের থেকে পাওয়া আসল পদবি ঘোষ আর বোলপুরে এদের আদি বাসস্থানও নয় অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমভাগে ভরতচন্দ্র সরকার বর্ধমানের বাঁকা নদীর ধারে নীলপুর থেকে সুরুলে আসেন গুরুদেবের বাড়িতে থাকতে গুরুদেব বাসুদেব ভট্টাচার্যের বাড়ীতে থাকতেন ভরতচন্দ্র এবং তাঁর স্ত্রী সেখানেই ভরতচন্দ্রের এক পুত্রসন্তান হয়, নাম- কৃষ্ণহরি এইভাবেই ধীরে ধীরে সুরুলেই থাকতে শুরু করেন সরকার পরিবার প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, সরকারবাড়ির মাঝখানে নাটমন্দির রেখে চতুষ্কোণ জমিদারবাড়ি পাঁচ খিলানের ঠাকুরদালান, বেলজিয়াম কাঁচের ঝাড়বাতি যা এই জমিদারবাড়ির ঐতিহ্য রাজকীয়তাকে মনে করিয়ে দেয়
  ভরতচন্দ্রের পুত্র কৃষ্ণহরি সরকারের সময় থেকেই পরিবারের সমৃদ্ধির সূচনা মূলত ভরতচন্দ্রের পুত্রসন্তান না হওয়ায় গুরুর আশীর্বাদই সন্তানলাভ করেছিলেন তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির আমলে সুরুলে সরকার পরিবারের প্রাণপুরুষ ভরতচন্দ্র সরকার কম্পানির সদস্য জন চিফের সাথে ব্যবসা শুরু করেন এর ফলে ভরতচন্দ্র প্রভূত সম্পত্তির অধিকারীও হন সরকারবাড়ির মূল আয় ছিল নীলচাষ থেকেই এছাড়া পরিবারে চিনির ব্যবসা গড়া কাপড়(মোটা থান) এর ব্যবসাও ছিল

 বোলপুর অঞ্চলের সরকার পরিবারের পূজার বয়স প্রায় ৩০০বছর ভরতচন্দ্রের সময় থেকেই এই পরিবারের পুজোর শুরু পরে তাঁর ছেলের মধ্যে সম্পত্তির ভাগাভাগির পরে ছোটো তরফের পুজো আলাদা করে শুর হয় একচালচিত্রের সাবেকি প্রতিমাকে ডাকের সাজের প্রতিমা মৃৎশিল্পীরা প্রায় পাঁচ পুরুষ ধরে এই প্রতিমা বানিয়ে আসছেন পুজোর দিন দেবীকে জমিদারবাড়ির সোনার অলংকারে সাজানো হয় প্রতিমার রঙ তপ্তকাঞ্চনবর্ণা চালচিত্রে অঙ্কিত থাকে শিব পার্বতীর বিবাহের দৃশ্যপট
 শান্তিনিকেতনের ঠাকুর পরিবারের সাথে সুরুলের জমিদারবাড়ির সম্পর্ক বেশ ভালোই মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনের জমির বেশ অনেকটাই পেয়েছিলেন জমিদার পরিবারের কাছথেকেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিয়মিত যাতায়াত ছিল এই সরকারবাড়িতে

 পুজোর দিনগুলিতে জমিদারবাড়ি সাজে রেড়ির তেলের প্রদীপে অন্নভোগের রেওয়াজ নেই বড়বাড়ির পুজোয় দুর্গাপুজোর মহাসপ্তমী তিথিতে পরিবারের দুইটি পুজোর শোভাযাত্র,যেন এক দর্শনীয় বিষয় দিঘিতে স্নান করিয়ে সাবেকি পালকি করে নবপত্রিকা ঠাকুরদালানে নিয়ে আসা হয় জমিদারবাড়িতে এখনও বংশপরম্পরায় পৌরোহিত্য করা হয় এবং হাট শেরান্দি গ্রামের ব্রাহ্মণরা পূজায় সাহায্য করেন সুরুলের জমিদারবাড়িতে এখনও পুরোনো প্রথা মেনেই সপ্তমীতে চালকুমড়োবলি, অষ্টমীতে পাঁঠা এবং নবমীতে আঁখ ও চালকুমড়োবলি হয় অষ্টমীর বলিদানের পরে সেই খাঁড়া শোভাযাত্রা সহকারে নিয়ে মনসা মন্দিরে গিয়ে সেখানে আরও একটি পাঁঠাবলি দেওয়া হয় সরকার বাড়িতে বলির সময় নারায়ণকে রেখে আসা হয় মন্দিরে বাকি সময় তিনি উপস্থিত থেকেই হয় দেবীর আরাধনা
 দুর্গাপুজোর সময় সরকার পরিবারের বড়বাড়ির পুজোয় তিনদিন যাত্রার আয়োজন করা হয় আর ছোটো তরফের পুজোতে পর্দা টাঙিয়ে সিনেমা দেখানো হয়

 দশমীর দিন সকালে ঘট বিসর্জন হয় এবং সরকার পরিবারের সদস্যরা নারায়ণ মন্দিরে উপস্থিত হন আজও সেখানে শাঁখ বাজিয়ে শঙ্খচিলের আহ্বান করা হয় কারণ পরিবারের সবাই শঙ্খচিলের দর্শনকে শুভ সঙ্কেত মনে করেন
তথ্যসূত্র এবং চিত্রঃ শ্রীমান্ অভিনব সরকার
তথ্যসংগ্রহেঃ শ্রীমান্ শুভদীপ রায় চৌধুরী



No comments:

Post a Comment