Wednesday, March 27, 2019

শ্রীল ঈশ্বরপুরীর আশ্রম- কুমারহট্ট হালিসহর



 "...ঈশ্বরপুরীর সঙ্গে প্রভুর ভোজন

  ইহার শ্রবণে মিলে কৃষ্ণপ্রেমধন।।
  তবে প্রভু ঈশ্বরপুরীর সর্ব অঙ্গে
  আপনে শ্রীহস্তে লেপিলেন দিব্যগন্ধে।।
  যত প্রীত ঈশ্বরের ঈশ্বরপুরীরে
  তাহা বর্ণিবারে কোন জন শক্তি ধরে।।
  আপনে ঈশ্বর শ্রীচৈতন্য ভগবান
  দেখিলেন ঈশ্বরপুরীর জন্মস্থান।।
  প্রভু বোলে কুমারহট্টেরে নমস্কার
 শ্রীঈশ্বরপুরী যে গ্রামে অবতার...।।
( "শ্রীচৈতন্যভাগবত"- পঞ্চদশ অধ্যায়, পৃষ্ঠা-৭৪)
  একদিন নবদ্বীপে ঈশ্বরপুরীর আগমন ঘটে তিনি পরম বৈষ্ণব, ব্রজবাসীদের শুদ্ধ সাত্ত্বিক প্রেম যাঁর মধ্যে পাওয়া যায় তিনি শ্রীঅদ্বৈতাচার্যের বাসভূমিতে পদার্পণ করলেন তিনি অদ্বৈতাচার্য্যকে দর্শন করেন ভাবলেন- ইনিই চৈতন্য আবির্ভাবের মূল আচার্য তেজস্বী সন্ন্যাসীকে দেখে সীতানাথ নমো নারায়ণ বলে করলেন দন্ডবৎ ঈশ্বরপুরী হলেন শ্রী মাধবেন্দ্র পুরীপাদের শিষ্য উভয়ের মধ্যেই কৃষ্ণকথার তরঙ্গ উঠল প্রেমামৃত সাগরে উভয়েই ডুবে যান সীতানাথের গৃহে পুরীরাজ প্রসাদ গ্রহণ করে নবদ্বীপ ভ্রমণে বেরলেন শুভক্ষণে গৌরাঙ্গের দর্শন পেলেন গৌরচন্দ্রের অঙ্গকান্তি কোটি সূর্যসম তা দেখে পুরীর মহাভাবের উদয় হল তিনি ভাবেন ইনি সত্যই স্বয়ং ভগবান গৌররূপে নবদ্বীপে তার আবির্ভাব হয়েছে গৌরাঙ্গ এগিয়ে গিয়ে তঁকে প্রণাম করলেন তিনি বলেন- তোর মনস্কাম সিদ্ধ হবে উভয়ের সাথে উভয়ের পরিচয় হয় গৌর পুরীরাজকে নানান দ্রব্য সাজিয়ে ভোজন করান এবং দুজনে মিলে শাস্ত্রালাপ করে আনন্দ পান পুরীরাজ সেখানে কিছুদিন বিশ্রাম করেন তারপর তীর্থ ভ্রমণে যান
  এরকিছুদিন পর শচীনন্দন পিতৃকার্যের জন্য গয়াধামে গমন করেন ভক্তিভরে গদাধরের পাদপদ্মে পিন্ডদান করেন সেখানে ঈশ্বরপুরীর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয় পুরীরাজকে দেখেই নিমাই নিমাই প্রনাম করল, তিনিও গৌরচন্দ্রকে আলিঙ্গন করেন প্রেমাবেশে নাচেন, কাঁদেন হয়ে উন্মত্ত পরদিন মহাপ্রভু শুভক্ষণে ঈশ্বরপুরীর নিকট মন্ত্র গ্রহণ করেন দশাক্ষর মন্ত্রে কৃষ্ণ অধিষ্ঠান গৌরাঙ্গ কৃষ্ণমূর্তির দর্শন প্রত্যক্ষ করলেন পুরীরাজকে মহাপ্রভু বলেন- বড় কৃপা করে আমাকে আজ তুমি উদ্ধার করলে পুরী বলেন তুমি সকল তত্ত্বই জান জীবের শিক্ষার জন্যই তুমি ধরায় অবতীর্ণ হয়েছো তুমি স্বতন্ত্র ঈশ্বর, চিদানন্দ ময়
"...প্রভু বোলে ঈশ্বরপুরীর জন্মস্থান
  মৃত্তিকা আমার জীবন ধন প্রাণ।।
হেন ঈশ্বরের প্রীতি ঈশ্বরপুরীরে
 ভক্তেরে রাড়াতে প্রভু সেইশক্তি ধরে।।
প্রভু বোলে গয়া করিবারে আইলাম
সার্থক হইল ঈশ্বরপুরী দেখিলাম।।
আর দিনে নিভৃতে ঈশ্বরপুরী স্থানে
মন্ত্রদীক্ষা চাহিলেন মধুর বচনে।।
পুরী বোলে মন্ত্র বা বলিয়া কোন কথা
প্রাণ আমি দিতে পারি তোমারে সর্বথা।।
তবে তান স্থানে শিক্ষাগুরু নারায়ণ
করিলেন দশাক্ষর মন্ত্রের গ্রহণ।।
তবে প্রভু প্রদক্ষিণ করিয়া পুরীরে
প্রভু বোলে দেহ আমি দিলাম তোমারে..।।"
("শ্রীচৈতন্যভাগবত"- পঞ্চদশ অধ্যায়)



এবার কুমারহট্ট(হালিসহর) গেলেন গোরা, সেখানে পুরীরাজের জন্মস্থান অতি পুণ্যতর স্থান মহাপ্রভু সাবর্ণ বংশীয় মহাপণ্ডিত শ্রীপাদ ঈশ্বরপুরী(ঈশ্বরচন্দ্র আচার্য) নামক মহাপণ্ডিতের নিকট দীক্ষা নেন শ্রীচৈতন্যদেব ভাবাবেগে বলেন যখন তিনি কুমারহট্টে পদার্পণ করেন- " তাঁর গুরুর জন্মস্থান সাবর্ণ গোষ্ঠীর এই গ্রামবাসীরা এর মাহাত্ম্য কী ভুলে গেছে!এমন দুর্লভ ভূমি কোথাও মিলবে না" সেই জন্মস্থান কুমারহট্ট হালিসহরে পৌঁছালাম পুণ্যস্থান দর্শন করতে আমরা শ্রীপাদ ঈশ্বরপুরীর জন্মস্থান এবং মহাপ্রভু যেখানে এসেছিলেন সেই স্থান পরিদর্শন করলাম উপরের কিছু অংশে আমি শ্রীপাদ ঈশ্বরপুরীর সাথে মহাপ্রভুর কথোপকথন তুলে ধরলাম খুবই সংক্ষেপে
 "".. তবে ' করিলা প্রভু গয়াতে গমন
    ঈশ্বরপুরীর সঙ্গে তথায় মিলন।।
   দীক্ষা অনন্তরে কৈল প্রেম পরকাশ
  দেশে আগমন পুনঃ প্রেমের বিলাস।।
  শচীকে প্রেমদান তবে অদ্বৈতমিলন
  অদ্বৈত পাইল বিশ্বরূপ দরশন..।।"
("শ্রীশ্রীচৈতন্যচরিতামৃত"- আদিলীলা, পৃষ্ঠা নং-৮০)
তথ্য আলোচনায়ঃ শুভদীপ রায় চৌধুরী


No comments:

Post a Comment