হালিসহরে
পালিত হল প্রাচীন শ্রীশ্রী
শ্যামরায়ের দোল উৎসব।
হালিসহরে সাবর্ণ চৌধুরীদের আরও
এক অবদান "শ্রীশ্রী শ্যামরায়" চৌধুরী পাড়ার দোলতলার
দোলমঞ্চে প্রতিষ্ঠা। অতীতে
এই শ্যামরায়ই কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিংএর স্থানে সাবর্ণদের কাছাড়ীবাড়িতে
ছিলেন সেখানেই তাঁর সপ্তমদোল উৎসব
পালন করা হত।
পরিবারের সদস্যরা দোল খেলে দিঘিতে
স্নান করতেন বলে দিঘির
রঙ লাল হওয়ায় সেই
দিঘির নাম হয়ে যায়-"লালদিঘি"। সেই
শ্যামরায়কে পরবর্তিকালে সাবর্ণদের হালিশহরের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া
হয় এবং সেখানেই সপ্তমদোল
পালন করা হয়, যা
আজও বর্তমান। প্রসঙ্গত দোলমঞ্চের পশ্চিমদিকে পরিবারের লক্ষ্মীকান্ত রায় চৌধুরী ১৬০০
খ্রিঃ একটি আটচালা কোঠা
বাড়ি নির্মাণ করেন। পরবর্তীকালে
বিদ্যাধর রায় চৌধুরী আটচালা
কোঠায় শ্যামরায় ও রাধিকা জীউ
প্রতিষ্ঠা করেন। প্রসঙ্গত বিদ্যাধর রায় চৌধুরী ১৬৬০সালে
হালিশহরে এই শ্যামরায় বিগ্রহ
প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার
সাথে সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মূর্তি ও
বুড়ো শিব। অর্থাৎ
বিদ্যাধর রায় চৌধুরীর আমলেই
হালিসহরে এই ভাবে শাক্ত,
শৈব ও বৈষ্ণব ধর্মের
সমন্বয় ঘটল। কুমারহট্ট-হালিসহরের সাবর্ণ চৌধুরীদের বংশধরগণ
শাক্ত ধর্মে বিশ্বাসী হলেও
তাঁরা যে বৈষ্ণব ও
শৈব ধর্মের প্রতিও প্রগাঢ়
ভক্তিপরায়ণ তা বিদ্যাধর রায়
চৌধুরী প্রমান করলেন।
বিদ্যাধর রায় চৌধুরী ছিলেন
দিল্লির মুঘল সম্রাট আরঙ্গজেবের
সমসাময়িক।
আজও ৪০০বছর ধরে
এই সপ্তমদোল প্রথমে রাইটার্স বিল্ডিংএর
স্থানে কাছাড়ীবাড়িতে এবং পরবর্তীকালে হালিসহরে
পালিত হয়ে আসছে।
দোলের আগের দিন হয়
চাঁচর পোড়ানো। সেই
দিন শ্যামরায়ের বিগ্রহকে পালকি করে নিয়ে
যাওয়া হয় এবং সঙ্গে
হোমের আগুন মালসায় করে
আনা হয় সেই আগুন
দিয়েই চাঁচর পোড়ানো হয়। সেই
দিন শ্যামরায়ের রাজবেশ হয়।
সেই দিন তাঁকে ভোগ
প্রদান করা হয়-লুচি,
ভাজা, তরকারি ইত্যাদি।
দোলের দিন সকালে
দেবদোল অনুষ্ঠিত হয়। সারাদিন
ব্যাপী দোলখেলা হয়। দোলের
দিন তিনবার শ্যামরায়ের দোলমঞ্চে
ফলভোগ নিবেদন করা হয়। বিভিন্ন
রকমের ফলের নৈবেদ্য, মিষ্টি,
নারু, খীর ইত্যাদি ভোগ
দেওয়া হয়। দোল
খেলা শেষে শ্যামরায়ের অভিষেক
করানো হয়, যেমন- মুসুরডাল
বাটা, আমলকীবাটা, টকদই, ডাবের জল,
গোলাপ জল, জবাকুসুমতেল দিয়ে
তৈরী রূপটান মাখানো হয়। পরিষ্কার
করা হয় মূর্তি।
তারপর সোনার গহনা ও
রাজবেশ হয়। তারপর
শ্যামরায়ের অন্নভোগ হয় পঞ্চব্যঞ্জন সহকারে
। এই উৎসবকে
কেন্দ্র করে দোলতলায় বিরাট
মেলার আয়োজন হয়।
বহু মানুষের সমাগম ঘটে এই
দিন। হালিসহরের
এই শ্রীশ্রী শ্যামরায়ের সপ্তমদোল আজও সাড়ম্বরে পালিত
হয় সাবর্ণদের বাড়িতে।
তথ্য আলোচনায়ঃ শুভদীপ রায় চৌধুরী
চিত্রেঃ
শুভদীপ রায় চৌধুরী, অনন্যা
রায় চৌধুরী ও সন্দীপন।
No comments:
Post a Comment