Wednesday, July 10, 2019

বড়িশার ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা


ঐতিহ্যের ইতিহাসপর্বঃ

আজ প্রকাশিত হল বড়িশার রথযাত্রা উৎসবের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরলেন পরিবারের সদস্য শ্রীমান্ শুভদীপ রায় চৌধুরী দেখা যাক সেই রথযাত্রার ইতিহাস ঐতিহ্যের কিছু কাহিনী

বড়িশার ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা
সাবর্ণ কুলতিলক কৃষ্ণদেব রায় চৌধুরী ১৭১৯ সালে বড়িশার রথযাত্রা উৎসব প্রবর্তন করেন সে সময়ে কৃষ্ণদেব ২৪পরগণার সব থেকে সুবিখ্যাত বিশিষ্ট প্রশাসক ছিলেন প্রজাদের আনন্দবর্দ্ধনের জন্যই তিনি এই উৎসবের প্রবর্তন করেছিলেন সুযোগ্য উত্তরসূরি হিসাবে কৃষ্ণদেব রায় চৌধুরীর প্রবর্তিত রথযাত্রা বড়িশার প্রাচীন লোকসংস্কৃতি সাবর্ণ ঐতিহ্যের গৌরবময় অতীতের ধারক বাহক শুরুর সময় থেকে আজও রথযাত্রা উৎসবের অনুসঙ্গে বৃহত্তর সাবর্ণ পরিবারের বন্ধন অত্যন্ত সুদৃঢ় গভীর ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত রথযাত্রা উৎসবটি বড় বাড়ীর বাৎসরিক পুজোপার্ব্বণ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের অন্যতম মূল অঙ্গ ছিল পরবর্তীকালে তা সার্বজনীন উদ্যোগের হাতে চলে যায়

 ১৭১৯ সালে কৃষ্ণদেব যে রথযাত্রার সূচনা করেছিলেন, তা ১৯৭৫ সালে এক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় সেই বছর ডায়মন্ডহারবার রোড সম্প্রসারণের সময় রথের ঘরটি ভাঙা পড়ে ফলে শতাব্দী প্রাচীন কাঠের রথটি রোদ্দুরে জলে নষ্ট হয়ে যায় ফলে ১৯৭৮ সালের পর থেকে রথটিকে চালানো সম্ভব হয় না এর কয়েক বছর বাদে বড় বাড়ীর সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের সুযোগ্য উত্তরসূরি গোরাচাঁদ রায় চৌধুরীর উদ্যোগে আবার উৎসবটিকে পুনরুজ্জীবিত করা হয় এলাকার বিশিষ্ট নাগরিক সাবর্ণ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয় "বড়িশা সার্বজনীন রথযাত্রা উৎসব কমিটি" জনসাধারণের কাছ থেকে সংগৃহিত আর্থিক অনুদানে নির্মিত হয় নতুন রথখানি শ্রীজগন্নাথদেবের অলৌকিক কৃপাবলে পুরী শ্রীজগন্নাথধামের কারুকৃতগণ মাত্র দুসপ্তাহে প্রস্তুত করেন নতুন রথ-যা অবিকল পুরীর শ্রীজগন্নাথদেবের রথের ছোটো সংস্করণ মহাপ্রভু জগন্নাথদেবের মন্দির সখের বাজারে অবস্থিত বর্তমান মন্দিরটি তারাকুমারের জ্যেষ্ঠ পুত্র লালকুমার রায় চৌধুরী ১৯১১ সালে নির্মাণ করেন পরবর্তীকালে ভক্তবৃন্দ দ্বারা মন্দিরের সংস্কার করা হয় এই মন্দিরকে কেন্দ্র করেই রথযাত্রা উৎসব




 প্রতিবছর রথযাত্রার দিন বিকালবেলা মন্দির থেকে মহাপ্রভু জগন্নাথদেব, দেবী সুভদ্রা বলভদ্রদেবের দারুবিগ্রহ এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহকারে বড় বাড়ীতে নিয়ে আসা হয় তারপর প্রথা অনুযায়ী যিনি উদ্বোধন করতে আসেন তিনি প্রথমে নারিকেল ভেঙে রথের দড়িতে টান দেন পরে ভক্তবৃন্দ জনসাধারণ রথরজ্জু আকর্ষণ করে বড় বাড়ী থেকে ডায়মন্ডহারবার রোডের পূর্ব সারণী দিয়ে উত্তরে বেহালা সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির দক্ষিণে শীলপাড়া ভজন আশ্রম পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার পথ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহ বিগ্রহ-অধিষ্ঠিত রথের পরিক্রমা হয় প্রথা অনুযায়ী এরপর বিগ্রহগুলি স্বর্গীয় হীরালাল বসুর বাড়ীতে অবস্থান করেন নয়দিনের মাথায় উল্টোরথ অনুষ্ঠিত হয় এদিন রথযাত্রা শুরু হয় বোসপাড়া থেকে




শান্তি, সম্প্রীতি ভ্রাতৃত্ববোধের বার্তা বহন করে চলেছে দ্বিশতাব্দী প্রাচীন এই উৎসব বড়িশা রথযাত্রা উৎসব, কলকাতা শহরের প্রাচীনতম রথযাত্রা বর্তমানে বাৎসরিক উৎসব বড়িশা সার্বজনীন রথযাত্রা উৎসব কমিটি দ্বারা আয়োজিত হয় ভক্তবৃন্দ জনসাধারণের অকপট সাহা্য্যে সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের সক্রিয় অংশগ্রহণে
তথ্যঋণঃ- "বড়বাড়ী"-শ্রী প্রবাল রায় চৌধুরী
তথ্যসংগ্রহেঃ শ্রীমান্ শুভদীপ রায় চৌধুরী
চিত্রঋণঃশ্রী প্রবাল রায় চৌধুরী, শুভদীপ রায় চৌধুরী, শ্রী চন্দন ঘোষ




No comments:

Post a Comment