ঐতিহ্যের
ইতিহাসপর্বঃ
আজ প্রকাশিত হল
কালী দত্ত স্ট্রিটের সোনার
দুর্গার ইতিহাস। লিখলেন
বনেদীয়ানার সদস্যা শ্রীমতী দেবযানী
বসু। চলুন
দেখা যাক সেই বাড়ির
ইতিহাস।
শরতের সাদা ভেলা
ভাসানো নীল আকাশ, মাঠেঘাটে
দোলাদোলানো কাশফুল, ঝরে পড়া শিউলিকে
সঙ্গে করে মা দুর্গা
আসেন মর্ত্যলোকে। সঙ্গে
নিয়ে আসেন চার পুত্রকন্যাকে। পতিদেব
শিবও থাকেন সঙ্গে।
থাকেন চারটে দিন।
দশমীর বিদায়লগ্নে আমাদের কাঁদিয়ে ফিরে
যান শিবালয়ে। কিন্তু
এমন অনেক পরিবার আছে
যাঁদের ঠাকুরদালানে মা অচলা।
মৃন্ময়ী মূর্তি নয়-সোনার
মূর্তিতে তিনি চিরবন্দিনী শোভাবাজারের
কাছে কালী দত্ত স্ট্রিটে
সোনার দুর্গা বাড়িতেও তেমনই। এই
নামেই এলাকার মানুষ চেন
বাড়িটিকে। বাড়ির
ভিতর উঠোনে মন্দির এঁদের। দোমহলা
তিন খিলানের মন্দির। মাঝখানে
শ্বেত পাথরের সিংহাসনে গাঁথা
সোনার ৩ফুট উচ্চতার দেবীমূর্তি। স্বর্ণঅঙ্গ
থেকে ঠিকরে পড়ছে আলো,
যেন জ্যোতির্মণ্ডল ঘিরে রেখেছে মাকে। দশহাতে
দশপ্রহরণহরিনী মা প্রকৃতই যুদ্ধরতা। পায়ের
নীচে দলিত অসুর।
মায়ের চোখে তেজ, কিন্তু
তিনি সদাহাস্যময়ী। মা
এখানে একাকিনী, নেই তাঁর পুত্রকন্যারা
কেউই। সোনার
অঙ্গ আরও দ্যুতিময় সোনার
অলংকারে। অজস্র
সোনার গহনা তার গায়ে। মাথার
মুকুট, নাকে নথ, গলায়
চিক, সীতাহার, কোমরে কোমরবিছে, পায়ে
মল। পাশেই
রয়েছেন পাথরের মহাদেব ভৈরবেশ্বর।
কলকাতার ব্যবসায়ী জগতে নামকরা দত্ত
পরিবারের একটি শাখা বসতবাটি
গড়ে তোলেন উত্তর কলকাতার
কালী দত্ত স্ট্রিটে।
এই বংশের ধনী পুরুষ
রাধামাধব দত্ত বাংলার ১২৯২
সনে মন্দির নির্মাণ করে
সোনার দুর্গাপ্রতিমা প্রতিষ্ঠা করেন। বেনারসের
শিল্পীদের দিয়ে তিনি এই
মূর্তি তৈরি করিয়েছিলেন।
প্রচলন করেছিলেন নিত্যপূজার। কয়েক
পুরুষ পর বিগত বেশ
কিছু বছর ধরে রামলোচন
দত্তের স্ত্রী ছবিরানি দত্ত
এ পুজোর দায়ভার সামলে
চলেছেন।
দুর্গাপুজো, বাসন্তীপুজো ও অন্নপূর্ণা পুজো
এ মন্দিরের প্রধান তিনটি বাৎসরিক
উৎসব। এরমধ্যে
আশ্বিনের চারদিনব্যাপী দুর্গাপুজোই সবচেয়ে ধুমধাম করে
অনুষ্ঠিত হয়। মহালয়া
থেকে পঞ্চমী পর্যন্ত হয়
মায়ের অঙ্গরাগ। এরপর
শৃঙ্গার বেশে সাজেন মা। যদিও
মা এখান চিরঅধিষ্ঠিতা, তবু
অকালবোধনের নিয়ম অনুযায়ী বোধন
হয় ষষ্ঠীতে। বৈষ্ণবমতে
বিশুদ্ধ শুদ্ধাচারে পুজো হয়।
অন্নভোগ দেওয়ার রীতি নেই,
পরিবর্তে নৈবেদ্য দেওয়া হয়।
দশটি বিরাট পিতলের থালায়
সাজিয়ে দেওয়া হয় চাল,
ডাল, কড়াই, ছোলা, ঘি,
মশলা, দই, মিষ্টি, নানা
ফল, সবজি ইত্যাদি।
রাত্রে দেওয়া হয় লুচিভোগ,
দই ও মিষ্টান্ন।
দশমীতে বিসর্জন নেই এখানে।
পুরোহিত হোমের টিকা, শান্তিজল
দিয়ে শেষ করেন পূজা। পরদিন
থেকে আবার শুরু হয়
নিত্যপূজা। এ
বাড়ির পুজোয় বাইরের ঠাটবাট
কোনও দিনই তেমন ছিল
না। কিন্তু
লোক, লৌকিকতা ছিল, তা এখনও
বেশ বোঝা যায় পুজোর
আসরে যোগদান করলে।
ঐতিহ্যে আজও অটুট এই
বাড়ির পুজো।
তথ্যসূত্র
এবং চিত্রেঃ শ্রীমতী দেবযানী বসু(সাংবাদিক)
No comments:
Post a Comment