ঐতিহ্যের
ইতিহাসপর্বঃ
আজ প্রকাশিত হল
উত্তর কলকাতার মতিলাল বাড়ির দুর্গাপুজোর
ইতিহাস। কী
ভাবে পুজো শুরু হয়েছিল,
চলুন দেখা যাক।
আনুমানিক ১৮০০ সালে বিঁশ্বনাথ
মতিলাল জগদ্ধাত্রী পুজো দিয়ে শুরু
করেন। কারণ
দেবী জগদ্ধাত্রী হলেন উত্তর কলকাতার
বউবাজারের মতিলাল বাড়ির ইষ্টদেবী। শ্রীঁধর
জীউ হলেন ইষ্টদেবতা, বানেশ্বর
গৃহদেবতা এছাড়াও দেবী মনসা
ও দেবী শীতলাও রয়েছেন
এই বাড়িতে। এর
ঠিক পরের বছরই বাড়িতে
শুরু হল দুর্গাপূজা ও
কালীপূজা। বিঁশ্বনাথ
মতিলালের সময়ে প্রতিপদ তিথি
থেকে বাড়িতে ঘট স্থাপন
করে চণ্ডীপাঠ শুরু হত।
প্রতিপদ থেকে নবমী অবধি
দীন, দরিদ্র এবং বিদ্যান
ব্যক্তিদের অর্থ ও বস্ত্রাদি
দান করা হত।
বউবাজারের মতিলাল বাড়ির দুর্গা
ও জগদ্ধাত্রীর সিংহের বৈশিষ্ট্য রয়েছে,
এই পরিবারের সিংহ অশ্বমুখী।
অর্থাৎ কথিত আছে বৈদিক
যুগে হিমালয়ে এই ধরনের সিংহ
দেখা যায়।
দুর্গাপুজোর
ষষ্ঠীর দিন মতিলাল বাড়ির
কাত্যায়নীকে খিচুড়ি ভোগ প্রদান
করা হয়। এছাড়া
সপ্তমী, মহাষ্টমী ও মহানবমীতে দেবীকে
সাদভাত, খিচুড়ি, ভাজা, তরকারি, মাছ
ইত্যাদি ভোগ নিবেদন করা
হয়। তবে
অষ্টমীর দিন মাছ হলেও
দেবীকে মাছ নিবেদন করা
হয় না। মতিলাল
বাড়ির দেবী দুর্গাকে অষ্টমীর
দিন বৈষ্ণবী রূপে পূজা করা
হয়। পরিবারের
আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল
মতিলাল বাড়িতে সপ্তমীর দিন
কলাবউ স্নান করানো হয়
একটি বিশাল আকৃতির তামার
থালায়।
বিশেষত অতিথি সমাগম
মতিলাল বাড়িতে দেখা যায়
মহানবমীতিথিতে এবং জগদ্ধাত্রী পূজার
সময়। তাই
এই দুই দিন মতিলাল
বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের পদ
রান্না করা হয় অতিথিদের
জন্য। দশমীর
দিন এই বাড়িতে অরন্ধন
পালিত হয়। ওই
দিন পান্তাভাত, কচুরশাক, মুসুরডাল ভাতে, ইলিশমাছ ভাজা,
গন্ধরাজ লেবু ইত্যাদি খাওয়ার
রীতি আছে। দশমীর
বিসর্জনের পর ঠাকুরদালানে এসে
বাড়ির সদস্যরা কলাপাতায় দেবীর নাম আলতা
দিয়ে লিখে বেদীর তলায়
রাখেন। তারপর
বাড়ির পুরোহিত শান্তির জল প্রদান করেন,
তা গ্রহণ করার পর
সবাই দেবীর ভোগ গ্রহণ
করেন।
বিঁশ্বনাথ
মতিলালের সময়ে এই বাড়িতে
মহিষ বলি দেওয়ার রীতি
ছিল। তাঁর
ছোটো ছেলে রাঁমনারায়ণ মতিলালের
আমলে এবং নাতি ধনেন্দ্রনাথ
মতিলালের আমলেও প্রথমদিকে মহিষ
বলির রেওয়াজ ছিল।
সেই মহিষ বলি বন্ধ
করে পরে ছাগবলিও প্রদান
করা হত। বর্তমানে
মতিলাল বাড়িতে সপ্তমী, সন্ধিপূজা
ও মহানবমীতে চালকুমড়োবলি দেওয়া হয়।
বিঁশ্বনাথ মতিলালের আমলে রথের দিন
কাঠামো পূজা হত এবং
এই ঠাকুরদালানেই প্রতিমা তৈরি হত।
১৯৭২-৭৩ সাল নাগাত
সেই প্রথা বন্ধ হয়ে
যায়।
অতীতে
জোড়া নৌকায় ঠাকুর বিসর্জন
দওয়া হত। ১৯৭৬
সালে তা বন্ধ হয়ে
একটি নৌকায় বিসর্জন হত। ১৯৯০-৯১তে তাও বন্ধ
হয়ে যায়। বিঁশ্বনাথ
মতিলালের সময়ে পূজার প্রত্যেক
দিনই যাত্রা হত, বড়
বড় নামকরা যাত্রার দল
আসত এই বাড়িতে।
পরবর্তীকালে বাড়ির পুরুষ সদস্যরা
নাটক বা যাত্রা মঞ্চস্থ
করত। ১৯৬০-৬১সালে সেই প্রথাও
বন্ধ হয়ে যায়।
সময়ের
সাথে সাথে রীতিতে কিছু
পরিবর্তন হলেও নিষ্ঠায় ও
ধারাবাহিকতায় কোন পরিবর্তন হয়নি
এই পরিবারে। সেই
প্রাচীন পুজো আজও নবীন
সদস্যরা এগিয়ে নিয়ে চলেছেন,
এগিয়ে নিয়ে চলেছেন নিজেদের
ঐতিহ্যকে।
কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ-
দেবলীনা
মতিলাল(পরিবারের সদস্যা)
তথ্য লিপিবদ্ধেঃ- শ্রীমান্ শুভদীপ রায় চৌধুরী
No comments:
Post a Comment