Saturday, July 20, 2019

চোরবাগান চ্যাটার্জী বাড়িঃ- ভোগরন্ধনের দায়িত্ব বংশজদেরই


ঐতিহ্যের ইতিহাসপর্বঃ
আজ প্রকাশিত হল উত্তর কলকাতার চোরবাগানের রামচন্দ্র ভবনের দুর্গাপুজোর ইতিহাস লিপিবদ্ধ করলেন শ্রীমান্ শুভদীপ রায় চৌধুরী আলোচনায় আজ চোরবাগান চ্যাটার্জী বাড়ির দুর্গাপুজো

"তোমারি প্রতিমা গড়ি মন্দিরে মন্দিরে"-চ্যাটার্জী বাড়ি
 সিপাহী বিদ্রোহের সময় মধ্যগগনে তখন ব্রিটিশরাজ, বাবু কালচারও জমজমাট, সেই সময় উত্তর কলকাতার চোরবাগানে দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন রাজা রামচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৬০ সালে প্রথম পুজোর সূচনা হয় এই পরিবারে, এই বনেদী পুজো প্রায় ১৫৯বছর ধরে হয়ে চলেছে


 আগে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের ঠাকুরদালানেই প্রতিমা তৈরি হত, কিন্তু বর্তমানে কুমোরটুলিতেই মৃন্ময়ী প্রতিমা তৈরি হয়, তৈরি করেন প্রখ্যাত অধর পালের ঘরই রথযাত্রার দিন বায়না করে আসেন পরিবারের সদস্যরা চট্টোপাধ্যায় পরিবারের কাঠামো পুজো হয় জন্মাষ্টমী তিথিতে মহালয়ার পুণ্যতিথিতে দেবীর চক্ষুদান করা হয় এবং দ্বিতীয়ার দিন ঠাকুরদালানে দেবীকে নিয়ে আসা হয়
 দুর্গা ষষ্ঠীর দিন বোধন শুরু হয় পরিবারে, প্রথম যে রীতি মেনে পুজো শুরু হয়েছিল সেই একই রীতি মেনেই আজও পুজো হয় এই চট্টোপাধ্যায় পরিবারে যারা প্রতিমা তৈরি করেন তারাও বংশানুক্রমিক ভাবে এই বাড়ির প্রতিমা তৈরি করে আসছেন বলে উল্লেখ করলেন পরিবারের সদস্যরা অতীতে চ্যাটার্জী বাড়িতে পুজোর সময় নাটক মঞ্চস্থ করার একটা চল ছিল

দুর্লভ টানা চোখের একচালার প্রতিমাই হয় এই পরিবারে শুরুতে প্রতিমা সম্পূর্ণ ডাকের সাজের হত সময়ের সাথে সাথে মিলিয়ে এখন প্রতিমা সজ্জিত হয় বেনারসি, মাথায় শোলার সোনার মুকুট এবং বাড়ির প্রাচীন গহনায় যার উল্লেখও রয়েছে এই বাড়ির প্রতিমার অপর বৈশিষ্ট্য হল হাতে রুপোর পদ্ম অস্ত্র
অতীতে পুজোর চারটি দিনই এবং আজও কলকাতায় ছড়িয়ে থাকা সদস্যদের সমাগমের দিন ১০৮টি প্রদীপে সন্ধিপূজার আয়োজন কর হয় চট্টোপাধ্যায় পরিবারে বলি বন্ধ হবার পর, চিনির নৈবেদ্যে দান আম চালকুমড়ো বলির রীতি আছে এই পরিবারে

 এই পরিবারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল দেবীর ভোগ বাড়ির পুরুষ সদস্য বা বলাবাহুল্য যাদের উপনয়ন সম্পন্ন হয়েছে তারা নিজেরাই রান্না করে দেবীকে ভোগ নিবেদন করেন এই পরিবারের পুর্বপুরুষরা যে রীতি অনুযায়ী সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এবং দশমীতে কী কী ভোগ হবে তা বর্ণনা করে গিয়েছেন আর বর্তমান সদস্যরাও সেই একই রীতি মেনে আজও ভোগ রান্না হয়ে আসছে সাদাভাত, খিচুড়ি, সাতভাজা, আলুপটলের কালিয়া, পোনামাছ ভাজা,  শুক্তা, চাটনি, মাছ, পায়েস এবং মিষ্টি ইত্যাদি হল এই তিনদিনের পুজোর ভোগপর্ব এছাড়াও সপ্তমীতে লাউচিংড়ি, অষ্টমীতে শাকের ঘন্ট,  নবমীতে ভেটকিমাছের ঘন্ট, চিংড়িমাছের মালাইকারি ইত্যাদিও বিশেষ নিবেদন করা হয় দশমীর দিন এখানে অরন্ধন হয় না, একে বলে দুর্গারন্ধন অর্থাৎ বাসি ভোগ দেওয়া হয় ছাঁচিকুমড়া, ইলিশ মাছের অম্বল এদিনের বিশেষত্ব এছাড়া সন্ধিপুজোতে লুচি, মিষ্টি, বোঁদে হত দশমীতে দধিকরমা, বাসি লুচি, সন্দেশ
দেবীকে সমস্ত সোনার গহনাই পড়ানো হয়, দশটি হাতে দশরকমের গয়না পড়ানো হয় এছাড়া বহু প্রাচীন অলংকার সজ্জিত করা হয় দেবীকে
 দশমীর দিন এই পরিবারের প্রতিটি সদস্য দেবীকে একটি গান গেয়ে বিদায় জানান, যেটি এই পরিবারের চিরাচরিত প্রথা
 "ভজিতে তোমারে শিখি নাই কভুডাকি শুধু তোমায় মা বলে"-চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সমস্ত সদস্যরা কন্ঠ মেলান এই গানে দশমীতেঐতিহ্যের মেলবন্ধন এমনই যেখানে প্রাচীন ধারাকে আজও নবীন প্রজন্ম শ্রদ্ধার সাথে আজও পালন করে চলেছেন কলকাতায় এমন প্রাচীন বনেদীবাড়িতে আপনাদের আবারও নিয়ে যাবো, আশা রাখবো এই ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ধারা যেন অটুট থাকে
তথ্য লিপিবদ্ধেঃ শ্রীমান্ শুভদীপ রায় চৌধুরী
চিত্রঋণঃ লেখক অন্যান্য


No comments:

Post a Comment