Thursday, July 25, 2019

প্রজাদের আনন্দবর্দ্ধনের জন্যই শুরু হল রায় চৌধুরী পরিবারের পুজো


আভিজাত্যে বনেদীয়ানাঃ- রায় চৌধুরী পরিবার

সাল ১৬০৮, বঙ্গে লক্ষ্মীকান্ত গঙ্গোপাধ্যায় পেলেন মানসিংহের থেকে ৮টি পরগণার নিষ্কর জমিদারি ১৬১০ সালে লক্ষ্মীকান্ত রায় চৌধুরীই শুরু করলেন কলকাতায় স্বপরিবারে দুর্গার আরাধনা, শুরু হল রায় চৌধুরী পরিবারে কাত্যায়নীর আরাধনা মুলত প্রজাদের আনন্দবর্দ্ধনের জন্যই এমন উদ্দ্যোগ নিয়েছিলেন লক্ষ্মীকান্ত, প্রজারা নির্ভয়ে এই কটাদিন চৌধুরী বাড়ির দুর্গা দেখতে আসতেন ইংরেজ বা কলকাতার বাবু সম্প্রদায়ের সাথে এই পরিবারের কোন রকমের কোন যোগাযোগ ছিল না কারণ সাবর্ণ রায় চৌধুরীরা ছিলেন তৎকালীন কলকাতার একাধারে মালিক, জমিদার সবকিছুই সুতরাং তারা কোন বাবুদের অধীনস্থ ছিলেন না

 বর্তমানে কলকাতায় নানান স্থানে পরিবারের সদস্যরা থাকায় এবং রায় চৌধুরী পরিবার বৃহৎ পরিবার এককথায়, তাই আটটি বাড়িতে শুরু হয় পুজো-আটচালা, বড়বাড়ি, মেজোবাড়ি, মাঝের বাড়ি, বেনাকী বাড়ি, কালিকিংকর বাড়ি, নিমতা বাড়ি বিরাটি বাড়ি কৃষ্ণানবমী অর্থাৎ পুজোর চোদ্দো দিন আগে থেকে বোধন শুরু হয়ে যায় আটচালা বাড়িতে আরও অভিনবত্ব এখানেই যে রায় চৌধুরী পরিবারে অন্যান্য বাড়ির মতন রথযাত্রার দিন কাঠামোপুজো হয় না, হয় জন্মাষ্ঠমীতে
রায় চৌধুরী পরিবারের কুলমাতা মা ভুবনেশ্বরীরও বিশেষপুজো হয় এই দুর্গাপুজোতে পরিবারে পুজোর বৈশিষ্ঠ্য গুলি অভিনব বিদ্যাপতি রচিত "দুর্গাভক্তিতরঙ্গিণী" মতে পুজো পায় রায় চৌধুরী পরিবারের মা দুর্গা বড় বাড়ি, মেজ বাড়ি, নিমতা বাড়িতে সিংহের মুখটি হয় ঘোড়ামুখো বড়বাড়ি বিরাটিবাড়িতে অষ্টমীর বদলে নবমীতে হয় কুমারীপূজা

 সাবর্ণদের একচালার প্রতিমায় ত্রিচালা বসে, চালচিত্রে দশমহাবিদ্যা অঙ্কিত থাকে ডাকের সাজের প্রতিমা এবং মূর্তির বিধান অনুযায়ী দেবীর রং হতে হবে শিউলি ফুলের বোঁটার মতোন নয়তো স্বর্ণবর্ণা প্রতিমার একপাশে থাকেন রামচন্দ্র অন্যপাশে থাকেন শিব, তাঁদেরও নিয়মিত পুজো করা হয় রায় চৌধুরী পরিবারে নবমীর দিন ১৮০টি খুড়িতে মাশকলাই নিবেদন করা হয় অসুরের ভোগ হিসাবে এবং অপদেবতাদের সন্তুষ্ট রাখতে সন্ধিপুজোয় ১০৮প্রদীপদান, এবং তারসঙ্গে আখ চালকুমড়োর প্রতীকী বলিদান হয় আগে পরিবারে পাঁঠা, মোষ বলি হত, কিন্তু বর্তমানে তা বন্ধ
রায় চৌধুরী পরিবারের দেবীকে অন্নভোগই প্রদান করা হয় অন্নভোগে থাকে সাদাভাত, পোলাও, খিচুড়ি, ভাজা, তরকারি, মাছ, চাটনি, পায়েস ইত্যাদি দশমীতে পান্তাভাত, ইলিশমাছের মাথা দিয়ে কচুরশাক, চালতার চাটনি ইত্যাদি তবে বলাবাহুল্য যে সমস্ত বাড়িতে আমিষ ভোগ হলেও নিমতার বাড়িতে নিরামিষ ভোগ নিবেদন করা হয় দেবীকে

রায় চৌধুরী পরিবারের দেবীকে সমস্ত ধরনের গয়নাই পরানো হয় রায় চৌধুরী পরিবার দশমীর দিন কনকাঞ্জলিপথা রয়েছেপরিবারের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠা, সধবা মহিলা মায়ের পিছনে গিয়ে দাঁড়ান, পুরোহিত কনকাঞ্জলি দিয়ে দেন মায়ের হয়ে সবথেকে উল্লেখযোগ্য যে রায় চৌধুরী পরিবারের দুর্গাপুজো কিন্তু লক্ষ্মীকান্ত তাঁর স্ত্রী ভগবতীদেবীই শুরু করেছিলেন দুর্গাপুজোতে বাড়ির মেয়েরাই সবথেকে বেশি পুজোর কাজে অংশগ্রহণ করেন
আগে কাঁধে চেপে কৈলাশে যেতেন মা, কিন্তু বর্তমানে সেই প্রথা বন্ধ পরিবারে তবে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর রেওয়াজ কোনকালেই ছিল না এই পরিবারে


এইভাবে ঐতিহ্য আভিজাত্যর ধারা আজও ৪১০বছরেও বজায় রয়েছে রায় চৌধুরী পরিবারে ইতিহাস যেন কথা বলে এখানে
তথ্যসূত্রঃ- শুভদীপ রায় চৌধুরী(পরিবারসদস্য)


No comments:

Post a Comment