Friday, July 26, 2019

বনেদীর বনেদীয়ানাঃ- ভবানীপুর নিতাই চন্দ্র নন্দন বাড়ি


ঐতিহ্যের ইতিহাসপর্বঃ
 আজ প্রকাশিত হল দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর অঞ্চলের নিতাই চন্দ্র নন্দন পরিবরের দুর্গাপুজোর ইতিহাস চলুন দেখা যাক ভবানীপুরের সেই বাড়ির পুজোর ইতিহাস

 বনেদীর বনেদীয়ানাঃ- ভবানীপুর নিতাই চন্দ্র নন্দন বাড়ি
 এই পরিবারের পুজোর ইতিহাস বলতে গেলে প্রথম যে কথা বলতে হয়, যে বাড়িতে এই পুজো হয়ে আসছে এবং যে বেদীতে মা অধিষ্ঠিতা হন সেই বেদীর নীচে রয়েছে বিরজীতলার জঙ্গলের ডাকাত পূজিত দেবী দুর্গার ঘট অনুমান করা যায় বহুকাল আগে এই স্থানে বিরজীতলার জঙ্গল ছিল এবং সেখানকার ডাকাত দলের হাতে পুজো পেতেন দেবী দুর্গা ওরফে চণ্ডী লোকমুখে শোনা যায় যে সেই ডাকাতদের ভয়ে কালীঘাটে সকল দর্শনার্থীরা সকাল সকাল পুজো দিয়ে চলে যেতেন নন্দন পরিবারের পুজো শুরু হয় শ্রী নিঁতাই চন্দ্র নন্দনের সময়ে ১৩৭৫বঙ্গাব্দে

স্বর্গীয় নিঁতাই চন্দ্র নন্দনের দুই পুত্র, স্বপন কুমার নন্দন এবং তপন কুমার নন্দন এই দুই পুত্র ছোটো থেকেই মাটি দিয়ে ঠাকুর বানায় তখন সেই বাড়ির এক ব্রাহ্মণ নিঁতাই চন্দ্রকে বলেন এই বাড়িতে পুজো করার কথা সেই বেদীতে নিতাই চন্দ্র প্রথমে রাজী না হওয়ায় ব্রাহ্মণ বলেন, "চাল কলা গামছা তো দিতে পারবে? তাই দাও, আমি পুজো করে দেবো" এই ভাবে পুজো হতে থাকল বেশ কিছু বছর এখন নিতাই চন্দ্র পুজো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলে দেবী স্বয়ং স্বপ্নাদেশে নিতাই চন্দ্র তাঁর স্ত্রী রেখারাণি দেবীকে বলেন পুজো শুরু করার কথা, পুজো যেন বন্ধ না হয়
 ভবানীপুরের নন্দন পরিবারের পুজোয় ঠাকুর বায়না দিয়ে মহাসমারহে পুজো শুরু হয় নন্দন পরিবারের সোনার দোকান, একদিন নিঁতাই চন্দ্র দোকানে কাজ করছেন তখন দেবী এক নারীর রূপ ধরে এসে তাঁকে বলেন "আজ যে মহাষ্ঠমী, আজ মাকে একটি বস্ত্র দিলেন না?" তখন নিতাই চন্দ্র বললেন নিশ্চয় দেবো, বলেই যখন দেখলেন তখন সেই নারীকে আর দেখতে পেলেন না সঙ্গে সঙ্গে তিনি বাড়িতে এসে জিজ্ঞাসা করলেন সেই নারীর সন্ধান পেয়েছেন কী না কেউ কেউ বলতে না পারায় তিনি মাকে মহাষ্ঠমীর দিন বস্ত্র কিনে এনে দিলেন

 ২০০৭ সালে নন্দন পরিবারের পুজো স্থানান্তরিত হয় নতুন গৃহে, দেবীর আদেশ অমান্য করে পুজো শুরু হলে সেই বাড়ির বড় গিন্নী শ্রীমতী অঁনিতা দেবী মারা যান তাই আবার পুরানো বাড়িতেই শুরু হয় পুজো কিন্তু লোকবলের অভাব, বাড়ির সকল সদস্যই প্রায় অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় পুরানো বাড়ির বেদীতে দেবীর আদেশ নিয়ে আবার ২০১১ সালে নতুন বাড়িতে পুজো স্থানান্তরিত করা হয়

 নন্দন বাড়ির পুজো হয় সম্পূর্ণ বৈষ্ণব মতে কোন রকমের বলিদান করা হয় না প্রতিদিন মাকে লুচি, ভাজা, বিভিন্ন রকমের তরকারি, বাড়ির তৈরি মিষ্টান্ন যেমন নারু, নারকেলছাপা, চন্দ্রপুলি, খীড় এবং দই ইত্যাদি নিবেদন কর হয় মহানবমীতে হয় অন্নভোগ সন্ধিপুজোর সময় এই বাড়ির একটি বিশেষত্ব হল মিষ্টির নৈবেদ্য অর্থাৎ মহানৈবেদ্যর সাথে এক বড় রুপোর থালায় তৈরি হয় মিষ্টির নৈবেদ্য একটি নৈবেদ্যে যে পরিমান চাল ব্যবহার করা হয় ঠিক সেই পরিমান এখানে মিহিদানা সীতাভোগ ব্যবহৃত হয় এবং যে পরিমান ফল মিষ্টি দেওয়া হয় সেই সমপরিমান শুধু মিষ্টান্নই ব্যবহৃত হয় এই নৈবেদ্যে
দশমীর দিন নন্দন পরিবারের কুলদেবতা শ্রীঁধর জীউ ঠাকুর ঘরে চলে গেলে শুরু হয় বিসর্জনপর্ব এই পরিবারে কনকাঞ্জলি প্রথা রয়েছে দেবীবরণ শেষে বাড়ির বড় গিন্নী তিনি কনকাঞ্জলি নেন, মায়ের হয়ে বাড়ির পুরুষ সদস্য কনকাঞ্জলি দিয়ে দেন তারপর প্রতিমা বিসর্জনের জন্য রওনা দেন এই ভাবে নিষ্ঠার সাথে আজও পুজো হয়ে আসছে নন্দন পরিবারে
কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ- শ্রী সৌভিক নন্দন
তথ্যসূত্র সংগ্রহেঃ শ্রীমান্ শুভদীপ রায় চৌধুরী


No comments:

Post a Comment