রত্নগর্ভা
ভারতভূমিপর্বঃ
আজ শেষপর্ব আলোচনায় অনন্ত শ্রী ওঙ্কারনাথ
দেব। আলোচনা
করলেন শ্রীমান্ কৃষ্ণেন্দু বিশ্বাস। ঠাকুরের
শ্রীচরণে আমাদের পরিবারের পক্ষথেকে
অনেক প্রণাম জানাই।
জয় সীতারাম।। জয়
সীতারাম।। জয়
সীতারাম।।
আগের পর্বের লিঙ্কঃ-
https://www.facebook.com/Heritagetraditional/posts/2400368153533165?__tn__=K-R
চলল বিভিন্ন মঠ নির্মাণ।
বিভিন্ন লীলার সাক্ষী হয়ে
থাকল সীতারামের শিষ্যরা। সীতারাম
শেষের দিকে চারমাস মৌন
ব্রত অবলম্বন করে গভীর সাধনায়
লীন থাকতেন তেমন কিছু
আহার করতেন না, এমনকি
কারো সাথে দেখা পর্যন্ত
করতেন না। ঠাকুরের
দুবার চোখের অপারেশন হয়,
তাঁর শিষ্য ডাক্তারই চিকিৎসা
করেন।
সীতারামের
লীলা রয়েছে অনন্ত।
ঠাকুর নিজ শরীরে ইষ্ট
দর্শন করিয়েছেন কত শিষ্যকে তার
ইয়ত্তা নেই। অনন্ত
শ্রী তাকেই বলা হয়
যিনি স্বীয় শরীরে তাঁর
শিষ্যদের ইষ্ট দর্শন করাতে
পারেন। সীতারাম
শুধু তাঁর শিষ্যকেই নয়,
নিজ গুরুকেও ইষ্ট দর্শন করিয়েছিলেন
তা পূর্বেই বলা হয়েছে।
শুধু তাই নয় এমন
অনেক শিষ্য আছে যাদের
দীক্ষার সাথে সাথে কুণ্ডলিনী
জাগ্রত হয়ে জ্যোতি প্রাপ্ত
হয়েছে।
এক জনৈক শিষ্য
একবার ঠাকুরের কাছে এসে বলল-"বাবা তোমার সব
শিষ্যরা কিছু না কিছু
পায়, কেউ ইষ্ট দর্শন,
কেউ বা জ্যোতি, বাবা
আমি তো কিছুই পেলাম
না।" সীতারাম কথা
শুনে মৃদু হেসে বললেন
যে, কেন রে জপ
কী ঠিক হচ্ছে না
নাকি? সে উত্তর করল,
না বাবা যথাসাধ্য নিয়ম
করে জপ করি, বাবা
সবাই যখন বলে যে
সে এও পেয়েছে, তখন
আমি না কিছুই বলতে
পারি না, বড় লজ্জা
করে। তখন
ঠাকুর পুনরায় বললেন যে
ওসব পেয়ে কী হবে
বল দেখি? এবার থেকে
কেউ জিজ্ঞেস করলে যে কি
পেয়েছিস? তখন বুকে চাপর
মেরে বলিস "আমি একজন বাবা
পেয়েছি।" সেটি শুনে
শিষ্যটির চোখ দুটি ভোরে
গেল, সে নিজের বুক
চাপরে বলে উঠলেন-"আমি
একজন বাবা পেয়েছি, যে
কিনা সাক্ষাৎ ভগবান।" এই
ভাব বহু লীলা মাধুর্য
প্রকাশ করেছেন সীতারাম।
আরও কত ঘটনার সাক্ষী
অসংখ্য ভক্ত শিষ্যরা।
তবে ঈশ্বরকোটির মানুষ যারা, তারা
আসে মানুষকে কিছু রাস্তা দেখিয়ে
দিতে। এবং
চলার পথের পাথেয় কিছু
সজ্বল প্রদাণ করে পুনরায়
স্বীয়লোকে প্রত্যাবর্তন করতে। বহুলীলা
সম্পাদন করে প্রায় তিন
কোটি শিষ্যকে আদর্শে তৈরি করেছেন। তিনি
মায়েদের কে বলতেন যে
"সব মায়ের রমণী নয়
জননী হয়ে ফিরে আয়,
শাঁখা সিন্দূরে আয় মা।"
তাঁর সব শিষ্যকে বলতেন
ধুতি পরতে অন্তত যতক্ষণ,
মঠে থাকবে ততক্ষণ।
ঠাকুরের নিয়ম নীতিগুলি শিষ্যরা
খুব সুন্দর ভাবে পালন
করতো। তবে
বার্ধক্য জনিত রোগে ধরল
সীতারামকে। সীতারাম
হলেন অসুস্থ। নিয়ে
যাওয়া হল বারো তলার
গোপাল মিত্রের বাড়িতে। রাখা
হয় সেখানেই এবং ঠাকুরের অন্তলীলা
সেখানেই হয়। মধ্যরাত
তখন, বারোতলায় নাম চলছে, ঠাকুর
শুয়ে আছেন। ১৯৮২
সালের ৬ই ডিসেম্বর মাধব
স্বামীজিকে সীতারাম জিজ্ঞেস করছেন-"এটা কোথায় মাধব?"
মাধব স্বামীজি বললেন-"বাবা এটি বারোতলা।" অ্যাঁ বারোতলা?
তুলসীতলা নয়, বেলতলা নয়,
বটতলাও নয়, বারোতলা?"
"আমায়
নিয়ে চল মাধব, নিয়ে
চল।" মাধব স্বামীজি
বললেন-"কোথায় নিয়ে যাব
বাবা?" সীতারাম বললেন- 'তোদের অন্তরে'
চলে গেলেন সীতারাম। তাঁর
সব পার্থিব লীলা শেষ করে
অমৃতধামে। কোটি
কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে সেই
স্বীয়লোকে। বারোতলায়
শরীর ত্যাগের পর ঠাকুরের কায়া
কলেবরকে নিয়ে আসা হল
মহামিলন মঠে। তারপর
বেতারে খবর দেওয়া হল। সেই
খবর শুনে লক্ষ লক্ষ
শিষ্যরা সবাই এলেন মহামিলন
মঠে। ভক্তরা
ছাড়তে চায় না, তবু
সৎকারের নিমিত্ত নিয়ে যাওয়া হল
ঠাকুরের জন্মস্থান ডুমুরদহে।
সীতারাম
চলে গেলেন, সকলের জন্য
রেখে গেলেন তাঁর অমৃতবাণী। সারাজীবন
গুরু পাদুকা বুকে নিয়ে
কাটিয়ে গেলেন ও গুরুনামের
মাহাত্ম জানিয়ে গেলেন জগৎকে
দেখালেন
মহামন্ত্রের মহীমা। বললেন
"যে কামনা করি জপিবে
শ্রীনাম-অবিলম্বে পূর্ণ হবে সেই
মনস্কাম।" বললেন,"নাম
আশ্রয়কারীকে কিছুই করতে হয়
না, কিছু দিন নাম
আশ্রয় করে থাকলেই নাম
তার ভক্তকে গ্রহণ করে। এবার
নাম তার হৃদয় লীলায়
আপনিই ঝংকৃত হতে থাকে।"
শুধু তাই নয় বললেন
"সদাচারী তো দুরের কথা
দুরাচারীও যদি নাম আশ্রয়
করে তবে সাফল্য মুক্তি
লাভ করবে।"
বললেন
সকল ভক্তের তরে-
"যে
আমার কথা নিত্য বলে,
যে আমার কথা
নিত্য শোনে,
আমার কথায় যে
আনন্দিত হয়,
তাকে আমি ত্যাগ
করি না।"
তার সকল কথাই অমৃততুল্য। বললেন-
"ঠাকুর মঙ্গলময়।
তই মঙ্গলই করবেন।
তাঁর দুটি পা;
একটি শান্তি, একটি
অশান্তি।
একটি অভাব, একটি
স্বাচ্ছল্য।
একটা রোগ, একটি
আরোগ ;
যখন যেটা বাড়িয়ে
দেবেন
সেটি আঁকড়ে ধরে
ডাকত হয়-
তাহলেই আনন্দ।"
আরও কহিলেন-
জপিলে
নিয়ত নাম রবে না
আঁধার।
আলোতে
ভরিয়া যাবে অন্তর তোমার।।
শত্রু
মিত্র, সুখ দুঃখ, ভেদ
নাহি রবে।
সকলের
মাঝে তুমি বাঞ্ছিত হেরিবে।।
আরও রয়েছে অনেক বাণী,
ঠাকুরের কথা অমৃত সমান। লিখেছেন
নদীয়া নাগর নাটক, গুরুপূজা
নাটক, ভক্তচরিত নাটক ইত্যাদি।
সীতারাম কথা লিখতে বসে
যদি হিমালয়কে কলম করা হয়,
আকাশ হয় যদি পাতা,
সমুদ্রের জল হল কালি
তাহলেও অসমাপ্ত রয়েই যাবে।
তবে ঠাকুরের শিষ্যরা আজও বিশ্বাস করেন
ঠাকুর আছেন সর্বদাই তাদের
সাথে এবং সীতারামের প্রিয়
অখণ্ড নামই তাঁর প্রমাণ। সীতারামকে
নিয়ে শ্রীজীব ন্যায়তীর্থ মহাশয় লিখলেন-
"ওঙ্কারনাথং
মহিমাবদাতং
বিশুদ্ধসত্ত্বেন
সদা বিভাতম্।
যোগীশ্বরং
যোগ সমাধিমগ্নং
নিত্যং
নমঃ ব্রহ্ম বিবোধ লগ্নম।।
ওঙ্কারনাথং
প্রণমামি নিত্যং
কৃষ্ণঞ্চ
রামঞ্চ গুণাভিরামং
ধ্যায়ন্তমন্তং
ক্রিয়ায়া বিরামং।
মুখেচ
গায়ন্তং মপেত তন্ত্রং
নেত্রপ্রিয়ং
ত্বাং নমো যোগীচন্দ্রম্।।
তাই আজও সীতারামের ওই
শেষ কথা সকল শিষ্যরা
স্মরণ করে আনন্দ পায়-
"নিয়ে
চল মাধক নিয়ে চল"
কোথায়
বাবা?"তোদের অন্তরে"
তথ্যসূত্র
সংগ্রহেঃ শ্রীমান্ কৃষ্ণেন্দু বিশ্বাস
No comments:
Post a Comment