রত্নগর্ভা
ভারতভূমিপর্বঃ
আজ আবারও প্রকাশিত
হল অনন্ত শ্রী ওঙ্কারনাথ
দেব-এর চতুর্থপর্ব।
লিখলেন শ্রীমান্ কৃষ্ণেন্দু বিশ্বাস। আলোচনায়
আজ সীতারামদাস ওঙ্কারনাথ দেব পর্ব-৪
আগের
পর্বের লিঙ্কঃ-
https://www.facebook.com/Heritagetraditional/posts/2386781758225138?__tn__=K-R
সীতারাম
বঙ্গদেশে নামপ্রচারের সাথে সাথে তাঁর
সকল শিষ্যদের নিমিত্ত চারটি আদেশ বা
পালনীয় কর্তব্য দিলেন অর্থাৎ সকল
শিষ্যদের চারটি নিয়ম মেনে
চলতে হবে, যথা-১.
ব্রহ্মচর্য,২. যথাকালে উপাসনা,৩.নাম, ৪.
প্রণাম। শিষ্যরা
ঠাকুরের প্রতিটি আদেশ পালন করতে
চেষ্টা করে। সীতারাম
সব শিষ্যের উদ্দেশ্যে বলেন যে, "তোরা
এর সব আদেশ পালন
করতে পারবি না, কিন্তু
প্রতিটি আদেশ মেনে চলার
চেষ্টা করলেই এ খুশি
হবে।"
ঠাকুর বর্ণাশ্রম প্রথাকে
ভীষণভাবে মান্যতা দিতেন এবং সেই
অনুযায়ী সবনিয়ম মেনে চলতেন
ও চলতে বলতেন।
তবে ঠাকুরের সকল বর্ণের শিষ্য
শিষ্যাদের জন্য ছিল অগাধ
ভালোবাসা।
একবার ঘটনা ঘটে
তা হল, ঠাকুর লক্ষ্নৌ
স্টেশনে নামলেন। স্টেশনটি
পুষ্পস্তবককে সজ্জিত। রেলের
উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা প্রণামের জন্য ব্যস্ত।
সীতারামের সেদিকে কোন নজরই
নেই। তাঁর
দৃষ্টি দূরে দাঁড়ানো এক
ঝাড়ুদারের ওপর। তাকে
ডেকে আনলেন সীতারাম।
সে তো ভীত সন্ত্রস্ত। তার
দুচোখ ভরা জল, দূর
থেকে বলল- "বাবা! আমি ভাঙ্গী
অচ্ছুত।" বর্ণাশ্রমী ঠাকুর
তখন চেঁচিয়ে বললেন, " তুমি ভাঙ্গী নও।তুমি
আমার ঠাকুর।"
পরদিন নব বস্ত্র
পরিয়ে তার কানে মন্ত্র
দিলেন সীতারাম। এইভাবে
বহু লীলার মধ্য দিয়ে
প্রমানিত হয়েছে তিনি বর্ণাশ্রম
মানলেও কখনই বর্ণাশ্রম ধর্মকে
মেনে তাঁর সন্তানস্বরূপ শিষ্যগণ
তথা অন্য মানুষদের ছোটো
করেন নি। তাঁর
ভালোবাসা ছিল সকলের ওপর।
একবার সীতারাম এক
পুরাতন ব্রহ্মচারিণীর ওপর খুব অসন্তুষ্ট
হয়েছিলেন। হুকুম
জারী করেছিলেন যে, সে যেন
আশ্রম ছেড়ে অবিলম্বে চলে
যায়। সীতারাম
তার মুখদর্শন করবেন না।
এমন সময় ব্রহ্মচারিণীর সহিত
সীতারামের একেবারে মুখোমুখি সাক্ষাৎকার। সীতারাম
রোষ চেপে রেখে দেখছেন,
তার শোক বিহ্বল দৃষ্টিতে
সীতারামের ওপর নিবদ্ধ।
সীতারাম চেঁচিয়ে বললেন-" বেরিয়ে যা, এখুনি
বেরিয়ে যা সামনে থেকে।"
ব্রহ্মচারিণী ধীর কণ্ঠে বললেন,
কোথায় যাব? তখন (নিজের
পদযুগল দেখিয়ে) সীতারাম বললেন- কেন এই
চরণে? সমস্ত শিষ্যদের শাসনের
ব্যাপারে শ্রীশ্রীঠাকুর যে কোন সময়ে
অত্যন্ত কঠোর হতেন।
সেই দৃষ্টান্তের অভাব নেই।
ঠাকুরের শাসনেও ছিল ভালোবাসা। সীতারাম
তাঁর শিষ্যদের কঠোর শাসন করতেন
কিন্তু পরে আবার ভালোবাসায়
ভরিয়ে দিতেন। তার
একটি ছোট্টো প্রমাণ বা
লীলাকথা রয়েছে।
ঠাকুরের "শ্রী রামাশ্রমে" অবস্থানকালে
সীতারাম প্রার্থনা করাচ্ছেন। কিঙ্কর
গোবিন্দ জীর ১০৪ ডিগ্রি
জ্বর। তিনি
প্রার্থনায় যোগ দিতে পারলেন
না। সীতারাম
প্রার্থনান্তে গেলেন তখন গোবিন্দজী
বললেন, বাবা, খুব জ্বর,
শরীর দুর্বল।
সীতারাম শুনের রাগের ভান
করে বললেন-"হামাগুড়ি দিয়ে গেলি না
কেন? প্রার্থনা করতে করতে মরতিস। সীতারাম
গর্ব করে বলতো- তাঁর
একটা ছেলে প্রার্থনা করতে
করতে দেহত্যাগ করেছে।"
গোবিন্দজী লজ্জিত হয়ে পরলেন। পরদিন
সত্যই হামাগুড়ি দিয়ে প্রার্থনায় যোগ
দিলেন, প্রার্থনান্তে দেখা গেল তিনি
সম্পূর্ণ সুস্থ।
এইরকম কত ছোটো
বড় লীলার সাক্ষী সীতারামের
প্রাণ শিষ্য ও তাঁর
পার্ষদগণ। ঠাকুর
দীক্ষাদানের রত, সকলের মাথায়
হাত রাখছেন ও বলে
যাচ্ছেন গুরুনাম জপ করতে থাক। হঠাৎ
এক বিধবা মায়ের মাথায়
হাত দিয়ে হাত সঙ্গে
সঙ্গে সরিয়ে নিলেন।
যেন বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়েছেন। বললেন,
"মা, কী করেছিস? পর
পুরুষের সঙ্গ করছিস?" বলেই
এগিয়ে গেলেন মেয়েটি এবার
অঝোরে কাঁদতে লাগল।
সীতারাম স্থির থাকতে পারলেন
না, পিছনে ফিরে এলেন
আর বললেন, এ তোর
সব পাপ তুলে নিল। যা
করে ফেলেছিস-করেছিস-আর কখনও
করিস না-কথা দে।(একটু
থেমে) যদি করিস (নিজেকে
দেখিয়ে) এ তবে বড়
ব্যাথা পাবে।" এই
বলা শেষ করে পুনরায়
দীক্ষাদান করতে লাগলেন।
সেই বিধবা মায়েরও দীক্ষা
হয়ে গেল। সীতারামের
ক্ষমার ভাণ্ডার এত বেশী, সেখানে
কারো অপরাধ পৌঁছতেই পারে
না। ক্রমশ...
তথ্যসূত্র
সংগ্রহেঃ শ্রীমান্ কৃষ্ণেন্দু বিশ্বাস
No comments:
Post a Comment