ঐতিহ্যের
ইতিহাসপর্বঃ
আজ প্রকাশিত হল উত্তর কলকাতার
বলরাম দে স্ট্রীট দত্ত
বাড়ির দুর্গাপুজোর ইতিহাস। লিপিবদ্ধ
করলেন শ্রীমান্ শুভদীপ রায় চৌধুরী। চলুন
দেখা যাক সেই বাড়ির
ইতিহাস।
বলরাম
দে স্ট্রীট দত্তবাড়ির পুজো শুরু করেন
শ্রীযুক্ত বাবু শ্যামলধন দত্ত,
বাংলার ১২৮৯ সালে ইংরাজির
১৮৮২ সাল। বাড়িটিতে
বর্তমানে শ্যামলধনের দৌহিত্র বংশ ঘোষ পরিবারেরই
বাস। বর্তমানে
তারাই পুজো করে আসছেন
দেবী দুর্গার। বড়িটি
দত্তবাড়ি নামেই পরিচিত।
সেই ১৮৮২ সাল থেকে
এখনও একই রীতিতে পুজো
হয় দত্তবাড়িতে।
উল্টোরথের দিল কাঠামো পুজো
হল, এরপর শুরু হয়
প্রতিমার কাজ। মহালয়ার
দিন দেবীর চোখ আঁকা
হয়। দেবী
এক কাঠামোয় তৈরি কিন্তু তিনটি
চালচিত্র থাকে-সেই চালচিত্রে
পুরাণের নানা কাহিনী আঁকা
থাকে, একে বলা হয়
মটচৌরী। প্রতিমার
বৈশিষ্ট্য হল দেবী ঘোটকমুখী
সিংহের ওপর অধিষ্ঠান করছেন।
কৃষ্ণপক্ষের নবমীতিথি থেকে দেবীপক্ষের নবমীতিথি
পর্যন্ত চলে চণ্ডীপাঠ, পঞ্চমী
অবধি সাতজন করে ব্রাহ্মণ
মিলে এই পাঠ করেন। ক্রমে
ক্রমে ষষ্ঠী থেকে নবমী
পর্যন্ত একজন ব্রাহ্মণ করেন
পাঠ। দেবীর
বোধন তিথি অনুযায়ী পঞ্চমী
বা ষষ্ঠীতে হয়। বোধনের
দিন দেবীকে আহ্বানের জন্য
দত্তবাড়ির শ্রীঁধর জীউ নিজে যান,
বোধন ঘরে দেবীকে আরাধনা
করে দেবীকে ঠাকুরঘরে আনা
হয়।
ষষ্ঠীর দিন ব্রাহ্মণদের
বাড়ির প্রবীন সদস্য বরণ
করেন তারপর ষষ্ঠীর পুজো
শুরু হয়। সপ্তমীর
দিন সকালে বাড়ির সদস্যরা
ও পুরোহিত কলাবউ স্নান গঙ্গায়
করিয়ে নিয়ে বাড়িতে এসে
শুরু হয় সপ্তমীর পুজো। দেবীর
প্রথমে চক্ষুদান দিয়ে পুজো শুরু,
এই দিন থেকে ঠাকুরঘরে
সিংহাসনের দুইদিকে দুটি ঘিয়ের প্রদীপ
জ্বলতে থাকে, মহানবমী পর্যন্ত। সপ্তমী
থেকে নবমী পর্যন্ত প্রতিদিন
সধবা-কুমারী পুজো হয়,
কিন্তু সন্ধিপুজোর সময় হয় না। দত্তবাড়িতে
দেবীকে প্রতিদিন ১০৮ জবা, বেলপাতা,
অপরাজিতা, গাঁদা ও রজনীগন্ধার
মালা পরানো হয়।
এছাড়া দত্ত বাড়িতে সপ্তমীর
দিন থেকে হোম শুরু
হয় চলে নবমী পর্যন্ত।
দত্তবাড়িতে অন্নভোগ প্রথা নেই, তাই
চার রকমের মিষ্টি, তিন
রকমের নোনতা খাবার বাড়িতে তৈরি করে
সেই দিয়ে দেবীর ভোগ
নিবেদন করা হয়।
অষ্টমীর দিন সকালে ও
সন্ধিপুজোর সময় ১০৮ ঝাড়
প্রদীপ জ্বালানো হয়, ১০৮পদ্ম মায়ের
শ্রীচরণে নিবেদন করা হয়। এই
বাড়িতে ধুনো পোড়ানোর রীতি
রয়েছে। নবমীর
দিন মাটির নয়টি ঘটের
ওপর নয় রকমের টুকরো
কাপড় দিয়ে "নবপত্রিকা" তৈরি করে তাকে
চালের গুড়ির ওপর রেখে
দেবীর সামনে স্থাপন করা
হয়।
এবার দশমীর তিথি,
উমা বিদায়ের পালা। সকালে
দধিকর্মার পর হলুদ জলে
দর্পন বিসর্জন করে দেবীর চরণ
দর্শনের পর বেলপাতায় দুর্গানাম
লিখে তা দেবীর পায়ে
অর্পন করা হয়।
বিকালে শুরু হয় দেবীবরণ। এরপর
তিনটি বাঁশের ওপর দেবীকে
বসিয়ে প্রায় ১২-১৫জন
মিলে কাঁধে তুলে সাতপাক
ঘুরিয়ে দেবীকে নিরঞ্জনের পথে
নিয়ে যাওয়া হয়।
অতীতে জোড়া নৌকায় বসিয়ে
মাঝ গঙ্গায় গিয়ে মাকে
বিসর্জনের রীতি ছিল এবং
নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে দেওয়া
হত, যাতে সেই পাখি
গিয়ে কৈলাশে মহাদেবকে খবর
দেয় যে উমা আসছে। সময়ের
সাথে সাথে সেই প্রথা
আজ বন্ধ। বিসর্জনের
পর বাড়ির সদস্যরা সবাই
ঠাকুরদালানে এসে শান্তির জল
নেন। এইভাবে
ঐতিহ্যের ধারা অব্যাহত রেখে
দত্তবাড়ির পুজো আজও নিষ্ঠার
সাথে হয়ে আসছে।
তথ্য সংগ্রহেঃ- শ্রীমান্ শুভদীপ রায় চৌধুরী
চিত্রঋণঃ
শ্রী অরিত্র বিশ্বাস
No comments:
Post a Comment