ঐতিহ্যপূর্ণ
মা করুণাময়ী কালীমন্দির
আজ আবারও মা
করুণাময়ী কালীমন্দির নিয়ে বিশেষ রচনা
লিখলেন "বনেদীর-বনেদীয়ানা" পরিবারের
সদস্য শ্রীমান্ শঙ্খ। ঐতিহ্যপূর্ণ
এবং ঐতিহাসিক এই মন্দির বঙ্গের
দেবীমন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম।
মা করুণাময়ী এখানে কন্যারূপেই পূজিতা
হন, রায় চৌধুরী পরিবারের
এই মন্দিরের ইতিহাস তুলে ধরলেন
শ্রীমান্ শঙ্খ।
শ্রী শ্রী করুণাময়ী।
টালিগঞ্জ, কোলকাতা।
১৮৪৬/৪৭ সাল, মাঘমাসের
সন্ধ্যা। পশ্চিমদিগন্তে
দিনমণি অস্তাচলে যাওয়ার উপক্রম করছেন। আদিগঙ্গা(আজকের টালিনালা)-র
জলে আস্তে আস্তে করে
গোধূলিবেলার আলো ছড়িয়ে সূর্য্যদেব
পাটে বসেছেন। ক্রমে
গঙ্গার দু'তীরবর্তী জঙ্গলে
ঝিঁঝি'র ডাক, পাতার
খসখস আওয়াজ, বাসায় ফেরা
পাখিদের কলরব.... আস্তে আস্তে মিলিয়ে
যাচ্ছে.. রাত্রির কালো চাদর টেনে
প্রকৃতি যেন, আদিগঙ্গার কূলে
ঘুমপাড়ানি বিছানা পাতছেন..! সহসা
দূর থেকে মৃদুস্বরে অনেক
লোকের আওয়াজ, এদিকই আসছে....
যেন এদিকে তেড়েই আসছে!
সরিতাশ্রেষ্ঠার চিরাচরিত মৃদু তরঙ্গে হঠাৎ
করে যেন বড় বড়
ঢেউ জাগছে! আচমকা সন্ধ্যারাত্রির
শান্ত পরিবেশের লয় ভঙ্গ হওয়ার
কারণটি দেখার জন্য যেন
গাছপালাগুলোও ছায়া এলিয়ে গঙ্গার
প্রবাহের দিকেই ঝুঁকে রয়েছে...!
......ঐ
দ্যাখা যায়! একটা বড়
বজরা আসছে। বজরার
দাড়পালদের ক্রমাগত 'হেঁইও' আওয়াজ ধীরে
প্রকট হচ্ছে। আচ্ছা,
তাহলে ঐ দাঁড়পাল গুলোই
যত নষ্টের গোড়া...! আলস্যভরা
জঙ্গলের কাঁচাঘুম ভাঙানোর মূলে ওদেরই কলরব..!
কিন্তু
ব্যাপারটা কী! কে যাচ্ছে
বজরায়? তার এত তাড়া
কীসের?
সেই বজরাটি ছিলো একটি
বিশেষ বজরা। তার
মধ্যে বজরায় যিনি গঙ্গাসাগর
তীর্থ থেকে ফিরছিলেন, তিনি
আরও বিশেষ একজন; তিনি
লোকমাতা রাণী রাসমণি।
বজরার কক্ষে প্রদীপের স্থির
শিখায় অধিষ্ঠিতা শান্তসৌম্য মাতৃমূর্তি'র কপালে গভীর
চিন্তার ভাঁজ! তিনি জগন্মাতার
বিশেষ কৃপাধন্যা। জগন্মাতা
কাশেশ্বরী'কে দর্শনের মানসে
কাশী যাত্রার আয়োজন করেও তা
থেকে বিরত হয়েছেন।
স্বয়ং অন্নপূর্ণা'র আদেশে।
ব্রহ্মময়ীর ইচ্ছা, তিনি রাসমণির
মাধ্যমেই গঙ্গার পশ্চিমতটে প্রকট
হবেন। আর
সেটাই হলো, গঙ্গাসাগর ফেরত
রাণীমা'র কপালে, চিন্তার
ভাঁজের কারণ!
জায়গা
না হয়, পাওয়া গেছে। দক্ষিণেশ্বরে। কিন্তু
জায়গা পেলেই তো হলোনা!
মন্দির হবে কেমন? কীরকম
শৈলীর দেউলে জগন্মাতাকে বসাবেন
তিনি? কিছুই মাথায় আসছে
না! তাই কোনোমতে নিয়মরক্ষার
স্নান সেড়েই কোলকাতা ফিরছেন
রাণীমা। সবেধন
নীলমনি, সেজো-জামাই মথুরামোহন'ই শেষ ভরসা!
শাশুড়ীমায়ের মনের সঙ্কল্প কীভাবে
কতদূর বাস্তবায়ীত হবে, জামাই মথুরামোহন
এই নিয়েই বড় চিন্তিত!
কত শিল্পীই তো এসেছেন এখনও
পর্যন্ত; কয়েকজনের কাজ চোখে ধরছে
বটে, তবে মনে ধরছে
না! তার উপরে রাসমণি
নিজেই আবার সপ্তা'খানেক
ছিলেন না। এর
মধ্যেও কয়েকজন কারিগর এসেছে,
তাদের কাজও ভালো।
কিন্তু এই 'ভালো'-টা
যে রাণীমায়ের মনেধরা ভালো.... তা
নিয়ে সন্দেহ আছে! ওদিকে
এই সংক্রান্তই পাঁচটা পাঁচরকমের চিন্তা
নিয়েই রাণী বজরায় ফিরছেন। তিনি
অধৈর্য্য! আর না, বড্ড
দেরী হয়ে যাচ্ছে! বাড়ী
ফিরেই, যে শিল্পী-কারিগর
পাবেন তাদের দিয়েই ভীত
খোঁড়ার কাজ শুরু করাবেন।
বজরা গঙ্গার বুক চিরে
নিজের গতিতে এগিয়ে চলেছে। মাঝিমাল্লাদের
দাঁড়ের টান, ছন্দে ছন্দে
লোকগীতির বোলে সন্ধ্যার ঝিল্লিমুখর
অরণ্যের স্তব্ধতা ভঙ্গ করে বজরা
এগিয়ে চলেছে, বাবুঘাটের দিকে।
আচমকা
কক্ষের খোলা জানলা দিয়ে
মাঘের দমকা হাওয়া আসতেই,
রাসমণির চিন্তাচ্ছেদ! জানলার কপাট আটকাতে
গিয়েই রাণীর নজরে আসে
এক অদ্ভূত দৃশ্য।
বেশ কিছুটা আগে, বজরার
অনুকূলেই গঙ্গার এক ঘাটের
সিঁড়িতে আলোআঁধারিতে দাঁড়িয়ে এক বাচ্চামেয়ে।
কত বয়স হবে; বড়জোর
পাঁচ/ছয়! লালপেড়ে শাড়ী,
নাকে একটি নোলক।
ইশারাই রাণীকে হাতছানি দিচ্ছে। রাণী
তৎক্ষনাৎ মাঝিদের ঘাটে বজরা বাঁধতে
বললেন। বজরা
বাঁধতে না বাঁধতেই, রাণী
ঘাটে নেমেছেন। এদিক
ওদিকে বারকতক চাওয়ার পরেই
দেখেন, সেই মেয়েটি ঘাট
থেকেই জঙ্গলের দিকে যাওয়া পথের
রেখা ধরে বেশ কিছুটা
আগে দাঁড়িয়ে আছে। ভৃত্যদের
অপেক্ষা না করে, রাণী
একাই এগোতে থাকলেন মেয়েটির
নির্দেশিত পথে..। মেয়েটিকে
লক্ষ্য করতে করতে কখন
যে রাসমণি এক মন্দিরে
এসে পৌঁছেছেন, সেটা বুঝেই ওঠেননি। আচমকা
ঘন্টাধ্বনিতে যখন রাণীর ঘোর
ভাঙলো, তখন দেখেন তিনি
এক ভক্তসমাগম মুখর মন্দিরে এসে
পৌঁছেছেন! মন্দির লক্ষ্য করতেই
রাসমণি অবাক। এই
তো পেয়েছি! ঠিক যেমনটি চাইছি,
তেমনটি! একি সত্যিই মানুষের
হাতে গড়া মন্দির! যেন
বিশ্বকর্মা স্বয়ং স্থপতির রূপে
এই দেউল তৈরী করে
গেছেন! এইরকমই মন্দির গড়াতে
হবে আমাকে! এদিক ওদিকে
দেখতে দেখতে যখন গর্ভগৃহের
দিকে রাণীমা'র নজর
গেলো...... বিস্ময়বিমূঢ় হয়ে কৃপাময়ীর অহৈতুকী
কৃপাবর্ষণে আপ্লুতা... এই তো সেই
মেয়েটিই। লালপেড়ে
কাপড় পড়া, নাকে নোলক...!
তাহলে কি...... আবার ছলনা! আবার
ফাঁকি! আবার আমার চোখে
ধুলো দিয়ে চলে গেলো!
ভাবতে ভাবতে হঠাৎ, জনৈক
ভৃত্যের ডাকে চমকে ওঠেন
রাণীমা। নিজেকে
সামলে নিয়ে ফিরে চলেন
বজরায়। যেতে
যেতে রাণীমা'র মনে
হয়, যেন দুশ্চিন্তার বোঝাটা
কেউ অদৃশ্য হাতে কাঁধ
থেকে সড়িয়ে নিয়েছে।
বারবার ফিরে দেখতে থাকেন
সেই দৈব নির্দেশাগত দেউলকে...
চোখের সামনে যেন স্বপ্নের
মতো ভাসছে সেই দেউলের
রূপ! চাইলেও ভোলা যাচ্ছেনা!
রাসমণি স্থির করলেন, বাড়ী
পৌঁছেই সেজো-জামাইকে এই
মন্দিরের কথা জানাবেন।
সঙ্গে আরও বলবেন, যাতে
এই মন্দিরের অনুকরণেই তাঁর সাধের মন্দির
নির্মিত হয় দক্ষিণেশ্বরে! তারপরের
ঘটনা তো ইতিহাস.........! এই
ইতিহাসের হাত ধরেই আরও
পরবর্তীতে কতজনই না এসেছেন!
কত উৎসব, পালাগান, কথকতা,
যাত্রার আসরই না বসেছে
দক্ষিণেশ্বরে! আজও ভবতারিণীর মন্দিরগাত্রের
অলঙ্করণ আমাদের মুগ্ধ করে!
আক্ষরিক অর্থেই অবাক করে!
সবাই কমবেশী দেউল নির্মাতাদের
কারিগরী আর মুন্সিয়ানার প্রসংশা
মুখে না করলেও মনে
মনে অন্তত করি।
কিন্তু, যে মন্দিরটির অনুকরণে
দক্ষিণেশ্বরে মন্দির নির্মিত হলো,
সেই মন্দিরটির আজ আর কোনো
প্রত্যক্ষ অস্তিত্ব নেই। তাই
হয়তো সেই মন্দিরের বা
মন্দিরাধিষ্ঠাত্রীর কথা ক'জনই
বা জানি আমরা! জানতে
হলে, আরও প্রায় একশোবছর
পিছিয়ে যেতে হবে।
সাবর্ণ
রায়চৌধুরী বংশের কুশাসনে তখন
রাজত্ব করছেন পরিবারের ২৭তম
পুরুষ মাতৃসাধক নন্দদুলাল রায়চৌধুরী। পরপর
তিনটি পুত্রসন্তান হওয়ার পরে ইষ্টদেবী
শ্রী শ্রী কালীর কাছে একটি কন্যাসন্তানের
ইচ্ছা প্রকাশ করলেন নন্দদুলাল। মোহময়ীর
মনে কী ছিলো, সেটাতো
তিনিই জানতেন! তিনি প্রার্থনা মঞ্জুর
করলেন। যথাসময়ে,
নন্দদুলালের ঘরে এক কন্যাসন্তানের
জন্ম হলো। আদরের
দুলালির নাম রাখলেন করুণাময়ী।
আস্তে
আস্তে চন্দ্রকলার মতো বেড়ে ওঠে
করুণাময়ী। হাসছে,
খেলছে। সারাদিন
তার দৌরাত্ম্যে সারাবাড়ীর কোণায় কোণায় নূপুরের
প্রতিধ্বনি শোনা যায় যেন!
সাধক খুব খুশী।
কিন্তু এই খুশী যে
ক্ষণিকের, তা কে'ইবা
জানতো? হঠাৎ একদিন কথা
নেই, বার্তা নেই করুণাময়ী
সামান্য জ্বরে ভুগে বাড়িসুদ্ধ
সকলকে চোখের জলে ভাসিয়ে,
বাবার কোলে মাথা রেখে
শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করলো! করুণার
বয়স তখন মাত্র সাতবছর!
অমাবস্যার গভীর অন্ধকারের থেকেও
যেন আরও ঘোর করে
থাকা নিয়তির অমোঘ বজ্রপাতে
নন্দদুলালের সব স্বপ্ন ছারখার
হয়ে গেছে!
শোক ভোলার আশায় সংসার
ত্যাগ করে, প্রতিষ্ঠিত পঞ্চমুণ্ডীর
আসনে ঘোর সাধনায় ডুবে
আছেন নন্দদুলাল। মাঝেমধ্যেই
ফুঁপিয়ে উঠছেন। ভিতরটা
যেন মুচড়ে ধরছে কে!
"কেন এমন হলো? কোন
অপরাধে আমাকে ফাঁকি দিয়ে
পালিয়ে গেলি মা? দু'দিনের মায়ার জালে
জড়িয়ে নিজেই জাল ছেড়ে
পালালি? অভাগা বাপের কথাটা
একবারও খেয়াল করলি না?
কী নিয়ে বেঁচে থাকবো
রে আমি?"....... এইসব ভাবতে ভাবতেই
দু'চোখে দরদর করে
অশ্রুধারা! দিনের পর দিন
একপ্রকার নাওয়াখাওয়া বন্ধ! কেঁদে কেঁদে
রায়চৌধুরী মশাইয়ের অবস্থাও শোচনীয়।
অবশেষে
ভগবতীর মনও বিচলিত হলো!
কন্যাশোকে আকুল পিতাকে সান্ত্বনা
দিতে তিনি নিজেই অবতরণ
করলেন। বাবার
ক্ষতস্থানে অমৃতধারা বর্ষণের উদ্দেশ্যে দেবী করুণাময়ীর রূপেই
এক গভীর রাত্রে নন্দদুলালের
সামনে এসে দাঁড়ালেন।
বহুকষ্টে বাবার মনস্থির করালেন। তখন
আব্দারের সুরে নন্দদুলাল বলে
বসলেন, "তুমিই আমার মেয়ে
হবে, মা!" দেবীও যেন এই
প্রস্তাবের আশাতেই ছিলেন।
তিনিও বললেন, "গঙ্গার ঘাটে বটগাছের
তলায় একটি কালো পাথর
পড়ে আছে। সেটা
দিয়ে আমার বিগ্রহ নির্মাণ
করাবি। ওতেই
সেবা শুরু কর।
আমি তোর কন্যারূপেই চিরকাল
ঐ বিগ্রহে অবস্থান করবো।"
নির্দেশমাফিক
পরদিন ভোরে জমিদারমশাই নিজেই
গেলেন গঙ্গার দিকে।
সত্যিই একটি কালো পাথর
পেলেন। কারিগর
ডাকিয়ে ইষ্টদেবীর বিগ্রহ তৈরী করালেন
এবং নাম রাখলেন "করুণাময়ী"।
হারিয়ে
যাওয়া মেয়েকে ফিরে পাওয়ার
আনন্দে আদিগঙ্গার থেকে কিছু তফাতেই,
নিজের পঞ্চমুণ্ডী আসনের উপরই বেদী
স্থাপন করলেন নন্দদুলাল।
তৎকালীন বঙ্গদেশের নামকরা কারিগরদের ডাকিয়ে,
সেই বেদীকে ঘিরেই নির্মিত
হলো নবরত্ন মন্দির; সঙ্গে,
দ্বাদশ শিবমন্দির ও গণেশ মন্দির। নিজের
মেয়ে ঠিক যেমনটি ছিলো,
ঠিক তেমনটিই সাতবছরের মেয়ের গড়নে নির্মিত
করুণাময়ী কালীর শ্রীবিগ্রহ।
দেবীর মূর্তিতে গঠনশৈলীর একটু তফাৎ লক্ষ্যনীয়। এখানে
স্বপ্নাদিষ্ট পাথর খণ্ডটি দিয়েই
কালী এবং মহাদেব উভয়ের
মূর্তিই নির্মিত। অর্থাৎ,
মহাদেবেরও গায়ের রঙ কালো। যাইহোক,
রাজকিয় মহিমায় বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা
করো শুরু হলো করুণাময়ীর
সেবাপূজা। আনুষ্ঠানিক
সূচনাকাল ১৭৬০ সাল।
সময় এগোতে থাকলো।
গঙ্গা দিয়েও লক্ষকোটি বার
জোয়ারভাটা খেলে গেলো.... ক্রমে
সেই মন্দিরের অনুকরণেই নির্মিত হলো আরেক দিগ্বিজয়ী
মাতৃমন্দির(আগেই বলা হয়েছে)।
একটা সময় অব্দি সাবর্ণ
পরিবারের জমিদারীর আয় থেকেই করুণাময়ীর
সেবা হতো। পরবর্তীতে,
১৯৫৬ সালে জমিদারী আইন
নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ায় মন্দিরের
তরফে আলাদা বোর্ড/ট্রাস্ট
গঠন করা হয়।
নন্দদুলাল
রায়চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত নবরত্ন মন্দিরটিও কালের
গ্রাসে আজ নষ্ট হয়ে
গেছে। তাই
সাম্প্রতিক(১৯৮৪ সাল) সমগ্র
জায়গাটিই সংস্করণের গণেশ সহ শ্রী
শ্রী করুণাময়ী'র নতুন মন্দির
তৈরী করানো হয়েছে।
কেবলামত্র দ্বাদশ শিবমন্দিরগুলিই এখনও
অব্দি প্রায় অবিকৃত অবস্থায়
রয়েছে। সেগুলিতে
ছোটোখাটো সংস্করণ করানো হয়েছে।
এখানে
সারাবছরই কমবেশী ভক্তের ভীর
লেগেই থাকে। দীপান্বিতা
অমাবস্যায় দেবীর বার্ষিক পূজা,
বিশেষ ধুমধামে আয়োজন করা হয়। তখন
কুমারীপূজাও হয়। কারণ,
নন্দদুলাল নিজেই দেবীকে কুমারী
সন্তানরূপে যাচ্ঞা করেছিলেন।
দেবীর পূজায় প্রথমদিকে পশু
বলিদানের প্রথা থাকলেও এখন
তা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে,
নিত্য অন্নভোগে বা বার্ষিক পূজায়
মাছ সহকারে ভোগ নিবেদনের
নিয়ম আছে। দীপান্বিতা
পূজা ছাড়াও এখানে পয়লা
বৈশাখেও বিশেষ পূজাপাঠ হয়ে
থাকে। সাবর্ণ
রায়চৌধুরী পরিবারের অন্যতম কুলপ্রদীপ যোগীন্দ্রনাথ
রায়চৌধুরী মশাই রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের
আদর্শে সন্ন্যাসধর্ম গ্রহণ করেন৷ তাঁর
পরবর্তীকালে, করুণাময়ী মন্দিরের চত্তরে রামকৃষ্ণ ভাবাদর্শের
প্রতীকস্বরূপ একটি রামকৃষ্ণ মন্দিরও
স্থাপিত হয়। আজকের
কর্মব্যস্ত মহানগরীর বুকে গগনবিদারী অট্টালিকার
ভীরে করুণাময়ীর দরবার যেন অতীতের
সাবর্ণি মনুর বংশধরদের বিজয়পতাকা
স্বরূপ। হয়তো
আজ আর প্রতি ভোরে
নহবতখানায় সানাই বাজে না,
ঠাকুরচাকর, দাসদাসীতে কর্মমুখর ঠাকুরবাড়ী আজ আধুনিকতার আড়ালে
নিজেকে যেন লুকিয়ে রেখেছে। লুকোচুরি
খেলছে যেন! পাছে কেউ
জানতে পারে, স্বয়ং করুণারূপী
জগজ্জননীর আস্তানা কোথায়; তাই হয়তো
নিজের চারদিকে একবিংশ শতকের যুগোপযোগী
জীবনধারায় নিজেকে শুক্তিবদ্ধ মুক্তার
মতো সড়িয়ে নিয়েছে!
সময় যেন একটা থিয়েটারের
স্টেজ! বড়ই চঞ্চল।
ক্রমাগত পট পাল্টে যাচ্ছে। দৃশ্য
পাল্টে যাচ্ছে। চরিত্র
পাল্টে যাচ্ছে। আজকের
চেনামুখ, কালকেই অচেনা! আজকের
গগনচুম্বি চূড়া, কালকেই পদদলিত
ধূলিসাৎ হয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে!
সবই পাল্টাচ্ছে। কবে
থেকে শুরু করে আজ
অব্দি কত পালাদার এলো,
কত পালাদার গেলো.... কত যবনিকাপাত হলো,
কত নতুন সাজে নাট্যমঞ্চ
অলঙ্কৃত হলো। কতজন
আবার সময়ের হাতে নাকানিচোবানি
খেয়ে অস্থির হলো।
এককালের
শ্বাপদসংকুল জঙ্গলাকীর্ণ দক্ষিণ কোলকাতা, আজ
পাখির নজরে আকাশকেও টেক্কা
দিচ্ছে। গঙ্গা
দিয়ে জল বয়ে বয়ে
গঙ্গা অব্দি শুকিয়ে নালা
হয়ে গেছে...! সাবর্ণ বংশতিলক নন্দদুলালের
তৈরী করিয়ে দেওয়া সাধের
মন্দিরটা শুদ্ধ সময়ের হাত
থেকে রক্ষা পেলো না;
কিন্তু যার মন্দির, সেই
করুণাময়ী নিজে......... নাহ্, পাল্টায়নি।
সে ঘরের মেয়ে ছিলো,
ঘরের মেয়ে আছে আর
আজীবন ঘরের মেয়ে হয়েই
থাকবে।
তথ্যসংগ্রহেঃ
শ্রীমান্ শঙ্খ
তথ্যসূত্রঃ
শ্রীযুক্ত শুভদীপ রায়চৌধুরী
No comments:
Post a Comment